পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো : টেম্পু চালক পিতার হেলপার। এরপর ছিঁচকে চোর থেকে ছিনতাইকারী। সেইসাথে চাঁদাবাজিতে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে সে। কথায় কথায় গুলি করা এখন তার অভ্যাস। চট্টগ্রাম নগরীতে ভয়ঙ্কর ছিনতাইকারী চক্রের গ্যাংলিডার মোঃ ইসমাইল হোসেন ওরফে টেম্পুর অপরাধী হয়ে উঠার গল্প এমনই।
পুলিশ বলছে, টেম্পুর নেতৃত্বে গড়েউঠা নগরীতে তৎপর অসংখ্য ছিনতাইকারী চক্র। টেম্পুর গতিতেই ছিনতাই করে বাহিনী প্রধান টেম্পু। ছিনতাই করতে গিয়ে তার হাতে খুন হয়েছে অনেকে। কত অপরাধ করেছে তার হিসেব নিজেও জানেনা টেম্পু। তবে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজির ঘটনায় পুলিশের খাতায় ২৯ মামলার রেকর্ড আছে। ২৮ বছর বয়সে ভয়ঙ্কর ২৯টি অপরাধের এ রেকর্ড দেখে বিস্মিত পুলিশ কর্মকর্তারাও। গত কয়েক বছরে অন্তত দশবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে টেম্পু। তবে বেশিদিন কারাগারে থাকতে হয়নি তাকে। জামিনে বের হয়ে এসে দ্বিগুণ গতিতে অপরাধ চালিয়ে গেছে সে।
শনিবার গভীর রাতে নগরীর হিলভিউ আবাসিক এলাকা থেকে টেম্পুকে পাকড়াও করে পুলিশ। এসময় তার ৫ সহযোগীকেও গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার করা হয় দু’টি আগ্নেয়াস্ত্র, চার রাউন্ড কার্তুজ, দু’টি ছুরি ও চারটি চাপাতি। তার সহযোগীরা হলো- মো. সোহেল, জাহিদ হোসেন ওরফে মুন্না, রবিউল ইসলাম মানিক, ইলিয়াছ কাঞ্চন ওরফে কাঞ্চন ও মো. তৌহিদ। টেম্পুর বিরুদ্ধে নগরীর চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ, বায়েজিদ বোস্তামী ও জেলার হাটাহাজারি থানায় ২৯টি মামলা আছে বলে পুলিশের তথ্য।
নগরীর পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ২৮ বছর বয়সী কোন অপরাধীর বিরুদ্ধে ২৯টি মামলা হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন। তবে তার অপরাধ আরও বেশি, অনেক রেকর্ড থানা-পুলিশের কাছেও নেই। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় মোটর সাইকেল ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত টেম্পু দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। গ্রেফতারের পর বিভিন্ন থানা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে মোট ২৯টি মামলার সন্ধান পাওয়া গেছে। তবে তার বিরুদ্ধে মহানগরীর বাইরের থানাগুলোতে আরও মামলা থাকতে পারে।
পুলিশ পরিদর্শক ওয়ালী জানান, পুলিশের হাতে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতারের পর জামিনে ছাড়া পেয়ে টেম্পু আবার ছিনতাইয়ে জড়িয়ে পড়ত। নগরীর বিভিন্ন থানায় ছিনতাইয়ের ঘটনায় তার সম্পৃক্ততার প্রমাণ আছে। ছিনতাই করতে গিয়ে সে একাধিক খুনও করে। নগরীর ফয়’স লেক চক্ষু হাসপাতালের সামনের সড়কে এক ব্যক্তিকে খুন করে ছিনতাই করার ঘটনায় টেম্পুর এক সহযোগী আদালতে জবানবন্দী দিয়েছে বলে জানান তিনি।
টেম্পুদের গ্রামের বাড়ি ল²ীপুরের রামগঞ্জে। তার বাবা ছিলেন টেম্পু চালক। বাবার সাথে টেম্পুতে কাজ করায় তার নাম হয়ে যায় টেম্পু। যে নামে সে সবার কাছে পরিচিতি পায়। তারা চার ভাইয়ের সবাই ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত। টেম্পু জানায়, বড় দুই ভাই খোকন ও ইদ্রিস কারাগারে আছেন, ছোট ভাই সোহাগও বর্তমানে পলাতক। ২০০৭ সালে খতিবের হাট ও মোহাম্মদপুর এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত সে। পরে সে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি করে। ওই এলাকায় কেউ বাড়ি করতে গেলে তাদের কোছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করত। টাকার হিসাব না মিললে গুলি করত।
পুলিশ কর্মকর্তা ওয়ালী বলেন, চাঁদাবাজিতে টেম্পু একটি গ্রুপ গড়ে তোলে। আগে সে নিজে গিয়ে চাঁদাবাজি করলেও পরবর্তীতে তার গ্রুপের সদস্যরা গিয়ে তার নামে চাঁদা আদায় করত এবং তাকে একটি ভাগ দিত। ২০১৪ সালে চান্দগাঁও থানার শমসের পাড়া এলাকায় গ্রেফতারের পর পুলিশ তাকে গুলি করে। এর পর থেকে সে ডান পায়ে খোঁড়া অবস্থায় আছে। ডান পায়ের হাঁটুর নিচে পেছনের অংশে বড় গর্ত হয়ে গেছে। সেখানে টিস্যু পেপারের পুটলি ঢুকিয়ে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিব্যি চলাফেরা করছে টেম্পু। একসময় তার দলে ৫০ জনের বেশি সদস্য থাকলেও গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পুলিশের হাতে গ্রেফতারের পর তারা দল ছেড়ে গিয়ে অনেকে নতুন গ্রুপ তৈরি করে। যারা এখন নগরীতে ছিনতাইয়ের সাথে জড়িত বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।
প্রায় ১৯ মাস কারাগারে থেকে চলতি বছরের শুরুতে জামিনে ছাড়া পায় টেম্পু। তারপর সে আবারও ছিনতাইয়ের সাথে জড়িয়ে পড়ে। টেম্পু পুলিশকে আরও জানায়, সে ও তার সহযোগী সোহেল বিভিন্ন এলাকায় মোটর সাইকেল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়, সুযোগ পেলেই ছিনতাই করে। স¤প্রতি বাদুরতলা এলাকায় এক মাছ ব্যবসায়ীর কাছ থেকে সে ও তার সহযোগী তৌহিদ মিলে ৩০ হাজার টাকা ছিনতাই করে।
২০১৫ সালের ২ জুন শবে বরাতের দিন টেম্পুর ছোট ভাই সোহাগের গুলিতে আসাদুল নামে ১০ বছর বয়েসী এক শিশু মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। এরপর ২৩ সেপ্টেম্বর ভোর রাতে পুলিশের সাথে কথিত বন্দুকযুদ্ধে সোহাগ গ্রেফতার হয়। টেম্পু স্বীকার করে তার তিন ভাই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তার নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি করে। টেম্পুর বাসা নগরীর মোহাম্মদপুর লিভার সোসাইটি এলাকায়। এলাকায় তার বাবাকে সবাই বাম্পার ইউসুফ হিসেবে চিনে। টেম্পু স্বীকার করে স্কুলে পড়ালেখা না করলেও সে ২০০০ সাল থেকে ছাত্রলীগের সাথে ছিল। এলাকায় ছাত্রলীগের মিছিল-মিটিংয়ে অংশ নিত টেম্পু। টেম্পু ও তার সহযোগীদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।