Inqilab Logo

বুধবার ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বন্যার উন্নতি ভাঙন অব্যাহত

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ২৩ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

গঙ্গা-পদ্মা যমুনা সুরমা কুশিয়ারায় পানি আরও কমেছে : ১৪ নদ-নদী ২৪টি স্থানে বিপদসীমার উপরে : উত্তর, মধ্যাঞ্চল ও মধ্য-দক্ষিণের সর্বত্র বানের ক্ষয়ক্ষতি ভেসে উঠছে : বানভাসিদের খাদ্য পানি ওষুধের সঙ্কট প্রকট


দেশের কোথাও পানি বাড়ছে, আবার কোথাও কমছে। দেখা দিয়েছে ভাঙন ও দুর্ভোগ। দীর্ঘদিন পানিবন্দি থাকায় বিপাকে পড়েছে নারী, শিশু, বৃদ্ধরা। দেখা দিয়েছে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানি ও গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট। অপরদিকে অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে জুটছে না ত্রাণের চাল। ত্রাণের জন্য চারদিকে হাহাকার চলছে। দুর্গতরা জনপ্রতিনিধিদের দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছে ত্রাণের আশায়। এমনকি প্রশাসন এবং বিভিন্ন ব্যাক্তি বা সংস্থার পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করতে গেলেও শতশত মানুষকে ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। সরকারের পক্ষ থেকে ব্যাপক ত্রাণ বরাদ্দের কথা বললেও প্রকৃতপক্ষে এখনো পর্যাপ্ত ত্রাণ থেকে বানভাসি বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ জন্য কেউ কেউ দায়ী করছেন সমন্বয়হীনতাকে। আমন ক্ষেত, বীজতলা, শাকসবজির ক্ষেত পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা হতাশ হয়ে বললেন, ‘কত সমস্যা খইতাম। বৈশাখ মাসে হাওরের তিন একর জমির বোরো ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। ঘরও একটা চাল নাই। হাতও খালি। এখন বন্যা আইছে। আমরা চলতাম কিলা। বাঁচতাম কিলা।’ পকেটে নেই টাকা, হাড়িতে নেই চাল; এই চলছে তাদের দিন কাল। গ্রামের নলকূপগুলো পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির তীব্র সঙ্কট রয়েছে। দেখা দিচ্ছে জ্বর, পেটের পীড়াসহ পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে তারা। পানিবাহিত রোগ দেখা দেয়ায় স্বাস্থ্য বিভাগ বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত মেডিকেল টিমও পাঠায়নি বলে অভিযোগ করেন পানিবন্দি মানুষ। আবার অনেকে বলেন, মেডিকেল টিম আসলেও ২/৪ মিনিট অপেক্ষা, এরপর ছবি উঠানো তারপর শেষ।
এদিকে বন্যার দুর্ভোগ কাটতে না কাটতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। মানুষের তিল তিল পরিশ্রমে গড়ে ওঠা সংসার, ঘরবাড়ি, পশুপাখি এবং সহায় সম্বল চোখের পলকেই সব নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উঠানের চুলো থেকে শুরু করে, গোয়ালঘর, বাড়ির ঘটিবাটি কিছুই থাকে না। ফলে নদীভাঙ্গা পরিবারগুলো এক বিরাট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়। বন্যায় ও ভাঙনে দেশের বিপুল সংখ্যক দরিদ্র অসহায় মানুষ আক্রান্ত হলেও এনজিওগুলোকেও নির্বিকার বসে থাকতে দেখা গেছে। এসব মানুষের দুঃখ কষ্ট নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্ট:
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো থেকে জানায়, বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতির ধারা বজায় আছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বিশেষত ভাটি ও মোহনার দিকে নদী-ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। গতকাল (মঙ্গলবার) দেশের প্রধান তিনটি নদ-নদী অববাহিকা গঙ্গা-পদ্মা, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনায় (সুরমা-কুশিয়ারা ধারা) পানি আরও কমে আসে। ১৪টি নদ-নদী ২৪টি স্থানে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। দেশের নদ-নদীসমূহের ৯০টি পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পায় ৩৭টিতে, হ্রাস পায় ৪৯টিতে, অপরিবর্তিত থাকে ৪টিতে। যা আগের কয়েকদিনের তুলনায় পানির সমতল হ্রাসের সূচক বহন করছে। বানের পানি ভাটির দিকে যতই নামছে দেশের উত্তর জনপদ, মধ্যাঞ্চল ও মধ্য-দক্ষিণ অঞ্চলের সবখানেই ক্ষয়ক্ষতি ভেসে উঠছে। লাখ লাখ বানভাসি অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য, পানি, ওষুধের সঙ্কট অত্যন্ত প্রকট। ত্রাণের আশায় তাকিয়ে আছে অসহায় বন্যার্তরা। কিন্তু কোথায় ত্রাণ, কে বাড়াবে সাহায্যের হাত? ত্রাণ সামগ্রী যা মিলছে প্রকৃত চাহিদার তুলনায় তা নেহায়েৎ অপ্রতুল।
এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নদ-নদী পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস সূত্রে জানা গেছে, উজানভাগে হিমালয় নেপাল ও ভারতের বিহারে বৃষ্টি-বাদল না থাকায় গঙ্গায় পানি বাড়লেও চাপ আরো কমেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ সূত্র জানায়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা এই তিন অববাহিকার মধ্যে গঙ্গায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে পানি হ্রাস অব্যাহত আছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি বজায় থাকবে। গঙ্গা নদীর পানি স্থিতিশীল রয়েছে। সর্বশেষ গঙ্গা বিভিন্ন পয়েন্টে বিপদসীমার ৪২ সেমি থেকে ১০২ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পদ্মা নদীর পানিও হ্রাস পাচ্ছে, তা আগামী ৭২ ঘন্টায় অব্যাহত থাকবে। মেঘনা অববাহিকায় বন্যার আগামী ৪৮ ঘণ্টায় উন্নতি অব্যাহত থাকবে। গঙ্গার পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হবে। পদ্মায় পানির সমতল হ্রাস আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। মেঘনায় নদীর পানি আগামী ৪৮ ঘন্টায় হ্রাস বজায় থাকবে। মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চারদিকে বালু, তুরাগ, বুড়িগঙ্গা, টঙ্গী খালের পানি বিপদসীমার নিচে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে ঢাকার পাশে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বেড়ে ফের হ্রাস পেয়ে নারায়ণগঞ্জে বিপদসীমার ৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
গতকাল দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের সর্বশেষ অবস্থান ছিল উত্তর জনপদের যমুনা নদে পানি আরো হ্রাস পেয়ে বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ ও ভাটিতে আরিচায় বিপদসীমার ২২ থেকে ৬১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। চকরহিমপুরে করতোয়া নদীর পানি আরো কমে মাত্র এক সেমি উপরে ছিল। আত্রাই নদীর পানি কমে বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ৮১ সেমি এবং ধলেশ্বরী নদী টাঙ্গাইলের এলাসিনে ৮০ সেমি উপরে ছিল। মহানন্দা নদীর পানি চাপাইনবাগঞ্জে বিপদসীমার ১৬ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পদ্মা নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে গোয়লন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বরে পদ্মা যথাক্রমে বিপদসীমার ৭৫, ২৯ ও ৩৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে মেঘনা অববাহিকায় সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীতে পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় সুরমা কানাইঘাটে বিপদসীমার ৩ সেমি উপরে এবং কুশিয়ারা নদী ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ৭ থেকে ২২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরও হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সেমি উপরে এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদীর পানি অপরিবর্তিত থেকে ৪৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানায়, নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানি বিপদসীমার ২৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নিম্নাঞ্চল বন্যার পানিতে তলিয়ে যেতে পারে আশঙ্কা রয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা মোঃ রফিকুল ইসলাম মজুমদার জানান, পাঁচটি উপজেলায় সভা করে দুর্যোগ মোকাবেলার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
গোবিন্দগহ্জ(গাইবান্ধা)উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পানি বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের ৫টি ভাঙ্গন স্থান দিয়ে প্রবল বেগে পানি প্রবেশ করে উপজেলার নিম্নাম্ব্ঞ্চলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে গিয়ে বাহাদুরপুর গ্রামের বৃদ্ধ আব্দুল মজিদ(৯০) বন্যার পানিতে ডুবে মারা যায়।
গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত পূণর্ভবা ও মহানন্দা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় পানির তোড়ে মঙ্গলবার আলিনগর ইউনিয়ন রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ফলে ওই ইউনিয়নের শত শত বিঘা জমির ফসল, বাড়ীঘর ও মৎস্য ক্ষেত্র চুড়ইল বিলের মাছ হুমকির মুখে পড়েছে। সোনাতলা বাঁধের বেশ কয়েকটি অংশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
আবদুল ওয়াজেদ কচি, সাতক্ষীরা থেকে জানান, সাতক্ষীরা জেলায় নতুন করে ১০টা গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।পুকুর ডুবেছে শত শত , রাস্তায় হাটু সমান পানি, রান্না করার জায়গা নাই। এটা কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ নয়, এটা মানব সৃষ্ঠ দূর্যোগ এমনটাই দাবি এলাকাবাসির। জেলা শহরে ডায়ের বিলের পানি বেতনা নদিতে ফেলার জন্য তৈরী হয়েছিল ¯øুইস গেট । পলি জমার কারণে প্রতি বছর ভরে যায় গেটের দুপাশ। যার কারনে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই প্লাবিত হয় পার্শবর্তী অঞ্চল
মহসিন আলী মনজু, ফুলবাড়ী, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার দেড়লাখ লোক পানিবন্দি হয়ে পড়ে। ঘরবাড়ী, রাস্তাঘাট সব ডুবে যায়, নিরাপদ আশ্রয় এর খোঁজে মানুষ পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নগুলোতে ছুটতে থাকে । গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগী নিয়ে বাড়ী, ঘর ছেড়ে জেগে থাকা রাস্তা, ওয়াপদা বাধ ও স্কুল কলেজে আশ্রয় নেয়। মানুষ, গরু, ছাগল, ও হাঁস, মুরগীতে ঠাসাঠাসি করে কোন রকমে বিভিষিকাময় নির্ঘুম রাত কাটান। আইনুদ্দীন আল আজাদ [ রহঃ] ট্রাষ্ট এর পক্ষ থেকে -১ম বারের মত অসহায়, গরীব ও বন্যার্তদের মাঝে কুড়িগ্রাম এর নাগেশ্বরী ও রায়গঞ্জে ত্রাণ বিতরণ আইনুদ্দীন আল আজাদ (রহঃ)।
শিবচর (মাদারীপুর) সংবাদদাতা জানান, পদ্মায় পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীল ও আড়িয়াল খা নদীতে ৩ সে.মি. পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিবচরে নদী ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে। পদ্মা নদীতে ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত থাকায় উপজেলার চেয়ারম্যানের বাড়িসহ শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়েছে। ভয়াবহ ভাঙন ঝূকিতে আক্রান্ত হয়েছে চরের একমাত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরো ৪টি প্রাথমিক স্কুল, ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, কমিউনিটি ক্লিনিক, হাটসহ শত শত বাড়ি ঘর।
সৈয়দ শামীম শিরাজী সিরাজগঞ্জ থেকে জানান, সিরাজগঞ্জের পানি কমলেও কমছেনা মানুষের দুঃখ কষ্ট, বাড়ছে দুর্ভোগ, পানি জেগে উঠছে ক্ষত চিহ্ন।, খাদ্যাভাব, ত্রাণের অপ্রতুলতা, গোখাদ্য সংকট, পয়ঃপ্রনালীর অব্যবস্থাপনা ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পারেনি কেউ। সবকিছু মিলিয়ে পানি কমলেও কমছেনা তাদের কষ্ট। বসতবাড়ী তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় নেয় বাঁধে আর উচু স্থানে। সরঞ্জাম না থাকায় বাঁশের খুটির সাথে পলিথিন-প্লাষ্টিকের বস্তা ও কাঁথা দিয়ে তোলে ঝুপড়ি ঘর। আর ওই ঝুপড়ির মধ্যে ছোট ছোট শিশু, গরু-ছাগল আর কুকুর সাথে মানবেতর ভাবে বসবাস করতে থাকে।ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকায় ছুটছে বিএনপি
ফারুক হোসাইন : টানা কয়েকদিনের বৃষ্টি ও ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে ভেসে গেছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল। বানের পানিতে ঘর-বাড়ি, গবাদি পশু ডুবে যাওয়ায় সহায়-সম্বলহীন হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। অর্ধাহার-অনাহারে দিনাতিপাত করছে বানভাসি মানুষেরা। সামান্য খাবারের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে বন্যা দুর্গত এলাকায়। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সামান্য ত্রাণের জন্য চোখ মেলে থাকে বন্যা দুর্গতরা। দেশের এই প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন মুহূর্তে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম, সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচি, দল গোছানোসহ অন্যান্য সব কাজ ফেলে বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশ দিয়েছেন বিএনপি চেয়াপারসন বেগম খালেদা জিয়া। চেয়ারপারসনের নির্দেশনার পর থেকেই দুর্গত এলাকায় ছুটছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় থেকে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন ওয়ার্ডের নেতারা। বিশেষ করে আগামী নির্বাচনে যারা প্রার্থী হতে ইচ্ছুক এমন নেতারা দিন রাত পার করছেন বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে। বন্যার্ত মানুষদের মাঝে সামর্থ অনুযায়ি ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি খোঁজ খবর নিচ্ছেন আক্রান্ত মানুষদের। প্রথম দিকে স্থানীয়ভাবে স্বল্প পরিসরে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের মাধ্যমে তা আরও জোরদার হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমানকে প্রধান সমন্বয়কারী এবং বিএনপি’র ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসিনকে সদস্য সচিব করে ত্রাণ কমিটি করেছে বিএনপি। এছাড়া বন্যা দুর্গত প্রতিটি বিভাগের জন্য পৃথকভাবে কমিটিও করা হয়।
বন্যার্তদের জন্য ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি দলের নেতাকর্মী ও স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে ত্রাণ সংগ্রহের জন্য খোলা হয় একটি ব্যাংক একাউন্ট। বিএনপির উদ্যোগে ত্রাণ সংগ্রহ এবং বিতরণ কার্যক্রম পুরোদমে চলছে জানিয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা নেতাকর্মীসহ স্বচ্ছল ব্যক্তিদের কাছ থেকে বন্যাদুর্গত মানুষদের জন্য ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। সকলেই তাদের সামর্থ অনুযায়ি সহযোগিতা করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীরাও ত্রাণ নিয়ে দুর্গত এলাকাগুলোতে ছুটছেন। আজও (গতকাল) বিএনপির কয়েকটি টিম কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, জামালপুর, শরিয়তপুরসহ কয়েকটি জেলায় ত্রাণ বিতরণ করছে বলে তিনি ইনকিলাবকে জানান। তার সাথে কথা বলার সময় তিনি নিজেও গতকাল ঠাকুরগাঁওয়ে ত্রাণ বিতরণ শেষে ঢাকায় ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সারাদেশে ব্যাপক বন্যায় বন্যাদুর্গত অসহায় ও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে বিএনপি গঠিত জাতীয় ত্রাণ ও পূনর্বাসন কমিটি নিয়মিত ত্রাণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা দলের ত্রাণ তহবিলে নিজ নিজ সাধ্যমতো সাহায্য সহযোগিতা করছেন। এছাড়া বিএনপি’র বিভাগীয় ত্রাণ টিমগুলো বন্যাকবলিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে গিয়ে দুর্গত মানুষদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। গতকাল বিএনপি’র নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ত্রাণ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী ও বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আতাউর রহমান ঢালী, রংপুর বিভাগীয় ত্রাণকমিটির আহবায়ক ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিএনপি’র প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদসহ নেতৃবৃন্দ বিশেষ সভা করেছেন। সভায় বিএনপি’র জাতীয় নির্বাহী কমিটির সকল নেতৃবৃন্দ এবং বিএনপি’র সকল অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের যার যার সাধ্যমতো দলের ত্রাণ তহবিলে সাহায্য প্রদানের আহবান জানানো হয়।
দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ: দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বন্যা আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই দুর্গত এলাকায় ছুটছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। বন্যার পানিতে ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুরের বিভিন্ন এলাকা ডুবে যাওয়ার পরপরই সেখানে ছুটে যান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। নিজের উদ্যোগেই সেখানে ত্রাণ বিতরণ করেন। তবে দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থান দুর্গত মানুষদের পাশে দাঁড়াতে নেতাকর্মীদের আহ্বান জানানোর পরপরই জোরদার হতে থাকে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম। এর আগে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান জামালপুরে, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে, নীলফামারিতে সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শামসুজ্জামান জামান, সৈয়দপুরে বিএনপির রাজনৈতিক জেলার সাধারণ সম্পাদক আমজাদ হোসেন সরকার, দিনাজপুরে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এজেডএম রেজওয়ানুল হক, কুড়িগ্রামে জেলা বিএনপির সভাপতি তাজবিরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক সাইফুর রহমান রানা স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে বানভাসি মানুষের কাছে ছুটে যান, বিতরণ করছেন ত্রাণ, ডুবতে থাকা এলাকা থেকে সাধারণ মানুষ ও গবাদি পশুকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিতে কাজ করেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয়ভাবে বিএনপির ত্রাণ কমিটি গঠন করার পর কেন্দ্রীয় অনেক নেতায় এখন ছুটছেন দুর্গত এলাকায়। গত সোমবার এবং গতকাল কুড়িগ্রামে বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিরতণ বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। গতকাল বিএনপি’র জাতীয় ত্রাণ কমিটির আহবায়ক ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে রংপুর বিভাগীয় টিম ঠাকুরগাঁও জেলার বন্যাদুর্গত এলাকায়, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে যুবদল টাঙ্গাইলের সদর উপজেলায়, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্সের নেতৃত্বে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ত্রাণ টিম শেরপুরের সদর উপজেলায়, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম এবং সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুর নেতৃত্বে রংপুর বিভাগীয় ত্রাণ টিম সৈয়দপুর ও গাইবান্ধা জেলার বন্যাকবলিত এলাকায়, ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক হাজী আমিনুর রশীদ ইয়াসিন এবং স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরফত আলী সপু’র নেতৃত্বে রংপুর বিভাগীয় ত্রাণ টিম রংপুর জেলার বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। গত ১৯ আগস্ট নওগাঁ ৬ আসনের (রানীনগর- আত্রাই) বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করেন সাংবাদিক মামুন হোসেন স্ট্যালিন। এদিকে আজ ত্রাণ কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী আব্দুল্লাহ আল নোমান এবং বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা: এ জেড এম জাহিদ হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এর নেতৃত্বে ময়মনসিংহ বিভাগীয় ত্রাণ টিম জামালপুর জেলাধীন ইসলামপুর উপজেলার বিভিন্ন বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবেন। ২৪ আগস্ট যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল এর নেতৃত্বে ঢাকা বিভাগীয় ত্রাণ টিম মানিকগঞ্জ জেলাধীন দৌলতপুর, ঘিওর, শিবালয়, হরিরামপুর ও সাটুরিয়ায় বন্যাদুর্গত মানুষের মাঝে, ২৫ আগস্ট দোহার ও নবাবগঞ্জ উপজেলায়, একই দিনে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী’র নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবক দলের ত্রাণ টিম বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলায় বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করবেন। ত্রাণ বিরতণ কার্যক্রম সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের নেতাকর্মীরা বন্যাদুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণে সক্রিয় রয়েছেন। প্রতিদিনই দুর্গত এলাকাগুলোতে কোন না কোন টিম কাজ করছে। বিএনপি থেকে শুরু করে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতারা কাজ করছেন। মহিলা দলের পৃথক টিমগুলোও দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ করছেন বলে তিনি জানান।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ