Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার সঠিক বাস্তবায়ন চাই -চসিক মেয়র আ জ ম নাছির

চট্টগ্রাম ব্যুরো | প্রকাশের সময় : ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:১০ এএম, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

চট্টগ্রাম মহানগরীর পানিবদ্ধতা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার সঠিক বাস্তবায়নের কোন বিকল্প নেই উল্লেখ করে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেছেন, প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্পটির যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। কারণ ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের যথাযথ বাস্তবায়ন নিয়ে জনমনে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। জনগণ যাতে এ প্রকল্পের সুফল পায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে। গতকাল (সোমবার) নগরীর আন্দরকিল্লার বাসভবন মোহাদ্দেস ভিলায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র একথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, চট্টগ্রাম ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সমন্বয় রেখে এ মেগা প্রকল্পটি নেয়া হয়েছে বলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান (আবদুচ ছালাম) যে বক্তব্য দিয়েছেন তা মোটেও সঠিক নয়। ওয়াসার মাস্টারপ্ল্যানের সাথে ওই প্রকল্পের যেসব অসঙ্গতি, ঘাটতি বা দুর্বলতা রয়েছে তা আমরা চিহ্নিত করছি। প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে সংশোধনের জন্য আমরা প্রস্তাব আকারে তা তুলে ধরব। আমাদের প্রকৌশলীরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমার জানামতে ওয়াসার ড্রেনেজ মাস্টারপ্ল্যানটি অত্যন্ত বাস্তবমুখী এবং সময়োপযোগী। কিন্তু সিডিএ যে প্রকল্পটি নিয়েছে তার সাথে এ মাস্টারপ্ল্যানে অনেক গরমিল রয়েছে। এ প্রকল্পে অনেক অপ্রয়োজনীয় জিনিসও রাখা হয়েছে। আমরা সব বিষয় সংশোধনী আকারে চসিকের পক্ষ থেকে তুলে ধরব।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে পানিবদ্ধতার অভিশাপ মুক্ত করতে এ মেগা প্রকল্পটি হাতে নিয়েছেন। একনেকে যেদিন এ প্রকল্প পাস হয় সেদিন প্রধানমন্ত্রী প্রকল্প বাস্তবায়ন তদারক করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীকে নির্দেশনা দেন। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তিনি এ প্রকল্পকে আরও বেশি কার্যকর করতে প্রস্তাবনা তৈরি করছেন বলেও জানান।
মেগা প্রকল্প গ্রহণে সিটি কর্পোরেশনের আইনগত বাধা আছে সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের এমন বক্তব্যের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মেয়র বলেন, তিনি সঠিক কথা বলেননি। সিটি কর্পোরেশনের এ ধরনের প্রকল্প বাস্তবায়নে আইনগত বাধা নেই। চসিকের বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। তিনি বলেন, উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয় সরকার। এক্ষেত্রে সিটি কর্পোরেশনকে উন্নয়ন বরাদ্দ দিতে কোন বাধা নেই।
চট্টগ্রাম মহানগরীর প্রাকৃতিক খালসমূহ অবৈধ দখলমুক্ত করতে উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা ও সেবা সংস্থাগুলোর সাথে সিটি কর্পোরেশনের কাজের সমন্বয় প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জারিকৃত পরিপত্র বিষয়ে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এতে তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের সাথে নগরীর অন্যান্য উন্নয়ন ও সেবা সংস্থার সমন্বয় না থাকায় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নগরীতে জনদুর্ভোগ হচ্ছে। পানিবদ্ধতার মূলেও রয়েছে এ সমন্বয়হীনতা। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পরিপত্র জারির ফলে এখন সমন্বিত উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হবে। আর এতে করে নগরবাসীর দুর্ভোগ কমে যাবে বলে আশাবাদী মেয়র। সিডিএ’র বেশকিছু উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে নগরীতে পানিবদ্ধতা বেড়েছে স্বীকার করে মেয়র বলেন, সমন্বয়হীনতার ফলে উন্নয়নের সুফলের বদলে জনগণ এর কুফল ভোগ করছে। সিটি কর্পোরেশনও খাল-নালা দখল করে কিছু ভবন তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মেয়র হিসেবে এজন্য আমিও লজ্জিত। উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে সিটি কর্পোরেশনের এসব স্থাপনা থাকবে কিনা এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আপনারা আমার উপর আস্থা রাখতে পারেন। উচ্ছেদ অভিযানের নেতৃত্ব সিটি কর্পোরেশন দেবে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে এ দায়িত্ব সিটি মেয়রকে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে এটি মেয়রের কাজ।
পানিবদ্ধতা নিরসনে মহানগরীর ৫৭টি প্রাকৃতিক খাল উদ্ধারে খুব শিগগির উচ্ছেদ অভিযান শুরু হবে জানিয়ে মেয়র বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রথমে চাক্তাই ও মহেশখাল দখলমুক্ত করা হবে। মেয়রকে আহŸায়ক করে এ লক্ষ্যে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। টাস্কফোর্স ইতোমধ্যে সভা করে উচ্ছেদ অভিযান শুরুর যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, এসব খাল দখলমুক্ত করতে অভিযানে কাউকে ছাড় দেয়া হবেনা। তিনি বলেন, মহানগরীকে পানিবদ্ধতামুক্ত করতে কারও সাথে কোন আপোষ করার সুযোগ নেই।
হকারদের শৃঙ্খলার মধ্যে আনার ক্ষেত্রে তিনি শতভাগ সফল হয়েছেন উল্লেখ করে বলেন, এ লক্ষ্যে দীর্ঘ ২ বছর আমি কাজ করেছি। হকার নেতাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি, তারা এখন শৃঙ্খলার মধ্যে এসেছে। দখলমুক্ত হওয়ায় মহানগরীর প্রাণকেন্দ্র নিউমার্কেট, আমতলা, স্টেশন রোড, কোতোয়ালী এবং প্রবর্তক মোড়কে দৃষ্টিনন্দনভাবে সাজানোর কাজ খুব শিগগির শুরু হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীকে দৃষ্টিনন্দন মহানগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আরও বেশ কিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে নগরীর অন্যরকম সৌন্দর্য ফুটে উঠবে। মেয়র বলেন, নগরবাসীকে নির্বাচনের আগে যে প্রতিশ্রæতি দিয়েছি তা শতভাগ পূরণ করতে আমি কাজ করে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে নগরবাসীর সর্বাত্মক সহযোগিতা পাচ্ছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, আশা করি আমি সফল হব।
চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গত ১ সেপ্টেম্বর বাসায় পা পিছলে পড়ে গিয়ে কোমরে ও পায়ে তার ফ্র্যাকচার হয়। তখন থেকে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাসায় বিশ্রামে আছেন। দাপ্তরিক কাজ বাসভবনে বসেই সারছেন মেয়র। শার্ট-লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় ক্র্যাচে ভর করে বিকেল সাড়ে ৩টায় বাসভবনের ড্রয়িংরুমে সংবাদ সম্মেলনে আসেন সিটি মেয়র।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ