Inqilab Logo

সোমবার ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থনীতিতে মন্দার আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৮ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

অর্থনীতিতে সুখবর বলে কিছু নেই। বরং দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। অর্থনীতির বিভিন্ন ক্ষেত্রের দিকে তাকালে দেখা যাবে তা ক্রমেই ঋণাত্মক দিকে ধাবিত। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ নেই, বেকারত্ব বাড়ছে, রেমিট্যান্স প্রবাহ ও পোশাক শিল্পের রপ্তানি কমছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম ঊর্ধ্বমুখী, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে। বলা যায়, অর্থনীতির সূচকগুলো আশঙ্কাজনকভাবে নিম্নগামী। গতকাল বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ চিত্র ফুটে উঠেছে। একটি দৈনিকে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রতিবেদন প্রকাশ করে বলা হয়, কাক্সিক্ষত বিনিয়োগ না হওয়ায় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না, বেকারত্ব বাড়ছে যা ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সর্বশেষ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ৪ কোটি ৬৬ লাখ। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সংজ্ঞা ব্যবহার করে কৌশলে এ তথ্য গোপন করে সরকারি হিসাবে দেখানো হচ্ছে ২৬ লাখ। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এ তথ্য বিভ্রান্তিকর। দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ রেমিট্যান্স। এ খাতটিও শঙ্কার মধ্যে পড়েছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে আশঙ্কা করা হয়েছে, নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে পর পর দুই বছর রেমিট্যান্স কমার পর এবছর বৃদ্ধির আশা করা হলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সুখবর নেই। বাংলাদেশের রেমিট্যান্স এবছর ৫.২ ভাগ কমে যেতে পারে। জনশক্তি ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিগত ২৫ মাসের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসে সবচেয়ে কম জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। অর্থনীতির অন্য খাতগুলোও মন্দাবস্থার মধ্য দিয়ে চলছে। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, দেশের অর্থনীতি কোনোভাবেই ভালো অবস্থায় নেই।
সরকারের তরফ থেকে বরাবরই উন্নয়নের ফুলঝুরি ছড়ানো হয়। দেশে উন্নয়নের জোয়ার বইছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, অচিরেই মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হবো-এমন আত্মতৃপ্তির কথা অহরহ বলা হচ্ছে। এসব উন্নতির কথা সরকারের বলা স্বাভাবিক। কোনো সরকারই তার ব্যর্থতার কথা বলতে চায় না। তবে বলা ও বাস্তবতার মধ্যে আকাশ-পাতাল ব্যবধান থাকা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। ঘোষিত উন্নয়ন ও বাস্তব চিত্রের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকা উচিত। আমরা দেখছি, সরকার বাস্তব চিত্র উপেক্ষা করে উন্নয়নের ফানুস উড়িয়ে চলেছে। প্রকৃত উন্নয়নের দিক থেকে মনোযোগ হারিয়ে ফেলছে। বিষয়টি অনেকটা, বালিতে মুখ গুঁজে ঝড় উপেক্ষা করার মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। অর্থনীতি বিষয়ক যেসব পরিসংখ্যান সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও কর্তৃপক্ষ সরকারের কাছে সরবরাহ করছে এবং সরকার যেভাবে তা তুলে ধরছে, তার সাথে বাস্তবতার ব্যবধান অনেক। বিভিন্ন সময়ে অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র বিশ্বব্যাংক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংস্থা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরে দেখিয়ে দিচ্ছে, সরকারের তুলে ধরা উন্নয়নচিত্র সঠিক নয়। এক জিডিপি নিয়ে সরকারের সাথে প্রতিষ্ঠানগুলোর যথেষ্ট তর্ক-বিতর্ক হয়েছে এবং হচ্ছে। মাথাপিছু আয় নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। একে অনেকে শুভংকরের ফাঁকি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরো বেকারের সংখ্যা নিয়ে যে তথ্য দিয়েছে, তা প্রকৃত অর্থে বাস্তবতাবিবর্জিত। দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে বছরের পর বছর ধরে মন্দা চলছে। এতে কর্মসংস্থান তো হচ্ছেই না, উল্টো অনেক প্রতিষ্ঠান দুর্বল হয়ে যাওয়ায় কর্মী ছাঁটাই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির বদলে বিদ্যমান কর্মসংস্থান থেকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলোর আওতা সীমিত করা হচ্ছে। এতে কোটি কোটি বেকারের সঙ্গে কর্মচ্যুত বেকার যুক্ত হয়ে বেকারত্বের হার বৃদ্ধি করছে। বিপুল সংখ্যক এই বেকারের ভরণ-পোষণ করতে গিয়ে তাদের পরিবার-পরিজনকে চরম বিপাকে পড়তে হচ্ছে। দেশে বেকারদের যেমন কর্মসংস্থান হচ্ছে না, তেমনি বিদেশেও কর্মের বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। অনেকে চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে আসছে। এসব ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মনোযোগ আছে বলে প্রতীয়মাণ হচ্ছে না। দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি কী, তা সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের টানাপড়েনের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বোঝা যায়। নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের নাভিশ্বাস উঠছে। চাল কিনতে গিয়ে অন্যান্য পণ্য ক্রয় করার সামর্থ্য হারিয়ে ফেলছে। শাক-সবজির বাজারও ঊর্ধ্বমুখী। চাল কেনার পর শাক-সবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে।
সাধারণত একটি দেশের উন্নয়ন জনসাধারণের কর্মসংস্থান এবং স্বচ্ছন্দ জীবনযাপনের সূচকের উপর নির্ভর করে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে মানুষের জীবনযাপনে টানাপড়েন থাকা স্বাভাবিক। তবে তা একেবারে প্রান্তিক পর্যায়ে থাকা কোনোভাবেই উন্নয়নের চিত্র নির্দেশ করে না। এ পর্যায় থেকে ধীরে ধীরে উন্নয়ন করাকেই প্রকৃষ্ট পথ বলে গণ্য করা হয়। এই উন্নয়ন হয় দেশের সার্বিক অর্থনীতির ভিত যখন দৃঢ় এবং গতিশীল থাকে। আমাদের দেশে উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা ক্রমেই ধীর হয়ে যাচ্ছে। উন্নয়নের যে কথা বলা হচ্ছে, তার সাথে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। বাস্তবতার চিত্রটি যে ভয়াবহ ও বিপর্যয়কর তা এখন প্রকাশ হতে শুরু করেছে। আমরা মনে করি, এ বিষয়টির দিকে সরকারের এখনই গভীর মনোযোগ দেয়া দরকার। বাস্তব চিত্র উপেক্ষা এবং কালক্ষেপণ না করে, তা আমলে নিয়ে দ্রæত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত। উদাসীন হয়ে কেবল উন্নয়নের ফানুস উড়ালে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে। বলা বাহুল্য, অর্থনীতির বর্তমান যে করুণ দশা, তা নিরসনে পদক্ষেপ না নিলে এবং তা চলতে থাকলে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে। আমরা আশা করি, প্রধানমন্ত্রী অর্থনীতিতে যেসব সমস্যার উদ্ভব হয়েছে তা বিবেচনায় নিয়ে সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থনীতি

৩ জানুয়ারি, ২০২৩
২১ নভেম্বর, ২০২২
১৭ নভেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন