Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ইটের বিকল্প সামগ্রীতে ঝুঁকছে মানুষ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পরিবেশবান্ধব, সাশ্রয়ী ও স্বাস্থ্যঝুঁকি নেই
বছরে ১৭ হাজার কোটি টাকার বেশি পোড়ানো ইট ব্যবহৃত হচ্ছে দেশে। তবে শঙ্কার খবর হলো, এটি উৎপাদনে কাটা হচ্ছে ২৮৪ কোটি ঘনফুট মাটি। যার বেশিরভাগই কৃষিজমি থেকে। ফলে, কমছে জমির উর্বরতা। বিপরীতে এই মাটি পুড়িয়ে এক কোটি টন কার্বন মেশানো হচ্ছে বাতাসে। তাই, বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকিও। স¤প্রতি ইট উৎপাদনের জন্য নতুন আইনে কয়েক পদ্ধতিকে আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব বলে ঘোষণা করা হলেও, তাতে কমানো যাচ্ছে না মাটির ব্যবহার। তাই, ইটের বিকল্প সামগ্রীর ব্যবহার জোরালো হচ্ছে দিন দিন। যদিও ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞরা ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট বøকের কথা বলেছেন। এই বøক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণ খরচ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। এছাড়া বাংলাদেশ হাউজ বিল্ডিং রিসার্চ ইনিস্টিটিউটে (এইচবিআরআই) প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্রমবর্ধমান নগরায়নের ফলে সারা দেশেই প্রচুর পাকা দালান নির্মিত হচ্ছে। সার্বিক সুবিধা বিবেচনায় মানুষ এখন কাঠ, টিনের ঘরের বদলে ইট, সিমেন্টের ঘর বানাচ্ছে। ফলে বেড়ে গেছে ইটের চাহিদা। বাংলাদেশে সাধারণত জমির উপরিভাগের মাটি পুড়িয়ে ইট প্রস্তুত করা হয়। এতে পরিবেশের নানামুখী ক্ষতি হচ্ছে। তাই পরিবেশ দূষন এবং স্বাস্থ্যহানি রোধে কংক্রিট বøকের ব্যবহার বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন তারা।
সূত্র মতে, এমনিতেই দেশে আবাদী জমির পরিমাণ অপ্রতুল। ইটভাটার জন্য এই জমি আরও সংকুচিত হচ্ছে। ইটভাটা সংলগ্ন জমিও হারাচ্ছে তার উর্বরতা। দ্বিতীয়ত, ইট পোড়ানোর ফলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে বৃক্ষসম্পদ। গাছ কাটা হচ্ছে ইটভাটায় পোড়ানোর জন্য। তৃতীয়ত, ইটের ভাটা থেকে নির্গত বিষাক্ত ধোঁয়া দূষিত করছে বাতাস এবং হুমকির মুখে পড়ছে জনস্বাস্থ্য। এসবকিছু বিবেচনায় সরকার স্বিদ্ধান্ত নিয়েছে আগামী ২০২০ সালের মধ্যে দেশের সকল ইটভাটা বন্ধ করে দেয়ার। এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে ইটের বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ও ব্যয় সাশ্রয়ী নির্মাণ উপকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছে এইচবিআরআই। এইচবিআরআই সূত্রে জানা যায়, উদ্ভাবিত এই বøক ব্যবহার করলে ভবনের নির্মাণ খরচ ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমানো সম্ভব। তবে এখন পর্যন্ত এই প্রযুক্তি সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া যায়নি বলে দেশবাসী এর সুফল এখনই পাবে না।
এইচবিআরআই’র গবেষণাগারে প্রতিনিয়ত গবেষণা চলছে বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ও প্রযুক্তি উন্নয়নের। নদী ড্রেজিং করে যে বালুমাটি পাওয়া যায় তার সাথে ১০শতাংশ হারে সিমেন্ট মিশিয়ে উচ্চচাপে ইট বানানো সম্ভব হয়েছে, যা সাধারণ ইটের চেয়ে গুণগত মানে ভালো এবং দাম কম পড়ে। তাছাড়া তারজালি ব্যবহার করে ফেরোসিমেন্ট প্রযুক্তিতে কম পুরুত্বের এবং কম খরচের পার্টিশন ওয়াল তৈরি করা যায়। আর বিকল্প নির্মাণ প্রযুক্তি হিসেবে ইন্টারলক সিস্টেমের (কোন ধরনের সিমেন্ট বা প্লাস্টার ছাড়াই জোড়া লাগে এমন)এক প্রকার ইটের প্রস্তুতি নিয়ে গবেষকরা খুবই আশাবাদী। তার পাশাপাশি থার্মাল ব্রিক নিয়েও চলছে জোর গবেষণা। এই ইট খুবই হালকা এবং ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য দুর্দান্ত কাজে দেয়।
এইচবিআরআই কর্মীরা জানান, রাজধানী ঢাকার ২০টির অধিক প্রতিষ্ঠান তাদের নিজেদের ভবন নির্মাণে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তারা এসব কংক্রিট বøক বিক্রি করে না। তবে ভবিষ্যতে ঢাকার বাইরে এসব বøক বিক্রি হতে পারে। কারণ, ২০২০ সালের মধ্যে ইটভাটা বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে এটি ছাড়া বিকল্প থাকবে কম।
তাদের মতে, পোড়াতে হয় না বলে এটা পরিবেশবান্ধব। বেশ কয়েকটা কোম্পানি বøক প্রস্তুত করছে। কনকর্ড, বিটিআই, মির, এসইএল ইত্যাদি। এসব বøক দিয়ে বানানো বিল্ডিং ইটের চেয়ে অধিক স্থায়ী হবে। এমনকি কংক্রিট বøক ছাদ ঢালাইয়ের কাজেও ব্যবহার করা যায়।
সূত্র মতে, অবিরামভাবে পুড়ছে মাটি। আর কাঠ-কয়লা দিয়ে সেই মাটি পুড়িয়ে বাতাসে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত কার্বন। পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশে থাকা প্রায় সাত হাজার ভাঁটার চিত্র এ রকম। যাদের তিন ভাগের একভাগই জ্বালানি হিসেবে অবৈধভাবে ব্যবহার করছে জ্বালানি কাঠ। আধুনিক সভ্যতাকে এগিয়ে নেয়ার অজুহাতে এভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে তৈরি করা হচ্ছে একেকটি ইট। যা আরো আধুনিক উপায়ে উৎপাদনের উদ্দেশে পুরনো আইনকে সংস্কার করে ইটভাঁটা নিয়ন্ত্রণ আইন করা হয় ২০১৩ সালে। কিন্তু চার বছরেও তার বাস্তবায়ন হয়নি খুব বেশি। বিপরীতে বিনিয়োগের অভাবে গড়ে ওঠেনি পরিবেশবান্ধব কারখানাও। আর যেগুলো তৈরি হয়েছে, সেগুলোরও মাটির উৎসও সেই কৃষিজমি।
বিশ্বে পোড়া ইটের বড় অংশই উৎপাদন হয় এশিয়ায়। আর ক্লাইমেট অ্যান্ড ক্লিন এয়ার কোয়ালিশনের তথ্য বলছে, চীন একাই প্রস্তুত করে ৭৭ শতাংশ। এছাড়া, বড় অংশের যোগান আসে ভারত থেকেও। তবে, দেশ দুটি বড় মাপে ব্যবহার করলেও, মাটির উৎস এবং স্থান ঠিক করা হয়েছে সব রকম ঝুঁকি বিবেচনায়। যা সম্ভব হয়নি বাংলাদেশে। তাই, আইইউসিএনের হিসাবে, বছরে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে ফসল উৎপাদন হয় না প্রত্যাশা অনুযায়ী। আর্থিক মূল্যে যা ইটের চেয়ে বেশি। এমন অবস্থায়, বিকল্প সামগ্রী ব্যবহারের বিষয়টি সামনে এসেছে জোরালোভাবে।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা এসডিজি অন্যতম এজেন্ডা হলো, পরিবেশবান্ধব নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার নিশ্চিত করা। যা বাংলাদেশের জন্যও হয়ে উঠেছে বড় চ্যালেঞ্জ।
এইচবিআরআই এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা রুবেল আহমেদ বলেন, আমরা বর্তমানে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও তা জনগণের কাছে জনপ্রিয় করতে কাজ করে যাচ্ছি। পোড়া ইটের বিকল্প হিসেবে কংক্রিট বøক অনেক বেশি কার্যকর, ব্যয়সা সাশ্রয়ী, টেকসই ও পরিবেশ বান্ধব। এছাড়াও নদীর ড্রেজিং সয়েলে উচ্চ চাপে ইট বানানোর প্রযুক্তি নিয়েও কাজ করছি।



 

Show all comments
  • দিপু ৮ জানুয়ারি, ২০১৮, ১১:৩০ এএম says : 0
    থারমান ব্লক োথায় তর হয়। কভাব সংগ্ হ করব। বস্তারত আরও জানত চাই রথারমান ব্লক সম্ব ্ধ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবেশবান্ধব


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ