Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রাম ছেড়ে লাখো মানুষের ঘরে ফেরায় ঝঞ্ঝাট

বেহাল মহাসড়ক চরম দুর্ভোগ

রফিকুল ইসলাম সেলিম | প্রকাশের সময় : ২৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভাঙ্গাচোড়া সড়ক মহাসড়কে তীব্র যানজট। লক্কর-ঝক্কর বাসে গলাকাটা ভাড়া। পথে পথে পশুরহাটের ঝঞ্ঝাট। নানা দুর্ভোগ সাথে নিয়েই চট্টগ্রাম থেকে শুরু হয়েছে ঈদে ঘরে ফেরা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মহানগরীর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে ৬০ লাখ মানুষের বসবাস। পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপনে মহানগরীর প্রায় অর্ধেক বাসিন্দা নগরী ছেড়ে যাবেন আপন ঠিকানায়। ঈদের বাকি আর মাত্র তিনদিন। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ঘরে ফেরা। কাল থেকে নামবে ঘরমুখো মানুষের ঢল। বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঘরমুখো মানুষের ঢল আরও বাড়বে। ট্রেনে টিকিট সংকট, নৌপথেও যাতায়েত সুবিধা অপ্রতূল। ফলে বাড়ি যেতে লাখো মানুষের শেষ ভরসা এখন সড়ক পথ।
তবে সেই সড়ক পথেই এবার যত বিড়ম্বনা। টানা বৃষ্টি, পাহাড়ী ঢল আর বন্যায় দেশের অর্থনীতির লাইফ লাইন খ্যাত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ এই অঞ্চলের অন্যসব মহাসড়ক, আঞ্চলিক সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী ও কুমিল্লায় চলছে ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কর্ণফুলী থানার মইজ্জ্যার টেক এলাকায় চলছে ফোর লেনের কাজ। মহাসড়কের বাইরে বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, কুমিল্লা ও সিলেট অঞ্চলের আঞ্চলিক ও আভ্যন্তরীণ সড়কের অবস্থাও বেহাল।
এই অঞ্চলের প্রায় সবকটি মহাসড়কে যানজট এখন স্থায়ী রূপ নিয়েছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক মদতে সড়ক মহাসড়কের উপর বসেছে কোরবানির পশুর হাট। এই কারণেও সড়কে যানজট হচ্ছে। ঈদের আগে সড়ক-মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহনের চাপ বেড়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী আমদানি-রফতানি পণ্যবাহী ভারী যানবাহনের প্রচন্ড ভিড় এখন মহাসড়কে। ঈদের ছুটির আগে আমদানি-রফতানি পণ্য পরিবহন বেড়েছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। দেশের অন্যতম বাণিজিক এলাকা চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জমুখী পণ্যবাহী ভারী যানবাহনেরও সংখ্যাও বেড়েছে।
একই অবস্থা মহানগরীর প্রধান কাঁচাবাজার রেয়াজুদ্দিন বাজার, বহদ্দরহাট, পাহাড়তলী বাজার ও স্টিলমিল বাজারেও। এসব বাজারে শাক-সবজি, পেঁয়াজ, রসুন, মসলাবাহী ট্রাকের ভিড় বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চট্টগ্রামের কোরবানির পশুরহাটগুলোতে পশু আসা অব্যাহত আছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাকে আসছে গরু, ছাগল, মহিষ। বেড়েছে নগরীর পতেঙ্গার গুপ্তখালে পদ্মা, মেঘনা, যমুনার জ্বালানি তেলের ডিপোমুখী লড়ির বহরের সংখ্যাও। মহানগরী ও আশপাশের ১৩টি বেসরকারি কন্টেইনার টার্মিনালে বেড়েছে ভারী যানবাহনের আনাগোনা। মহানগরীর সদরঘাট, মাঝিরঘাট, মাদারবাড়ি, ডিটি রোড, সাগরিকা, পোর্ট কানেকটিং রোডের পন্য পরিবহণ সংস্থাগুলোর ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত যানবাহনের চাপে সড়ক-মহাসড়কে টালমটাল অবস্থা। ফলে ঘুরমুখো মানুষের দুর্ভোগের অন্ত নেই।
চট্টগ্রাম মহানগরীর কদমতলী, সাগরিকা, অলংকার মোড় থেকে ছেড়ে যাচ্ছে বৃহত্তর নোয়াখালী, কুমিল্লাগামী যাত্রীবাহী বাস। ইপিজেড, স্টেশন রোড, বায়েজিদ বোস্তামি, বন্দরটিলা, দামপাড়া ও বিআরটিসি বাস টার্মিনাল এলাকা থেকে ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাস। বৃহত্তর রংপুর, সিলেট, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী রুটে চলাচলকারি পরিবহন সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান কোন বাসই সিডিল রক্ষা করতে পারছে না। যানজটের কারণে প্রতিটি বাস গন্তব্যে পৌঁছতে অতিরিক্ত ৬ থেকে ৭ ঘন্টা সময় লাগছে। এতে করে যাত্রীদের দুর্ভোগের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। মহানগরীর প্রতিটি সড়কের অবস্থা এখন বেহাল। নগরজুড়ে তীব্র যানজট স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এর ফলে ঘর থেকে বের হয়ে বাস টার্মিনাল পর্যন্ত পৌঁছতে তীব্র জটে আটকা পড়ছে ঘরমুখো মানুষ। বাসা থেকে বের হয়ে দুর্ভোগের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের।
সড়ক-মহাসড়কে যানজট প্রসঙ্গে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কমিটির সভাপতি আবু মুছা বলেন, বন্যা, বৃষ্টি ও ভাঙা রাস্তা এ তিনটি সমস্যা মাথায় নিয়ে এবার ঈদে ঘরমুখো মানুষকে বাড়ি যেতে হচ্ছে। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে ভাঙা সড়কে যান চলাচল ধীর হয়ে পড়ছে। কোথায়ও আবার পশুর হাট বসায় জট আরও তীব্র হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ফেনী ও কুমিল্লা এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলার পাশাপাশি দাউদকান্দি সেতুর কারণে যানজট হচ্ছে বলে জানান তিনি। দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৯টি সড়কে ভাঙা রাস্তার কারণে গাড়ি চলাচল শ্লথ। মইজ্জ্যারটেকসহ বিভিন্ন এলাকার গরুর হাট ও শিকলবাহা-মইজ্জ্যারটেকের ফোর লাইনের কাজের কারণে গাড়ি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, কোন কোন এলাকায় যানজট হচ্ছে। তবে ভাঙাসড়ক মেরামতের কাজ চলছে জরুরি ভিত্তিতে। ঈদের আগে-পরে তিন দিন পণ্যবাহী যান চলাচল বন্ধ থাকার নির্দেশনা থাকায় ওই সময়ে যানজট কমে যাবে বলে জানান তারা। ফেনীর মহিপাল ও কুমিল্লায় ফ্লাইওভার নির্মাণকারী কর্তৃপক্ষ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আলোচনা করে যানজট এড়াতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে শিকলবাহা-মইজ্জ্যারটেকে সড়ক ¤প্রসারণের কাজ বন্ধ রাখা হবে বলেও জানান কর্মকর্তারা। জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ আঞ্চলিক সড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোন সুর্নিদিষ্ট অভিযোগ ছাড়া পশুবাহী ট্রাক না থামানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সড়কের উপর পশুর হাট নিয়ন্ত্রণেও পুলিশ কাজ করছে। চট্টগ্রাম মহানগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে শতাধিক পশুর হাট বসেছে।
চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনে অগ্রিম টিকিটে যাত্রী পরিবহন শুরু হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকা, সিলেট, চাঁদপুরগামী প্রতিটি ট্রেনে অতিরিক্ত বগি সংযোজন করা হয়েছে। পরিচালনা করা হচ্ছে বিশেষ ট্রেনও। তবে সবচেয়ে বেশি যাত্রী পরিবহন করবে বাস সার্ভিসগুলো। অর্থাৎ সড়কপথেই যাত্রীদের চাপ বাড়ছে। চট্টগ্রাম থেকে বরিশাল রুটে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস বন্ধ কয়েক বছর ধরে। এর ফলে বৃহত্তর বরিশাল অঞ্চলের বাসিন্দারা সড়কপথেই বাড়ি যাচ্ছে। তাদের অনেকে চাঁদপুর অথবা ল²ীপুর হয়ে নৌপথে বরিশাল যাচ্ছে। যাত্রীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় দূরপাল্লার বাস সংকট চরমে। যাত্রীর চাপ সামাল দিতে বিভিন্ন আন্তঃজেলা রুটে চলাচলকারী বাস এনে দূরপাল্লার যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। লক্কর-ঝক্কর বাসে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি ফিরছে ঘরমুখো মানুষ। পরিবহন সার্ভিসগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ