পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বহুল আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের করে দেয়া আপিল বিভাগের রায় বাতিল চেয়ে রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন কার্যক্রম পুরাদমে চলছে। রায়ের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। ইতোমধ্যে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তার এর নেতৃত্বে গঠন করা হয়েছে একটি বিশেষ টিম।
দিন রাত পরিশ্রম করে রিভিউ সংক্রান্ত কাজ করছেন টিমের সদস্যরা। পয়েন্টগুলোর খসড়া প্রস্তুুত চলছে। কাজ শেষ হলে রিভিউ আবেদন হবে। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে রিভিউ আবেদন করা হতে পারে বলে সূত্রে জানা যায়। আওয়ামী পন্থী আইনজীবীরা বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী রায়ে আওয়ামী লীগ ও সরকার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে পুরা রায়টি বাতিল আমাদের প্রত্যাশা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পদক শ ম রেজাউল করিম ইনকিলাবকে বলেন, সামগ্রিকভাবে আমরা (সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী) পুরা রায়টি বাতিলের প্রত্যাশা করি। কারণ যোড়শ সংশোধনী যে যুক্তিতে বাতিল করা করেছেন তা গ্রহণ যোগ্য নয়। কারণ ষোড়শ সংশোধনী নতুন কোন আইন নয়।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক আরো বলেন, সংবিধানের মূল অনুচ্ছেদ পূণ প্রতিষ্ঠিত করা। এটাকে নতুন আইন প্রনয়ণ করা সুযোগ নেই। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৭ জন বিচারপতির বেঞ্চের দেয়া রায়টি ৫ বিচারপতির সমন্বয়ের বেঞ্চ রিভিউ আবেদনের শুনানি গ্রহণ করতে পারবেন কিনা-জানতে চাইলে এই আইনজীবী নেতা বলেন, আমি যতটুকু জানি আপিল বিভাগের বিচারপতি নিয়োগের সম্ভাবনা আছে। প্রথমত আমরা আগে ফাইল করব। এরপর আদালত যদি মনে করে তাহলে হাইকোর্টের বিচারপতিদেরকে নিয়ে শুনানি করতে পারেন। সেটা আদালতের ব্যাপার।
এ প্রসঙ্গে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, বাংলাদেশে ইতিহাস্ েএই্ প্রথম অ্যাটর্নী জেনারেল এর অফিস ১১ সদস্য টিম গঠন করেছে রিভিউ এর কাজ পরিচালনা করার জন্য। এটা তো আগে কখনো দেখি নাই, শুনি নাই। তিনি আরো বলেন, রায়ের পর থেকে কিছু পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকারের আপত্তি আছে। সেটা নিয়ে রিভিউ করতে পারেন এমন কথা রায়ের পর থেকে শুনিছি। রিভিউ হতে পারে। রিটকারী এই আইনজীবী আরো বলেন, আপিলের পূর্নাঙ্গ বেঞ্চে রিভিউ আবেদন শুনানি হতে পারে।
সূত্রে জানা যায়, ১১ অক্টোবর রায়ের সার্টিফায়েড কপি পান অ্যাটর্নি জেনারেল। আইন অনুযায়ী, রায়ের সত্যায়িত অনুলিপি পাওয়ার এক মাসের মধ্যে রিভিউ করতে হয়। কমিটির মতে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি অনেক বড়। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণা বহাল রেখে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া রায় পর্যালোচনা ও পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন প্রস্তুুতির জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল এর নেতৃত্বে ১১ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। এ সদস্যের এই প্যানেলে আছেন দুজন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, সাতজন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ও একজন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল। রায়ের অনুলিপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল এর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সংবিধানের ১০৫ ধারা অনুযায়ী আপিল বিভাগ কর্তৃক রায় বা আদেশ পুনর্বিবেচনার আবেদন শিরোনামে আবেদনটি করা হতে পারে। রায় পর্যালোচনার পাশাপাশি পুনর্বিবেচনার আবেদনেরও প্রস্তুুতি চলছে। ১৫ অক্টোবর থেকে প্রতি সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ চলছে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, পর্যালোচনা শেষে প্রস্তুুতি সম্পন্ন হলেই ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে দেয়া আপিল বিভাগের রায় রিভিউ আবেদন জানানো হবে। সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানিয়েছেন। ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়ের বৃহৎ পরিসরে পর্যালোচনা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেলের গঠিত টিম। ১৫ অক্টোবর থেকে ওই টিম প্রতি কার্যদিবসে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত পর্যালোচনা করছেন।
জানা যায়, প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের ৭ জন বিচারপতির বেঞ্চের দেয়া রায়টি প্রকাশিত হয় ১ আগস্ট। প্রধান বিচারপতি বর্তমানে দেশের বাইরে আছেন ছুটিতে। আর একজন বিচারপতি গেছেন অবসরে। ফলে এখন আপিল বিভাগের বিচারপতির সংখ্যা ৫ জন। নিয়ম অনুযায়ী ৭ জন বিচারপতিকেই সরকারের করা রিভিউ আবেদন শুনতে হবে।
ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিলেন, যার বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। গত ১৩ জুলাই সর্বসম্মতিতে রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ করে রায় দেন। এরপর আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের দিনই সংশ্লিষ্ট শাখায় রায়ের প্রত্যয়িত অনুলিপি চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করেছিল। রায় বাতিল করার জন্য যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব জাতীয় সংসদ পাস হয়। রায়ে জাতীয় সংসদ সম্পর্কে ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে প্রধান বিচারপতির ‘অসাংবিধানিক, আপত্তিকর, অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ’ বাতিলের জন্য আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টিও একই প্রস্তাবে পাস হয়। এরপর জাতীয় সংসদে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করবেন জানিয়ে আইনমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন, এতে তাঁরা কামিয়াব হবেন।
উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। নয়জন আইনজীবীর করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৬ সালের ৫ মে ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। ৩ জুলাই আপিল বিভাগও ওই রায় বহাল রাখে। ৭৯৯ পৃষ্ঠার রায়ে সরকার, সংসদ, রাজনীতি, নির্বাচন কমিশন, বিচার বিভাগ, সামরিক শাসন এবং রাষ্ট্র ও সমাজের বিষয়ে এমন অনেক পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। এরপরই ওই রায় ও রায়ে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার দেয়া পর্যবেক্ষণের তীব্র সমালোচনা করেন সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নেতারা। এমনকি বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের নেতারা প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের দাবিতে সরব হন। পাশাপাশি রায়ে প্রধান বিচারপতির দেয়া পর্যবেক্ষণও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে প্রত্যাহারের দাবি জানান। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট অবকাশের শেষে আন্দোলনের হুমকিও দেন। চলতে থাকে নানামুখী আলোচনা- সমালোচনার। বিএনপি পক্ষ থেকে এ রায়কে ঐতিহাসিক বলে আখ্যায়িরত করেন। একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি নেতারা রায়কে স্বাগত জানান। আরে মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট অবকাশ শেষ হওয়ার ঠিক আগের দিন প্রধান বিচারপতি এক মাসের ছুটির কথা জানান আইন মন্ত্রনালয়। পরবর্তীতে আরো ১০ দিন ছুটির বাড়ানো কথা জানানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।