পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মাহফুজুল হক আনার, দিনাজপুর ও শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে : বন্যায় যাদের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়েছে তাদেরকে ঘর করে দেয়া হবে। ভূমিহীনদের স্থায়ী ঘরবাড়ি করে দেয়া হবে। দেশের প্রতিটি মানুষের খাদ্য, চিকিৎসা, আবাসন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার সবকিছু করছে। এ সরকার আওয়ামী লীগের সরকার। এ সরকার জনগণের সরকার। এ সরকার আপনাদের সরকার। আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান) দেশের মানুষকে বেশি ভালোবাসতেন। তাই তিনি দেশের মানুষের জন্য জীবন দিয়েছেন। আমি দেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে ও কল্যাণে জীবন দিতে প্রস্তুত আছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার বিকেলে কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার পাঙ্গা হাইস্কুল মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি চলতি বন্যায় নিহত শিশুসহ অন্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে। সবাইকে ত্রাণ পৌঁছে দেয়া হবে। আগামী মাস থেকে দেশের ৫০ লাখ মানুষকে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি করে চাল তিন মাস দেয়া হবে। দেশে যেন খাদ্য ঘাটতি না হয়. সে জন্য চাল আমদানির উপর ২৮ ভাগ ট্যাক্স কমিয়ে ২ ভাগ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ১৫ লাখ টন খাদ্য আমদানি করা হয়েছে। কাজেই কোনো সঙ্কট নেই। আমি ১৯৮১ সাল থেকে কুড়িগ্রামের প্রতিটি উপজেলায়, ইউনিয়নে ঘুরে বেড়িয়েছি। মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখেছি। তখন এ অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ, মঙ্গা লেগে থাকত। সরকারে না থেকেও তখন মানুষের পাশে ছিলাম। লঙ্গরখানা খুলেছি। ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে এ জেলার জন্য অনেক উন্নয়ন কর্মসূচি নিয়েছি। যাতে করে গ্রামের মানুষটিও ভালো থাকতে পারে। অল্প সময়ে কুড়িগ্রামকে খাদ্য উদ্বৃত্ত করতে সক্ষম হই। এখন আর মঙ্গা নেই। আমরা মাঝে ক্ষমতায় ছিলাম না। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে দেখি আবারো দেশে ৪০লাখ মে.টন খাদ্য ঘাটতি। আমাদের চেষ্টায় দেশ আবারো ৩০ লাখ মে.টন খাদ্য উদ্বৃত্ত হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আয়োজিত এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) এমপি, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম জেলাপরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: জাফর আলী, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম মোজাম্মেল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিছুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এইচ মাহমুদ আলী, সাবেক মন্ত্রী জাহাঙ্গির কবির নানক এমপি, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি, অ্যাডভোকেট সফুরা খাতুন এমপি, রুহুল আমিন এমপি, এ কে এম মোস্তাফিজার রহমান এমপি, সাবেক মন্ত্রী মোতাহার হোসেন এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিনুল ইসলাম মঞ্জু মন্ডল, লালমনিরহাট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, আবু নুর মো: আক্তারুজ্জামান প্রমুখ। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান। কুড়িগ্রাম জেলা শহর থেকে ১৭ কি.মি. দূরে লালমনিরহাট জেলা সংলগ্ন ছিনাই ইউনিয়নের পাঙ্গা হাইস্কুল মাঠে ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠান বিশাল জনসভায় পরিণত হয়। বিশাল মাঠ ছেড়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আগত হাজার হাজার নারী-পুরুষ রাস্তা ও পাশর্^বর্তী বাড়িতে আশ্রয় নেয় প্রিয় প্রধানমন্ত্রীকে একনজর দেখার জন্য, দু’টি কথা শোনার জন্য। প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী হেলিকপ্টার বেলা ৩টায় রাজারহাট হ্যালিপ্যাডে অবতরণ করে। তিনি সভাস্থলে পৌঁছেন ৩:১০ মিনিটে। তিনি বিকেল ৩:৪২ থেকে ৪:১৫ মিনিট পর্যন্ত ৩৩ মিনিট বক্তব্য রাখেন। এরপর ২১ জন বন্যার্ত নারী-পুরুষের হাতে সরাসরি ত্রাণসামগ্রী তুলে দেন। এরপর স্থানীয় প্রশাসন ৯৭৯ জন বন্যার্তের মাঝে এই প্যাকেজের ত্রাণ বিতরণ করে। প্রতিটি প্যাকেটি ৯টি আইটেম ছিল। এরমধ্যে ১০ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, এক কেজি লবণ, এক কেজি চিনি, এক কেজি চিড়া, আধা কেজি মুড়ি, তেল এক কেজি, মোমবাতি ও দিয়াশলাই এক ডজন করে।
শেখ হাসিনা এনজিওদের উদ্দেশে বলেন, যারা ঋণ দিয়েছেন, (কিস্তি আদায়ের ব্যাপারে) দয়া করে বন্যাকবলিত মানুষদের অত্যাচার ও জুলুম করবেন না। তিনি উপস্থিত জনতাকে প্রশ্ন করেন আমার উপর আস্থা আছে? সবাই তার কথায় সাড়া দেয়। বলে আস্থা আছে। ‘আপনাদের ধৈর্য্য ধরতে হবে। আমাদের প্রতি আস্থা রাখতে হবে। বিশ^াস রাখতে হবে। বাংলার মানুষের জন্য আমি যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এটা আগস্ট মাস। এ মাসে দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। আমি ও আমার ছোট বোন (রেহানা) দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যাই। জিয়া তখন একজন মেজর ছিল। জাতীর পিতা তাকে মেজর জেনারেল করেন। কিন্তু তিনি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেন। এমনকি আমার ছোট বোন যেন দেশে আসতে না পারে, এ জন্য তার পাসপোর্ট রিনু করতে দেয়নি। তিনি বন্যায় কুড়িগ্রামের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে বলেন, টানা বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জেলায় বন্যা হয়েছে। আমি দিনাজপুরের বন্যাদুর্গত এলাকা দেখে এবং ত্রাণ বিতরণ করে আসলাম। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ সড়ক, মহাসড়ক ও বাঁধের কাজ শুরু করার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্র ও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরামতের কাজ করা হবে। আপনারা যারা স্থানীয় তারা দেখে নেবেন, কাজ যেন ঠিকমতো হয়। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ধানের চারা বিতরণ করা হবে। চারার ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি। সার, বীজ সব দেয়া হবে। দেশকে ভিক্ষুক মুক্ত কর্মসূচি নেয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, ভিক্ষুক জাতী কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না। ভিক্ষুক জাতীর কোনো সম্মান থাকে না। আমরা কার কাছে মাথা নোয়াব না। হাত পাতব না। কারণ বাঙালি বীরের জাতী।
সরকার প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই বিতরণ করে আসছে। অভিভাবকদের বোঝা কমাতে। এখন বন্যায় যাদের বই নষ্ট হয়েছে, তাদেরকে আবারো বিনামূল্যে বই দেয়া হবে। এ সময় তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ছেলেমেয়েরা যেন বিপথগামী না হয়, জঙ্গি, মাদকসেবী না হয় সে ব্যাপারে সতর্ক ও সচেতন থাকার পরামর্শ দেন।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী গতকাল দিনাজপুরের জিলাস্কুল মাঠে ও বিরলের তেঘরা উচ্চবিদ্যালয় মাঠে ত্রাণ বিতরণকালে বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রী ১০ হাজার বন্যার্তের মাঝে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে সরকার তিন মাস পর্যন্ত সবধরনের সহায়তা দেবে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা পর্যন্ত আপনারা কোনো চিন্তা করবেন না। আপনাদের ভাগ্যের উন্নয়নে ও পুনর্বাসনে আমি আন্তরিকভাবে সক্রিয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মতো আমিও জনগণের জন্য আমার জীবনকে উৎসর্গ করার অঙ্গীকার করেছি। আওয়ামী লীগ দুঃখি মানুষের দল। তাই আপনাদের পাশে বন্ধু হিসেবে স্বজন হিসেবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন দেশের ২১টি জেলায় আকষ্মিক বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের দুর্ভোগ লাঘবে আমরা ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। বন্যাদুর্গত এলাকায় গৃহহারা মানুষকে গৃহনির্মাণ করে দেয়া হবে। সে জন্য টিন দেয়া হবে। যে এলাকায় খাস জমি নেই, সেখানে সরকার জমি কিনে গৃহ নির্মাণ করবে। ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মেরামত ও নির্মাণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যক্ষেত্রে যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয়, সে জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ ও চিকিৎসাসেবা প্রদানের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট নির্মাণে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যে সকল শিক্ষার্থীর বইখাতা বন্যার পানিতে নষ্ট হয়েছে, তা সরবরাহের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেশি হওয়ায় মানুষ যেন কোনোভাবেই অভুক্ত না থাকে, সে জন্য বিদেশ থেকে খাদ্যশস্য আমদানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বন্যা পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনের জন্য সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে। বীজ, কীটনাশক, সারসহ অন্যান্য উপকরণ ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে। এক কোটি দরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা কেজিতে চাল দেয়া হবে। সরকার তিন মাস পর্যন্ত বন্যাদুর্গত মানুষের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতা করবে। প্রধানমন্ত্রী এনজিওদের উদ্দেশ্যে বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের উপর জুলুম করবেন না। তাদের উপর কোনো ধরনের অত্যাচার-নির্যাতন করার চেষ্টা করবেন না। আমি বাবা-মা, ভাইসহ আত্মীয়স্বজন হারিয়ে আজ নিঃস্ব স্বজনহারা। আপনারাই আমার শক্তি-সাহস আর স্বজন। তাই আপনাদের দুঃখ, দুর্দশা, কষ্ট দুর্ভোগে আমি সব সময় পাশে রয়েছি। আপনাদের ভাগ্যের উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার সব সময় সচেষ্ট। আওয়ামী লীগ যখনই দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় তখনই জনগণের উন্নয়ন হয়, মানুষের মুখে হাসি ফুটে। জনগণের সেবা করাই আওয়ামী লীগের মূল মন্ত্র ও দায়িত্ব। পরে প্রধানমন্ত্রী বিরল উপজেলার ফরক্কাবাদ ইউনিয়নের তেঘরা হাইস্কুল প্রাঙ্গণে বন্যাদুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। দুটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ১০ হাজার বন্যাদুর্গত মানুষকে ত্রাণ দেয়া হয়। ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের হুইপ স্থানীয় এমপি ইকবালুর রহিম ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাড: কামরুল ইসলাম, পানিসম্পদ মন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য সতীশ চন্দ্র রায়, প্রেসিডিয়াম সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক ও জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।