পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে নাগরিক সেবাপ্রদানকারী সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত বিভাগ কিংবা সংস্থার সংখ্যা এখন দুই ডজন। এরমধ্যে জনপ্রতিনিধিত্বশীল এবং সর্বাপেক্ষা বড় ও ব্যাপক কর্মকান্ড নিয়ে গঠিত প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক)। যা দেশের অন্যতম প্রাচীন পৌরসভা প্রতিষ্ঠান। অথচ সেই জনপ্রতিনিধিত্বশীল চসিকের সাথে সমন্বয় নেই বলতে গেলে কোন বিভাগ বা সংস্থার। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। আবদুচ ছালাম সিডিএ চেয়ারম্যান পদে দফায় দফায় বাড়িয়ে নিয়েছেন চুক্তিভিত্তিক মেয়াদের। নিজেকে ‘কর্মবীর’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হননি। পোস্টার ব্যানার ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে ছবিসমেত তা নগরবাসীকে জানান দিয়েই যাচ্ছেন। সেই স্বঘোষিত ‘কর্মবীর’ আর সিডিএ’র ‘কর্ণধার’ বনে যাওয়া ছালাম চসিক কিংবা সিটি মেয়রের কোনো রকমেরই তোয়াক্কা করেন না। আ জ ম নাছির উদ্দীন মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে ছালামের এই ‘থোড়াই কেয়ার’ না করার বিষয়টা জোরালো দেখা যায়। তবে এর আগের নির্বাচিত মেয়রের মেয়াদকালেও ছালামের বেতোয়াক্কা ভাব পরিলক্ষিত হয়। এরফলে সিডিএ তথা এর ‘কর্মবীর’ ছালাম চসিক কিংবা মেয়রের সাথে পুরোপুরি সমন্বয়হীন অবস্থাতেই একচ্ছত্র রাজাধিরাজ সেজে এলোপাতাড়ি উন্নয়ন ‘কর্মযজ্ঞ’ চালাচ্ছে মহানগরীতে। লিখিত আমন্ত্রণ পান, তবে চসিকের সমন্বয় সভায় হাজির হওয়ারও গরজ বোধ তিনি করেন না কখনও। অথচ ছালামের আগে যারাই সিডিএ চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সবাই চসিকের সাথে উন্নয়ন কাজেকর্মে সমম্বয় রক্ষা করতেন। এখন ছালামের দেখাদেখি চট্টগ্রামের বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী বিভাগ ও সংস্থার দায়িত্বশীল শীর্ষ কর্মকর্তাগণ সমন্বয়ের বিষয়ে গড়িমসি করেন অথবা নির্লিপ্ত। এ অবস্থায় প্রায় ৬০ লাখ নগরবাসী অধ্যুষিত চট্টগ্রাম মহানগরীতে উন্নয়ন কর্মকান্ড ব্যাহত হচ্ছে। আর অপরিকল্পিত উন্নয়নের পরিণামে নানামুখী দুর্ভোগ আর কষ্ট পোহাচ্ছে নগরবাসী।
লাগাম টানার সরকারি নির্দেশ-
অবশেষে সিডিএ-সহ চট্টগ্রামের সেবাপ্রদানকারী সরকারি বিভাগ ও সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতা দূর করে সিটি কর্পোরেশনের সাথে সুষ্ঠু সমন্বয়ের জন্য সুস্পষ্ট সরকারি নির্দেশনা এসেছে। এরফলে বিশেষত ছালামের স্বেচ্ছাচারিতায় সিডিএ’র চসিককে এড়িয়ে যথেচ্ছ কর্মকান্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।
যদি কথিত ‘কর্মবীর’ ও ‘কর্ণধার’ সরকারের নির্দেশের তোয়াক্কা করেন। গত ৫ সেপ্টেম্বর জারিকৃত সর্বশেষ সরকারি নির্দেশনায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র (আগের জারিকৃত) অনুসরণের কড়াকড়ি নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরজন্য চসিকের সাথে উন্নয়ন কাজে সমন্বয় নিশ্চিত করতে ১৫টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্তৃক চিঠি দেয়া হয়। একবছর আগে জারিকৃত পরিপত্রের নির্দেশনা যথাযথ অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন ২০০৯-এর ধারা ৪৯-এর উপধারা (১৫) উদ্দেশ্য পূরণে পরিপত্র জারি করা হয়েছিল। কিন্তু পরিপত্রের নির্দেশনা সম্পূর্ণ প্রতিফলিত হচ্ছে না। ফলে সিটি কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্রে নাগরিক সেবা প্রদানকারী সংস্থাসমূহের মধ্যে সমন্বয় নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না।’ উক্ত চিঠিতে ১৫টি মন্ত্রণালয়কে পূর্ববর্তী পরিপত্রের নির্দেশনা যথাযথ মেনে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। মন্ত্রণালয়গুলো হচ্ছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন বিভাগ, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, বিদ্যুৎ বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগ, পানি সরবরাহ ও উন্নয়ন বিভাগ এবং চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।
চসিকের প্রধান নির্বাহীকে দেয়া স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের পৃথক আরেকটি পত্রে বলা হয়েছে, ‘পরিপত্রের আলোকে সিটি কর্পোরেশনের আমন্ত্রণে সেবা প্রদানকারী কোন সংস্থার প্রধান সভায় (সমন্বয়) উপস্থিত না হলে বা কোন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে শৈথিল্য প্রদর্শন করা হলে তা সেই সংস্থার নিয়ন্ত্রণকারী প্রশাসনিক মন্ত্রণালয়/স্থানীয় সরকার বিভাগকে অবহিত করতে হবে।’ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোঃ শহীদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠি দুটি গত ৫ সেপ্টেম্বর চসিক কার্যালয়ে এসে পৌঁছায়।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুন ‘সিটি কর্পোরেশনের সাথে সেবাপ্রদানকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সরকারি দপ্তরের মধ্যে সমন্বয় সাধনে’র জন্য একটি পরিপত্র জারি করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিচালক (প্রশাসন) ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূন কবীর স্বাক্ষরিত সেই পরিপত্রে বলা হয়, ‘সিটি কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য দপ্তরের প্রধানগণ সিটি কর্পোরেশনের আমন্ত্রণে সভায় যোগদানপূর্বক সভায় গৃহীত সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবেন এবং বাস্তবায়ন অগ্রগতি সিটি কর্পোরেশনকে অবহিত করবেন।’ সিটি কর্পোরেশনের অধিক্ষেত্রে সরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থার কাজে অধিকতর গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে সরকার এই সিদ্ধান্ত নেয় বলেও পরিপত্রে জানিয়ে দেয়া হয়েছিল।
অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের জারিকৃত পরিপত্রের পরও নগরীর উন্নয়ন কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করার লক্ষ্যে চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের উদ্যোগে একাধিক সমন্বয় সভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এতে তেমন সাড়া বা অগ্রগতি মিলেনি। সিডিএ চেয়ারম্যান ছালাম ছিলেন সর্বাপেক্ষা নির্লিপ্ত। এমনটি জানায় চসিক সূত্রগুলো। এই প্রেক্ষাপটে গত ৩ জুলাই সমন্বয়হীনতার বিষয়টি তুলে ধরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীকে উপানুষ্ঠানিক পত্র (ডিও পত্র) দেন চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। এতে বলা হয়, ‘প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের জারিকৃত পরিপত্রের আলোকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিয়মিত সমন্বয় সভার আয়োজন করেছে। সভায় সকল উন্নয়ন কাজে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাথে সমন্বয়ে বারবার সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও বাস্তবে কোন সংস্থাই কার্যকর সমন্বয়পূর্বক উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে না।’ তাছাড়া মেয়রের তরফ থেকে সেবাপ্রদানকারী বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে সমন্বয়ের তাগিদ দিয়ে প্রেরিত বিভিন্ন পত্রে এবং সভাসমূহে উল্লেখ করা হয়, প্র্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র (সূত্রঃ স্মারক নং-০৩.০৮২.০৪৮.০১.০১.০১২.২০১৬ (অংশ-৪)-৩৫১, তারিখ- ২৭.০৬.২০১৬ইং) অনুসরণ করে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও দপ্তর কর্তৃক নিজস্ব উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের পূর্বে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনকে অবগত করা এবং ছাড়পত্র গ্রহণ অপরিহার্য। চসিক স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সেবাধর্মী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া নগরীতে সরকারি বিভিন্ন সেবাপ্রদানকারী সংস্থা ও দপ্তর রয়েছে। চসিকের সাথে সমন্বয় করে সকল উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সকল সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও অন্যান্য সরকারী দপ্তরকে বলা সত্তে¡ও কর্পোরেশনের কাঠামোয় (রাস্তা ড্রেন, কালভার্ট, ব্রিজ) বিভিন্ন সরকারি সংস্থা অবহিত না করে এবং সমন্বয়হীনভাবে উন্নয়ন কার্যক্রম সম্পাদন করছে। এতে করে চলমান উন্নয়ন কার্যক্রমে পানিবদ্ধতা, জনদুর্ভোগসহ নানামুখী সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে সরকারের ভাবমর্যাদাও ক্ষুণœ হচ্ছে। চসিকের আওতাভূক্ত এলাকায় সরকারের যেকোন উন্নয়ন কার্যক্রম চসিককে অবহিত করা হলে চট্টগ্রামকে জনদুর্ভোগ-বিহীন পরিকল্পিত নগরীতে পরিণত করা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র, নগর পরিকল্পনাবিদ ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে আলাপকালে তারা সিডিএ চেয়ারম্যান ছালামের চসিককে এড়িয়ে সমন্বয়হীন, অপরিকল্পিত ও যথেচ্ছ উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনার সমালোচনা করেন। তারা বলছেন, জনপ্রতিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠান হিসেবে চসিকের সাথে সুষ্ঠু সমন্বয় নিশ্চিত থাকতে হবে। অন্যথায় নাগরিক ভোগান্তির তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘায়িত হবে। আর সরকারি তথা রাষ্ট্রের অর্থের অপচয় অব্যাহত থাকবে। জনগণ পাবেনা কোন সুফল।
এদিকে চট্টগ্রামে সেবাপ্রদানকারী সংস্থাগুলোর চসিকের সাথে সমম্বয় নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্র এবং এর আলোকে সর্বশেষ সরকারি নির্দেশনা অনুসরণে গুরুত্বের বিষয়টি তুলে ধরতে ১১ সেপ্টেম্বর সোমবার মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এক সংবাদ সম্মেলন ডেকেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।