পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
কয়েক দশকের সামরিক শাসনের পর প্রথমবারের মতো বেসামরিক প্রেসিডেন্ট পেল মিয়ানমার। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এ দেশটিতে গত মঙ্গলবার পার্লামেন্টে ভোটাভুটিতে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) নেত্রী অং সাং সুচির ঘনিষ্ঠবন্ধু থিন কিয়াও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। পার্লামেন্টের ভোটাভুটিতে থিন কিয়াও পান ৩৬০ ভোট। ৬৫২ এমপি ভোট দেন। ফলাফল ঘোষণার পর এমপিরা করতালি দিয়ে ৬৯ বছর বয়সি নতুন প্রেসিডেন্টকে স্বাগত জানান। নতুন প্রেসিডেন্ট কবি হিসেবেও পরিচিত। গণতন্ত্রপন্থী নেত্রী সুচির বন্ধু হিসেবে আগে থেকেই ধারণা করা হয়েছিল, যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে পারেন। তিনি (এনএলডি)’র প্রবীণ নেতা মিন থু ইউনের ছেলে। মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে তিনি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। থিন কিয়াওয়ের স্ত্রী সু সু এলউইন এনএলডির মুখপাত্র। থিন কিয়াও মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। সত্তর ও আশির দশকে তিনি শিল্প ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কর্মরত ছিলেন। তিনি সুচির ছোটবেলার বন্ধু। সুখে-দুঃখে তিনি সবসময়ে সুচির পাশে থেকেছেন। সাংবিধানিক বাধ্য-বাধকতার জন্য নির্বাচনে দাঁড়াতে পারেননি অং সাং সুচি। নির্বাচিত হবার পর এক প্রতিক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট থিন কিয়াও বলেছেন, এ বিজয়ের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। এ বিজয় অং সাং সুচির বিজয়। আগামী পহেলা এপ্রিল বর্তমান প্রেসিডেন্ট থেইন সেনের স্থলাভিষিক্ত হবেন। এর মাধ্যমে দীর্ঘ পাঁচ দশক পর প্রথম বেসামরিক প্রেসিডেন্ট পাবে মিয়ানমারবাসী। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে প্রথমে পার্লামেন্ট ও পরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মধ্যদিয়ে মিয়ানমারবাসী যে বেসামরিক সরকার পেয়েছে এবং তাদের পছন্দমত প্রতিনিধি নির্বাচন করতে পেরেছে এ জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সকলকে মোবারকবাদ জানাই।
গত ৮ নভেম্বরে বহু প্রতীক্ষিত জাতীয় নির্বাচনে সুচির দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। কিন্তু ২০০৮ সালে সেনাবাহিনীর প্রবর্তিত সংবিধানের ধারা অনুযায়ী স্বামী-সন্তান বিদেশি নাগরিক হওয়ায় এনএলডি’র প্রধান সুচি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার অযোগ্য ছিলেন। এরপর তিনি এ পদে বন্ধু ও কাছের মানুষ থিন কিয়াওকে মনোনীত করেন। সামরিক জান্তা সুচির প্রেসিডেন্ট হওয়া ঠেকানোর জন্যই এব্যবস্থা করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবার পর সুচি বলেছিলেন তার অবস্থান প্রেসিডেন্টের উপরে হবে। বাস্তবতা হচ্ছে বেসামরিক প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর মিয়ানমারের অশনিসংকেত অনেকটাই কেটে গেছে বলে মনে করার সঙ্গত কারণ রয়েছে। মিয়ানমারে গণতন্ত্র এক সময়ে অমাবশ্যার চাঁদ বলে মনে করা হতো। ঘটনা পরম্পরায় সেখানকার রাজনৈতিক নেতৃত্বের দূরদর্শিতা, ধৈর্য, আন্তর্জাতিক মহলের নিবিড় যোগাযোগ সর্বোপরি জনগণের গণতন্ত্র পাবার প্রতি আপোষহীন থাকার মধ্য দিয়েই কার্যত গণতন্ত্রের এ শুভ পদযাত্রা সম্ভব হয়েছে। জনগণ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পেয়েছে। এটি এ অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি সুনির্দিষ্ট বার্তাও বটে। ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখার জন্য যত ধরনের অপচেষ্টাই হোক না কেন শেষ পর্যন্ত জনগণেরই জয় হয়। তবে অপ-প্রবণতার কারণে যে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয় তার রেশ থাকে অনেক দিন। মিয়ানমারে সামরিক সরকার সেখানকার জনগণের দৃষ্টি অন্য দিকে ঘোরাতে এবং বিভেদ সৃষ্টিতে যতগুলো অপকর্ম করেছে তার মধ্যে প্রণিধানযোগ্য হলো সেখানে মুসলমানদের উপর নির্যাতন, বাস্তুচ্যুত করা এবং নির্বিচার হত্যা। মানবাধিকার পরিপন্থী এ কাজের জন্য সাবেক সরকার বিশ্বব্যাপী নিন্দাও কুড়িয়েছে। আজ নতুন সরকারের উপরই দায়িত্ব বর্তিয়েছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার, মুসলমানদের নির্বিঘেœ জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করার।
নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে আমরা আশা করব মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার এদেশের জনগণের সাথে সুসস্পর্ক বহাল রাখবে। পারস্পরিক স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ন্যায় ও সমতা অনুসরণ করবে। এ কথা নতুন করে মনে করিয়ে দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই যে, গণতন্ত্রের পথচলা কখনো কখনো মসৃণ হয় না। মিয়ানমারে মানুষের যে অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করার দায়িত্ব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের উপরই বর্তায়। অং সাং সুচির বিচক্ষণ নেতৃত্ব প্রমাণ করেছে ষড়যন্ত্র কখনো স্থায়ী হয় না। শেষতক সাধারণ মানুষেরই বিজয় হয়। গণতন্ত্রের সুবাতসে যেন সেখানকার মুসলিমসহ সবাই উপভোগ করতে পারে তার সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে অং সাং সুচিকেই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। তার দল ও সরকার জনপ্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট থাকবে, এটাই আমাদের কামনা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।