Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নরসিংদীর ঐতিহ্য বৌয়াকুড় ভরাট, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা

| প্রকাশের সময় : ৬ অক্টোবর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে : নদী থেকে ড্রেজার দিয়ে বালু এনে ভরাট করে ফেলা হচ্ছে নরসিংদী শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও প্রাকৃতিক জলাশয় বৌয়াকুড়। দীর্ঘ দিনের দখল ও দুষণের পর একসময়ের সরকারী জলাশয় হিসেবে পরিচিত এই কূড়ের কথিত মালিকরা কূড়টিকে ভরাট করে ফেলছে। আর এতে মাটির নিচে চাপা পড়ে যাচ্ছে শহরের সবচেয়ে প্রাচীন গ্রাম (বর্তমানে মহল্লা) বৌয়াকুড় নামের মুল উৎস। দাফন হয়ে যাচ্ছে বৌয়াকুড় গ্রামের ইতিহাস ও ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে একটি কিংবদন্তী এবং ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে কমবেশী ১২ হাজার প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ ও জলজ প্রাণী। পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর জলাশয় ভরাটের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না।
পুরাতন জলাশয়ের মত প্রতœসম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসছে না দেশের প্রতœতত্ত¡ অধিদপ্তর। নরসিংদীর প্রাচীন অধিবাসীরা জানিয়েছে, শহরের সবচেয়ে প্রাচীন এ জলাশয় বৌয়াকুড় নামের এই কূড়টি সৃষ্টির একটি কিংবদন্তী রয়েছে। রয়েছে একটি ভূ-তাত্তিক ঘটনা। কিংবদন্তীটি হচ্ছে কূড়ের জায়গাটি ছিল একটি বিশাল বাড়ী। এই বাড়ীতে মালিকের একাধিক বউ ছিল। এর মধ্যে ছোট বউ ছিল খুবই সুন্দরী, কিন্তু খুবই গরীব। বড় বউরা তাকে হিংসা করতো, গালাগাল করতো, মারধোর করতো, খেতে পড়তে দিতো না। বড় বউদের অত্যাচার চরম আকার ধারণ করলে একদিন রাতে ছোট বউ স্বপ্নে দেখে কে যেন তাকে বলছে তোর শীল-নূরার নিচে একটি গর্ত রয়েছে। এই গর্তে হাত দিলেই শিং, মাগুর, কৈ-সহ বিভিন্ন মাছ উঠে আসবে। তুই এগুলো খেয়ে জীবন ধারণ করবি। কিন্তু কারো কাছে বলবি না। বললে তোরা সবাই পানির নিচে তলিয়ে যাবি। রাতের দেখা স্বপ্ন অনুযায়ী সকালে শীল-নূরা উল্টে দেখে ঠিকই সেখানে একটি গর্ত রয়েছে। এই গর্তে হাত দেয়ার সাথে সাথেই সেখান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ বেরিয়ে আসতে থাকে। এসব মাছ রান্না করে খেয়েই ছোট বউ জীবন চলতে থাকে। কিন্তু এ সুখ তার বেশীদিন সইল না। ঘটনাক্রমে বড় বউরা তাকে সন্দেহ করতে লাগলো। এক পর্যায়ে তার চরিত্রের উপর কলংক চাপিয়ে দিলো। এই অবস্থায় ছোট বউ নিজেকে বদলামের হাত থেকে রক্ষার জন্য একদিন শীল-নূরার নিচ থেকে মাছ প্রাপ্তির কথা বলে দিলো। এর কিছুক্ষণ পরই গোটা বাড়ীটিতে ধস নেমে গভীর পানির নিচে তলিয়ে গেলো। সেই থেকে গ্রামের নাম হলো বৌয়াকুড়। এটি একটি নিছক কিংবদন্তী। এর ভূ-তাত্তিক ঘটনা হলো নরসিংদী শহর ও তৎসংলগ্ন এলাকা ছিল পানির নিচে। দীর্ঘ দিনে মেঘনা আড়িয়াল খা, হাড়িধোয়া, শীতলক্ষা নদী বাহিত পলি বালি জমে জমে এই ভূমির সৃষ্টি হয়েছে। নরসিংদী শহরের বৌয়াকুড় গ্রামের কয়েক বিঘা জমির পূর্বেই রয়েছে হাড়িধোয়া নদী। দক্ষিণে রয়েছে মেঘনা। পশ্চিমে রয়েছে পুরনো ব্রাহ্মপুত্র ও শীলতলক্ষা নদী। ভূ-তাত্তিকদের ধারনা ভূ-আলোড়নের কারণে পলি বালি গড়া চর ভূমিতে ধস নেমে কূড় নামের এসব বিশাল বিশাল প্রাকৃতিক গর্ত বা জলাশয়ের সৃষ্টি হয়। এই বৌয়াকুড়ের দুই কিলোমিটার দক্ষিণের চরসুজাপুর গ্রামে প্রায় একই সময়ে হঠাৎ ভূমি ধসের মাধ্যমে সৃষ্ট আরো একটি কূড়। এর আগে এই কূড়ের জায়গায় ছিল পিয়াজ ক্ষেত। সে জন্যই এই কূড়ের নাম হয়েছে পিয়াজী কূড়। বৌয়াকুড় এবং পিয়াজী কূড় দুটুই প্রাকৃতিক কূড়। প্রাপ্ত তথ্য মতে এসব কূড় সৃষ্টি হয়েছে ৬শত থেকে ৮শত বছর আগে। যার ফলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে এসব কূড় গায়েবী কূড় হিসেবে পরিচিত। বৌয়াকুড় গ্রামটি এই কূড়ের নামেই নামকরণ করা হয়েছে। সারা পৃথিবীতে পরিচিতি রয়েছে এ গ্রামটির। এই বৌয়াকুড় গ্রাম থেকে তিন জন এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
বর্তমানে নির্বাচিত এমপি একজন প্রতিমন্ত্রী। এলাকার গণমানুষের দাবী এই কূড়টিকে ভরাট না করে এটিকে একটি স্বচ্ছ জলাধার হিসেবে তৈরী করে একটি বিনোদনের জায়গা সৃষ্টি করা। জনগনের বিশ্বাস পানিস্পদ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম হিরু বৌয়াকুড় নামের এই ঐতিহ্যবাহী কূড়টিকে ভরাটের হাত থেকে রক্ষা করে বিনোদনমূলক জলাশয় তৈরী করবেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নরসিংদী

১১ জানুয়ারি, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ