পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বানের পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের স্বপ্ন। হতাশা, হাকাকার আর দুঃখ-কষ্টে অঝোর ধারায় ঝরছে কৃষকের চোখের পানি। রোপা আমনের চলতি মৌসুমে সারাদেশে তিন কোটি ১০ লাখ ৫৫৪ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪০ জেলায় ৬ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৪ হেক্টর জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যে আবাদ নিয়ে কৃষক স্বপ্ন দেখেছিলেন। এখন সেখানে হাহাকার। বানের পানির সাথে চোখের পানি একাকার হয়ে গেছে। পানিতে ডুবে আছে গ্রাম, আমনসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, চাপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, জয়পুরহাট, কুড়িগ্রাম, জামালপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুরসহ ৪০ জেলাতে বন্যার নীল ছোবলে সব ধ্বংস হয়ে গেছে। কোথাও কোথাও পানি নেমে গেলেও ফুটে ওঠছে বন্যার ক্ষত। আসন্ন ঈদুল আজহার খুশি যেন ফিকে হয়ে আসছে স্বপ্নহীন বিষাদমাখা মুখগুলোর।
ভারী বৃষ্টিপাত ও ভারত থেকে নেমে আসা পানিতে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমোরসহ দেশের প্রায় অধিকাংশ নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। প্রধান প্রধান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শুরু হয় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। ভয়াবহ এ বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বেশির ভাগ আউশ ও আমন ধান ও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজি এখনো পানির নিচে। এর প্রভাব পড়বে দেশের বাজারে। বন্যায় সবজি ও ফসলের ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক হলেও গভীর ভীতি ও আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বিশেষ কারণে। সে কারণ এর ঠিক পূর্ববর্তী ফসল বোরোর চাষাবাদে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি। বোরোর চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ভারত থেকে নেমে আসা বিষাক্ত রাসায়নিকযুক্ত পানির কারণে। এই পানি হাওর এলাকার সব ফসল ধ্বংস করে দিয়েছিল। এর প্রভাব পড়েছিল দেশের বোরো ধানের চাষাবাদের ওপর। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলার উদ্দেশ্যে করণীয় সম্পর্কেও পরামর্শ দিয়েছেন উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, বোরোর পরপর আমন ও আউশের ফলনও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বেসরকারি পর্যায়ের ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে সরকারের উচিত জরুরি ভিত্তিতে চাল আমদানির পদক্ষেপ নেয়া এবং অন্তত ১০ লাখ টন চালের মজুদ গড়ে তোলা। কারণ, খাদ্য নিরাপত্তার দৃষ্টিকোণ থেকে বাংলাদেশে এই পরিমাণ খাদ্যের মজুদ থাকা দরকার। সরকারকে একই সাথে বন্যার পানিতে প্লাবিত সব অঞ্চলে কৃষকদের মধ্যে বিনামূল্যে ধানের বীজ ও সারসহ কৃষিউপকরণ বিতরণের পদক্ষেপ নিতে হবে, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নতুন করে চাষাবাদ শুরু করতে পারেন। এ বিষয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যেও আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
রাজশাহীতে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি ৫০০ কোটি টাকা
রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, এবারের বন্যায় রাজশাহীতে কৃষি ও মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে ৫০০ কোটি টাকার উপরে। কৃষি ও মৎস্য বিভাগ প্রাথমিকভাবে এমনটি নিরূপণ করেছে। বাস্তবে এ ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়বে বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানিয়েছেন। রাজশাহীর বাগমারা, মোহনপুর, চারঘাট, বাঘা, তানোর ও গোদাগাড়ী উপজেলার আড়াই লাখ মানুষ হয়েছেন পানিবন্দী। ডুবেছে বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত, মাছের খামার আর পানের বরজ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসাবে- পবা, বাগমারা, মোহনপুর, তানোর, গোদাগাড়ী ও বাঘায় পুরোপুরি তলিয়ে গেছে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমি। এর মধ্যে পুরোপুরি নষ্ট হওয়ার পথে ১২ হাজার হেক্টর জমির আউশ, আড়াই হাজার হেক্টর জমির আমন, সাড়ে ৫০০ হেক্টর জমির সবজি, ২০০ হেক্টর জমির পানের বরজ, পৌনে ২০০ হেক্টর মরিচ এবং ৭০ হেক্টর পেঁপের জমি। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে পুরোপুরি ক্ষতির হিসাব কষতে মাঠে নামবে কৃষি বিভাগ। কৃষি পুনবার্সনের আওতায় তারা আগাম শীতকালীন ফসল চাষের বিষয়টা মাথায় নিয়ে কর্মপরিকল্পনা করছেন।
মৎস্য দফতর সূত্র জানায়, রাজশাহীর বাগমারা, মোহনপুর, তানোর ও পুঠিয়া উপজেলার ৪৪৬ জন খামারির ৬২০টি বাণিজ্যিক মৎস্যখামার বন্যায় ভেসে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৭ কোটি টাকা। এ ছাড়াও বহু পুকুর ভেসে গেছে। মৎস্য দফতর তাদের পুনবাসনের জন্য ১৭ কোটি ৩৩ লাখ টাকার একটি পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
এদিকে পানিবন্দী মানুষ রয়েছেন দারুণ কষ্টে। জমি পানির নিচে। ঘরেও পানি। আয় নেই, খাবার নেই। যাদের দু’একটি গবাদি পশু রয়েছে তাদেরও খাবার দিতে পারছে না। জোটেনি ত্রাণ।
যশোরে ভেসে গেছে এক হাজার ৪০০ হেক্টরের মাছের ঘের
যশোর থেকে মিজানুর রহমান তোতা জানান, যশোরে বন্যা হয়নি, তবে অতিবর্ষণ ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগে যশোরের তিনটি উপজেলা কেশবপুর, অভয়নগর ও মণিরামপুরের প্রায় ১৫০টি গ্রামে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সরকারি অর্থ লোপাটের কারখানা হিসেবে পরিচিত যশোরের দুঃখ ভবদহ এলাকায় পানিবন্দীদের আহাজারি বাড়ে এবারের বর্ষায়। ভবদহের কারণে তিনটি উপজেলা- কেশবপুর, মনিরামপুর ও অভয়নগরের ১২৫টি গ্রাম সরকারি হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম জানান, ভেসে গেছে এক হাজার ৪০০ হেক্টর মাছের ঘের। ছয় হাজার ৮৬৬ হেক্টর জমির ফসল আংশিক নষ্ট হয়েছে। তার মতে, একদিকে ভারী বর্ষণ, অন্যদিকে সময়মতো পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না নেয়ায় পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ চলছে। বেসরকারি হিসাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি। বিশেষ করে ফসলাদির ক্ষতি। গোটা এলাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জমির ফসল সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। নতুন করে আবাদ করতে পারেনি কৃষকরা। কবে নাগাদ আবাদ করতে পারবে, তারও নিশ্চয়তা নেই। তিনটি উপজেলায় ৪২টি আশ্রয়কেন্দ্র ও রাস্তায় টঙ ঘরে পানিবন্দীরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ পর্যন্ত ১০১ মেট্রিক টন চাল ও চার লাখ টাকা ত্রাণ সাহায্য দেয়া হয়েছে। পানিবদ্ধতায় বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, মাদরাসা, রাস্তাঘাট, দোকানপাট ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বহু কৃষকের ঘরে রাখা ধান-চাল ও অন্যান্য ফসল পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
বগুড়ায় ফসলের ক্ষতি পৌনে ৩০০ কোটি টাকা
বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমে এবার বগুড়ায় পরপর দ্বিতীয় দফার চলমান বন্যায় কেবল মৌসুমি ফসলেরই ক্ষতি হয়েছে পৌনে ৩০০ কোটি টাকার। এ সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতির পুরো বিবরণ তৈরি না হলেও প্রাথমিকভাবে বগুড়া কৃষি বিভাগের হিসাবে বগুড়ার ১২টি উপজেলায় মোট ২২ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমির ফসল বন্যাকবলিত হয়েছে। প্রথম দফা বন্যায় শুধু বাঙালি ও যমুনা অধ্যুষিত তিনটি উপজেলা যথাক্রমে- সোনাতলা, সারিয়াকান্দি ও ধুনট বন্যাকবলিত হয়। দ্বিতীয় দফার বন্যায় পশ্চিম বগুড়া জেলার বন্যামুক্ত অঞ্চল হিসেবে পরিচিত- শিবগঞ্জ, কাহালু, দুপচাঁচিয়া, আদমদীঘী ও নন্দিগ্রামও ব্যাপকভাবে বন্যাকবলিত হয়।
আকস্মিক ঢল ও টানা বৃষ্টিতে রোপা আমন, আমনের বীজতলা, পটল, লাউ, কুমড়া, করলা, বেগুন ও পাটের জমি পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যা কিছুটা দীর্ঘ হওয়ায় গ্রীষ্মকালীন খরিফ ফসল তো বটেই, পানি সহনীয় ধান ও পাটও পানিতে পচে নষ্ট হয়ে যায়।
বগুড়া কৃষি ও পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পুরো বিবরণ প্রস্তুত না হলেও আনুমানিক ২৭৫ কোটি টাকার ফসল দুই দফার বন্যায় শেষ হয়ে গেছে। ওই দুটি বিভাগের ধারণা, বন্যার দীর্ঘস্থায়িত্বের প্রেক্ষিতে ক্ষয়ক্ষতির এই পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
কুড়িগ্রামে বন্যায় তিন লাখ ৪৩ হাজার কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত
কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে পানি নেমে আসায় ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমোরসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। শুরু হয় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা। প্রায় ১০ দিন বন্যার পানির সাথে যুদ্ধ করে নদী তীরবর্তী চর, দ্বীপচর এমনকি নিম্নাঞ্চলের প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ বেঁচে থাকেন। এখানকার মানুষ কৃষির উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকেন। স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কুড়িগ্রামে ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। বেশির ভাগ রোপা আমন ধান ও বিভিন্ন ধরনের মৌসুমী সবজি এখনো পানির নিচে। যে ফসলগুলো ভেসে উঠছে, সেগুলো পচে গেছে। এ নিয়ে দিশেহারা হয়েছেন কৃষক। কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ফসল ও শাকসবজির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, কুড়িগ্রামে এবার ৯৯ হাজার ৮৭৭ হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপণ করা হয়। সাত হাজার ২০ হেক্টর জমিতে আমন বীজতলা এবং দুই হাজার ৩১৫ হেক্টর জমিতে শাকসবজি আবাদ করা হয়। বন্যার পানিতে রোপা আমন ৩৪ হাজার ৯২৭ হেক্টর, আমন বীজতলা ৫০৫ হেক্টর, শাকসবজি এক হাজার ১৬ হেক্টর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ রোপা আমন ৯৭ হাজার ৯৯৫ মেট্রিক টন এবং শাকসবজি ১৭ হাজার ৪১৫ মেট্রিক টন। টাকার অঙ্কে ৩০৯ কোটি ৯২ লাখ ১৭ হাজার ৯৫০ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ জেলায় তিন লাখ ৪২ হাজার ৯৪০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এ তথ্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মকবুল হোসেন জানান, যেসব ধান বিনষ্ট হয়েছে, তা ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লাগানো যাবে। এ সময় ব্রি-২২, ব্রি-৩৪ এবং স্থানীয় জাতের ধান যেমন- মালশিরা, গাঞ্জিয়া, বিনিপাকরী, ঢেপা এই মুহূর্তে লাগানো সম্ভব। বীজতলা তৈরি করে তা ১৫-২০ দিনের মধ্যে লাগাতে হবে। এতে কৃষক তার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবেন।
সিরাজগঞ্জে পানি কমছে, বাড়ছে কৃষকের দুঃখ-কষ্ট
সিরাজগঞ্জ থেকে সৈয়দ শামীম শিরাজী জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি লাভ করলেও মানুষের দুঃখ-দুর্দশা কমছে না। পানি যতই কমছে, রাস্তাঘাট ভাঙন আর জমিজমা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ উপ-পরিচালক মো: আরশেদ আলী জানান, দুইদফা বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলায় ৯টি উপজেলায় ৮১টি ইউনিয়নের প্রায় ৩০০ কোটি টাকার বিভিন্ন কৃষিজাত ফসলের ক্ষয়ক্ষতির হয়েছে। এর মধ্যে রোপা আমন, আউশ ধান, বীজতলা, বোনা আমন, সবজি, কলা, আখ প্রভৃতি মিলে ৪৯ হাজার ১০৪ হেক্টর জমি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
অপরদিকে, চাতাল মালিকদের ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে খোঁজ নিতে সিরাজগঞ্জের ফুড অফিসে যোগাযোগ করা হলে জৈনক কর্মকর্তা জানান, এ ব্যাপারে তাদের কাছে কোনো ক্ষয়ক্ষতির তালিকা আসেনি। বন্যার্তরা ব্যক্তিগতভাবে নিজ বাড়িতে যেসব খাদ্যশস্য মজুদ রেখেছিল, তারও তালিকা তাদের কাছে নেই বলে জানান।
রংপুর অঞ্চলে বন্যায় কৃষকদের ক্ষতি প্রায় এক হাজার কোটি টাকা
রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, বন্যা এবং অতিবৃষ্টির কারণে রংপুর বিভাগের আটটি জেলায় প্রায় ৯৮ হাজার ৩০০ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে করে এ বিভাগের কৃষকরা প্রায় এক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। ক্ষতিগস্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে- রোপা আমন, সবজি, আমন বীজতলা, কলা, পেঁপেসহ অন্যান্য রবিশস্য।
রংপুর বিভাগীয় কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা আর ভারী বর্ষণের কারণে চলতি বছর রংপুর বিভাগের আটটি জেলার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কিছু ফসলি জমি পানিতে তলিয়ে যায়। বন্যার পানি সপ্তাহ খানেকেরও বেশি স্থায়ী হওয়ায় এসব জমির ফসল একেবারেই নষ্ট হয়ে যায়। নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে অনেক ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এতে বেশ বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন এ অঞ্চলের কৃষকরা। এসব জমিতে প্রায় তিন লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল। রোপা আমন ছাড়াও বন্যার পানিতে প্রায় তিন হাজার ৩৫৫ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। যার বাজার মূল্য ছিল প্রায় ৭০ কোটি টাকার উপরে। এ ছাড়া, প্রায় দেড় কোটি টাকার কলা, এক কোটি টাকার উপরে পেঁপে এবং অর্ধকোটি টাকার আদার ক্ষতি হয়েছে। বীজতলাসহ অন্যান্য ফসলেরও অনেক ক্ষতি হয়েছে।
কৃষকরা জানিয়েছেন, আউশ ও রোপা আমন ধান ছাড়াও বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মধ্য আমনের বীজতলা, বোনা আমন, বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি, মরিচ, পটল, পানের বরজ, কলা উল্লেখযোগ্য। রংপুর জেলার মধ্যে গঙ্গাচড়া, পীরগাছা, কাউনিয়া বদরগঞ্জ এবং পীরগঞ্জ এলাকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সবচেয়ে বেশি। বন্যা এবং জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত এসব জমির অধিকাংশই এ মৌসুমে নতুন করে ফসল ফলানো সম্ভব হবে না। ফলে কৃষকরা মারাত্মক দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা জানিয়েছেন, অধিকাংশ কৃষকই ফসল বোনার সময় বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ধার-দেনা করে ধান চাষ শুরু করেছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে ভয়াবহ বন্যায় সব তলিয়ে যাওয়ায় তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাদের অভিযোগ, বন্যা-পানিবদ্ধতার কারণে তলিয়ে যাওয়া ফসলের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের পরামর্শ বা সহযোগিতার ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
নাটোরে তলিয়ে গেছে রোপা আমন
নাটোর থেকে মো: আজিজুল হক টুকু জানান, নাটোর জেলার সাত উপজেলার মধ্যে চারটি বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সিংড়া, নলডাঙ্গা, গুরুদাসপুর, নাটোর সদর এই চার উপজেলায় বন্যায় খাদ্যশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৮১৩ হেক্টর আবাদি জমি। এবার রোপা আমন সরকারি হিসেবে ৪২ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন ধান বা ২৮ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন চাল, বেসরকারি হিসাবে ৪৮ হাজার মেট্রিক টন ধান বা ৩২ হাজার মেট্রিক টন চাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
মানিকগঞ্জে বন্যায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
মানিকগঞ্জ থেকে এ এফ এম নূরতাজ আলম বাহার জানান, মানিকগঞ্জ জেলার সাতটি উপজেলায় বন্যার পানিতে কৃষি জমি তলিয়ে যাওয়ায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় বোনা আমন, রোপা আমন এবং সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩২ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে ২৩ হাজার ২৫০ হেক্টর ফসলি জমি বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ৩৪ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
এবারের বন্যায় ২১ হাজার হেক্টর জমির বোনা আমন, দুই হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন, ২৫০ হেক্টর সবজির ক্ষেত সম্পূর্ণ বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। পদ্মা-যমুনা এবং অভ্যন্তরীণ নদী- ধলেশ্বরী, কালীগঙ্গা, ঈছামতিসহ সব নদীর পানি কমতে থাকায় জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো: আলিমুজ্জামান জানান, বন্যার পানি কমতে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অনেক কমে যাবে। তিনি জানান, জেলার সাতটি উপজেলায় এ পর্যন্ত ১০ ভাসমান বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে কক্ষিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে তা সরবরাহ করা হবে। এ ছাড়াও বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথেই কৃষকদের পুনর্বাসনের কর্মসূচি হাতে নেয়া হবে। কর্মসূচির মধ্যে থাকবে- কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার এবং বীজ সরবরাহ করা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।