পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে উদ্বিগ্ন যুক্তরাষ্ট্রস্থ দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক থিংক ট্যাঙ্কগুলোর বিশেষজ্ঞরা। গণতন্ত্রের অবর্তমানে উগ্রপন্থা মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে পারে বলেও মনে করেন তারা। এছাড়া গণতন্ত্রের অবর্তমানে দেশ থেকে হাজার কোটি টাকা পাচার হচ্ছে বলেও মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত সোমবার (নিউইয়র্ক সময়) বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পুলিৎজার হলে আর্চার বøাড সেন্টার ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত ‘বাংলাদেশ ডেমোক্রেসি’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।
আর্চার বøাড সেন্টার অপ ডেমোক্রেসির নির্বাহী পরিচালক কাউসার মুমিনের সঞ্চালনায় সেমিনারে বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের উপর বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটনস্থ উইলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি ডিরেক্টর মাইকেল কোগোলম্যান, রোহিঙ্গা ইস্যুর উপর বক্তব্য রাখেন ওয়াশিংটনস্থ হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের এশিয়ান স্টাডিজ সেন্টারের পলিসি এনালিস্ট অলিভিয়া ইনোস, বাংলাদেশের মানি লন্ডারিং-এর উপর বক্তব্য রাখেন নিউ ইয়র্কস্থ গেøাবাল সেন্টার ফর কো-অপারেটিভ সিকিউরিটির বিশেষজ্ঞ ট্রেসি ডার্নার, নিউ ইয়র্ক স্টেইট গভর্নরের আইনকর্মকর্তা জেনিফার রাজকুমার এবং আর্চার বøাড সেন্টারের পরিচালক (প্রোগ্রাম) ইমরান আনসারী।
মাইকেল কোগলম্যান বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত। ফ্রিডম হাউজ-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। বিশেষ করে সমালোচনামূলক সাংবাদিকতার অভাব, মিডিয়ার উপর সরকারের সেন্সরশীপ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার অভাব এ অবনতির অন্যতম কারণ।
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিনিয়ত বাধাগ্রস্ত হয়েছে। গুম, খুনের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে জঙ্গীবাদ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে ট্রাম্প প্রশাসনকে আরো বেশি মনোযোগী হতে হবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারত সরকারকে কাজে লাগাতে পারে বলে মনে করেন কোগলম্যান। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান সরকার বাংলাদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কম আগ্রহী বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করতে বাংলাদেশের সিনিয়র অফিসিয়ালদের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ, প্রয়োজনে নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশিদের অর্থ দেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।
বাংলাদেশের গণতন্ত্র উত্তরণে জাতিসংঘের আইনগতভাবে তেমন কিছু করার নেই বলেও মনে করেন তিনি।
অলিভিয়া ইনোস রোহিঙ্গা সঙ্কট নিয়ে বলেন, অল্প কয়েকজন লোকের জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ততার জের ধরে লাখো মানুষের মানবাধিকার হরণের বিষয়টি কিছুতেই বিশ্ববাসী উপেক্ষা করতে পারে না। মনে রাখতে হবে, ১৯৮২ সাল থেকে এ জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘সেইফ জোন’ যুক্তিসংঘত হতে পারে না। তিনি বাংলাদেশ সরকারকে জঙ্গীবাদ ইস্যুতে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়ে বলেন, বর্ডারে কোনো ভাবেই যেন উগ্রবাদীরা মানবিকতার সুযোগে মাথা চাড়া দিয়ে না উঠতে পারে সেজন্য নজর রাখতে হবে।
ট্রেসি ডার্নার বাংলাদেশের অর্থপারের ভয়াবহ দিক তুলে ধরতে গিয়ে বলেন, গত ১২ বছরে ৬১ বিলিয়ন ডলার অর্থ বাংলাদেশের থেকে পাচার হয়েছে। কিন্তু এই পাচার রোধে সরকারি উদ্যোগ খুব কমই লক্ষ্য করা গেছে। এতে সরকারের উদাসীনতাকে দায়ী করেন তিনি। একটি পরিসংখ্যানে তিনি জানান, ২১৪টি অর্থ পাচারের বিচার কার্য স্থগিত রয়েছে। ২০১৫ সালে পাঁচটি মামলার মধ্যে ৪টিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, ২০১৬ সাল থেকে জঙ্গীবাদী অর্থায়ন হার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ জঙ্গী অর্থায়নের ঘটনায় মাত্র দু’টিতে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে।
স্বাগত বক্তব্যে ইমরান আনসারী দেশে চলমান তিনটি সমস্যার উপর তথ্য ভিত্তিক বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, আমরা এমন এক সময় বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলছি যখন বাংলাদেশের শিশু গণতন্ত্র মডারেট গণতন্ত্রে বিকশিত হবার প্রাক্কালেই হোঁচট খেয়েছে। ২০১৪ সালের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৪০০ লোকের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যা বাংলাদেশের নির্বাচনের ইতিহাসে ছিল নজিরবিহীন। তিনি আরো বলেন, অর্থনৈতিক অপরাধ সবচেয়ে মারাত্মক নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, প্রতিযোগিতাপূর্ণ রাজনীতির অবর্তমানে জঙ্গীবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। তিনি আরো বলেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর উপর দেয়া রায়ের পর প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে যে আঘাত সরকার করেছে তা নজিরবিহীন ও সম্পূর্ণ সংবিধান বিরোধী। বিচারবিভাগকে ব্যবহার করে বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করবার ষড়যন্ত্র চলছে বলেও জানান তিনি।
সেমিনারে বাংলাদেশের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকেরা অংশগ্রহণ করেন। এদের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য হচ্ছেন নিউইয়র্ক সিটির সাবেক চিফ ইকোনোমিস্ট ড. ইউসুফ রহমান, কন্ঠশিল্পী বেবি নাজনিন, বিএনপি নেতা জিল্লুর রহমান জিল্লু, গিয়াস আহম্মেদ, মোস্তফা কামাল পাশা বাবু, জসীম ভ‚ইয়া, পারভেজ সাজ্জাদ, আতাউর রহমান লিটু, গোলাম ফারুক শাহীন প্রমুখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।