Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উদয়াস্ত পরিশ্রমেও লাভের মুখ দেখছেন না তাঁত শিল্পীরা

| প্রকাশের সময় : ১৪ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পাবনা থেকে মুরশাদ সুবহানী : পাবনা জেলা তাঁত সমৃদ্ধ এলাকা হিসেবে পরিচিত বহু বছর ধরে। এই জেলার সুজানগরে এক সময় তৈরী হতো মসলিন শাড়ি। বৃটিশ-ভারতে উপনেবেশিক শাসনের সময় এই শাড়ি লন্ডনের বাজারে রপ্তানী হয়েছে। এই কাপড় এখন আর হয় না। তবে তাঁতের অন্যান্য শাড়ি-কাপড়, লুঙ্গি, চাঁদর, গামছা হচ্ছে। পাবনার তাঁত ছাড়াও সিরাজগঞ্জ, কুষ্টিয়ায় বেশীর ভাগ তাঁতের কাজ হয় এখন পাওয়ারলুমে। হস্ত চালিত তাঁত প্রায় ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায়। পাবনা জেলা শহরের নিকটবর্তী দোগাছী, জালালপুর নতুন পাড়া, শহরের মুজাহিদ ক্লাব (শিবরামপুর), দোগাছি, ভাঁড়ারা, জালালপুর, নতুনপাড়া, গঙ্গারামপুর, বলরামপুর, মালঞ্চি, কুলুনিয়া, সাঁিথয়া উপজেলার ছোন্দহ, ছেচানিয়া, জোড়গাছা, সোনতলা, কাশিনাথপুর, বেড়া উপজেলার কৈটলা, পাটগাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় কোন মতে মতে টিকে আছে হস্তচালিত তাঁত। বিভিন্ন ঈদ-উৎসবের আগে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পাবনার তাঁত কাপড়ের বুনন শিল্পীরা কাজ করেও লাভের মুখ দেখছেন না। জেলার তাঁত সমৃদ্ধ এলাকার নিয়মিত শ্রমিক কারিগর শিল্পীদের খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, তারা আবার আগের অবস্থায় ক্রমেই দরিদ্রসীমা চলে যাচ্ছেন। এবার ঈদ মওসুমে যে তাঁতের কাপড়, লুঙ্গি, গামছা বিক্রি করে খুব বেশী আয় হচ্ছে না। শ্রম মূল্যর চেয়ে কোন কোন সময় কম মূল্যে বিক্রি করতে হচ্ছে। একদিকে বাজার চাঙ্গা নেই। অপর দিকে লোকসানের উপর আবার মরার ঘা নেমে এসেছে শহরের রাস্তায় দাঁড়িয়ে এবং ফেরি করে তাঁতের কাপড় বিক্রেতাদের উপর। নানা নামে চাঁদা দিতে হচ্ছে। না দিলে ব্যবসা করা যাচ্ছে না। একবার পুলিশ দাবড় দিচ্ছে। আর একবার গায়ে পৌর টোল কালেকশনের সীল পড়া জামা গায়ে যুবকরা আছে। তারা উড়ন্ত বাজার পৌরসভার কাছ থেকে ইজারা নিয়েছে। তাদের টোল দিতে হচ্ছে। আবার কোন কোন দোকানের সামনে বসে বিক্রি করলে সেই দোকানদারকেও টাকা দিতে হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ক্ষুদ্র এই ব্যবসায়ীদের উপর মরার উপর খাড়ার ঘা নেমে এসেছে। নিরুপায় এই সব ভ্রাম্যমান ব্যবসায়ীরা। খোঁজ খবর নিয়ে জানা গেছে, সুতার দাম বেশী হওয়ায় কোন কোন এলাকায় তাঁত বন্ধ রাখা হয়েছে। তাঁত বন্ধ রাখার কারণ হিসেবে তাঁত মালিক এবং নিজেও কারিগর জামান জানান, সুতা, রঙের দাম চড়া। তার ৩টি তাঁতে তিনি ব্যতিরকে ৩ জন শ্রমিককে কাজ করাতে হয়। এখন বাজার চড়া নেই। তাই ৩ শ্রমিককে বাদ দিতে হয়েছে। অবস্থা ভালো তারা আবার এই কাজে যোগ দেবে। এই শ্রমিকরা এখন কী করছেন, তারা কী বেকার হয়ে পড়েছেন? তিনি জেলার সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরে জানালেন, এ রকম শত শত শ্রমিক এখন তাঁতে কাজ করছেন না। এদের অনেকে আছে যারা তাঁতের কাজ ছাড়া আর অন্য কোন কাজ জানে না। তারা হয়তো বেকার হয়ে আছে। আবার অনেকে আছে যারা কৃষিকাজ, ভ্যান, রিক্সা চালানোর কাজ করছে। তবে এরা ওই সব কাজের চেয়ে তাঁত শিল্পের জন্য দক্ষ শিল্পী শ্রমিক। সুতা, রং, এই তাঁত শিল্পের অন্যান্য উপকরণের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে। এক বেসরকারি পরিসংখ্যান মোতাবেক দেশের প্রায় অর্ধেক তাঁত এখনো বন্ধ হয়ে আছে। সুতার বাজার আবার চড়ে যাওয়ায়। তাঁত মালিকরা বলছেন, সহজ শর্তে ঋণের পাশাপাশি এই শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় সুতা, রঙ, তাঁত উপকরণ দেশী এবং আমদানী করা দ্রব্যের সমন্বয় সাধন করে সহনীয় মূল্যে রাখা দরকার।



 

Show all comments
  • নুরমহমমদ সেখ ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৪ পিএম says : 0
    আমি তাঁত শিল্পী আমি কোন অনুদান পাইনি সরকারের থেকে
    Total Reply(0) Reply
  • নুরমহমমদ সেখ ৪ ডিসেম্বর, ২০২২, ৭:৩৫ পিএম says : 0
    আমি তাঁত শিল্পী আমি কোন অনুদান পাইনি সরকারের থেকে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: তাঁত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ