রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
প্রায় ৯ বছর আগে শুরু হওয়া বিরোধে বরুড়া আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে চলছে হ-য-ব-র-ল। কৃষি ও শিক্ষায় অগ্রসর জনপদ কুমিল্লার বরুড়ায় মরহুম রাজনীতিক সাবেক এমপি আবদুল হাকিমের নেতৃত্বাধীন সেই আওয়ামীলীগ এখন ত্রিধারায় বিভক্ত। দলের নেতা-কর্মীরা সাবেক এমপি নাছিমুল আলম নজরুল, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম ও দলের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক এনামুল হক মিয়াজির গ্রুপিংয়ের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামীলীগের দ্বন্দ্বে আবারও মহাজোটের মনোনয়ন বাগিয়ে নিতে চায় জাতীয় পার্টির কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সভাপতি বর্তমান এমপি অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন। অন্যদিকে বরুড়ার রাজনীতিতে শক্তিশালী অবস্থানে থাকা কোন্দলমুক্ত বিএনপির নিশ্চিত একক প্রার্থী সাবেক এমপি জাকারিয়া তাহের সুমনের বিপক্ষে দ্বন্দ্বে আক্রান্ত আওয়ামীলীগ একাট্টা হলেও জয়ের ব্যাপারে শঙ্কা থেকে যাবে।
একাধিকবার আসন পুনবিন্যাসের পর বরুড়া উপজেলা নিয়েই বর্তমানে কুমিল্লা-৮ সংসদীয় আসন। যেখানে ১৫টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা রয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে একসময় বরুড়া মানেই আওয়ামীলীগ। ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বরুড়ায় নৌকা বিজয়ের মধ্যদিয়ে আবদুল হাকিমের অভিষেক ঘটে জাতীয় সংসদে। তারপর ৭৫’র পটপরিবর্তনের মধ্যদিয়ে জিয়াউর রহমান শাসনামলে ৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় নির্বাচনে এমপি হোন বিএনপির আলী হোসেন। আবার এরশাদ শাসনামলে ৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের আবদুল হাকিম দ্বিতীয়বারের মতো এমপি নির্বাচিত হোন। ৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে এমপি হোন মাহবুবুর রহমান ভূইয়া। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি। এরশাদ সরকারের পতনের পর ৯১ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হোন বিএনপির আবু তাহের। ৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনেও আবু তাহের এমপি হোন। সাড়ে তিনমাস পর ৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় নির্বাচনে ঘুরে দাঁড়ায় আওয়ামীলীগ। আবদুল হাকিমের হাত ধরে আসনটি পুনরুদ্ধার করে আওয়ামীলীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোটের প্রার্থী বিএনপির আবু তাহেরের জয় আঘাত হানে আবদুল হাকিমের দূর্গে। ২০০৪ সালে আবু তাহের মারা গেলে ওই আসনের উপনির্বাচনে জয় পান আবু তাহের পুত্র জাকারিয়া তাহের সুমন। মরহুম আবু তাহেরকে বলা হয়ে থাকে অবকাঠামোগত বরুড়া উন্নয়নের রূপকার। আর মরহুম আবদুল হাকিমকে বলা হতো আওয়ামীলীগের কান্ডারি। কিন্তু ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে সাবেক এমপি আবদুল হাকিম মনোনয়ন বঞ্চিত হলে নৌকার মাঝি হয়ে যান রাজনৈতিক পরিমন্ডলের বাইরের এবং স্বাধীনতা বিরোধী পরিবারের সন্তান নাছিমুল আলম চৌধুরী নজরুল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী জাকারিয়া তাহের সুমনকে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে নজরুল এমপি নির্বাচিত হোন।
আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে কোনদিন সক্রিয় না থেকেও দলের টিকেটে নৌকা নিয়ে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর বরুড়া আওয়ামীলীগে দ্বন্দ্ব কোন্দলেন অশনি সংকেত বেঁজে ওঠে। ওই সময়কার বরুড়া আওয়ামীলীগের সভাপতি আবদুল হাকিমকে কোনঠাসা করতে হাইব্রিডদের সংগঠিত করতে থাকেন নজরুল। বরুড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকা সত্ত্বেও ২০১০ সালে ওই কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। আর এমপি নজরুল নিজেই আহবায়ক বনে যান। বরুড়া আওয়ামীলীগে শুরু হয় হাকিম-নজরুল দ্বন্দ্ব। বরুড়া আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথেও নজরুলের সৃষ্টি হয় দুরত্ব। ওই সময়ে গণভবনে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মতবিনিময় সভাতেও নজরুলকে স্বাধীনতা পরিবারের সন্তান উল্লেখ করে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলে ধরা হয়। দ্বন্দ্ব বিরোধের পথেই চলতে থাকে বরুড়া আওয়ামীলীগ। এরিমধ্যে শারিরীকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন আবদুল হাকিম। বরুড়া আওয়ামীলীগে সক্রিয় হয়ে উঠেন একসময়কার ছাত্রলীগ নেতা আবদুল হাকিমের ছেলে অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। শুরু হয় নজরুল-কামরুল দ্বন্দ্ব। আর এ দ্বন্দ্বের ডাল-পালা মেলে ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে। ওই নির্বাচনে কামরুল মনোনয়ন চাইলে বাধা হয়ে দাঁড়ান নজরুল। শেষ পর্যন্ত দ্বন্দ্ব না মেটায় মহাজোট থেকে প্রার্থী দেয়া হয় জাতীয় পার্টির নেতা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলনকে। নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করেন কামরুল ইসলাম। আর এনির্বাচনেও নজরুল মহাজোট প্রার্থী মিলনের পক্ষে অবস্থান নেন। মিলনের কাছে হেরে যান কামরুল। ২০১৫ সালে আবদুল হাকিমের মৃত্যুর পর বরুড়া আওয়ামীলীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠ গোছাতে শুরু করেন কামরুল ইসলাম। এরিমধ্যে তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পান। অন্যদিকে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট বরুড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের আবহ্বায়ক হোন সাবেক এমপি নজরুল। এদিকে বরুড়া আওয়ামীলীগে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার এনামুল হক মিয়াজি। কুমিল্লা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস ও ভিপি এনামুল হক মিয়াজী বরুড়ায় আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে ইতিমধ্যে ফ্যাক্টর হয়ে উঠেছেন। আগামী নির্বাচনে দলের মনোনয়নের আশায় তিনিও মাঠ গোছাচ্ছেন। নিজের গ্রুপের নেতাকর্মীদের নিয়ে এনামুল হক মিয়াজির সাংগঠনিক তৎপরতা জোরেশোরেই ছলছে। এদিকে মনোনয়ন প্রত্যাশি কামরুল ইসলাম ও এনামুল হক মিয়াজি গ্রুপের নেতারা জানান, নজরুল আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান নন। তিনি স্বাধীনতা বিরোধী পরিবার থেকে ওঠা আসা হাইব্রিড আওয়ামীলীগার। সে আওয়ামীলীগ নেতার জানাজায় শরিক হয় না। কিন্তু পৌর বিএনপি নেতার স্মরণ সভায় প্রধান অতিথি হয়। এধরণের লোকদের হাতে বরুড়া আওয়ামীলীগ নিরাপদ নয়। জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন ত্রিধারায় বিভক্ত হয়ে পড়া বরুড়া আওয়ামীলীগ আগামী নির্বাচনে ঐক্য করলেও বিএনপির শক্তিশালী অবস্থানের জন্য জয়ের জায়গাটিতে শঙ্কা থেকে যাবে।
এদিকে আওয়ামীলীগের ত্রিমুখি দ্বন্দ্বে মহাজোট থেকে আবারও প্রার্থী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন বর্তমান এমপি জাপা (এরশাদ) নেতা অধ্যাপক নুরুল ইসলাম মিলন। বরুড়ায় জাতীয় পার্টির তেমন শক্ত অবস্থান না থাকলেও মিলনের বেশ কিছু রিজার্ভ ভোট রয়েছে। কিন্তু তা দিয়ে ভোট যুদ্ধে বৈতরনী পার হওয়া সম্ভব নয়। আর তাই জাপার এ নেতা মহাজোটের প্রার্থী হওয়ার জন্য কৌশলী ভূমিকায় রয়েছেন। তবে এরশাদ আওয়ামীলীগের জোটে থাকলে শেষ চেষ্টা করবেন বরুড়া আসনটি যাতে তার দলকে ছাড় দেয়। আর জোটে না থাকলে মিলনকেই বরুড়া আসন থেকে নাঙ্গলের টিকেট দেয়া হবে। আর এমনটিই মনে করছেন বরুড়া জাপার নেতা-কর্মীরা।
অপরদিকে বরুড়ায় বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাকারিয়া তাহের সুমনের রয়েছে ব্যাপক জনসমর্থন। তরুণ নেতৃত্ব হিসেবে সুমন বেশ জনপ্রিয়। বরুড়ার ১৫টি ইউনিয়নের ৭টিতেই বিএনপির চেয়ারম্যান। এসব ইউনিয়নে বিএনপির সমর্থিত মেম্বারের সংখ্যাও কম নয়। আবার বরুড়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রও বিএনপির। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আসনটি হাতছাড়া হওয়ার পর বরুড়ায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে শক্তি সঞ্চয় করতে থাকে। যার ফল স্বরূপ ইউপি, উপজেলা ও পৌর নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও সমর্থিত প্রার্থীদের একটি বড় অংশ জয়ের মুখ দেখেছে। বিএনপি প্রার্থীদের জয়ের নেপথ্যের নায়ক ছিলেন কেন্দ্রিয় বিএনপির আর্ন্তজাতিক সম্পাদক ও কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক জাকারিয়া তাহের সুমন। রাজপথের বিরোধীদল হয়েও নানা প্রতিকূলতার মাঝে সাহস, প্রেরণা যুগিয়েছেন নেতাকর্মীদের। আসন্ন একাদশ নির্বাচনে সুমনই হবেন বিএনপির প্রার্থী। বর্তমানে বরুড়া বিএনপির মাঠ পর্যায়ের যে শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে তার বিপক্ষে আওয়ামীলীগ ঐক্যবদ্ধ হলেও নৌকার জয়ের বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা থেকে যাবে। দলের নেতা, কর্মী, সমর্থকরা জানান, বরুড়া আওয়ামীলীগে দ্বন্দ্ব আছে কী নেই তা নিয়ে বিএনপি চিন্তিত নয়। চ্যালেঞ্জ, কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার সক্ষমতা রয়েছে বরুড়া বিএনপির। সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ থাকলে বরুড়ায় বিএনপির জয় ঠেকানো যাবেনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।