Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বছরে ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব

প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

গোপালগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে বছরে ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। ধানের চারা রোপণ, আগাছা নিড়ানি, গুটি ইউরিয়া স্থাপন ও ধান কাটা যন্ত্র ব্যবহার করে কৃষক শ্রমিকের খরচ বাঁচিয়ে অধিক ফসল ঘরে তুলে লাভবান হবেন। অন্যদিকে দেশের খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি পাবে। গত বুধবার গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার প্রভাকরদি গ্রামে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় আয়োজিত পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি বিষয়ে উদ্বুদ্ধকরণ সভায় কৃষি বিজ্ঞানীরা এ তথ্য তুলে ধরেন। এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ভাগ্য রানী বণিক। পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ খায়রুল আলম ভূইয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সভায় ব্রির মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ আব্দুর রহমান, প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ গউস আলী, ড. মোঃ আমীর হোসেনসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন। কৃষি বিজ্ঞানীরা জানান, ট্রেতে ধানের চারা তৈরি করা হয়। মৌসুমভেদে ধানের চারা রোপণ যন্ত্রের সাহায্যে চারার শেকড় অক্ষত রেখে জমিতে চারা লাগানো যায়। সনাতন পদ্ধতিতে চাষাবাদে বিঘাপ্রতি ৪/৫ কেজি বীজ লাগে। চারা রোপণ যন্ত্রের সাহায্যে ধান রোপণে বিঘাপ্রতি মাত্র ২ থেকে ৩ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজের খরচ সাশ্রয় হয়। কম বয়সী চারা সঠিক সময়ে রোপণের ফলে ধানের অধিক কুশি জম্মে। ফলে ৫ থেকে ৮ ভাগ ধান বেশি উৎপাদিত হয়। দুই জন শ্রমিক সারা দিনে এ মেসিনের সাহায্যে ১৬ থেকে ১৭ বিঘা জমিতে ধান রোপণ করতে পারেন। এতে শ্রমিকের খরচ সাশ্রয় হয়। ধানের জমিতে ২/৩ বার ইউরিয়া সার ছিটিয়ে প্রয়োগ করা হয়। এতে ইউরিয়া সারের অপচয় হয়। ক্ষেতে ছিটিয়ে ইউরিয়া সার ব্যবহার করলে পরিবেশের ওপরও ক্ষতিকারক প্রভাব ফেলে। ইউরিয়া স্থাপন যন্ত্রের মাধ্যমে জমির মাটির মধ্যে মাত্র একবার গুটি ইউরিয়া স্থাপন করা হলে সার ৩০ ভাগ কম লাগবে। ফলন একই রকম পাওয়া যাবে। পরিবেশের ওপর ক্ষতিকারক প্রভাব কমানো সম্ভব হবে। নিড়ানী যন্ত্রের সাহায্যে আগাছা নিড়ানো হলে হেক্টরপ্রতি কৃষকের ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা কম খরচ হবে। এছাড়া ধান কাটা মৌসুমে শ্রমিক সংকট দেখা দেয়। ধান পেকে গেলেও কৃষক ধান কেটে ঘরে তুলতে পারেন না। ফলে অধিক পাকা ধান ঝরে পড়ে। কৃষক প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন থাকেন। ধান কাটা যন্ত্রের সাহায্যে ১৫/১৬ জন শ্রমিক ১৫ থেকে ১৬ বিঘা জমির ধান ১ থেকে দেড় ঘণ্টায় কেটে ফেলতে পারেন। ধান রোপণ, গুটি ইউরিয়া স্থাপন, নিড়ানি ও ধান কাটার মেশিন চালাতে খরচ খুবই কম বলে জানান কৃষি বিজ্ঞানীরা। প্রভাকরদি গ্রামের কৃষক আয়ুব আলী শেখ, ফরিদা বেগম বলেন, কৃষি যন্ত্রপাতি ও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফসল উৎপাদনে খরচ ও শ্রমিক কম লাগছে। বেশি উৎপাদন পেয়ে আমরা লাভবান হচ্ছি। কৃষি বিজ্ঞানী ড. এ কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন প্রজম্ম কৃষিকাজে আগ্রহ কম দেখাচ্ছে। ফলে কৃষিতে শ্রমিক সংকট দেখা দিয়েছে। আগামীতে এ সংকট প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। কিন্তু আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর মুখে অন্ন তুলে দিতে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। তাই ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট শ্রমিকের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে ধান উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহারে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছে। পিরোজপুর-গোপালগঞ্জ-বাগেরহাট সমন্বিত কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ড. মোঃ খায়রুল আলম ভূইয়া বলেন, ধান রোপন, গুটি ইউরিয়া স্থাপন, নিড়ানী ও ধান কাটার যন্ত্র আমরা কৃষককে ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছি। এতে করে কৃষক শ্রমিক, ধানবীজ ও ইউরিয়া সারের খরচ সাশ্রয় করে ধানের উৎপান বৃদ্ধি করতে পারে। এক কৃষক লাভবান হবে। আমার কৃষক ও কৃষির উন্নতি সাধিত হবে। গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের ডিডি সমীর কুমার গোস্বামী বলেন, গোপালগঞ্জে পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে। এতে একদিকে যেমন উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অন্যদিকে কৃষক লাভবান হচ্ছে। এ জেলা খাদ্য উদ্বৃত্ত জেলা। কৃষক কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. ভাগ্য রানী বণিক বলেন, প্রতি বছর সারাদেশে ১ কোটি ১৬ লাখ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩ কোটি ৪৫ লাখ মে. টন ধান উৎপাদিত হয়। কৃষক পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানের উৎপাদন আরো ২০ লাখ টন বৃদ্ধি করতে পারেন। আমরা সে লক্ষ্যেই কৃষক ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের উদ্বুদ্ধ করছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবেশবান্ধব কৃষি যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তির ব্যবহার বছরে ২০ লাখ টন ধান উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ