পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনস্টেবল সিচুয়েশন নিয়ে আমি বিব্রত -অ্যাটর্নি জেনারেল
স্টাফ রিপোর্টার : সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আদালতের বাইরে ক্ষমতাসীনরা ঝড় তুলেছে মন্তব্য করেছের প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনারা ঝড় তুলছেন; আমরা, বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি; যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। এ সময় মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম আবেদনের শুনানির আরজি জানালে প্রধান বিচারপতি তাঁকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি। সেখানে ধৈর্যের কথা বলা আছে। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) ঘোষণার করলো। সেখানে রায় নিয়ে কিছুই (আলোচনা সমালোচনা) হয়নি। শুধু বলবো আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার।
নিম্নআদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি চূড়ান্ত করার বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের শুনানিতে গতকাল প্রধান বিচারপতি ও অ্যাটর্নি জেনারেলের মধ্যে এসব কথোপকথন হয়। এসময় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৬ বিচারকের আপিল বেঞ্চ বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলাসংক্রান্ত বিধিমালা নিয়ে আলোচনার আহ্বানে সরকারের সাড়া না পেয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। বেঞ্চের অপর ৬ সদস্য হলেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, আপনারা (অ্যাটর্নি জেনারেল) ঝড় তুলছেন। আপনারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলেন। কোর্টে এসে অন্য কথা বলেন। আপনাদের বলছি, আপনাকে নয়। আপনিই বলেন। কবে কি হবে? এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটা আনস্টেবল সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। সবটা নিয়েই আমি বিব্রত।
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের দীর্ঘ টানাপড়েনের পর আইনমন্ত্রী ওই বিধিমালার খসড়া সুপ্রিম কোর্টে জমা দিলেও প্রধান বিচারপতি গত ৩০ জুলাই তা গ্রহণ না করে কয়েকটি শব্দ ও বিধি নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওই খসড়া গ্রহণ না করে প্রধান বিচারপতি মতপার্থক্য নিরসনে আইনমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইন মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় ডাকলেও আইনমন্ত্রী এখন পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে যাননি। চাকরিবিধির ওই গেজেট প্রকাশের জন্য গত ৬ আগস্ট সরকারকে দুই সপ্তাহ সময় দিয়েছিল আপিল বিভাগ। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও সময়ের আবেদন করেন। এ বিষয়ে শুনানির পর আপিল বেঞ্চ ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় মঞ্জুর করে। গেজেট প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে এ নিয়ে ২৫ দফায় সময় পেছানো হয়।
শুনানির শুরুতে প্রধান বিচারপতি এস সে সিনহা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমকে আলোচনায় বসার আহ্বানের কথা স্মরণ করে দিয়ে বলেন, গত তারিখে কি কথা ছিল? কার সঙ্গে কে কে থাকবে তা ঠিক করে আলাপ-আলোচনা করার কথা ছিল। কে কে থাকবে? জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ল মিনিস্টার। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, এতই আমরা ইয়ে হয়ে গেলাম আলোচনা পর্যন্ত করলেন না?
বিচারপতি সিনহা বলেন, আপনারা মিডিয়াতে অনেক কথা বলেন। কোর্টে এসে অন্য কথা বলেন। আপনাদের বলছি, আপনাকে নয়। আপনিই বলেন। কবে কি হবে? অ্যাটর্নি জেনারেল তখন বলেন, একটা আনস্টেবল সিচুয়েশন তৈরি হয়ছে। তখন প্রধান বিচারপতি সেই আনস্টেবল সিচুয়েশনের বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, সবটা নিয়েই আমি বিব্রত।
বিচারপতি সিনহা বলেন, আপনারা ঝড় তুলছেন। আমরা কোনো মন্তব্য করেছি? অ্যাটর্নি বলেন, না, আপনারা করেননি। এরপর প্রধান বিচারপতি গেজেট প্রকাশের জন্য সময় মঞ্জুর করে বলেন, আপনার চাওয়া মত ৮ তারিখ রাখলাম। এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর উল ইসলাম এ সময় তার আবেদনের শুনানির আরজি জানান। এসময় প্রধান বিচারপতি বলেন, আমরা বিচার বিভাগ ধৈর্য ধরছি। যথেষ্ট ধৈর্য ধরছি। আজকে একজন কলামিস্টের লেখা পড়েছি সেখানে ধৈর্যের কথাই বলা হল। পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট প্রধানমন্ত্রীকে ইয়ে (অযোগ্য) করল। সেখানে কিছুই (আলোচনা-সমালোচনা) হয়নি। আমাদের আরও পরিপক্বতা দরকার।
সংবাদ সম্মেলন : সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের দেয়া সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় সার্বিকভাবে পড়ে একটু চিন্তা-ভাবনা করে সবার মতামত দেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। গতকাল দুপুর তার নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, এ রায় নিয়ে আমি প্রথম থেকেই ক্ষুব্ধ। কারণ সমগ্র জাতি সংসদের কাছে দায়বদ্ধ এবং জবাবদিহী করতে হয়। সেখানে বিচারপতিরা দূরে থাকবেন এটা হতে পারে না। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও সার্বিকভাবে পুরো রায় পড়ে মতামত দেয়া উচিত। এ বিষয়ে আমাদের আরও সহনশীল হওয়া উচিত। আমি আদালতকে বলেছি, যেহেতু নানা কারণে এখন অবস্থা খুব উত্তপ্ত, সুতরাং রুলস ফ্রেমিংয়ের ব্যাপারে লম্বা সময় দেয়া হোক। যাতে এর মধ্যে সার্বিক অবস্থাটা স্থিতি লাভ করে। তখন আদালত ৮ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছে। পরিস্থিতি উতপ্ত কেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নানা দিক থেকে নানা রকমের কথা হচ্ছে। সে কারণে। এটার জন্য দায়ী কে তখন অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটার জন্য আদালত কাউকে দায়ী করেননি। আগের তারিখ বসার কথা জানতে চেয়েছেন আদালত।
বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির ব্যাপারে যে রুলস ফ্রেম করার কথা, সে বিষয়টি আজ আদালতের কার্যতালিকায় ছিল। আদালত বলেছে, গত তারিখে কথা ছিল আমাদের সঙ্গে আপনারা বসবেন। তখন আমি বলেছি, আমার তো বসার কথা না, আমি তো এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। যাই হোক, যদি এরকম কথা হয়ে থাকে, তাহলে ফের উদ্যোগ নেব। অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, আমি সব সময়ই বলি, আমি পলিসি মেকার না। এক্সিকিউটিভ ব্রাঞ্চ এবং জুডিশিয়ারির সাথে একটা সংযোগ রক্ষা করি মাত্র। আমাকে বলা হয় একটা ব্রিজ।
ঘটনাক্রম : মাসদার হোসেন মামলার চূড়ান্ত শুনানি করে ১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর আপিল বিভাগ সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করতে ঐতিহাসিক এক রায় দেয়। ওই রায়ে আপিল বিভাগ বিসিএস (বিচার) ক্যাডারকে সংবিধান পরিপন্থী ও বাতিল ঘোষণা করে। একইসঙ্গে জুডিশিয়াল সার্ভিসকে স্বতন্ত্র সার্ভিস ঘোষণা করা হয়। বিচার বিভাগকে নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা করার জন্য সরকারকে ১২ দফা নির্দেশনা দেয় সর্বোচ্চ আদালত। মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পর ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের কার্যক্রম শুরু হয়। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় নিম্ন আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করে সুপ্রিম কোর্টে পাঠায়। সরকারের খসড়াটি ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী বিধিমালার অনুরূপ হওয়ায় তা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থী বলে গত ২৮ আগাস্ট শুনানিতে জানায় আপিল বিভাগ। এরপর ওই খসড়া সংশোধন করে সুপ্রিম কোর্ট আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। সেইসঙ্গে তা চূড়ান্ত করে প্রতিবেদন আকারে আদালতে উপস্থাপন করতে বলা হয় আইন মন্ত্রণালয়কে। এরপর দফায় দফায় সময় দেয়া হলেও সরকার মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে ওই বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ না করায় গত ৮ ডিসেম্বর দুই সচিবকে তলব করে আদালত। দুই সচিবের হাজিরার আগে ১১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে একটি নোটিসে বলা হয়, নিম্ন আদালতের গেজেট আকারে প্রকাশের প্রয়োজনীয়তা নেই বলে প্রেসিডেন্ট ‘সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব এবং লেজিসলেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগের সচিব পরদিন আদালতের তলবে হাজির হলে আদালত বলেন, বিধিমালা নিয়ে প্রসিডেন্টকে ভুল বোঝানো হয়েছে। সেদিন শুনানি করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে সরকারকে নির্দেশ দেয় আপিল বিভাগ। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে বারবার সময় নেয়া হচ্ছিল। এর মধ্যে জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দুই দফা বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী। তার ধারাবাহিকতায় তিনি ২৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে প্রধান বিচারপতির কাছে চাকরিবিধির খসড়া দিয়ে এলেও সর্বোচ্চ আদালত তা গ্রহণ করেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।