নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামের মাঠে একসময় ছিল চোখ জুড়ানো সৌন্দর্য। সেসব দিন এখন অতীত। ধারণা করা হয়েছিল, সংস্কারের পর মাঠ ফিরে পাবে সেই সবুজ চেহারা। কিন্তু নতুন মৌসুমের প্রথম টেস্ট শুরুর আগের দিন মাঠ যেন বাদামী প্রান্তর! গত প্রায় নয় মাস কোনো ম্যাচ হয়নি শের-ই-বাংলায়। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা আরও ভালো করার জন্য এই সময়ে সংস্কার করা হয় মাঠ। উইকেটের উপরিভাগে ইঞ্চিখানেক পুরোনো মাটি সরিয়ে নতুন মাটি ফেলা হয়েছে। আউটফিল্ডের পুরোনো মাটি ৬ থেকে ৮ ইঞ্চি মতো তুলে ফেলা হয়েছে। পরে সেখানে ফেলা হয়েছে নতুন মাটি। লাগানো হয়েছে নতুন ঘাস।
৫০০! শুধু একটি নম্বর নয়, একটি ক্রিকেট পাগল জাতির পরিচয়ে রূপ নিতে যাচ্ছে আজ। নতুন এই মিরপুরে আজ সকালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যখন টস করতে নামবে মুশফিকুর রহিম, সেটি হবেন ‘নতুন’ বাংলাদেশের ৫০০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচ! ১৯৮৬ হাঁটি হাঁটি পা পা করে আজ ৫শ’র মাইলফলকে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ৪৯৯ ম্যাচে ৩৪০ হারের বিপরীতে আমাদের জয় আছে ১৩৫ ম্যাচে, ড্র হওয়া ম্যাচের সংখ্যা ১৫ টি। নিষ্পত্তি না হওয়া ম্যাচের সংখ্যা ৯। ৪৯৯ ম্যাচের মধ্যে সাদা পোষাকে টাইগার্সরা ম্যাচ খেলেছে ১০০ টি, ওয়ানডেতে ৩৩২, টি-টোয়েন্টিতে খেলা ম্যাচের সংখ্যা ৬৭। এবার অপেক্ষায় অর্ধহাজার আন্তর্জাতিক ম্যাচের।
কাগজ -কলমের হিসেবে অস্ট্রেলিয়া আর বাংলাদেশ দলের মধ্যে অনেক পার্থক্য থাকলেও, টেষ্টে বাংলাদেশ দলের সা¤প্রতিক পারফরম্যান্স ও নিজেদের কন্ডিশনে খেলা বলেই ভালো কিছুর স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশী ক্রিকেটভক্তরা। কোচ, অধিনায়কের চোখেও ভালো কিছু করার ইচ্ছে, রোমাঞ্চ কাজ করছে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাংলাদেশ মোটে খেলেছেই ৪টি টেষ্ট, যার ৪ টিতেই হার। তিনটি টেষ্ট তো হেরেছে ইনিংস ব্যবধানেই। টেষ্ট অভিষেকের তিন বছরের মাথায়ই অস্ট্রেলিয়া সফরে যায় বাংলাদেশ। টেষ্ট ইতিহাসের ১ম সারির দলটির বিপক্ষে নবাগত বাংলাদেশের কাছে তেমন কিছুই চাওয়ার ছিলনা, অনুমিতভাবে দুই ম্যাচেই বাংলাদেশ হারে ইনিংস ব্যবধানে। দুইবছর পর ২০০৫/০৬ মৌসুমে বাংলাদেশ সফরে আসে অস্ট্রেলিয়া, ফতুল্লা টেষ্টে শাহরিয়ার নাফীস, হাবিবুল বাশারদের কল্যাণে জয়ের স্বপ্ন জাগিয়েও হেরে যায় তিন উইকেটে। চট্টগ্রামে ২য় টেষ্টেও আবার ইনিংস ব্যবধানে হার, বাড়তি জ্বালা হিসেবে অস্ট্রেলিয়ান বোলার গিলেস্পির ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দেওয়াতো ছিলই।
ওসব পুরোনো কাসুন্দি, অতীত পরিসংখ্যান দিয়ে আসলে বর্তমান বাংলাদেশ কে তুলে ধরা যাবেনা। এক মাশরাফি ছাড়া বর্তমান দলটির কারোরই নেই অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেষ্ট খেলার অভিজ্ঞতা, যদিও মাশরাফিও থাকছেন না এবারের সিরিজে। বছরের হিসেবে প্রায় ১১ বছর পর অস্ট্রেলিয়ার সাথে টেষ্ট খেলবে বাংলাদেশ। সর্বশেষ দু’দলের টেষ্ট ম্যাচের সময় বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞতার ভান্ডার সাকিব, মুশফিক, তামিমদের অভিষেকই হয়নি। অথচ আজ অস্ট্রেলিয়াকে ঘায়েল করার অস্ত্রই এরা।
খুব বেশী টেষ্ট খেলার সুযোগ শুরু থেকেই পায়না বাংলাদেশ। তবে গত ২/৩ বছরের সংখ্যাটা তখনকার বাংলাদেশের চাইতে বেশ ভালোই বেড়েছে। নিয়মিত পারফর্মার বলতে হাবিবুল বাশার ছাড়া কাউকেই চোখে পড়তনা, এখন নিয়মিত ভালো করাদের তালিকাটাও লম্বা। চোখ বুঁজেই ভরসা করা যায় তামিম থেকে শুরু করে কামরুল ইসলাম রাব্বিদের উপর। ২০০৫/০৬ মৌসুমের বাংলাদেশ দলের সেঞ্চুরি করা ব্যাটসম্যানই ছিল হাতেগোনা, আর এবারের দলের তিনজনেরই আছে ডাবল সেঞ্চুরি করার অভিজ্ঞতাও, সেঞ্চুরিতো নিয়মিতই হচ্ছে। মানসিকতা, অভিজ্ঞতা সব দিকদিয়েই একেবারে বদলে যাওয়া দলের বিরুদ্ধেই খেলতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। নিজেদের মাঠে খেলা বলে আবহাওয়ার সুবিধাটাও বাংলাদেশই নিবে।
গত দুইবছর ওয়ানডের মত টেষ্টেও দারুণ সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে প্রায় সিরিজই হারিয়ে দিচ্ছিলো ইংল্যান্ডকে, ছোটখাটো ভুলে চট্টগ্রাম টেষ্ট হাতছাড়া হলেও ঢাকা টেষ্ট সাকিব, মিরাজের ঘূর্ণিতে নিজেদেরই করে নেয় বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ড, ভারতে ম্যাচ না জিতলেও সাকিব, তামিম, মুশফিক রা লড়াই করেছেন, শ্রীলংকাকে তাদের ঘরের মাঠে হারিয়েছেন।
পেস বোলিংয়ে শফিউল, তাসকিন, মুস্তাফিজদের মত দারুন কিছু প্রতিভার মিশ্রণ আছে, নিজেদের দিনে জ্বলে উঠলে অনেক কিছুই হতে পারে। স্পিনে সাকিব, মিরাজ, তাইজুলের সাথে প্রয়োজনে হাত ঘুরাবেন যারা, প্রত্যকেই নিজেদের প্রমাণ করে দলে টিকে আছেন।
টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের তিন নম্বর দলের সঙ্গে নয়ের খেলা। শুধু র্যাঙ্কিংয়ের হিসাবেই তো বাংলাদেশের বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়াকে এগিয়ে রাখা উচিত। দুই দলের সাক্ষাতের পরিসংখ্যানটাও অস্ট্রেলিয়ার দিকে হেলে। বাংলাদেশের বিপক্ষে যে ৪ টেস্ট খেলেছে, প্রতিটিতেই জিতেছে তারা। র্যাঙ্কিং কিংবা মুখোমুখি লড়াইয়ের পুরোনো হিসাব এবার কোনো কাজে দেবে না। এবং স্টিভেন স্মিথরা সেটি ভালোই জানেন। অস্ট্রেলিয়াকে খেলতে হবে বাংলাদেশের মাটিতে। আর নিজেদের কন্ডিশনে ক্রিকেটের যেকোনো সংস্করণে বাংলাদেশ কতটা শক্তিশালী, গত তিন বছরে সেটা ভালোভাবেই দেখা গেছে।
অন্যদিকে গত ১০ বছরে অস্ট্রেলিয়া এশিয়ায় যে ২২ টেস্ট খেলেছে, তাতে জিতেছে মাত্র দুটিতে। ড্র ৫টি, হার ১৫টিতে। গত পাঁচ বছরে এশিয়ায় অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে সফল ব্যাটসম্যান স্টিভেন স্মিথ, ১১ ম্যাচে ৫১.৪৭ গড়ে করেছেন ১০৮১ রান। এর মধ্যে ৪৯৯ রান এসেছে গত মার্চে ভারত সফরে। এই সময়ে এশিয়ার বাইরের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তাঁর চেয়ে বেশি রান শুধু অ্যালিস্টার কুকের (১৪৭০)। আর সবচেয়ে বেশি উইকেট নাথান লায়নের, ৫৩টি। দুজনই যে এবার বাংলাদেশের বড় পরীক্ষা নেবেন, না বললেও চলছে। বাংলাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে যাতে দ্রæত মানিয়ে নিতে পারেন, সে জন্য ১০ আগস্ট থেকে ডারউইনে সপ্তাহখানেকের অনুশীলন ক্যাম্প করে স্মিথ-ওয়ার্নাররা। অস্ট্রেলিয়ার উত্তরাঞ্চল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবচেয়ে কাছের। অস্ট্রেলিয়ার এক টুকরো ‘এশিয়া’ যেন ডারউইন।
পরিসংখ্যানের সাপ-লুডোর খেলায় কখনো বাংলাদেশ, কখনো অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে থাকলেও একটি জায়গায় দুটি দল ভারসাম্যপূর্ণ। দুই দলের বর্তমান খেলোয়াড়দের কেউ একে অপরের বিপক্ষে সাদা পোশাকে কখনো খেলেননি। শূন্য থেকেই তাই শুরু করতে হবে মুশফিক-স্মিথদের!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।