পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ফারুক হোসাইন : আন্দোলনে উত্তাল মার্চের প্রতিটি দিনই ছিল উত্তপ্ত। বাঙালিরা তাদের স্বাধিকার ও স্বাধীনতা লাভের জন্য রাজপথে নেমে আসে। পূর্ব পাকিস্তানের নির্বাচিত ও সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে অসহযোগ আন্দোলন চালিয়ে যায়। মার্চের প্রতিটি দিনই তাই ছিল আন্দোলনমুখর ও খুব গুরুত্বপূর্ণ। সময় যতই গড়িয়ে যাচ্ছিল সঙ্কট ততই গুরুতর হচ্ছিল। এমনই পরিস্থিতিতে ১৫ মার্চ ঢাকা সফরে আসেন প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান। ১৯৭১ সালের এইদিনে উত্তাল পরিস্থিতির মধ্যে সকালে প্রেসিডেন্ট হাউসে (এখন ফরেন সার্ভিস একাডেমী সুগন্ধা) কড়া সামরিক পাহারায় বৈঠকে বসে ইয়াহিয়া-মুজিব। কোন পরামর্শদাতা ছাড়াই সকাল ১১টায় শুরু হয় দু’জনের একান্ত এই বৈঠক। আলোচনা চলা অবস্থায় সংরক্ষিত এলাকার বাইরে অসংখ্য ছাত্র-জনতা ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান দেয়। বাইরে অপেক্ষা করে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকরা। টানা আড়াই ঘণ্টার বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু বলেন, রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা সম্পর্কে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আলোচনা চলবে। কাল সকালে আবার আমরা বসছি।
ইয়াহিয়ার সঙ্গে আলোচনার অগ্রগতি দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের কাছে তুলে ধরেন শেখ মুজিবুর রহমান। ধানম-ির বাসভবনে অনুষ্ঠিত আলোচনা চলে বিকেল পর্যন্ত। আবার দ্বিতীয় দফা ৮টায় দলীয় নেতাদের সঙ্গে বসে বৈঠক। শেষ হয় গভীর রাতে।
এদিকে মুক্তি আন্দোলনের পক্ষে নারায়ণগঞ্জের ডকইয়ার্ড শ্রমিকরা শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকা মিছিল করেন। টঙ্গীর বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা করে জঙ্গি মিছিল। চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে। সমাবেশ শেষে নগরীতে বের করে বিক্ষোভ মিছিল। সকালে বাংলা একাডেমীতে শিল্পী কলিম শরাফীর সভাপতিত্বে অসহযোগের সমর্থনে ব্রতচারী আন্দোলনের এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সার্ভিসসমূহের ফেডারেশনের উদ্যোগে পূর্ব পাকিস্তান সরকারি অর্থনীতিবিদ ও পরিসংখ্যানবিদ সমিতির এক সভায় বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। এছাড়াও এ দিন চামড়া ব্যবসায়ী সমিতি, ইপি ওয়াপদা অফিসার সমিতি, ইপি মৎস্য উন্নয়ন সংস্থার কর্মচারী সমিতি, পূর্ব বাংলা বীমা সংস্থাসমূহের কর্মচারী সমিতি, নোয়াখালী মুসলিম অ্যাসোসিয়েশন, কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সার্ভিস ও পেশাদার সংস্থাসমূহের ফেডারেশনের স্টিয়ারিং কমিটি প্রভৃতি সংস্থার পৃথক পৃথক সভায় আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার এবং বঙ্গবন্ধু ঘোষিত কর্মসূচি মেনে চলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ডাকবিভাগের কর্মীরা বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা বের করেন। বুলবুল ললিতকলা একাডেমীর শিল্পীরা ধানম-িতে দেশের গান পরিবেশন করেন। ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে আইনজীবীরা আয়োজন করে সমাবেশের। এতে সভাপতিত্ব করেন আসাদুজ্জামান খান। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সাহিত্যিক ও শিল্পীরা কবিতা পাঠ এবং গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন। বিভিন্ন এলাকায় বাঙালির ওপর সামরিক বাহিনীর নির্যাতন আগের মতো অব্যাহত থাকে। রংপুর সেনানিবাস এলাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, ঢাকা পিলখানা, রামপুরা, ফার্মগেট, কচুক্ষেত, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হোস্টেল, জোহা হল, মন্নুজান হল ও যশোর এলাকায় অসহযোগ আন্দোলনকারীদের ওপর চলতে থাকে অমানুষিক নির্যাতন। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বিদেশি বিমানে পূর্ব পাকিস্তানে সেনা পরিবহন বন্ধ করার জন্য ভারত সরকার তার ভূ-খ-ের ওপর দিয়ে সব বিদেশি বিমানের পূর্ব পাকিস্তান গমন নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। শাসনতন্ত্র প্রণয়নের আগে আওয়ামী লীগ ও পিপলস পার্টির সমন্বয়ে একটি কোয়ালিশন সরকার গঠন সংক্রান্ত পিপিপি চেয়ারম্যান ভুট্টোর প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে পশ্চিম পাকিস্তানি নেতারা পৃথক বিবৃতি দেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।