Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

অবৈধ বাস চলতে না দেয়ায় গুলিস্তান-মানিকগঞ্জ রুটে শুভযাত্রা বন্ধ : ভোগান্তিতে যাত্রীরা

গণপরিবহণে বিশৃঙ্খলা-১

নূরুল ইসলাম : | প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঢাকার গুলিস্তান থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত চলাচল করে শুভযাত্রা বাস সার্ভিস। ৪০টি বাসে প্রতিদিন গড়ে ৮ হাজার যাত্রী পরিবহন করে এই বাসগুলো। গত বৃহস্পতিবার থেকে শুভযাত্রা বন্ধ। মানিকগঞ্জের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এটি বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির এক নেতা জানান, আরটিসির অনুমোদন ছাড়াই ঢাকা-মানিকগঞ্জ রুটে ‘মানিকগঞ্জ এসি লিঙ্ক’ নামে একটি বাস সার্ভিস চালু করে আজম পাভেল নামে স্থানীয় এক নেতা। অবৈধ সেই বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ায় ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা শুভযাত্রাও বন্ধ করে দিয়েছে। ৪০টি বাস একযোগে বন্ধ হওয়ায় প্রতিদিন বাস সংকটে হাজার হাজার যাত্রীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই সুযোগে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে চলমান বাস সার্ভিসগুলো। গত তিনদিনেও এর কোনো সুরাহা হয়নি। এই হলো পরিবহন সেক্টর। এখানে নিয়ম বলে কিছু নেই। যুগ যুগ ধরে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থা ঢাকার গণপরিবহনে। বিরতিহীন ও সিটিং সার্ভিসের নামে প্রতারণা, লক্কর ঝক্কর মার্কা বাস, ধারণ ক্ষমতার চেয়ে অতিরিক্ত আসন, যেখানে সেখানে বাস দাঁড়ানো, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের ব্যবস্থা না থাকাসহ ভাড়ার অনিয়ম তো আছেই। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে দেশের সব সেক্টরে উন্নতি হলেও নগর পরিবহনের ক্ষেত্রে উন্নতি স্বপ্নই থেকে গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ শোনার মতো যেনো কেউ নেই। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রীদের সমস্যাগুলো দেখার দায়িত্ব নগর বা মেট্রো আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির (আরটিসি)। কিন্তু সেই কমিটি দখল করে রেখেছেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিক কমিটির নেতারা। যে কারনে যুগ যুগ ধরে যাত্রীরা ভোগান্তি পোহালেও এ নিয়ে কথা বলার কেউ নেই।

আন্তর্জাতিক মানদন্ডে একটি রাজধানী শহরে যে পরিমাণ রাস্তা থাকা প্রয়োজন ঢাকায় রয়েছে তার চেয়ে ১৯ ভাগ কম। এই কম পরিমাণ রাস্তায় গাড়ি চলছে আন্তর্জাতিক মানদন্ডের চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি। ঢাকার রাস্তায় দুই লাখ যানবাহন চলাচল করার কথা থাকলেও চলছে ১০ লাখেরও বেশি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন গাড়ির সংখ্যাই প্রায় এক লাখ। আবার রাজধানীতে চলাচলকারী যানবাহনের মধ্যে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। সে তুলনায় গণপরিবহনের সংখ্যা অতি নগণ্য। গণপরিবহনের মধ্যে নিবন্ধিত দ্বিতল বাস, বাস ও মিনিবাস রয়েছে ৩০ হাজারের কিছু বেশি। কিন্তু চলছে মাত্র চার হাজার। রাজধানীর প্রতি তিন হাজার যাত্রী যাতায়াতের জন্য বাস ও মিনিবাস আছে মাত্র একটি। এই বাসগুলো আবার নিয়ম মেনে চললে কথা ছিল। চলাচলের ক্ষেত্রে এগুলো নিয়ম নীতি মানে না। এতে করে বিশৃঙ্খল অবস্থার সাথে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। ভোগান্তি পোহাচ্ছে যাত্রীরা।
বিআরটিএ সূত্র জানায়, শহরের আয়তন ও জনসংখ্যা বিবেচনায় কত গাড়ি নামবে তার কোনো পরিসংখ্যান বা পরিকল্পনা বিআরটিএর কাছে নেই। এ বিষয়ে সরকারি কোনো দিকনির্দেশনাও নেই। যে কারনে একদিকে ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে। অন্যদিকে, নতুন গাড়ি কিনে টাকা লগ্নি না করে ফিটনেসবিহীন গাড়ি দিয়ে ব্যবসার মুনাফা গুনছে মালিকপক্ষ। এখানে যাত্রীদের সুযোগ সুবিধার কথা ততোটা ভাবা হয় না।
নগরীর বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী বাস ও মিনিবাসের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অধিকাংশ বাসই আঞ্চলিক পরিবহন কমিটির কোনো নিয়ম নীতির তোয়াক্কা করে না। কমিটি দুই মাসে কমপক্ষে একটি সভা করার নিয়ম থাকলেও মালিক শ্রমিকের অনিচ্ছায় ৬ মাসেও কমিটি সভা হয় না। এতে করে সমস্যা দিন দিন বাড়লেও সমাধানের কোনো পথ খোঁজা হয় না। এতে করে যাত্রীদের স্বার্থ থাকে অবহেলিত। জানা গেছে, নগরীতে চলাচলকারী বাসগুলোতে ৩৭ টি আসনের অনুমোদন দেয়া হয়। এর বেশি আসন থাকলে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়ার নিয়ম নেই। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের নিজে বহুবার অতিরিক্ত আসনের বাস আবিস্কার করেছেন। বিআরটিএ কে সতর্ক করেছেন। কিন্তু তারপরেও নগরীতে চলাচলকারী ৯৮ ভাগ বাসই ৪১ আসনের। পরিবহন মালিকরা জানান, মাঝে মধ্যে বিআরটিএ-এ বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করলেও ৪১ আসনের বাসের ফিটনেস সার্ঠিফিকেট দেয়া বন্ধ হয় না। ৩৭ এর স্থলে ৪১ আসনবিশিষ্ট বাসে যাত্রীরা আরাম করে বসতে পারেনা। কখনও কখনও সামনের আসনের সাথে পা লেগে যায়। তখন বাঁকা হয়ে বসতে হয়। অতিরিক্ত আসনের কারণে বেশিরভাগ বাসে উঠতে এবং নামতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয় যাত্রীদের। এছাড়া মহিলা যাত্রীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা বাধ্যতামূলক হলেও অধিকাংশ বাসেই তা নেই। এতে করে নারী যাত্রীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বিশেষ করে স্কুল কলেজের ছাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভুক্তভোগি যাত্রীরা জানান, এসব ছাড়াও রাজধানীর যাত্রীদের সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ভাড়া নিয়ে। একেক বাসে একেক রকমের ভাড়া বহুদিন ধরেই চালু আছে। লোকাল বাসগুলো সকালে পিকআওয়ারে হয়ে যায় বিরতিহীন। আবার বিরতিহীন বাসগুলো যাত্রী তোলার জন্য যেখানে সেখানে দাঁড়ায়। এ নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ করার মতো কোনো জায়গা নেই।
ঢাকা-মানিকগঞ্জ রুটে শুভযাত্রা বন্ধ প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আশা করছি আগামীকাল থেকে এটি চালু হয়ে যাবে। বাস সার্ভিস বন্ধ করে দেয়ার স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে তিনি বলেন, যার যার নিজের এলাকায় জোর খাটিয়ে গাড়ি বন্ধ করে দেয়া মোটেও সমীচীন নয়। যে কোনো সমস্যা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যাত্রী


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ