নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : টেস্টের পর ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচেও কঠিন পরীক্ষা দিতে হল বাংলাদেশকে। ধবল ধোলাইয়ের হাত থেকে বাঁচতে হলে নিজেদের রান তাড়ার রেকর্ড নতুন করে গড়তে হতো। সেটা তো দূরের কথা, লড়াই-ই করতে পারল না বাংলাদেশ। আগের ম্যাচের ৩৫৩ রানকে ছাড়িয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ছাড়িয়ে গেল বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ৩৫৮ রানকেও। ২০০৮ সালে বেনোনিতে এই স্কোর করেছিলো প্রোটিয়ারা। গতকাল ইস্ট লন্ডনে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৬৯ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪০.৪ ওভারে বাংলাদেশ থামে ১৬৯ রানে, হার কাঁটায় কাঁটায় ২০০ রানের! ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি প্রোটিয়াদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ হলেও, নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসে এটি একাদশতম দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ স্কোর ২ উইকেটে ৪৩৯ রান। ২০১৫ সালে জোহানেসবার্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ দাড় করিয়েছিলো প্রোটিয়ারা।
অবশ্য যে ইঙ্গিত মিলছিল তাতে এ রানও কম ঠেকছিল স্বাগতিকদের। ৪০ ওভার শেষে দুই উইকেটে ২৮১ রান ছিল প্রোটিয়াদের। সেঞ্চুরির দিকে ছুটছিলেন ফাফ ডু প্লেসি ও এইডেন মার্করাম। কিন্তু ডু প্লেসির (৯১) চোট ও মার্করামের (৬৬) রানআউটে ক্ষনিক সময়ের জন্য স্বস্তি পায় বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে মাত্র ৮৮ রান নিতে পেরেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। আর তাতেই কোন সেঞ্চুরি ছাড়া ওয়ানডে ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বোচ্চ ইনিংস গড়ে প্রোটিয়ারা। ২০০৭ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকারই ৩৯২ রানের পাহাড়টি এখনও সর্বোচ্চ শিখরে।
ডুমিনি, ডি ককদের ফেরাতে পারলেও ইনজুরি পতিত হবার আগ পর্যন্ত ডি ভিলিয়ায়ের্স দানবীয় ব্যাটে রান পাহাড় গড়ে দাক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে বাংলাদেশকে ভুগিয়েছেন কাগিসো রাবাদা। ১১ বলে করেন অপরাজিত ২৩। ২৪ বলে ৩৪ রানে অপরাজিত ছিলেন ফারহান বেহারদিন। রুবেলের করা ইনিংসের শেষ ওভার থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা তোলে ১৮ রান।
সিরিজ শেষ হয়ে গেছে পার্লের বোল্যান্ড পার্কেই। ইস্ট লন্ডনের বাফেলো পার্কে গতকালেরর ম্যাচটি ছিল বাংলাদেশের জন্য সম্মান পুনরুদ্ধারের। কিম্বার্লি ও পার্লের দুটি ম্যাচে বাজে হারের পর আজ জিতে নিজেদের প্রমাণের উপলক্ষও। কিন্তু টসে হেরে বল হাতে মাঠে নেমে শুরুটা একবারেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকার দুই ওপেনার কুইন্টন ডি কক ও টেম্বা বাভুমা বাংলাদেশের নির্বিষ বোলিংয়ের সুযোগটা নিয়েছেন দারুণভাবে। উদ্বোধনী জুটিতে ১১৯ রান তেলেন বাভুমা (৪৮) ও ডি কক। ক্যারিয়ারের ১৫তম ফিফটি করে ডি কক আউট হয়েছেন ৭৩ রানে।
দলীয় ১৮ আর নিজের পঞ্চম ওভারে প্রথম সাফল্য পেয়েছিলেন মিরাজ। লং অনে লিটন দাশের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন টেম্বা বাভুমাকে। দুই ওভার পর আরেক ওপেনার ডি কককেও ফিরিয়েছেন এই অফ স্পিনার। ৫৯ রানে ২ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সফলতম বোলারও সিরিজে এই প্রথম খেলতে নামা মিরাজ। তবে সফলতা পরিলক্ষিত হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে।
বড় রান তাড়ায় শুরুতেই ধাক্কা। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই আউট ইমরুল কায়েস। ডেন প্যাটারসনের লেংথ বলটি উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ইমরুল। কিন্তু পারেননি মিড অফ ফিল্ডারের ওপর দিয়ে পাঠাতে। বল সোজা ফিল্ডার বেহারডিনের হাতে। আগের ম্যাচে ৬৮ করা ইমরুল এবার আউট ১ রানেই। ইমরুলের পথেই হাঁটেন তামিম ইকবালের বদলি দলে ঠাঁই পাওয়া লিটন দাসও। এবারও শিকারি প্যাটারসন। ব্যাক্তিগত ৬ রানের মাথায় তার একটি বল আঘাত হানে প্যাডে। আম্পায়ারের আঙুল উঠতে দেখে হতবাক লিটন। মুখভঙ্গি বলছিল, বিশ্বাসই করতে পারছেন না। কিন্তু রিভিউ নিলেন না। সঙ্গী সৌম্যর সঙ্গে কথা বলে হাঁটা দিলেন ড্রেসিং রুমের দিকে। পর পর দুই উইকেট হারিয়ে রান তাড়া করা তো বহুদূর, দলের মান বাঁচানোই দায়! ইমরুল ও লিটনের পর আউট হলেন একাদশে ফেরা সৌম্যও (৮)। কাগিসো রাবাদার লেংথ বলটি ছিল ব্যাক অব লেংথ, ড্রাইভ করার লেংথে নয়। তার পরও ড্রাইভ করতে গেলেন সৌম্য। ব্যাটের কানা নিয়ে বল ¯িøপে। এইডেন মার্করাম নিলেন ভালো একটি ক্যাচ।
একে একে আসা যাওয়ার মিছিলে এবার সামিল আগেই দুই ওয়ানডেতে ভালো করা মুশফিকুর রহিমও (৮)। সিরিজে দলের সেরা ব্যাটসম্যানকেও খুব দ্রæতই হারায় বাংলাদেশ। প্রথম ওভারেই উইকেট নিলেন ফেহলুকায়ো। নতুন বোলারকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মেরেছিলেন মুশফিক। কিন্তু বলের কাছে যেতে পারেননি। তবু চালিয়ে দেন ব্যাট। মিড অফ থেকে পেছন দিকে একটু ছুটে ক্যাচ নেন রাবাদা।
বিপর্যয়ে দলের ভরসা হতে পারেননি মাহমুদউল্লাহও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আবির্ভাবে প্রথম সাফল্যের জন্য খুব বেশি অপেক্ষা করতে হলো না ভিয়ান মুল্ডারকে। নিজের তৃতীয় ওভারেই নিলেন উইকেট। স্টাম্প সোজা বল জায়গায় দাঁড়িয়ে ক্রস ব্যাটে উড়িয়ে মারতে চাইলেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। বাজে শট, খেসারত উইকেট হারালেন মাত্র ২ রানে।
¯্রােতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে একাই কিছুক্ষণ লড়াই চালিয়ে গেলেন সাকিব আল হাসান। সতীর্থদের আসা-যাওয়ার মাঝে ৬৩ বলে তুলে নেন নিজের ৩৫তম হাফ সেঞ্চুরি। তবে সেটা বেশিদূর টেনে নিতে পারেননি।
আগের বলেই বল তুলেছিলেন আকাশে। পেছন দিকে অনেকটা দৌড়ে বল স্পর্শ করেও হাতে জমাতে পারেননি এবি ডি ভিলিয়ার্স। কিন্তু জীবন পেয়ে সেটিকে কাজে লাগাতে পারলেন না সাকিব। আউট পরের বলেই। মার্করামের নিরীহ অফ স্পিনে সুইপ করেছিলেন সাকিব। বল রাখতে পারেননি নিচে, মারেও ছিল না তত জোর। সীমানার বেশ ভেতরেই ক্যাচ। ৬৩ রানে আউট হলেন সাকিব। ভাঙল সাব্বিরের সঙ্গে ৬৭ রানের জুটি।
সাকিবের বিদায়ের সময় পর পরই ফেরেন সাব্বির রহমানও। তার লড়াকু ইনিংসটি থামে ৩৯ রানে। অফ স্টাম্পের বাইরের বলে চার মেরেছিলেন আগের বলেই। পরের বলে আবারও একই চেষ্টায় আউট সাব্বির রহমান। আগের বলটি থেকে এবার একটু টেনে দিয়েছিলেন বোলার মারক্রাম। সাব্বির সেটি ধরতে পারেননি, যেতে পারেননি বলের পিচ পর্যন্তও। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল কিপারের গøাভসে।
শেষদিকে ছোট্ট একটা জুটি গড়ে তুলেছিলেন মাশরাফি ও মিরাজ। তবে অধিনায়ককে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন প্যাটারসন। জায়গায় দাঁড়িয়ে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড মাশরাফি। প্যাটারসন পেলেন তৃতীয় উইকেট। ১৭ রানে আউট হন মাশরাফি। আর মাত্র ৬ রান যোগ করেই শেষ হয় মিরাজ, তাসকিনের উইকেট। শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংসও।
স্কোর কার্ড
দ.আফ্রিকা-বাংলাদেশ, ৩য় ওয়ানডে
বাফেলো পার্ক, ইস্ট লন্ডন
টস : দ.আফ্রিকা
দ.আফ্রিকা ইনিংস রান বল ৪ ৬
বাভুমা ক লিটন ব মিরাজ ৪৮ ৪৭ ৫ ০
ডি কক ক ও ব মিরাজ ৭৩ ৬৮ ৯ ১
ডু প্লেসিস অবসর ৯১ ৬৭ ১০ ১
মার্করাম রান আউট (ইমরুল) ৬৬ ৬০ ৪ ২
ডি ভিলিয়ার্স ক মাশরাফি ব রুবেল ২০ ১৫ ১ ১
বেহার্ডিন অপরাজিত ৩৩ ২৪ ৪ ০
মাল্ডার এলবিডবিøউ তাসকিন ২ ৪ ০ ০
ফেহলুকায়ো ক মুশফিকুর ব তাসকিন ৫ ৪ ১ ০
রাবাদা অপরাজিত ২৩ ১১ ৩ ১
অতিরিক্ত (লে বা ৩, ও ৫) ৮
মোট (৫০ ওভার, ৬ উইকেট) ৩৬৯
উইকেট পতন : ১-১১৯ (বাভুমা), ২-১৩২ (ডি কক), ৩-২৮৩ (ডু প্লেসিস), ৪-৩২৫ (ডি ভিলিয়ার্স), ৫-৩২৯ (মুলডার), ৬- ৩৩৫ (ফেহলুকায়ো)।
বোলিং : মাশরাফি ৯-০-৬৯-০, মিরাজ ১০-০-৫৯-২, রুবেল ১০-০-৭৫-১, সাকিব ১০-৫৬-০, তাসকিন ৭-০-৬৬-০, মাহমুদুল্লাহ ৩-০-৩৩-০, সাব্বির ১-০-৮-০।
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
ইমরুল ক বেহার্ডিন ব পিটারসন ১ ৬ ০ ০
সৌম্য ক মার্করাম ব রাবাদা ৮ ১৩ ১ ০
লিটন এরবিডবিøউ ব পিটারসন ৬ ৬ ১ ০
মুশফিকুর ক রাবাদা ব ফেহলুকায়ো ৮ ২১ ১ ০
সাকিব ক বদলি(ডুমিনি) ব মার্করাম ৬৩ ৮২ ৮ ০
মাহমুদুল্লাহ এলবিডবিøউ মাল্ডার ২ ৭ ০ ০
সাব্বির ক ডি কক ব মার্করাম ৩৯ ৪৯ ৬ ০
মিরাজ ক ডি ভিলিয়ার্স ব তাহির ১৫ ৩৮ ১ ০
মাশরাফি ক ডি কক ব পিটারসন ১৭ ১৭ ৩ ০
তাসকিন ক সাব(ডুমিনি) ব তাহির ২ ৬ ০ ০
রুবেল অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (বা ১, লে বা ১, নো ১, ও ৫) ৮
মোট (৪০.৪ ওভার, অল আউট) ১৬৯
উইকেট পতন : ১-৩ (ইমরুল), ২-১৫ (লিটন), ৩-২০ (সৌম্য), ৪-৫১ (মুশফিকুর), ৬-৬১ (মাহমুদুল্লাহ), ৭-১৩৫ (সাব্বির), ৮-১৬৩ (মাশরাফি), ৯-১৬৯ (তাসকিন), ১০-১৬৯ (মিরাজ)।
বোলিং : রাবাদা ৮-১-৩৩-১, পিটারসন ৯-০-৪৪-৩, মাল্ডার ৮-০-৩২-১, ফেহলুকায়ো ৪-১-১৩-১, তাহির ৮.৪-১-২৭-২, মার্করাম ৩-০-১৮-২।
ফল : দক্ষিণ আফ্রিকা ২০০ রানে জয়ী।
সিরিজ : দক্ষিণ আফ্রিকা ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।
সিরিজ সেরা : কুইন্টন ডি কক
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।