Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কথায় মনে হয় নাছির প্রেসিডেন্টের চেয়ে বড়

ফের মহিউদ্দিন চৌধুরীর ‘গরম’ কথা

| প্রকাশের সময় : ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

চট্টগ্রাম ব্যুরো : কিছু দিন নিরব থাকার পর ফের ‘গরম’ কথা বলা শুরু করেছেন নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী। এবার তিনি চট্টগ্রামের মেয়র, সংসদ সদস্য এবং বিভিন্ন সরকারি সংস্থার শীর্ষ পদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে সরব হলেন। তার মতে চট্টগ্রামের নেতৃত্বে অযোগ্য, অদক্ষ ও অপরিপক্করা বসে আছেন। তিনি বলেন, এতকিছুর পরও মানুষ নিরব আছে বিভিন্ন কারণে। মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবে না। গতকাল (শুক্রবার) নগরীর চশমা হিলের নিজ বাসভবনে হজে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের কাছে এসব মন্তব্য করেন তিনি।
সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে হজ থেকে ফিরে এসব অনিয়েমের বিরুদ্ধে ‘রুখে দাঁড়ানোর’ ঘোষণাও দিয়েছেন এই বর্ষীয়ান নেতা। চট্টগ্রাম নগরীর পানিবদ্ধতা, সড়কের বেহাল দশা, কর্ণফুলীর ড্রেজিং, মেয়র ও এমপিদের নিস্ক্রিয়তা এবং গণমাধ্যমের নিরবতা নিয়ে কথা বলেন সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী।
নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সমালোচনায় আবারও মুখর মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, নাছির সাহেবকে মনোনয়ন দিয়েছেন আমাদের নেত্রী। আমরা তাকে বানিয়ে দিয়েছি। কিন্তু তারই বদৌলতে যেসব কথাবার্তা বলছে মনে হয় যেন প্রেসিডেন্ট চেয়েও অনেক বড় হয়ে গেছে। কথা কথা কথা শুধু। মাইকে কথা বলবে, গাড়িতে বসে মোবাইলে কথা বলবে। সর্বক্ষণ উনি কাজে ব্যস্ত থাকেন। কি কাজ করেছেন? রাস্তায় এক হাঁটু পানি, এক বুক পানি। এগুলো নিঃসরণের কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না।
সাংবাদিকরা চট্টগ্রামের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহিউদ্দিন বলেন, আমি বেশ কিছু দিন কথাবার্তা বন্ধ করে রেখেছি। অবশ্য কথা বললে তো যারা শুনবে- তারা নারাজ। চট্টগ্রামের মধ্যে বিশেষ করে অথর্ব, অযোগ্য, অদক্ষ, অপরিপক্ক এরাই নেতৃত্বে আছে। ফলে আমরা আওয়াজ করি না। চেষ্টাও করি না।
নগরীর সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, সংসদ নেতারা (এমপি) সংসদে যায় কথা বলার জন্য। চট্টগ্রাম মহানগরীতে যারা আছেন, সংসদে তাদের একটা কথা বলতে শুনেছেন? সংসদে তারা বসে থাকে। তাদের কথা হলো- সংসদে যাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য করবে। উন্নয়ন তো নেত্রী প্রচুর পরিমাণে টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। কিন্তু সেই উন্নয়নের নামে কতগুলো অপকর্ম হচ্ছে। যেমন ধরেন পানিবদ্ধতা- সহজ ব্যাপার। সমস্ত দুনিয়া আজকে হাতের মুঠোয় এসে গেছে। সামান্য পানিবদ্ধতা নিরসন করতে এত বেশি লম্পঝম্প কেন? জিজ্ঞেস করলে তিনি (মেয়র) বলেন- পানিবদ্ধতা বন্ধ করব, করেন না। এক সপ্তায় করা যায়। চুরি করতে যদি, টাকা বানাতে যদি এক সপ্তাহে পারেন তাহলে এটা পারবেন না কেন?
ড্রজিং মেশিন ছাড়া তো করা যাবে না। একবার তো ড্রেজিং মেশিন নামিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তারা আত্মসাত করে চলে গেছে। ফলে কর্ণফুলী নদী ভরাট হয়ে গেছে। ড্রেজিং করা হয়নি। পানিবদ্ধতা নিয়ে নিজের শেষ মেয়াদে সমালোচনায় থাকা মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, এখন কিভাবে? একদিনে করা যায়। ইমপোর্ট করেন ড্রেজিং মেশিন। এনে ড্রেজিং করান। ড্রেজিং করলেই পানির ¯্রােত বেশি থাকবে। নালা-নর্দমার মধ্যে যে আর্বজনা সেগুলো একসাথে চলে যাবে। কঠিন নয়।
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, আজকে উনারা বাঁধ দেবেন, সেই করবেন- এই বলতে বলতে মানুষের কষ্ট সীমার বাইরে। লজ্জা লাগে শহরের লোকেরা, কর্মকর্তারা, স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা সাম্পানে করে একস্থান থেকে অন্যস্থানে যেতে হচ্ছে। ঘরের কি অবস্থা। এক হাঁটু পানি। সমস্ত ছেলেমেয়েদের পায়ে ঘা হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, বন্দরের কাছে আমি চিঠি লিখেছি। টেন্ডার দিয়ে অতি অল্প সময়ের মধ্যে ড্রেজিং মেশিন আনলে ড্রেজিং করলেই সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। ওয়াসার সমালোচনা করে মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, পানীয় জলের অভাব। এখনো পর্যন্ত ওয়াসার অর্থব ব্যক্তিরা মনে করছে না সেসব এলাকায় গিয়ে বিনা পয়সায় পানি দিই। চট্টগ্রাম শহরের রাস্তাঘাটের করুণ অবস্থা। এটা কি দ্যাশ না শহর! না এভাবে মানুষকে ঠকিয়ে বড় বড় কথা বলে যাওয়া যাবে না। কথা বলতে পারি। মানুষ নিরব আছে বিভিন্ন কারণে। মানুষ কিন্তু ক্ষমা করবে না।
মেয়রের সমালোচনা করে তিনি বলেন, তিনি কি কাজ করেছেন? রাস্তায় এক হাঁটু পানি, এক বুক পানি। এগুলো নিঃসরণের কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। তিনি বলেন, উন্নয়ন তো নেই। কিছু রিলিফ তো আনা যায়। সংগ্রহ করেন না। যখন মেয়র ছিলাম না, নেত্রী যখন ক্ষমতায় ছিলেন না তখন চট্টগ্রামে অসংখ্য সমস্যা ছিল। খাওয়া-দাওয়া, জলোচ্ছ¡াসের তান্ডব। চাল ডাল সংগ্রহ করে মানুষের কাছে গিয়েছিলাম। গায়ে সে শক্তি নাই। তবু আমার স্ত্রী আরও কিছু লোকজনকে দিয়ে কিছু এলাকায় ত্রাণ-পানি দেয়ার ব্যবস্থা করেছি। ইচ্ছে করলে তো পারেন, করেন না কেন? এরা তো প্রচুর আয় করছেন- এমপিরা।
মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, ক্ষমতায় যারা আছেন অবিলম্বে তারা যেন দায়িত্ব পালন করেন। তা না হলে। বয়স হয়ে গেছে আমার। তারা মনে করেছেন (কি বলো তোমরা?)- বেইল গিয়ে গই (বেইল চলে গেছে)। শারীরিক অক্ষমতা হলেও আমি আছি বিধায় চট্টগ্রামে অসংখ্য অপকর্মকারীরা একটু দূরে আছে। একটু ভয় পায়। হজ থেকে আসার পরেই অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াব।
চট্টগ্রামের বর্তমান প্রকৃত পরিস্থিতি তুলে ধরতে সংবাদকর্মীসহ অনেকেই অনিচ্ছুক বলেও মনে করেন আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রকৃত কথা বলতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করছে, বলছি না। সাংবাদিক বন্ধুরা আপনারা বিভিন্ন কারণে পারেন না। আপনাদের মামলা দেয়া হয়। ৫৭ ধারায়। বিজ্ঞাপন আছে। বিভিন্ন কারণে তারা চেঞ্জ হয়ে গেছে।
গণমাধ্যমের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বিজ্ঞাপনের আশায় সত্য কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন। নিজেকে অধিক যোগ্য দক্ষ ব্যক্তি হিসেবে প্রমাণ করে লাভ অর্জন করার চেষ্টা করুন। আপনারা এ মাটির সন্তান।লিখনির মাধ্যমে অবশ্যই জনগণ অবহিত হবে আশাকরি। এসময় উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম ফারুক ও শফিক আদনান।
উল্লেখ এর আগে লালদীঘি ময়দানে জনসভায় তিনি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধে ঘোষণা দিয়েই গরম বক্তব্য দেয়া শুরু করেন। মেয়রও পাল্টা বক্তব্য দেওয়া শুরু করলে দুই নেতার বাকযুদ্ধ চরমে উঠে। পরে দলীয় হাইকমান্ডের হস্তক্ষেপে দুইজনেই চুপ হয়ে যান।



 

Show all comments
  • ফাহাদ ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৪৩ পিএম says : 0
    আওয়ামী লীগ নেতা মহিউদ্দিন চৌধুরী একদম মন্দ কথা বলেন নি।
    Total Reply(0) Reply
  • রেজবুল হক ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৪৬ পিএম says : 0
    মহিউদ্দিন চৌধুরী সুরে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই, ক্ষমতায় যারা আছেন অবিলম্বে তারা যেন দায়িত্ব পালন করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • জেরিন ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৪৭ পিএম says : 0
    আশা করি এবার চট্টগ্রামের এমপি মন্ত্রী এবং মেয়রদের হুশ ফিরবে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমতিয়াজ ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৫১ পিএম says : 0
    দোয়া করি আপনি হজ পালন করে ফিরে এসেসকল অপকর্মের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।
    Total Reply(0) Reply
  • তারেক মাহমুদ ২৬ আগস্ট, ২০১৭, ৫:৫৩ পিএম says : 0
    সত্য কথা বলার জন্য মহিউদ্দিন চৌধুরীকে ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • apu ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ৯:০৫ এএম says : 0
    জলাবদ্ধতা দূর করার একমাত্র রাস্তা । প্রয়োজনের চেয়ে অধিক ধারনক্ষমতা সম্পন্ন সোয়ারেজ সিস্টেম স্থাপন করা । বিদেশী ছবিতে দেখেন মানুষের ঘনত্ব কত কম কিন্তু সোয়ারেজের পাইপের ভীতর দিয়া গাড়ীও চলে । একবার বিপুল ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন সোয়ারেজ সিস্টেম বসাইলে জলাবদ্ধতাতো যাবেই তাছাড়া নগর পরিষ্কার থাকবে ।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ