পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের প্রতিবাদে জাতীয় সংসদে ঝড় তোলেন মন্ত্রী ও এমপিরা। গতকাল বুধবার জাতীয় সংসদে ১৪৭ (১) বিধিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় এবং প্রধান বিচারপতির অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ বাতিলের দাবি জানিয়ে জাসদ একাংশের কার্যকরী সভাপতি মঈন উদ্দিন খান বাদলের আনা নোটিশের উপর সাধারণ আলোচনায় তারা প্রধান বিচাপতির এখতিয়ার ও সংসদকে অপরিপক্ব বলার প্রতিবাদ করেন।
নোটিশে বাদল বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রায়ে ষোড়শ সংশোধনীতে ‘আল্ট্রা ভাইরাস’ ঘোষণা বাতিল ও প্রধান বিচারপতি কর্তৃক জাতীয় সংসদ সম্পর্কে এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে অসাংবিধানিক, আপত্তিকর ও অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে তা বাতিল করতে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেয়া হোক।’ এরপর এবিষয়ে একে একে বক্তব্য দেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রুস্তম আলী ফরাজী, শ্রম প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, এমপি তাহজীব আলম সিদ্দিকী, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, জাতীয় পার্টির ফকরুল ইমাম প্রমুখ।
নোটিশ উত্থাপন শেষে বাদল বলেন, রায়ের মধ্য দিয়ে প্রধান বিচারপতি তার চেহারাটা উন্মোচন করেছেন। যেটা আমাদের জনগণকে অনেক দুঃখ দেবে। আপনারা সামরিক আইনকে অবৈধ বলছেন আবার সামরিক আইনের গর্ভে জন্ম নেয়া জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে রাখতে চাচ্ছেন। কোন অধিকার বলে ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছেন? এ রায় জাতীর সামনে একটি অশনি সংকেত বলে অনেকে মনে করছেন। তাহলে কি আপনি মনে করেন অস্ত্রধারী উত্তর পাড়াই উত্তম। তিনি বলেন, এই সংসদে অনেক সদস্যই রয়েছেন, যারা সারাজীবন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। আপনি (প্রধান বিচারপতি) সংসদকে অপরিপক্ব বলেছেন। পরিপক্ব প্রধান বিচারপতি আপনার বোঝা উচিত এই সংসদ তার যে সীমারেখা তা অতিক্রম করেনি। নোটিশে বাদল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়ে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার পর্যবেক্ষণে অনেক অপ্রাসঙ্গিক বিষয়ে অপ্রয়োজনীয় অবাঞ্ছিত বক্তব্যের পাশাপাশি বাংলাদেশের এমপিদের অপরিপক্ব হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার চাদর (দ্য ফেবরিক অব ড্যামক্রেসি) সৃষ্টি হয়েছে সংসদ, বিচার বিভাগ ও নির্বাহী বিভাগের সমন্বয়ে। যাতে সংবাদপত্র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। আমাদের সংবিধানের ৭(১) বিধিতে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বের কার্যকর হবে। সংবিধানের একটি ধারা তুলে ধরে উত্থাপিত নোটিশে বলা হয়- জনগণের অভিপ্রায়ে পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সাথে অসামঞ্জস্য হয় তাহলে, সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ ততখানি বাতিল হবে। সংসদে ব্যাপক আলোচনার নিরিখে এই সমস্যার অবসান চাই। তাতে করে গণবিরোধী শক্তির ‘ঘোলা পানিতে মাছ শিকার’ প্রচেষ্টা গুড়িয়ে যায়।
বক্তব্যে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংবিধানের ৭ম অনুচ্ছেদে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে-জনগণ এ সংবিধানের মালিক। আর আমরা জনগণের দারা নির্বাচিত। তাই এই পার্লামেন্টের বিরুদ্ধে যদি কোন মন্তব্য করা হয় তাহলে আমরা খুবই বিব্রত হবো। ৭২ এর ৯৬ অনুচ্ছেদে ফিরে আসা আমাদের উদ্দেশ্য ছিলো। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ একটি রায় দিয়ে তা বাতিল করেছেন। তারা এর জন্য কিছু এমিকাস কিউরি নিয়োগ করেছেন। ড. কামাল হোসেন, যিনি আগে আওয়ামী লীগে ছিলেন পরে নিজে দল করেন। ব্যারিস্টার আমিরুল ইসলাম আ’ লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন, রোকন উদ্দিন মাহম্মুদ সুপ্রিম কোর্টে এক কথা বলেছেন, পরে আরেক কথা বলেছেন। একে একে তোফায়েল আহমেদ সব এমিকাস কিউরিদের সম্পর্কে কথা বলেন।
তিনি বলেন, এই সুপ্রিম কোর্টে নিরপেক্ষ বা আওয়ামী লীগ সম্পৃক্ত নিরপেক্ষ লোক পাওয়া গেল না? কিন্তু এই সব কিউরিদের দিয়ে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করার হলো। কেন তা করা হলো। কেন নিরপেক্ষ এমিকাস পাওয়া গেল না। কেন তাদের মতামত নেয়া হলো না। এসময় তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন কর্মকান্ড তুলে ধরেন। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন সময়ের ভাষণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি অহেতুক একটা বিতর্কের সৃষ্টি করেছেন। তিনি অহেতুক আইন বিভাগের সঙ্গে বিচার বিভাগের সংঘাত সৃষ্টি করছেন। তিনি পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের তুলনা করেছেন। তিনি তা করতে পারেন না। এসময় পানামা পেপার্সে পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের নামে অর্থ পাচারের অভিযোগ করে। এর তদন্তে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট ৬ জন তদন্ত কর্মকর্তার মধ্যে ২ জন সেনা কর্মকর্তাকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। কোন সভ্য দেশে এটা হতে পারে- সেনা কর্মকর্তা নিয়োগ?
১৯৫৬ এ সংবিধানে ছিল সংসদ ইমপিচ করতে পারবে। কিন্তু ১৯৬২ সালে আইউব খান এই সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল করেন। আজকে প্রধানবিচারপতি এই সামরিক জান্তার সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল বেছে নিয়েছেন। আমরা বলেছিলাম আমরা কোন বিচারপতি অপসারণে ২০ সদস্যের কমিটি করবো। কিন্তু কোন সন্তান ভুমিষ্ঠ হবার আগেই তা ধুলিসাৎ করা হলো। আমরা চাইলাম সবার মধ্যে রাখতে। কিন্তু তিনি চাইলেন একজনের হাতে রাখতে। এখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কার হতে আসলো। ঘুরে ঘুরে সেই একজনের কাছে গেল। আমরা সবার হাতে দিতে চেয়েছিলাম। এখন কোন সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্ট নিতে গেলে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এনিয়ে নিশ্চয় পরামর্শ করবেন। তাহলে ঘুরে ফিরে এলো সেই প্রধানমন্ত্রীর হাতে। কেননা সংসদই প্রেসিডেন্ট নিয়োগ করে।
তোফায়েল আহমেদ প্রধান বিচারপতির উদ্দেশ্যে বলেন, তিনি ভুলে গেছেন, জাতীর জনকের নেতৃত্বে দেশের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তের মানুষ এক কাতারে চলে আসে। দেশে আমরা যখন সংবিধান নির্মাণ করি তখন অনেক বিচারপতি স্কুলে পড়তেন। বিচারপতিরা নিয়োগপ্রাপ্ত হন, তারা নাকি পরিপক্ব, আর আমরা জনগণের ধারা নির্বাচিত আমরা নাকি অপরিপক্ব। আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করতে পারবে, প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে পারবে, প্রেসিডেন্ট অবসরে গেলে তার বিরুদ্ধেও পারবে কিন্তু বিচারপতিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি তদন্ত করতে পারবে না। কি অদ্ভুত যুক্তি। আমি আইনমন্ত্রীকে রিভিউতে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করবো।
তিনি (প্রধান বিচারপতি) রায়ের ১১২ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, সংসদ ডিসফাংশনাল। আন্তর্জাতিক বিশ্বে যখন প্রধানমন্ত্রী প্রসংশিত হচ্ছে, তখন তিনি বলছেন, আমরা নাকি ডিসফাংশনাল। এ রায়ে যেগুলো অবাস্তব, অযাচিত তার সঙ্গে সব বিচারপতি একমত হননি। তোফায়েল বলেন, কোথায় গেলেন বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া, তিনি তো উদাও, বন্যার সময়ও তিনি নেই, রোহিঙ্গাদের সময়ও তিনি নেই। তারা রায় না পড়ে প্রথমে বড় বড় কথা বলেছেন। কিন্তু যখন দেখলো জিয়াকে অবৈধদখলদারী বলেছেন, তখন চুপ। যখন প্রধানমন্ত্রী বিশ্বে দরবারে প্রশংসিত হচ্ছেন, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন বিএনপিকে উৎফুল্ল করতে এ রায়টি দেয়া হয়েছে।
দীপু মনি বলেন, বাংলাদেশ যখন এগিয়ে যাচ্ছে তখন নানা অপশক্তি একে পিছিয়ে নেবার জন্য কাজ করছেন। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে সংসদকে অপমান করা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের অপমান করা হয়েছে। এ রায়ের ফলে অপশক্তি উৎসাহিত হয়েছে। এ রায় আমরা মানি না। এর বিরুদ্ধে রিভিউয়ের প্রস্তাব আমি দাবি করছি।
এরপরে সংসদ সদস্য ফজিলাতুন নেসা বাপ্পি প্রধান বিচারপতির ব্যক্তিগত আক্রমণ করে বলেন, তিনি কি তার সম্পদ গোপন করতে পারেন, রাজউকের প্লট অন্যায়ভাবে নিয়েছেন। তিনি যে সব কিউরিদের নিয়ে রায় দিয়েছেন তাদের মধ্যে ১ জন ছাড়া আর সবাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তিনি বলেন, এ রায় বায়াস্ট রায়, এটাকে বাতিল করতে আইনানুগ ব্যবস্থা নিন।
রুস্তম আলী ফরাজী বলেন, বিষয়টি খুব সেনসেটিভ। পৃথিবীর ইতিহাসে এত দ্রæত সংবিধান আমাদের মত কোন দেশে হয়নি। এটি স্বাধীনতার আলোকে নিয়ে সংবিধান রচিত হয়েছে। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের সময় বিচারপতিরা সংবিধানের সব বিষয়গুলো পড়ে দেখেছিলেন কিনা। তিনি বলেন, এখানে পর্যবেক্ষণে কিছু অপ্রাসঙ্গিত কথা এসেছে। বঙ্গবন্ধু মানে বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু মানেই স্বাধীনতা। এতে কোন লোক যদি আপত্তি করে তিনি জ্ঞান পাপি। তিনি বলেন, পার্লামেন্ট অপরিপক্ব হয় কিভাবে। এটি কি একদিনে গড়ে ওঠে, কত বছরে সংসদ গড়ে ওঠে। আমাদের সংসদ অনেক পরিপক্ব। তাই একে ছোট করার কোন উপায় নেই। যারা বলেছে, তারা না বুঝে বলেছে, তারা রাজনীতিতে একটা অশনি সংকেত আনার জন্য বলেছে।
তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা যাবে না, আর বিচারপতিকে ব্যক্তিগতভাবে আক্রমণ করা যাবে না। আমরা তো তা করিনি। কিন্তু উনি পার্লামেন্টকে কেন হেও করলেন, এটার আমি প্রতিবাদ করছি। তিনি এ রায়ের রিভিউ করার জন্য আইনমন্ত্রীকে আহ্বান জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।