Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চট্টগ্রামে প্রচুর লাল বিরিষ কোরবানি পশুর স্বনির্ভরতা

| প্রকাশের সময় : ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কোরবানির পশুর আদৌ সঙ্কট নেই
সারাবছর সযতেœ লালন করে খুশি কৃষক-কিষাণী
শফিউল আলম : চট্টগ্রামে লাল বিরিষ প্রচুর। এ অঞ্চলে কয়েক শতবছর ধরে ‘রেড চিটাগং’ নামে পরিচিত ‘লাল বিরিষে’র (লাল বৃষ-গরু) চাহিদা ব্যাপক। বিশেষত কোরবানী ঈদে চাহিদা হৃষ্ট-পুষ্ট লাল বৃষের চাহিদা আরও বেশি। এ বছরও ভারতীয় গরু আমদানি ও চোরাচালানে আসা বন্ধে কোরবানীর পশুর আদৌ সঙ্কট নেই। পবিত্র ঈদুল আযহার আর বাকি মাত্র দুই সপ্তাহ। এখন প্রতিদিনই নগরী ও জেলার বড় বড় হাটগুলোতে কোরবানী পশু আসতে শুরু করেছে মীরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রান্তসীমা থেকে। গতকাল (শুক্রবার) বন্দরনগরীর প্রবীণ কয়েকজন গরু বেপারী এবং প্রাণিসম্পদ বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর কোরবানী ঈদে কোথাও গরু মহিষ ছাগল ভেড়ার কোনই সঙ্কট বা ঘাটতি হবে না। চাহিদা এবং সরবরাহের ক্ষেত্রে তথ্য-পরিসংখ্যানই বলছে, কোরবানী পশুর স্বনির্ভরতা অর্জনের পথে রয়েছে চট্টগ্রামসহ গোটা দেশ। দেশে কোরবানীর সময় তো বটেই; সারাবছরই চাটগাঁইয়া রীতির ‘মেজ্জান’, বিয়েশাদিসহ নানা উপলক্ষকে ঘিরে গরুর ভোক্তার হার একক সংখ্যাগরিষ্ট।
এবার কোরবানী পশুর সয়ম্ভরতার পেছনে প্রধান কারণটি হলো, ভারতীয় গরু আসা বন্ধ থাকার সুবাদে চট্টগ্রামের হাজারো কৃষক ও গৃহস্থী পরিবার সারাবছর ধরেই নিজেদের গোয়ালে আর বাথানে ব্যাপক উৎসাহের সাথেই গরু ছাগল মহিষ সযতেœ লালন-পালন করে আসছেন। তাদের মনের একান্ত প্রত্যাশা, কোরবানীর হাটে নিয়ে ভাল দাম পাবেন, সংসারে কিছুটা স্বচ্ছলতা আসবে। যা ইতোপূর্বে ভারতীয় গরুর ঢলের কারণে কৃষক ও গৃহস্থীরা উপযুক্ত দাম পায়নি। হয়েছেন বঞ্চিত। উত্তর ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, পার্বত্য বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িসহ ৫টি জেলায় গৃহস্থী-কৃষক ছাড়াও কয়েকশত মৌসুমি খামার গড়ে উঠেছে সেই আগে থেকেই কোরবানীর চাহিদাকে ঘিরে। খামারে ও গোয়ালে গরু লালন-পালন করে গৃহস্থী কৃষক-কিষাণী ও খামারীরা এখন বেজায় খুশী। তাছাড়া কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া ও বান্দরবান সীমান্ত দিয়ে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে আসছে ছাগল ও মহিশ। এতে করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গবাদি পশু বিশেষত কোরবানী পশুর স্বনির্ভরতার কাছাকাছি রয়েছে। দেশীয় গরু মহিষ ছাগল ভেড়া চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।
চাহিদা ও মজুদের সুখবর
প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্র জানায়, আগামী পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানির জন্য দেশে মজুদ আছে প্রায় এক কোটি ১৫ লাখ গরুসহ বিভিন্ন পশু। সারাদেশে এখন গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া রয়েছে ৫ কোটি ৪৭ লাখ ৪৫ হাজারটি। এরমধ্যে এক কোটি ১৫ লাখ ৬০ হাজার কোরবানি দেয়ার উপযোগী। এরমধ্যে এককভাবে আছে ৪৫ লাখ গরু। কর্তৃপক্ষের হিসাবে কোরবানিতে দেশে পশুর চাহিদা হবে এক কোটি ১০ লাখ পশুর। গতবছর জবাই হয় এক কোটি ৪ লাখ ৫৪ হাজার পশু। আর এ বছর প্রস্তুত এর চেয়েও কিছু বেশি। দেশে পর্যাপ্ত কোরবানী পশু মজুদের এ অবস্থায় ভারত থেকে আমদানি অথবা চোরাচালানে গরু আসলে দেশীয় গৃহস্থী কৃষক-কিষাণী ও খামারীরাই বরং ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে জানান চট্টগ্রামের একজন মৌসুমি খামারী সিরাজুল মোস্তফা মামুন। প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাদেরও এক-অভিন্ন অভিমত।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এ বছর চট্টগ্রামে কোরবানি পশুর চাহিদা ধরা হয়েছে (গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া) ৫ লাখ ৯১ হাজার। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেকই কোরবানী ঈদ ঘিরে কৃষক ও খামারীর ঘরে লালিত-পালিত পশু। গতবছর ৫ লাখ ৪০ হাজার পশু জবাই হয়েছিল। এবার ১০ শতাংশ বেশি টার্গেট রাখা হয়েছে। ২০১৫ সালে চট্টগ্রামে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৫০টি পশু কোরবানী দেয়া হয়। বছর বছর এ সংখ্যা বাড়ছে। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র জানায়, গত জুলাই মাস পর্যন্ত চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলায় মোট ৫ লাখ ২ হাজার কোরবানী পশুর মজুদ হিসাব ধরা হয়েছে। তাতে ঘাটতি থাকে ৮৯ হাজারের। তবে এই ঘাটতি পূরণ এমনকি বাড়তি হয়ে যাবে যখন পার্বত্য চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা, নোয়াখালী, উত্তরবঙ্গসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ব্যাপকহারে গরু ছাগল নগরীতে এসে ঢুকবে। কেননা বেশি দামের আশায় দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে চট্টগ্রামে অনেক বড় সাইজের গরু বিকিকিনির জন্য আনা হয় প্রতিবছর। দাম হাঁকা হয় সর্বোচ্চ ৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এমনকি এক লাখ টাকায় গতবছর ঢাউস সাইজের খাসি বিক্রি হয়েছিল।
চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক জসিম জানান, গবাদি পশুর বিশেষত কোরবানী পশুর চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে সরকারিভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে কৃষক, গৃহস্থী ও খামারীদের অধিকমাত্রায় উৎসাহ ও প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। এরফলে এই বিভাগের হিসাবে গত পর পর দু’বছরে চট্টগ্রামে গরুসহ গবাদি পশুর লালন-পালন প্রায় ৫৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারত থেকে গরু আসা বন্ধের ফলে ভাল দামের আশায় কৃষক ও খামারীরা পশুপালনে মনোযোগ বাড়িয়েছে। যার ফলে কোরবানী উপলক্ষে কিংবা বছরের চাহিদা মেটাতে গরু আমদানির প্রয়োজন তথা বিদেশ নির্ভরতা আমরা এক্ষেত্রে কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হচ্ছি। খামারী, বেপারী ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বৃহত্তর চট্টগ্রামের বাঁশখালী, আনোয়ারা, সীতাকুÐ, ফটিকছড়ি, মীরসরাই, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চন্দনাইশ, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং কক্সবাজারের বিভিন্œ উপজেলা, পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবান থেকে চট্টগ্রামের কোরবানী পশুহাটগুলোতে গরু, ছাগল ও মহিষ আসা শুরু হয়েছে। দিন দিন তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
তবে পথে পথে গৃহস্থী ও খামারীদের কাছ থেকে কতিপয় পুলিশ এবং সরকারদলীয় নামধারী ক্যাডার-কর্মীদের চাঁদবাজিসহ হরেক ধরনের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রতিনিয়তই। এতে করে হাটে কোরবানী পশুর দামেও প্রভাব পড়তে পারে। তাছাড়া একশ্রেণীর অতিলোভী বেপারী ও অসৎ খামারী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে গরুকে কৃত্রিমভাবে মোটা-তাজা করে বাজারে মুনাফালোটার পাঁয়তারা করছে। চিকিৎসকদের সতর্কবাণী অনুসারে, এ ধরনের গরুর গোশত খেয়ে কঠিন রোগ-ব্যাধির আশঙ্কা সত্তে¡ও এদের বিরুদ্ধে এখনও কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তবে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, সম্পূর্ণ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কোরবানির পশু হৃষ্টপুষ্ট করা সম্ভব, যা স্বাস্থ্যের উপযোগী। যেমন- ঘাস বা খড়ের সাথে দানাদার খাবার দেয়া, গমের ভূষি, চালের কুঁড়ো, ডালের ভূষি, সয়াবিনের ভূষি, তিল বা সরিষার খৈল পরিমিত হারে গরুকে খাওয়াতে হবে। এরজন্য খামার ও গৃহস্থীদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা রয়েছে। তবে প্রচারের অভাবে অনেক প্রত্যন্ত এলাকার মানুষ এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানেনা।



 

Show all comments
  • সাইফুল ইসলাম ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫২ পিএম says : 0
    এটা আমাদের জন্য অনেক বড় সুখবর
    Total Reply(0) Reply
  • জেসমিন ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৩ পিএম says : 0
    তাহলে ভারত থেকে যাতে কোন গরু আমদানী না করা হয় সেদিকে বিজিবিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • সুলতান আহমেদ ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৫ পিএম says : 0
    চাঁদবাজিসহ হরেক ধরনের হয়রানির অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক।
    Total Reply(0) Reply
  • ফিরোজ খান ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১২:৫৭ পিএম says : 0
    যেসব অতিলোভী বেপারী ও অসৎ খামারী বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য মিশিয়ে খাইয়ে গরুকে কৃত্রিমভাবে মোটা-তাজা করে বাজারে মুনাফালোটার পাঁয়তারা করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক
    Total Reply(0) Reply
  • শামস ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১:০১ পিএম says : 0
    এই নিউজটি করায় রিপোর্টার শফিউল আলম সাহেবকে অসংখ্য মোবারকবাদ
    Total Reply(0) Reply
  • সুমন ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ১:০৩ পিএম says : 0
    আগামী বছর থেকে খামার ও গৃহস্থীদের প্রশিক্ষণেরও প্রচার ভালোভাবে করতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ