Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্রাণের আশায় বন্যার্তদের আহাজারি

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কমছে নদ-নদীর পানি : ২৩ স্থানে ১৬ নদী বিপদসীমার উপরে : তীব্রতর হচ্ছে ভাঙন খাবার বিশুদ্ধ পানি জরুরি ওষুধের সঙ্কটে দিশেহারা লাখ লাখ অসহায় বনিআদম বানভাসি মানুষ নিজেদের বসতঘরে ফিরে যেতে চায় গৃহনির্মাণ সামগ্রী


কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার বর্গাচাষী রিয়াজ উদ্দিন, ২বিঘা জমিতে স্থানীয় এনজিও থেকে ৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে আমন ধান আবাদ করেছিলেন। এবারের ভয়াবহ বন্যায় তা শেষ হয়ে গেল। সে আক্ষেপ করে বলেন “বাড়ীঘর গেইল, আবাদ গেইল, ট্যাকাও গেইল, এলা খামো কি বাহে”। গাইবান্ধায় চর থেকে আসা বালাসী রেলের জায়গায় আশ্রয় নেওয়া রহিম। বন্যায় ভেসে গেছে তার স্বপ্ন। নিজের কষ্টের কথা কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘বানের পানিতে দিনরাত হাঁটাচলা করায় হাত-পায়ে ঘাঁ ধরছে। কিন্তু কোনও ওষুধ নাই। নিজেরও খাবার নাই গরুরও খাবার নাই। ঋণ করে ফসল করছি, তাও নিয়ে গেল বন্যা। এখন কি ভাবে ঋণ শোধ করবো, বাড়ি করবো কিছুই বুঝি না। হামারগো মতো গরীবের এতো কষ্ট আর শাস্তি কেন তা আল্লাহই ভালো জানেন।’
দেশের বিভিন্ন অঞ্চল এখন বন্যার পানিতে কমলেও বাড়ছে দুর্ভোগ । মানুষ হারিয়েছে তাদের সহায় সম্বল। মাথা গোঁজার আশ্রয়টুকু পানিতে ভেসে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই খোলা আকাশের নিচে তাদের জীবন কাটাতে হচ্ছে। এর সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে যুক্ত হয়েছে খাবারের অপ্রতুলতা। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় এসব মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোও কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। যে মানুষগুলোর কিছু দিন আগে জীবন জীবিকার তাগিদে কর্মব্যস্ত সময় পার করেছে, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে তাকে দিন কাটাতো হতো না আজ তাকেই তাকিয়ে থাকতে হয় সরকারি বা বেসরকারী সাহার্য্যরে দিকে। একদিন আগে যা ছিলো বাস্তব; সেটাই বন্যার কারণে হয়তো দিনের ব্যবধানে হয়ে গেলো স্বপ্নসম। ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলোকে নিয়ে এ সময় এক অজানা আতংকে পরিবারে সকলের সময় কাটে। একে তো বাচ্চাগুলোর পেটে খিদে বাবা-মা তাদের মুখের দিকে তাকাতে পারে না। আছে খাবার পানির কষ্টও। তা উপরে রয়েছে একটু অসতর্ক বা অসাবধান হলেই সদা সর্বদা বাচ্চাগুলোর পানিতে পড়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা।
বন্যাক্রান্ত মানুষগুলো নানা রকম স্বাস্থ্যঝুঁকির শিকার হচ্ছে। সব থেকে বড় সমস্যা যেটা হয় সেটা হচ্ছে যথেষ্ট পরিমাণে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব। একাধারে খাবার, শোবার এবং পানির কষ্টে মানুষগুলো অসহায় হয়ে পড়ে। গুরুতর অসুস্থ ব্যক্তিদের অবস্থা তো অবর্ণনীয়। জীবন ও জীবিকার চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়া এ মানুষগুলোর তাই নানা রকম শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। দেখা দিচ্ছে ডায়রিয়া, কলেরা, জন্ডিস, আমাশয়, কৃমি, চোখ ওঠাসহ নানা রোগ। শিশুদের পড়ালেখাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিদারুণভাবে। স্কুল-কলেজগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে আশ্রয় কেন্দ্র। বন্ধ রয়েছে শিক্ষাদানের কার্যক্রম। বইখাতা ভেসে গেছে অসংখ্য শিশুর। এদিকে বাড়ছে ভাঙনের তীব্রতা । ভাঙনে একে একে বিলীন হচ্ছে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট। নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ এসব মানুষের দুঃখ কষ্ট নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্ট:
শফিউল আলম চট্ট্রগ্রাম থেকে জানান, বিপদসীমার উপরে ও কাছাকাছি অবস্থানে থাকা নদ-নদীসমূহের পানি ধীরে ধীরে কমছে। নদ-নদীর পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং গঙ্গা-পদ্মায় পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। সুরমা-কুশিয়ারায়ও আগামী ২৪ ঘণ্টায় পানি আরো কমবে। গতকাল (বৃহস্পতিবার) ২৩টি পয়েন্টে ১৬টি নদ-নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তিনটি প্রধান অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনার (সুরমা-কুশিয়ারা ও বিভিন্ন ধারা) নদ-নদীগুলোতে পানি হ্রাস অব্যাহত থাকে। এরফলে দেশের নদ-নদীর ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে পানি হ্রাস পায় ৬৯টিতে। বৃদ্ধি পায় ১৯টিতে, অপরিবর্তিত থাকে ২টিতে। আগের দুই দিনে ৩৭টি পয়েন্টে পানির সমতল বৃদ্ধি, ৪৯টিতে হ্রাস ও অপরিবর্তিত ছিল ৪টিতে। যা গতকাল আরও বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির সূচক। তবে নদীগুলো পানি নামার সাথে সাথে তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে নদীভাঙন। নদীপাড়ের মানুষ ভাঙন আতঙ্কের মধ্যেই দিন-রাত গুজরান করছে। গ্রাম-জনপদ সুরক্ষার জন্য বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলো আগেই সময়মতো সংস্কার-মেরামত করা হয়নি। এ কারণে নড়বড়ে বাঁধগুলো আরো ভেঙে পড়ে একের পর এক নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসতঘর, ভিটেমাটি, ফসলি জমি ও রাস্তাঘাট। এদিকে খাদ্যসামগ্রীসহ ত্রাণের আশায় বন্যার্তদের আহাজারি বাড়ছে দিন দিন। এ মুহূর্তে সর্বত্র খাবার, বিশুদ্ধ পানি, জরুরি ওষুধের সঙ্কটে দিশেহারা হয়ে পড়েছে লাখ লাখ বন্যার্ত অসহায় বনিআদম। বিশেষত শিশু-বৃদ্ধ ও মহিলাদের দুর্ভোগ চরমে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে শিশুরা ভুগছে মারাত্মক অপুষ্টিতে। বানভাসি ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষ নিজেদের বসতঘরেই আবার ফিরে যেতে এবং নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চায়। এরজন্য তারা জরুরি সহায়তা হিসেবে চায় বিভিন্ন ধরনের গৃহনির্মাণ সামগ্রী।
এদিকে গতকাল পর্যন্ত বিভিন্ন নদ-নদীর উজানের বন্যার পানি ভাটিতে নামা অব্যাহত থাকে। এ কারণে ভাটির দিকে ও মোহনা অবধি বন্যার পানির বৃদ্ধি পায়। রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের উত্তর-জনপদ, ঢাকাসহ মধ্যাঞ্চল, মধ্য-দক্ষিণাঞ্চল হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে বানের পানি প্রবলবেগে চাপ সৃষ্টি করে নামছে সাগরের দিকে। বঙ্গোপসাগর এখন স্বাভাবিক ও শান্ত থাকায় উজানের পানি নেমে যেতে কোনভাবে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে না। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির ক্ষেত্রে এটি বেশ সহায়ক হয়েছে। তবে নাব্যতা হারিয়ে প্রায় সবক’টি নদ-নদীর বুক ভরাট থাকায় এবং ড্রেজিং না করার কারণে বানের পানি তীব্র চাপ সৃষ্টি করে উজান থেকে ভাটি ও মোহনার দিকে নামার সময় নদীগুলোর দু’কুল উপচে গিয়ে বিস্তীর্ণ নিম্নাঞ্চল এমনকি কোথাও কোথাও নতুন এলাকাও প্লাবিত হচ্ছে। এ অবস্থায় ভাটি ও মোহনায় বিভিন্ন স্থানে পানিবন্দী লাখো মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।
দেশের নদ-নদীর পরিস্থিতি এবং পূর্বাভাসে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে গতকাল সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এই তিনটি অববাহিকার মধ্যে গঙ্গার ভারতীয় ও বাংলাদেশ উভয় অংশেই পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় ভারতীয় ও বাংলাদেশ উভয় অংশে পানির সমতল সার্বিকভাবে হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশের গোয়াহাটিতে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৮০ কিলোমিটার উজানে) ১৭ সেন্টিমিটার এবং পান্ডু পয়েন্টে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ১৬০ কিমি উজানে), গোয়ালপাড়ায় (বাংলাদেশ সীমান্তের ৯০ কিমি উজানে) ও ধুবরীতে (বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ২৫ কিমি উজানে) ১২ সেমি করে পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তওে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানির সমতল নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে হ্রাস অব্যাহত আছে। বন্যা পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যার উন্নতি অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা নদীর পানি হ্রাস পেতে শুরু করেছে। সর্বশেষ গঙ্গা নদীর পানি পাংখা, রাজশাহী ও হার্ডিঞ্জ ব্রিজের পর্যবেক্ষণাধীন তিনটি বিপদসীমার যথাক্রমে ১০৯ সেমি, ১০২ সেমি ও ৫১ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর ভাটিতে পদ্মা নদীর পানির সমতলও হ্রাস পাচ্ছে এবং তা আগামী ৭২ ঘন্টায় অব্যাহত থাকবে। মেঘনা অববাহিকার নদ-নদীগুলোতে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি বজায় থাকবে।
ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের ভারতীয় অংশে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ১৬ সেমি পানি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশে উভয় নদের বিভিন্ন পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানির সমতল হ্রাস অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা নদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবহমান থাকবে। গঙ্গার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানির সমতল হ্রাস আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে মেঘনা অববাহিকায় ন-নদীসমূহের পানির সমতল হ্রাস আগামী ২৪ ঘন্টায় অব্যাহত থাকতে পারে। দেশের উত্তর জনপদের অঞ্চলের বর্তমান বন্যা পরিস্থিতি বিশেষ করে কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জে উন্নতির ধারা অব্যাহত থাকবে। পদ্মা নদীর পানির সমতলের হ্রাস বজায় থাকায় দেশের দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের বিশেষত মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চারপাশের নদ-নদীগুলোর মধ্যে সর্বশেষ তথ্যে- শীতলক্ষ্যা নদীর পানি হ্রাস পেয়ে নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমার ৮ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তাছাড়া রাজধানী ঢাকা সংলগ্ন বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও টঙ্গিখালের পানি আরো হ্রাস পেয়েছে এবং বিপদসীমার যথাক্রমে ৯০ সেমি, ১৫ সেমি, ৭ সেমি এবং ৯ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।
দেশের বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে অন্যতম প্রধান নদ-নদীসমূহের গতকাল সর্বশেষ প্রবাহের অবস্থান ছিল- উত্তরের জনপদে যমুনা নদের পানি আরও হ্রাস পেয়ে বাহাদুরাবাদ ও সারিয়াকান্দিতে বিপদসীমার যথাক্রমে ৭ ও ৪ সেমি নিচে নেমেছে দীর্ঘদিন পর। আর কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও ভাটিতে আরিচায় বিপদসীমার ১৮, ৩৭ ও ১৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সিংরায় গুর নদীর পানি প্রায় অপরিবর্তিত থেকে বিপদসীমার ৯৫ সেমি উপরে রয়েছে। আত্রাই নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ৫৯ সেমি এবং ধলেশ্বরী নদীর পানি কমে গিয়ে টাঙ্গাইলের এলাসিনে ৫৯ সেমি উপরে ছিল। মহানন্দা নদীর পানি গতকাল হ্রাস পেয়ে রোহনপুরে বিপদসীমার ৬৬ ও চাপাইনবাগঞ্জে ১৬ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। নওগাঁয় ছোট-যমুনার পানি কিছুটা কমে গিয়ে বিপদসীমার ১৬ সেমি উপরে ছিল। গঙ্গার ভাটিতে পদ্মা নদীর পানি আরো কমেছে। গতকাল গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বরে পদ্মা যথাক্রমে বিপদসীমার ৫৫, ১৮ ও ১৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
অপরদিকে মেঘনা অববাহিকায় সিলেটের সুরমা নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পায় এবং কানাইঘাটে বিপদসীমার ৪ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদী ৩টি পয়েন্টে পানি আরো কমেছে এবং বিপদসীমার ২ থেকে ১৯ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। দিরাইয়ে পুরাতন-সুরমা নদী বিপদসীমার ১৮ সেমি উপরে, নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরো হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৪৭ সেমি উপরে ছিল। ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি কিছুটা বেড়ে বিপদসীমার ৪৯ সেমি উপরে ছিল। খুলনায় পশুর নদী বিপদসীমার ৩৯ সেমি উপরে ছিল। চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর পানি বিপদসীমার মাত্র ৪ সেমি নিচে প্রবাহিত হয়।
সৈয়দ শামীম শিরাজী সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, সিরাজগঞ্জে যমুনা নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি লাভ করলেও মানুষের দু:খ দুর্দশা কমছেনা। পানি যতই কমছে রাস্তাঘাট ভাঙন আর জমিজমা ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে। বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। নতুন করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছর চৌহালীতে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ৭ কি:মি:নদী তীর সংরক্ষন বাঁধ ১৩ দফায় ভেঙে সিরাজঘঞ্জর মানচিত্র থেকে মুছে যেতে শুরু করেছে। চলতি বছর ৩মাসে ১৩ বারে ভাঙনে এলাকার মানুষ শঙ্কিত হয়ে পড়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কিছু অসৎ কর্মকর্তার সীমাহীন দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, ঠিকাদারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট গড়ে উঠায় কাজের মান সর্বনিম্নে পৌছানোর কারনে যমুনা ভাঙগন বন্ধ হচ্ছেনা বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর। গত ৭৩ বছরে যমুনা ভাঙ্গনে বিলীন উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান, ১৩ গ্রামের বাড়িঘর, রাস্তাঘাট, অসংখ্য বেসরকারী দালঅনকোঠা, তাঁত ফ্যাক্টরী, হাট-বাজার যমুনা নদীর খেপা নদীর রশানলে শিকার হয়েছে।
কালকিনি(মাদারীপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় আঁড়িয়াল খাঁ নদের অব্যাহত ভাঙনের কবলে পড়ে নদীতীরবর্তী গ্রামবাসী দিশেহারা হয়ে পড়েছে। প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ইতিমধ্যে দেড় শতাধিক বাড়িঘর ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আর বসত বাড়ি হারিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো এখন খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি গ্রামে ক্ষতিগ্রস্তদের কিছু আর্থিক সহায়তা দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আবার কোন কোন গ্রামে উপজেলা প্রশাসন থেকে খবর পর্যন্ত নেয়া হয়নি। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত সাধারন মানুষের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নদীভাঙ্গনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার গুলো সহায়তা প্রাপ্তির আশায় এব্যাপারে সরকারের দৃষ্টি আর্কষণ করেছে।
ঠাকুরগাঁও জেলা সংবাদদাতা জানান, ঠাকুরগাঁওয়ে বন্যায় কাঁচা-পাকাঁ রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট ভেঙে যাওয়ায় চলাচলে ভোগান্তির হচ্ছে পথচারি ও স্থানীয়রা। বন্যার পানি শুকিয়ে গেলে ভাঙাচোরা রাস্তা সাধারণ মানুষের চলাচলে ব্যহত হয়। কিছু কিছু রাস্তা বেশি ভেঙে যাওয়ায় কয়েক কিলোমিটার পথ ঘুরে ভিন্ন রাস্তা দিয়ে যেতে হয় গন্তব্যস্থলে। ফলে রাস্তা, ব্রীজ ও কালভার্ট দ্রুত সংস্কার না করা হলে স্থানীয়রাসহ সাধারন মানুষ আরো বেশি দূর্ভোগের শিকার হবে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদপ্তর (এলজিইডি) ঠাকুরগাঁও অফিস সুত্র জানায়, এলজিইডি’র আওতায় ১ হাজার ৫২ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তার মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫, রাণীশংকৈলে ৪, পীরগঞ্জে ১০, হরিপুরে ৯ ও বালিয়াডাঙ্গীতে ১৮ কিলোমিটার পাঁকা রাস্তা বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে ৩ হাজার ৭শ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তার মধ্যে সদর উপজেলায় ৬১, রাণীশংকৈলে ৩১, পীরগঞ্জে ৪১, হরিপুরে ৩৭ ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৫০ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। আর ৬ হাজার ২৮৯ টি ব্রীজ ও কালভার্টের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬ ব্রীজ ২৩ টি কালভার্ট, রাণীশংকৈলে ২ ব্রীজ ৭ টি কালভার্ট, পীরগঞ্জে ৫ ব্রীজ ১৯ টি কালভার্ট, হরিপুরে ৫ ব্রীজ ১৬ টি কালভার্ট ও বালিয়াডাঙ্গীতে ৪ ব্রীজ ২১ টি কালভার্ট বন্যার কারনে ভেঙ্গে পরেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ