Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সংবিধানের মৌলিক কাঠামো অক্ষুণ রাখতে এখনও আইন পাস হয়নি

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়-১৮

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ষোড়শ সংশোধনীতে বর্ণিত বিচারকদের অপসারণ প্রক্রিয়ায় নিরপত্তাহীনতা এনে দেবে। এর ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুণ করার সুযোগ সৃষ্টি হবে
প্রজাতন্ত্রের আইন প্রণয়নের ক্ষমতা অর্পিত জাতীয় সংসদই আইন পাসের ক্ষমতা রাখে। ৯৫(২)(গ) অনুচ্ছেদে উচ্চতর বিচার বিভাগে বিচারক নিয়োগের যোগ্যতা নির্ধারণ করে আইন পাসের কথা বলা হয়েছে। তবে বিচার বিভাগে স্বাধীনতা সুরক্ষায় ও এর ফলে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে এবং ‘সংবিধানের মৌলিক কাঠামো’ অক্ষত রাখতে এখনও পর্যন্ত কোন আইন পাস হয় নি। যেহেতু মাসদার হোসেন মামলায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনকে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে এবং পঞ্চম সংশোধনী মামলায় এই ডিভিশন দ্বিতীয় ফরমানে (second proclamation) (দশম সংশোধনী আদেশ) ৯৬ অনুচ্ছেদে জুড়ে দেয়া ধারা অক্ষুন্ন রাখার ব্যাপারে এই বলে সুস্পষ্টভাবে মত প্রকাশ করেছে যে, প্রতিস্থাপিত ধারাটি (সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল) বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষায় আগের থেকে আরও স্বচ্ছ পদ্ধতি বিধায় একে মার্জনা (condone) করা যেতে পারে। বর্ণিত পদ্ধতিটি ২০১৪ সাল থেকে চালূ থাকায় আমি মনে করি যে, পদ্ধতিটিকে ক্ষুন্ন করা ঠিক হবে না। বিরোধপূর্ণ ষোড়শ সংশোধনীতে বর্ণিত উচ্চতর বিচার বিভাগের বিচারকদের অপসারণ প্রক্রিয়ায় নিরপত্তাহীনতা এনে দেবে। যার ফলে এতে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ক্ষুন্ন করার সুযোগ হবে এবং এই অঙ্গ প্রতিষ্ঠানটি নাজুক হয়ে পড়বে ও আইনের শাসন ব্যহত হবে। এতে বিচারকদের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব ও চাপ সৃষ্টির সুযোগ তৈরি হবে, বিশেষ করে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭০ যখন প্রতিস্থাপিত হয়েছে। এই ৭০ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছেঃ
‘৭০। কোন নির্বাচনে কোন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরুপে মনোনীত হইয়া কোন ব্যক্তি সংসদ-সদস্য নির্বাচিত হইলে তিনি যদি-(ক) উক্ত দল হইতে পদত্যাগ করেন, অথবা (খ) সংসদে উক্ত দলের বিপক্ষে ভোটদান করেন, তাহা হইলে সংসদে তাঁহার আসন শূন্য হইবে, তবে তিনি সেই কারণে পরবর্তী কোন নির্বাচনে সংসদ-সদস্য হইবার অযোগ্য হইবেন না।’
সুতরাং সংবিধানে অনুচ্ছেদ ৭০ যতদিন থাকবে ততদিন অবাধে ভোট প্রদানে সংসদ সদস্যদের ইচ্ছা প্রতিফলিত হবে না। অষ্টম সংশোধনী মামলায় বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরি বলেন,
‘সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের রিপোর্ট সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বিচারকদের অপসারণ একটি অনন্য প্রক্রিয়া; কেননা বিচারকদের তাদের নিজেদের সিনিয়র সহকর্মীদের দ্বারাই বিচার করা হয়েছে। ফলে সেটা রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ মুক্তভাবে হয়েছে।’
বিচারকদের নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। বরং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্বাধীন বিচার বিভাগ ও আইনের শাসন জোরদার করতে এটি সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
বিচার বিভাগীয় জবাবদিহিতা উপকমিটি (Subcommittee of Judicial Accountability) বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় {(১৯৯১)৪এসসিসি} ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ইংল্যান্ড, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া বিবেচনায় এনে উল্লেখ করে যে, ‘এসব দেশের অধিকাংশতে বিচারকদের বিরদ্ধে অভিশংসন (impeachment)--এর যথার্থতা নিয়ে প্রধানত প্রক্রিয়ার মধ্যে জুড়ে দেয়া দলীয় কিংবা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এর ফলে বিচারকদের অপসারণের বিষয়টি দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরপেক্ষ বিচার বিভাগীয় কমিশন/ কাউন্সিল কর্তৃক অপসারণের যুক্তিগুলো টেকসই কিনা তা কুয়াসি জুিিডশিয়ালভাবে (Quassi- Judicial) নির্ধারণ করতে হবে......। তাই এ ধরনের কমিশন কিংবা কাউন্সিল গঠন করা প্রয়োজন।’
ইংল্যান্ডে হাউজ অব লর্ডসের লর্ড স্টেইন তার The Judge in Democracy (গণতান্ত্রিক দেশে বিচারক) বইয়ে লিখেছেন, ‘অভিশংসন কার্যক্রমের হুমকি রাজনীতিবিদদের শোষণের হাতিয়ার। তারা এ ভাবে বিচারকদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে চায়। চাকরির মেয়াদকালে কোন বিচারককে তার পদ থেকে অপসারণ করতে চাইলে একান্তভাবে তার স্বাধীনতার নিশ্চয়তাদানকারী কোন কার্যক্রমের মাধ্যমে তা করতে হবে। কোন রাজনীতিক নয়, একজন বিচারক এ ধরণের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন। সর্বতভাবে একটি বিচারের মাধ্যমে এ অপসারণ কার্য সম্পন্ন হবে।’
এটি উল্লেখ করা অপ্রাসঙ্গিক হবে না যে, সকল চাকারজীবীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বাইরে থেকে নয়, বরং অভ্যন্তরীণ তদন্তের মাধমে তার নিজ দপ্তর থেকে নেয়া হয়। এটাই আইনের সাধারণ নীতি। বিচার বিভাগ এর ব্যতিক্রম নয়।
সুতরাং যখন সুপ্রিম কোর্টের বিচারকের মর্যাদাধারী কোন ব্যক্তির অপসারণের প্রশ্ন ওঠে, তখন তা হতে হবে এবং অবশ্যই বিষয়টির দায়িত্বে থাকবে তাদের নিজস্ব লোক, পদমর্যাদায় তাদের সিনিয়র দিয়ে গঠিত কাউন্সিলের ওপর। লর্ড ডেনিংয়ের মতানুসারে,‘কারও না কারও প্রতি আস্থা রাখতে হবে, ধরুন তিনি একজন বিচারক।’



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ষোড়শ সংশোধনী

৫ নভেম্বর, ২০১৭
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ