পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রিভিউ আবেদন যথাযথ হয়েছে -ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ
এই মুহুর্তে রিভিউ সরকারের অসৎ উদ্দেশ্য -ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন
রিভিউ কপি না পেয়ে মন্তব্য নয় -রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ
বিচারপতি অপসারণ-সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলে রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) আবেদন করেছেন সরকার। সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০৮ পৃষ্ঠার এ আবেদন জমা দেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা। রিভিউ আবেদনে পুরা রায়টি বাতিল চেয়ে ৯৪টি গ্রাউন্ডে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছেন রাষ্ট্রপক্ষ। রিভিউটি শুনানিতে আদালতে বিশদভাবে যুক্তিতর্ক তুলে ধরবেন রাষ্টপক্ষের কৌশলীরা। এছাড়াও রায়ে যেসব অপ্রাসঙ্গিক পর্যালোচনা এসেছে, তা বাতিল চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে অবকাশ শেষে আগামী ২ জানুয়ারি রিভিউ আবেদন শুনানির জন্য কার্যতালিকায় আসতে পারে। এদিকে রিভিউ আবেদনটি যথাযথ হয়েছে বলে মনে করেন বর্তমান সরকারে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ। তবে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের মতে এই্ মুহুর্তে রিভিউ আবেদন সরকারর অসৎ উদ্দেশ্য। আর রিটকারীর আইনজীবী মনজিল মোরসেদ এই মুহুর্তে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বর্তমান সরকারের সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, রায়ে অপ্রাসঙ্গিক বিষয় অবশ্যই বাতিল করা উচিত। কারণ যেখানে এমপিদের, নিবার্চন কমিশনসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূন বিষয় নিয়ে অযাচিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। রিভিউ আবেদনে এ সব বিষয়ে উল্লেখ করেছেন। আমি তো মেন করি ওই সব সমালোচনা প্রত্যাহার করার ক্ষেত্রে করতে সম্পন্ন রায়টি বাতিল হতে পারে। আমিও আশাবাদী এটা নিয়ে। তিনি আরো বলেন, সাত বিচারপতি বেঞ্চ রায়টি হয়েছিল। এখন ৫ জন বিচারপতি আছেন। আদালত চাইলে এতেও রিভিউ শুনানি হতে পারে। কারণ বিচারপতিরা অবসরে যাবেন। এরপর কি রিভিউ শুনানি করা যাবে না। এটা তো হতে পারে না।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ইনকিলাবকে বলেছেন, অসৎ উদ্দেশ্যে এই সময়ে আলোচিত মামলাটির রায় পূনবিবেচনাও জন্য আবেদন করেছেন সরকার। এই মুহুতে প্রধান বিচারপতি পদ শুন্য যেখানে। এই চেয়ারটাকে সামনে রেখে সম্পন্ন অসৎ উদ্দেশ্য এই রিভিউ আবেদন। তিনি আরো বলেন, সংবিধানে ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর থেকে বিচার বিভাগকে উপর নানাভাবে চাপ অব্যাহত রেখেছে সরকার। এ নিয়েও বিচারপতি এস কে সিনহাকেও দেশ থেকে বিতাড়িত করেন। কারণ বিচারপতি এস কে সিনহা স্বাধীন বিচার বিভাগ চেয়েছিলেন। সরকারের এসব পছন্দ হয়নি। তারা আইন মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে বিচার বিভাগ নিয়ন্ত্রণ করে রাখতে চায়। এ বিষয়ে জানতে চইলে রিটকারী আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ইনকিলাবকে বলেন, রিভিউ কপি হাতে পাওয়ার আগে কোন মন্তব্য করব না। আগে আবেদনের কপি দেখি এরপর এ বিষয়ে কথা বলব। অ্যার্টনি জেনালের মাহবুবে আলম বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের বিরুদ্ধে রিভিউ আবেদনে পর্যবেক্ষণসহ আমরা পুরো বায় বাতিল চেয়েছি। রিভিউ নিয়ে আপনি কতটুকু আশাবাদী। আশাবাদী বলেই তো গত দুই মাস পরিশ্রম করে আমরা রিভিউ পিটিশনটা তৈরি করেছি।
রিভিউ আবেদনের যুক্তি: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া আপিলের রায়ে বেশ কিছু এখতিয়ার বহির্ভূত, ভুল, অপ্রত্যাশিত ও ভীত্তিহীন পর্যবেক্ষণে দেয়া হয়েছে বলে দাবি রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের। তাই রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে আপিলের ওই রায় বাতিল চেয়ে নিজেদের যুক্তি উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। রিভিউ আবেদন সর্বমোট ৯৪টি গ্রাউন্ডের মধ্যে প্রথম কয়েকটি গ্রাউন্ডে বলা হয়েছে:-
রাষ্ট্রপক্ষ তাদের রিভিউ আবেদনে যুক্তি দেখিয়ে বলছে, এটা স্পষ্ট যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীর পিতা (বাঙ্গালীর) হিসেবে ইতিমধ্যে স্বীকৃত। কিন্তু রায়ে শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যা সংশোধনযোগ্য। রায়ের একটি অংশে বলা হয়েছে, আমাদের অবশ্যই আমিত্তে¡র ধারণা থেকে মুক্তি পেতে হবে। এই অংশে রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি দেখিয়ে বলছেন, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভীত্তিহীন ও অপ্রত্যাশিত। যা আমাদের এই মামলার বিবেচ্য বিষয় নয়। যা সংশোধনযোগ্য। আপিলের রায়ে বলা হয়েছে, আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও সংসদ এখনো শিশুসুলভ। এখনো এই দুটি প্রতিষ্ঠান মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। কিন্তু রাষ্টপেক্ষের যুক্তি হলো, এই পর্যবেক্ষণ আদালতের বিচার্য বিষয় নয়। যা বিচারিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে পর্যবেক্ষণ দেয়া হয়েছে। যা সংশোধনযোগ্য। রায়ে বলা হয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র অপরিপক্ক। যদি সংসদের হাতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেয়া হয় তবে তা হবে আত্মঘাতি’। রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুধু অবমাননাকরই নয়, বরং ভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্নও বটে! আদালতের বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করা হয়েছে। রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ অন্য একটি অঙ্গের বিরুদ্ধে এরুপ মন্তব্য করতে পারেনা। এটা বিচারিক মন্তব্য নয়, এ মন্তব্য করে আদালত করে ভুল করেছে। যা সংশোধনযোগ্য ও বাতিলযোগ্য। রিভিউ আবেদনে আরও যুক্তি দেখিয়ে বলছেন, এই আদালত মার্শাল ল’ জারির মাধ্যমে প্রণীত কোনো আইনকে বৈধ হিসেবে বিবেচনা করেনি। কিন্তু সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধান সংক্রান্ত বিষয়টি বৈপরীত্য দৃষ্টিকোণ থেকে গ্রহণ করে ভুল করেছে। যা সংশোধনযোগ্য।
রায়ের আরেক অংশে রাষ্টপক্ষের কৌশুলীদের যুক্তি হলো, যদিও সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানের ৯৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের বিধান রেখে একটি আইন করার কথা ছিলো। কিন্তু সংবিধানের ৯৬(৩) অনুচ্ছেদ অনুসারে সেই আইন এখনো করা হয়নি। অথচ এই আইন করার পূর্বেই রিট দায়ের করা হয়েছে। তাই এই রিটটি অপরিপক্ক। অথচ এই অপরিপক্ক রিটটি আদালত আমলে নিয়ে রায় দিয়েছে। যা সংশোধনযোগ্য। মার্শাল ল’ এর যাবতীয় কার্যক্রম সংবিধানের পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনীর রায়ের মাধ্যমে মার্জনা করা হয়েছিল। যা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধীর রায়ে ক্ষেত্রে বিবেচনা না করে ভুল করা হয়েছে। এ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়েছে। যার কারণে এটি পুনর্বিবেচনা করা উচিত।
বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব সংসদে পাস হয়, যা ষোড়শ সংশোধনী হিসেবে পরিচিত। নয়জন আইনজীবীর রিট আবেদনে হাইকোর্ট ২০১৬ সালে সংবিধানের ওই সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ গত ৩ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ দেন। রায়ের মাধ্যমে সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট। ঐকমত্যের ভিত্তিতে দেয়া ওই রায়ে তখনকার প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা নিজের পর্যবেক্ষণের অংশে বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সমালোচনা করেন। পরবর্তীতে রায় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য মন্ত্রীরা প্রধান বিচারপতির তীব্র সমালোচনা করেন। রায়ের পর্যবেক্ষণে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ তুলে বিচারপতি সিনহার পদত্যাগের দাবি তোলেন ক্ষমতাসীনরা। তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে বিচারপতি সিনহা গত ৩ অক্টোবর থেকে ছুটিতে যান। এর মধ্যে ১৩ অক্টোবর রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন বিচারপতি সিনহা। ছুটি শেষে ১০ নভেম্বর সিঙ্গাপুর থেকে হাই কমিশানারের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট কাছে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠান বিচারপতি সিনহা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।