Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিকল্পিত নগর উন্নয়নের বিকল্প নেই

প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ভবিষ্যতের চিন্তা-ভাবনা না করেই অপরিকল্পিতভাবে রাজউক ঢাকা শহর সম্প্রসারণ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। তিন দিনব্যাপী সপ্তম আন্তর্জাতিক বাংলাদেশ ইনোভেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট এক্সপো ও গ্রিন সামিটের সমাপনী অনুষ্ঠানে গত রোববার তিনি এ মন্তব্য করেছেন। ঢাকা সম্প্রসারণে রাজউকের সমালোচনা করে মন্ত্রী বলেছেন, পৃথিবীর অনেক শহর দেখেছি, তারা পরিকল্পনা অনুযায়ী শহর গড়ে তোলেন। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক ও ওয়াশিংটন দুইশ বছর আগের শহর, দুইশ বছর পরে কী হবে সে পরিকল্পনা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু রাজউকের পরিকল্পনাবিদেরা ঢাকা শহরকে পরিকল্পনা করে গড়ে তোলেননি। এমনকি ঢাকার কোথায় স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট হবে, এ চিন্তাও করা হয়নি। রাজউকের চিন্তা ছিল পুরান শহরের কতটুকু যাবে, হয়তো তেজগাঁও পর্যন্ত যাবে। এমনকি বনানী, গুলশান ও ধানমন্ডিও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তুলেছে রাজউক। তিনি আরো বলেছেন, রাজউক কোনো চিন্তা ছাড়াই ঢাকা সম্প্রসারণ করছে। রাজউক শুধু প্লট করছে আর বিক্রি করছে। এসব প্লটের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়বে তার ব্যবস্থা করা হয়নি। বর্তমান পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করে মন্ত্রী বলেছেন, আমরা গ্রিন বিল্ডিং ধারণা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সব অথরিটিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, প্রতিটি বিল্ডিংয়ের নিচে যাতে ছোট এসটিপি থাকে। ওয়াসার দিকে আর তাকিয়ে না থেকে নিজস্ব পানির ব্যবস্থা করতে হবে। নতুন পরিকল্পনার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেছেন, নতুন স্যাটেলাইট সিটিগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হচ্ছে। ঝিলমিল ও পূর্বাচল গ্রিন সিটি হবে। এসব সিটিতে নিজস্ব পানি ও বিদ্যুতের ব্যবস্থা থাকবে।
দেশের সকল সচেতন মহল যখন একটি পরিকল্পিত নগরী গড়ে তোলার সপক্ষে অভিমত ব্যক্ত করছে, তখন গৃহায়ণমন্ত্রীর কথা শুনে মনে হচ্ছে, নগর উন্নয়নের দায়িত্ব যে কর্তৃপক্ষের তাদের মধ্যে বড় ধরনের গোলমাল রয়েছে। মন্ত্রী যে অভিযোগ করেছেন, অনুরূপ অভিযোগে তার পূর্বসূরি কারো কারো বিরুদ্ধে মামলা চলছে। এটা বলা হয়ে থাকে, এসব অভিযোগের সাথে কেবল রাজউক নয়, বরং দায়িত্বশীলদেরও সম্পৃক্ততা থাকে। মন্ত্রী পরিকল্পিত নগরায়ণের ক্ষেত্রে যে কথা বলেছেন তা নিয়ে কারো দ্বিমত না থাকলেও খোদ রাজউকের মধ্যে কেন গলদ রয়েছে তা অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার। এ কথা অনেকটাই ওপেন সিক্রেট যে আইন-কানুন যাই থাক না কেন টাকা দিয়ে রাজউকে সব করানো যায়। একটি আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে আজ যেসব সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে তার সাথে এই সংস্থার একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার সম্পৃক্ততার কথা কোনো মহলেরই অজানা নয়। অনিয়মের এই সংস্কৃতি তা পুরনো হলেও দূর করার কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বরং এ সংস্কৃতি গেড়ে বসেছে। স্বাধীনতার পর থেকে একটি আধুনক নগরী গড়ে তোলার জন্য যে কর্মপন্থা তৈরি করা প্রয়োজন ছিল, রাজউক তা করতে পারেনি। এই সুযোগ অনেকেই নিয়েছে। নগরীর খাল, ডোবা, জলাশয়, নর্দমা, খেলার মাঠ দখল হয়ে গেছে। অপরিকল্পিতভাবে যত্রতত্র গড়ে ওঠা ভবন এখন নগরজীবনের কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলার মাঠ নেই, হাঁটার জায়গা নেই, বুক ভরে নিঃশ্বাস নেয়ার সুযোগ নেই। এর সাথে যুক্ত হয়েছে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার অসম প্রতিযোগিতা। দেখার কেউ না থাকায় পরিস্থিতির দিন দিনই অবনতি হচ্ছে। এই বাস্তবতায় খোদ মন্ত্রীই যখন রাজউকের ব্যাপারে মুখ খুলেছেন তখন অবশ্যই ভাবার অবকাশ রয়েছে।
বলাবাহুল্য, যথাযথ নজরদারির অভাবেই খোদ রাজধানীর এই দুর্দশা। এর থেকে মুক্তির উপায় বের করার দায়িত্ব নীতিনির্ধারকদের। এসব ক্ষেত্রে এমন কোনো সংকট থাকার কথা নয় যা সমাধানের অযোগ্য। একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তোলার ক্ষেত্রে আপসহীন থাকতে হলে সর্বাগ্রে শক্ত নৈতিক ভিতের ওপর দাঁড়াতে হবে। প্রতিদিন রাজউকে কী ঘটছে তার প্রকৃত মনিটরিং করা গেলে অবশ্যই সংস্থাটির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ উঠত না। প্লট বাণিজ্য নতুন কিছু নয়। এটা কেবল রাজউক করছে, তা নয়। এর সাথে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের সম্পর্ক রয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্লট বাণিজ্যিকে এক ধরনের জুয়া হিসেবেও বলা যেতে পারে। ক্ষমতার সাথে যোগাযোগকারীরা অল্প টাকায় প্লট দেয়ার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মধ্যবিত্তদের সর্বস্বান্ত করছে। এসব ভূমিদস্যুকে নিয়েই গড়ে উঠেছে রাজউকের বিশেষ চক্র। এদের রুখতে হলে শক্তিশালী অবস্থানে থাকতে হবে। একটি আধুনিক নগর গড়ে তুলতে সকলেই আন্তরিক হবেন-এটাই প্রত্যাশিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিকল্পিত নগর উন্নয়নের বিকল্প নেই
আরও পড়ুন