Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ত্রাণের আশায় বানভাসিরা

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দেশের উত্তরাঞ্চলের বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলে যমুনা, কুড়িগ্রাম ফেরীঘাট পয়েন্টে ধরলা, চিলমারী পয়েন্টে ব্রক্ষপুত্র, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা, নঁওগায় আত্রাই নদীর, ছোট যমুনা, নাটোরের নলডাঙ্গায় বারনই, সিংড়ায় আত্রাই, গাইবান্ধায় ব্র্র্রক্ষপুত্র, করতোয়া, ঘাঘটের পানি, ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে, গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর কাটাখালী পয়েন্টে পানি কমতে শুরু করলে এখনো বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের (মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুর) নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছু জায়গায় স্থিতিশীল এবং কিছু জায়গায় আরও অবনতি হয়েছে। সেই সাথে নদীভাঙন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোতে পানি গতকাল সকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পেলেও সন্ধ্যা অবধি ফের কমতির দিকে। সরকারি হিসেবে বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৯৩ জনে হলেও বেসরকারি হিসেবে শতাধিক। অচল হয়ে পড়েছে বিভিন্ন জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার পানি আর ভাঙনে বসতবাড়ি তলিয়ে যাওয়ায় হাজার হাজার মানুষ নিজ ঘরবাড়ি ছেড়ে পরিবার-পরিজন ও গবাদিপশু নিয়ে আত্মীয়স্বজনের বাড়ি, উঁচু জমি ও বাঁধে পলিথিন মোড়ানো খুপড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছে। এদের অধিকাংশই রয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। রাতে মানুষ তাদের গবাদি পশু নিয়ে একই স্থানে গাদাগাদি করে কোন রকমে রাত পার করছে। খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি, জ্বালানী ও গো-খাদ্যের চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন জেলায় হাঁস, মুরগিসহ বিভিন্ন মৃত পশু পানিতে ভাসছে। ফলে আশপাশের এলাকা দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে। দুষিত হচ্ছে পরিবেশ ও পানি। দেখা দিচ্ছে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগব্যাধি। প্রয়োজন পানি বিশুদ্ধকরনের ওষুধ। বৃদ্ধ, শিশুদের নিয়ে বিপাকে অভিবাবকগণ। সরকারি ত্রাণ অপ্রতুল হওয়ায় সবার ভাগ্যে জুটছেনা ত্রাণ। দুর্গম এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছেই। অনাহারে থাকা মানুষগুলোর অসহায়ের মত তাকিয়ে থাকে সামান্য ত্রাণের আশায়। বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে সাপের উপদ্রব। বন্ধ রয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ভেসে লাখ লাখ হেক্টর ফসলি জমি ও খামারের মাছ। দুচিন্তায় কৃষকের মাথায় হাত। এসব মানুষের দুঃখ কষ্ট নিয়ে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্ট:
শফিউল আলম চট্টগ্রাম থেকে জানান, মধ্যাঞ্চল ও ভাটিতে বন্যার সার্বিক অবনতি হয়েছে। উজানের পানি ভাটির দিকে তীব্রবেগে নামছে। আর সেইসাথে বন্যার ধ্বংসলীলা ভেসে উঠছে সবখানেই। বন্যার উন্নতি হচ্ছে, তবে খুব ধীরগতিতে। গতকাল (শনিবার) পর্যন্ত উত্তর জনপদের ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলা, করতোয়া, ঘাগটসহ উজানভাগের বিভিন্ন নদ-নদীর ঢল-বানের পানির প্রবল চাপ আসা অব্যাহত থাকে। এতে করে দেশের মধ্যাঞ্চল ও ভাটিতে মধ্যাঞ্চল ও ভাটিতে বন্যা কোথাও কোথাও অপরিবর্তিত থাকলেও অনেকস্থানেই অবনতি ঘটেছে। সেই সাথে নদীভাঙন আরো ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। রাজধানী ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশের নদ-নদীগুলোতে পানি গতকাল সকাল পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তবে দিনভর ও সন্ধ্যা অবধি পানির সমতল ছিল ফের কমতির দিকে। নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি সকাল পর্যন্ত বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার মাত্র ৩ সেমি নিচে, ডেমরায় বালু নদী ৩৫ সেমি নিচে আসে। তবে সর্বশেষ উভয় নদীর পানির প্রবাহ ছিল বিপদসীমার যথাক্রমে ১৩ এবং ৪০ সেমি নিচে। এদিকে হিমালয় পাদদেশ নেপাল ও ভারতের বিহারের অতিবৃষ্টির ঢল উজানভাগের মূল উৎস বা অববাহিকা থেকে আসা অব্যাহত রয়েছে। এ কারণে গঙ্গা-পদ্মা নদীতে পানি এখনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভাসিয়ে তুলছে বাংলাদেশের ভাটি অঞ্চল। পদ্মার নিচের দিকে ঘূর্ণি স্রোতের সঙ্গে নদীভাঙনও বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তর জনপদের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা উভয় নদ এবং বৃহত্তর সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীগুলোতে পানি ধীরে কমলেও এখনো বিপদসীমার ঊর্ধ্বে প্রবাহিত হচ্ছে।
আগামীকাল (সোমবার) পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ এবং অমাবস্যায় ভরা জোয়ারের সম্ভাব্য প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতি কেমন দাঁড়াতে পারে তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে সর্বত্র। তাছাড়া বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপের প্রভাব কিংবা এটি ঘনীভূত হয় কিনা তাও শঙ্কার একটি বড় কারণ। কেননা উপরোক্ত তিনটি ফ্যাক্টর যদি জোরদার হয়ে উঠে তাহলে বাংলাদেশ সংলগ্ন উত্তর বঙ্গোপসাগর ও উপকূলভাগ ফুলে-ফুঁসে উঠতে পারে। এসব কারণে বৃষ্টিপাতের মাত্রাও বেড়ে যেতে পারে। যদিও গতকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের উপর বর্ষার মৌসুমি বায়ু দুর্বল এবং বঙ্গোপসাগরে মাঝারি মাত্রায় ছিল। তদুপরি হিমালয় পাদদেশ, চীন তিব্বত, নেপাল, ভূটান ও ভারতে মৌসুমি বায়ু সক্রিয় হলে আগামী দুই-তিন সপ্তাহের মধ্যে ফের অতিবৃষ্টি যদি হয় তাহলেও বাংলাদেশে উজানভাগের ঢলে বন্যার অবনতি ঘটতে পারে।
দেশের নদ-নদীসমূহের মোট ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে ১৮টি নদ-নদী ২৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ৩৬টি পয়েন্টে, হ্রাস পায় ৫১টি স্থানে। গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বিভিন্ন সূত্রে আরো জানা গেছে, উত্তরের বানের পানির প্রবল চাপের কারণে আরিচা-গোয়ালন্দ, ভাগ্যকুল, মাওয়া-সুরেশ্বর-শরিয়তপুর-চাঁদপুর পর্যন্ত নৌপথে তীব্র ঘূর্ণি স্রোত সৃষ্টি হয়েছে। এরফলে লঞ্চ-স্টিমার, নৌযান ও ফেরি চলাচল ব্যাহত এবং অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এদিকে বর্তমানে বন্যা কবলিত থাকা ৬টি বিভাগের ২৭টি জেলায় কমপক্ষে ৬৫ লাখ বন্যাদূর্গত মানুষ, যার মধ্যে ৬ থেকে ৮ লাখ শিশু চরম খাদ্যাভাব, বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধ সঙ্কটে ধুঁকছে। বন্যার্তরা সেতু-কালভার্ট, সড়ক, বাঁধের উপর এমকি নৌকায় ভাসমান থাকাবস্থাতেই একমুঠো খাবারসহ জরুরী ত্রাণের আশায় অসহায়ভাবে দিন গুজরান করছে। তাদের দুঃখ-কষ্ট মোদ্দাকথায় অবর্ণনীয়। কিন্তু কে বা কারা বন্যার্তদের দিকে বাড়িয়ে দেবে সাহায্য-সহায়তার উদারহাত!
এদিকে গতকাল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র এবং বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য-উপাত্তে জানা গেছে, অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কোথাও কমছে, কোথাও বাড়ছে। এ অবস্থায় দেশে বন্যা পরিস্থিতি রয়েছে এখনও সার্বিকভাবে অপরিবর্তিত। উত্তর জনপদে পানি ধীরে ধীরে আরও হ্রাস পাচ্ছে। তবে গঙ্গা-পদ্মায় পানিবৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। রাজধানী ঢাকা এবং আশপাশের নদ-নদীর প্রবাহে জানা যায়, ঢাকার চারদিকের নদীগুলোতে পানি গত তিন দিনে বেড়ে গেলেও গতকাল সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আবারো কিছুটা কমতির দিকে রয়েছে। ঢাকা ও চারপাশের ৮টি নদীর মধ্যে বুড়িগঙ্গায় পানি বিপদসীমার ১৩০ সেমি নিচে অপরিবর্তিত রয়েছে। ডেমরায় বালু নদী ৪০ সেমি নিচে, নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী ১৩ সেমি নিচে রয়েছে।
দেশের প্রধান নদ-নদীর অবস্থা ও বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনা এই তিনটি অববাহিকার মধ্যে গঙ্গা-পদ্মায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গঙ্গা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর গঙ্গা তিনটি পয়েন্টে বিপদসীমায় পানি আরো কিছুটা বেড়ে ৪৬ থেকে ১১৫ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পদ্মা নদীর পানি উজানের গোয়ালন্দ পয়েন্টে অপরিবর্তিত থাকে এবং ভাটির দিকে মুন্সিগঞ্জের ভাগ্যকুল এবং শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেঘনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় উন্নতি অব্যাহত থাকবে। অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। এই অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির হার আগের তুলনায় কমে আসছে। পরবর্তীতে পদ্মা বিপদসীমার নিচে নেমে যেতে পারে।
দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলের মানিকগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, মুঞ্জিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি কিছু জায়গায় অপরিবর্তিত এবং কিছু জায়গায় আরো অবনতি হতে থাকবে। তবে তা পরবর্তীতে অপরিবর্তিত অবস্থার দিকে যেতে পারে। মধ্যাঞ্চলে ঢাকার চারদিকের নদীগুলোতে পানি বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে ব্রহ্মপুত্রের উজানের ভারতীয় অংশে এবং মেঘনা অববাহিকার ভারতীয় ও বাংলাদেশ অংশে পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশে গোহাটিতে ১৪ সেমি, পান্ডুতে ৬ সেমি, গোয়ালপাড়ায় ২১ সেমি এবং ধুবরীতে ২৫ সেমি পানির সমতল হ্রাস পেয়েছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনায় বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পানি হ্রাস পাওয়া অব্যাহত আছে, নুনখাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে। বন্যা পূর্বাভাসে জানা গেছে, দেশের উত্তরাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার পানি হ্রাস অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি বজায় থাকবে। তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীর পানি হ্রাস অব্যাহত রয়েছে। ফলে এ অঞ্চলের বন্যার উন্নতি অব্যাহত থাকবে। নদ-নদী প্রবাহের পূর্বাভাস মতে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারতীয় অংশে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ১৬ সেমি পানি হ্রাস পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বিভিন্ন্ পয়েন্টে আগামী ৭২ ঘণ্টায় পানি হ্রাস অব্যাহত থাকবে। দেশের উত্তরাঞ্চলের বন্যা বিশেষত কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ জেলাগুলোতে উন্নতি অব্যাহত থাকবে।
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের বিপদসীমার উপরে সর্বশেষ অবস্থান ছিল- ব্রহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী পয়েন্টে পানি আরও কমে গিয়ে বিপদসীমার ১১ সেমি উপরে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদে গতকালও পানি ৫টি পয়েন্টেই হ্রাস পেয়ে বাহাদুরাবাদে বিপদসীমার ৭২ সেমি উপরে, সারিয়াকান্দিতে ৭০ সেমি উপরে, কাজীপুরে ১১০ সেমি উপরে, সিরাজগঞ্জে ১১৩ সেমি উপরে এবং ভাটির দিকে আরিচায় ৭১ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পদ্মা নদীর পানি গতকালও তিনটি পয়েন্টে হ্রাস ও বৃদ্ধি পায়। পদ্মায় বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহ ছিল- গোয়ালন্দে ১০৪ সেমি উপরে, ভাগ্যকুলে ৪২ সেমি উপরে এবং সুরেশ্বরে ২১ সেমি। পদ্মার উজানভাগে পানি আরো বৃদ্ধির ফলে গঙ্গা নদী পাংখা পয়েন্টে ১১৫ সেমি, রাজশাহীতে ১০৯ সেমি এবং হার্ডিঞ্জ ব্রিজপয়েন্টে ৪৬ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অবশেষে উত্তর জনপদের ধরলা ও যমুনেশ্বরী নদী বিপদসীমার নিচে নেমেছে। ঘাগট নদীর পানি কমে ১০ সেমি উপরে রয়েছে। তবে চক রহিমপুরে করতোয়ার পানি বেড়ে বিপদসীমার ২৪ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে বিপদসীমার ১০৭ সেমি উপরে, ধলেশ্বরী নদী টাঙ্গাইলের এলাসিনে ১০৫ সেমি উপরে এবং লাখপুরে লাক্ষ্যা নদী ৫৭ সেমি উপরে রয়েছে। তারাঘাটে কালিগঙ্গার পানি আরো বেড়ে বিপদসীমার ৮৭ সেমি উপরে প্রবাহি হচ্ছে। গঙ্গা অববাহিকায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে রোহনপুরে মহানন্দা নদী বিপদসীমার ৩৪ সেমি উপরে, নওগাঁয় ছোট যমুনা ৭৭ সেমি উপরে, আত্রাই মহাদেবপুরে ২১ সেমি উপরে রয়েছে। মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি আরো কমেছে। তবে সুরমা ২টি স্থানে, কুশিয়ারা ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তাছাড়া নেত্রকোণা জেলায় কংস নদীর পানি আরও কমে এসে বিপদসীমার ৯৪ সেমি উপরে, দিরাইয়ে পুরাতন সুরমা নদীর পানি বেড়ে গিয়ে ৪৪ সেমি উপরে এবং ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় তিতাস নদী বিপদসীমার ৩৮ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।
জাহাঙ্গীর ভুঁইয়া, আরিচা থেকে জানান, মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। প্রতিদিনই প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। জেলায় হাজার হাজার মানুষ এখন পানিবন্দি। রাস্তাগুলোতে পানি উঠায় মানুষের যোগাযোগের নৌকা নির্ভর হয়ে পড়েছে। লোকজন গবাদি পশু নিয়ে এখন উচু বাধ, সড়ক, মহাসড়কে আশ্রয় নিচ্ছে। মানিকগঞ্জ জেলার ৬ টি উপজেলার সকল প্রাথমিক স্কুলের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।
সোহেল রানা খান, সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) থেকে জানান, মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার যমুনার আরিচা পয়েন্টে বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার ৫টি উপজেলার অন্তত ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হয়ে রয়েছে। তবে গত কয়েক দিনে যমুনা ও পদ্মা নদীতে হুট করে পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে সেই পানি প্রবাহিত হয়ে জেলার শাখা নদ-নদী ও খাল বিল দিয়ে। জেলার ৮১টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
এম সাঈদ আহমাদ, শিবচর (মাদারীপুর) থেকে জানান, মাদারীপুরের শিবচরের পদ্মা পদ্মায় ২ সে.মি. আর আড়িয়াল খায় বৃদ্ধি পেয়েছে ৫ সে.মি। ফেরি চলাচল বিলম্ব হওয়ায় উভয় পাড়ে দেখা দিয়েছে পন্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি। এদিকে পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদীতে নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী ভাঙনের ব্যাপকতা বেড়েছে। হুমকিতে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি।
রবিউল কবির মনু, গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে জানান, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে বিপদ সীমার ৭৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে নুরুল্লার বাধ ভেঙে প্রায় ২৫টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৩ লক্ষাধিক মানুষ। করতোয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে উপজেলার ১৭টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪ টি ইউনিয়নের শতাধিক গ্রাম ও পৌর সভার একাংশ বন্যার পানিতে নিমজ্জিত হয়ে আছে। বন্যার পানির কারনে গত ৪দিনে ৬ ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, গতকাল কুড়িগ্রাম ব্রীজ পয়েন্টে ধরলা নদী বিপদসীমার ৫ সে.মি এবং চিলমারী পয়েন্টে ব্রক্ষপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ১৯ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বন্যায় বাড়ীঘর ভেসে যাওয়ায় এখনও খোলা আকাশে পরিবার পরিজন নিয়ে রাত কাটাচ্ছে। গ্রামীণ কাঁচাপাকা সড়কগুলোর স্থানে স্থানে ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দুর্গম এলাকায় মিলছেনা সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ। এখনও উচু বাধ, পাকা সড়ক ও নৌকায় বসবাস করছেন দুর্গম চরাঞ্চলের বানভাসী পরিবারগুলো। গবাদিপুশুসহ গাদাগাদি করে বসবাস করলেও নিজেদের খাবারের পাশাপাশি সংকটে পড়েছেন গবাদি পশুর খাদ্য সঙ্কট নিয়েও। পানিতে বেশি সদয় থাকার ফলে হাত-পায়ে ঘা, জ্বর কাশিসহ ছড়িয়ে পড়ছে পানি বাহিত নানা রোগ। বন্যা দুর্গত এলাকায় চলছে ত্রানের জন্য হাহাকার।
আবুল হাসান সোহেল মাদারীপুর থেকে জানান, পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদী ভাঙ্গনের ব্যাপকতা বেড়েছে। দ্রুত পানি বাড়ায় পদ্মায় তীব্র স্রোতে সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে রুটের ফেরি, লঞ্চসহ সকল নৌযান পারাপারে দীর্ঘ সময় লাগছে। ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের উপজেলার আড়িয়াল খা নদের উপর নির্মানাধীন ৬ লেন মহাসড়কের নির্মানাধীন আড়িয়াল খা ২য় সেতুর জন্য চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশনের স্টোকইয়ার্ডের প্রায় দেড়শ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকিতে রয়েছে একাধিক স্কুল, ১টি ইউনিয়ন পরিষদসহ শত শত ঘর বাড়ি।
আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল জেলা থেকে জানান, টাঙ্গাইলে এখনো বিপদ সিমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো তলিয়ে আছে চরাঞ্চলের বেশির ভাগ ঘরবাড়ি। ফলে বাড়িতে ফিরতে পারছে না বানভাসিরা। এখনও উঁচু বাঁধ, পাকা সড়ক ও নৌকায় বসবাস করছেন দুর্গম চরাঞ্চলের বানভাসি পরিবার। টানা ৭ দিন পানিবন্দি থাকায় খাদ্য সংকটে পড়েছে বন্যা দুর্গত এলকার মানুষ। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের সঙ্কট। ছড়িয়ে পড়েছে পানি বাহিত নানা রোগ। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়নের নওগাঁ-জসিহাটি এলাকায় অবস্থিত বাঁধ ভেঙে অন্তত ২০টি গ্রাম নতুন করে বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এমদাদুল হক সুমন, নওগাঁ জেলা থেকে জানান, নওগাঁ জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তবে বিশুদ্ধ পানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রয়োজনের তুলনায় ত্রান অপ্রতুল বলে অভিযোগও রয়েছে। নওগাঁর ছোট যমুনা নদীর সদরের ইকরতারায় ভেঙে যাওয়া বাঁধ দিয়ে পূর্ব দিকে পানি প্রবেশ অব্যাহত থাকায় আরো নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। আত্রাই উপজেলায় বন্যার পানিতে পড়ে ইয়াম (৭) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
আনোয়ার হোসেন আলীরাজ, সিংড়া, ( নাটোর ) থেকে জানান, নাটোরের আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বারনই নদীর পানি হু হু করে বেড়েই চলেছে। বন্দর হাট সহ নদী তীরবর্তী এলাকার প্রায় শতাধিক বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি (শুক্রবার ও শনিবার) বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করে ত্রান বিতরন করেন।
নাজিম বকাউল, ফরিদপুর থেকে জানান, উত্তর অঞ্চলের পর দেশের মধ্যঅঞ্চলে বিভিন্ন নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ফরিদপুরের দেড়শতাধিক গ্রামে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। এই সকল গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ এখন পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এই এলাকায় গতকাল বানভাসি মানুষে শুকনা খাদ্য বিতরণ করেন ঝিনাইদাহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাজী আশরাফুজ্জামান।
শেরপুর জেলা সংবাদদাতা জানান, পাহাড়ি ঢলে ভেসে গেছে বেইলি ব্রিজ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নালিতাবাড়ী উপজেলার ৯ টি গ্রামের প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। অসুস্থরা চিকিৎসা সেবা নিতে হিমশিম খাচ্ছে। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে পাহাড়ি অঞ্চলের এই মানুষগুলোর।
ইসলামপুর ( জামালপুর ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ‘ক্ষিদের জ্বালায় পেটটা কান্দিতাছে। সরমে কিছু কবের পাইনে। স্কুলে থাকি বউ পুলাপান নিয়া,বেশী খাবার চাবের পাইনে’। এমনিভাবে কথাগুলো বলছিলেন মলমগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ে আশ্রিত প্রতিবন্ধী মিজানুর রহমান। শুধু মিজানুর নয় জামালপুরের ইসলামপুরে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, ব্রীজ ২৭টি পয়েন্টে আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বানভাসীর কণ্ঠে এমন হাহাকারের কথা শুনা যায়। ইসলামপুরে পানিতে ডুবে শিশু নিহত। এদিকে দূগর্ত এলাকায় গতকাল ত্রাণ বিতরণ করেন দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া।
আতাউর রহমান, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) উপজেলা থেকে জানান, ময়মনসিংহের ঈশ^রগঞ্জে ভাঙনে বিলীন ও তলিয়ে যাচ্ছে উচাখিলার মরিচারচর নতুনচর গ্রামটি। ইতোমধ্যে পানির স্রোত বেড়ে যাওয়ায় গ্রামের প্রায় দশটি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীনসহ অর্ধশত বাড়িঘরে পানি উঠে গেছে।
বোয়ালমারী (ফরিদপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌর সদরের আঁধারকোঠা মহল্লায় গতকাল পুকুরে ডুবে সাদ (৫) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে।



 

Show all comments
  • তারেক মাহমুদ ২০ আগস্ট, ২০১৭, ১১:০২ এএম says : 0
    সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ত্রান বিতরণ করা হোক
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ