Inqilab Logo

শনিবার, ২৯ জুন ২০২৪, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২২ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পদ্মাপাড়ে ভয়াবহ বন্যার পদধ্বনি

| প্রকাশের সময় : ২১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

হিমালয় পাদদেশ নেপাল বিহারের ঢল অব্যাহত : ফারাক্কায় ৫-৯ সেমি হারে পানিবৃদ্ধি- বাঁধ খুলে দেয়ার শঙ্কা : মধ্যাঞ্চল ভাটি ও মোহনায় বন্যার আরও অবনতি আজ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ও অমাবস্যায় ভাটি-উপকূল ফুঁসে উঠতে পারে
শফিউল আলম : হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চল নেপাল ও ভারতের বিহাররাজ্য থেকে অতিবৃষ্টি-জনিত উজানের ঢল আসা অব্যাহত রয়েছে। গঙ্গা নদীর উজানে ভারতে ফারাক্কাসহ প্রতিটি পয়েন্টেই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। চলতি সপ্তাহজুড়ে দৈনিক ৫ থেকে ৯ সেন্টিমিটার হারে পানি বাড়তে পারে। তা অব্যাহত থাকতে পারে এর পরবর্তী সময়েও। আর উজানভাগে পানির চাপ কমাতে গিয়ে অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতায় ভারতে ফারাক্কা বাঁধের গেটগুলো একযোগে খুলে দেয়ার শঙ্কাও থেকেই যায়। এ অবস্থায় বাংলাদেশের ভাটিতে বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলজুড়ে তথা পদ্মাপাড়ে ভয়াবহ বন্যার পদধ্বনির আলামতই ফুটে উঠছে। কেননা শঙ্কার বড় কারণ হলো উজানের ঢল অব্যাহত থাকায় গতকালও (রোববার) গঙ্গা নদীর ভাটিতে বাংলাদেশে প্রবেশ মুখে পাংখায় ও আরো দুটি পয়েন্ট রাজশাহী ও হার্ডিঞ্জব্রিজে যথাক্রমে ১২, ১৪ ও ৫ সেমি হারে পানি বৃদ্ধি পায়। যদিও বিপদসীমার নিচে রয়েছে। রাজশাহীতে গঙ্গা-পদ্মার সর্বশেষ অবস্থান ছিল বিপদসীমার ৯৯ সেমি নিচে। শঙ্কার দ্বিতীয় কারণটি হলো গঙ্গা-পদ্মা নদী ছাড়াও রাজশাহী অঞ্চলের মহানন্দা নদীর পানি কয়েক দিন যাবত অবিরাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। নদীটি রোহনপুর ও চাপাইনবাবগঞ্জে বিপদসীমার যথাক্রমে ৫০ ও ৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর পাশাপাশি ছোট-যমুনা নদী নওগাঁয় বিপদসীমার ৭৩ সেমি উপর দিয়ে বইছিল। তবে পদ্মার পানি ভাটিতে কিছুটা কমেছে। গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বর পয়েন্টে বিপদসীমার যথাক্রমে ৯৬, ৪০ ও ১৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ঢাকার আশপাশসহ দেশের মধ্যাঞ্চল, ভাটি ও মোহনায় চাঁদপুর অবধি বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটেছে। আজ (সোমবার) পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ এবং অমাবস্যায় ভরা ‘জো’ বা জোয়ারে ভাটিসহ উপকূলভাগ ফুলে-ফুঁসে উঠতে পারে। সাগর ফুলে থাকলে উজানের পানি ভাটি হয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে নেমে যাওয়ার গতি থমকে যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে বন্যা কবলিত হতে পারে মধ্য-দক্ষিণ ও দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে ১৭টি নদী ২৬টি পয়েন্টে বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছিল। দেশের নদ-নদীসমূহের ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে ৩৫টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৫০টিতে হ্রাস পায়। অপরিবর্তিত আছে ৫টি স্থানে।
এদিকে উজানে হিমালয়-পাদদেশ নেপাল ও ভারতের বিহারের ঢলের কারণে গঙ্গা নদীর ফারাক্কায় অব্যাহত পানিবৃদ্ধিতে নদী ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞগণ পদ্মাতীরে ভয়াবহ বন্যার ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, গত ক’দিন ধরে ও বর্তমানে গঙ্গার উজানভাগে যে হারে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এতে করে রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্ট অঞ্চলসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল বড় ধরনের বন্যার কবলে পড়তে পারে। গঙ্গায় পানিবৃদ্ধির বর্তমান গতিধারা বজায় থাকলে আগামী ২৫-২৭ আগস্টের পর রাজশাহীতে পদ্মা নদী বিপদসীমায় পৌঁছে যেতে পারে। তখন বন্যা কবলিত হতে পারে বৃহত্তর রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজবাড়ীসহ আরো ব্যাপক অঞ্চল। গতকাল সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এই তিন অববাহিকার মধ্যে গঙ্গার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন গতকাল ইনকিলাবকে জানান, আগামী আরো ২ থেকে ৩ দিন পর্যন্ত গঙ্গায় পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। এরপর থেকে ক্রমশ পানি হ্রাস পেতে পারে। কেননা নেপাল ও বিহারে বৃষ্টিপাতের মাত্রা এখন খুব কম। গঙ্গা-পদ্মায় বন্যার বড় ধরনের বন্যার শঙ্কার কারণ আপাতত দেখছেন না বলে তিনি জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পূর্বাভাসে জানা গেছে, গঙ্গা নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।
এদিকে মধ্যাঞ্চল, ভাটি হয়ে মোহনায় পর্যন্ত বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক অবনতি হয়েছে। কেননা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা অববাহিকার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি উজান থেকে ভাটির মুখে চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজধানী ঢাকা ও চারপাশের নদীগুলোতে পানি বেড়ে আবার সারাদিনে হ্রাস পায়। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী সকালে বিপদসীমার ৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। তবে পানি কমে গিয়ে সর্বশেষ প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৩ সেমি নিচে। তাছাড়া ঢাকার বুড়িগঙ্গা, বালু, তুরাগ ও টঙ্গী খালের পানি বিপদসীমার ৩১ থেকে ১০৪ সেমি নিচে ছিল।
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের সর্বশেষ অবস্থান ছিল- দীর্ঘদিন পর ব্রহ্মপুত্র নদ বিপদসীমার নিচে নেমেছে। কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে পানি আরও হ্রাস পেয়ে বিপদসীমার ৭ সেমি নিচে প্রবাহিত হচ্ছিল। যমুনায় পানি আরো কমে গিয়ে বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর ও সিরাজগঞ্জে বিপদসীমার ৪৯ থেকে ৯২ সেমি উপরে এবং ভাটিতে আরিচায় হ্রাস পেয়ে ৫৯ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উত্তর জনপদের ঘাগট নদীর পানি আরো কমে ৩ সেমি উপরে এবং চক রহিমপুরে করতোয়া ৯ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ৯৬ সেমি উপরে, ধলেশ্বরী নদী টাঙ্গাইলের এলাসিনে ৯৫ সেমি উপরে এবং লাখপুরে লাক্ষ্যা নদীর পানি কিছুটা বেড়ে ৬৯ সেমি উপরে ছিল। তারাঘাটে কালিগঙ্গার পানি বেড়ে বিপদসীমার ৯৬ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। অন্যদিকে মেঘনা অববাহিকায় সিলেটের সুরমা এখন শুধু একটি পয়েন্ট কানাইঘাটে বিপদসীমার ৪২ সেমি উপরে এবং কুশিয়ারা নদী ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার ৯ থেকে ৪৪ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরও কমে বিপদসীমার ৮১ সেমি উপরে, দিরাইয়ে পুরাতন সুরমা নদীর পানি কিছুটা বেড়ে ৪৮ সেমি উপরে এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদী ৪৩ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ