Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৭ জুন ২০২৪, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৯ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

‘বিচারকরা কিভাবে অপসারিত হলেন জনগণ ও মামলাকারীদের কাছে তা প্রাসঙ্গিক নয়’

ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়-১০

ইনকিলাব ডেস্ক : | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

প্রকৃতপক্ষে একজন বিচারকের অসামর্থ্য ও অসদাচরণের প্রধান গুরুত্বপূর্ণ সূত্র হচ্ছে এসজেসি। কিন্তু এ ব্যাপারে এসজেসি-কে একটি অসম্ভব অবস্থায় রাখা হয়েছে। এটি এই কারণে যে, এসজেসি একদিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সূত্র যার কাছ থেকে একজন বিচারপতির অসামর্থ্যতা ও অসদাচরণের তথ্য পান রাষ্ট্রপতি। অপরদিকে অসামর্থ্যতা ও অসদাচরণের অভিযোগ তদন্ত করার ক্ষমতা এর ওপর অর্পিত। স্পষ্টত, এসজেসি একজন বিচারকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করতে পারে। তবে রাষ্ট্রপতি নির্দেশ না দিলে এই বিষয়ে তদন্ত করতে পারে না। এছাড়া এসজেসি একান্তভাবে বিচারকদের নিয়ে গঠিত। আর সম্ভবত ্এ কারণে কোন কোন মামলায় এসজেসি সহকর্মী বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনে দ্বিধাবোধ করতে পারেন। এভাবে একজন দোষী বিচারক (transgressing judge) শাস্তিমূলক কার্যক্রম এড়াতে পারেন। খুব সম্ভবত এসজেসি প্রথমে কাজ শুরু করবে না। বরং রাষ্ট্রপতির কাছে অভিযোগ করার জন্য অন্যান্য সূত্রের ওপর নির্ভর করবে।
অভিযোগ রয়েছে যে, বিচার বিভাগীয় আচরণ ভঙ্গের কিছু দৃষ্টান্ত আছে যেগুলোর ব্যাপারে এসজেসি শাস্তিমূলক কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে কোন অভিযোগ করে নি। সাবেক প্রধান বিচারপতি এ টি এম আফজালের এক সাক্ষাতকার নেয়ার সময় ঢাকা ল’ রিপোর্টস (ডিএলআর)-এর সম্পাদক শাহাবুদ্দিন আহমেদ দাবি করেন, “মরহুম বিচারপতি এ আর এম আমিরুল ইসলাম চৌধুরি হাইকোর্ট বিভাগে বসে ইচ্ছাকৃতভাবে Appellate Division-এর পর্যবেক্ষণ অস্বীকার করেন। বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা ভঙ্গের তালিকায় তিনি শুধু একা নন। তবে সুপ্রিম জুডিয়াল কাউন্সিল তাদের এখতিয়ারে গ্রহণযোগ্য এধরণের কোন বিষয়ে কখনও কোন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এমন কোন দৃষ্টান্ত নেই।”
জনাব শাহাবুদ্দিন আহমদের এই বক্তব্যের জবাবে বিচারপতি এ টি এম আফজাল বলেন, প্রকৃতপক্ষে এমন কি তদন্তের জন্যেও রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে আজ পর্যন্ত একটি মামলাও কাউন্সিলে পাঠানো হয় নি। তবে প্রধান প্রশ্ন হচ্ছে, কোন বিচারকের অসমর্থ্যতা ও অসদাচরণের বিষয়কে এসজেসি রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছে কিনা? উপরে যেমন বলা হয়েছে অসদাচরনের দৃষ্টান্ত আছে, আসলে এখনও পর্যন্ত তেমন কোন দৃষ্টান্ত নেই। এ প্রসঙ্গে সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের জোরালো বক্তব্য এখানে উল্লেখের দাবি রাখে। “তিনি বলেন, বিচারপতি এ টি এম আফজাল যখন প্রধান বিচারপতি এবং বিচারপতি রহমান এসজেসি’র দ্বিতীয় সদস্য ছিলেন তখন অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রী একজন বিচারকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে বিচারপতি রহমান বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে আর অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। কেননা এ ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির পক্ষে জোরালো মানসিকতার অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, বিচার বিভাগীয় ক্ষমতা প্রয়োগের কাজে নিয়োজিতদের স্বচ্ছতার সাথে তাদের সব দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং সংবিধান ও আইন তথা বিবেকের কাছে তাদেরকে জবাবদিহি থাকতে হবে; যাতে করে বিচার পদ্ধতিতে জনচেতনা ক্ষুন্ন না হয়।”
ড. সরকার ২০০৪ সাল পর্যন্ত তার অভিজ্ঞতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন। তবে এই দলিল প্রকাশের পর সুপ্রিম কোর্টের অন্তত দুইজন বিচারক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলে বিচারের সম্মুখীন হন।
পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আইনজীবী সমিতি একটি ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে যে, ক্যাম্বোডিয়া থেকে বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ পাওয়া গেছে, যেদলটি সর্বাধিক উৎকোচ দেবে মামলাসমূহ তাদের পক্ষে যাবে। হিসাব করে দেখা গেছে, ষেখানে আদালতে শুনানী হওয়া মামলার ৯০শতাংশের মধ্যে বিচারক ও কেরাণীরা উৎকোচের সঙ্গে জড়িত। তাদেরকে ঘুষ না দিলে বিচরকরা মামলার প্রতি কোন মনোযোগ দেন না এবং আদালত কর্মীরা মামলার তথ্য দিতে অস্বীকার করেন এবং আইনজীবীদের মামলার নথি দেখতে দেন না। খবরে বলা হয়েছে, ভারতে বিচার বিভাগে দুর্নীতি একটি ক্যান্সারের মতো যেটি নিম্নস্তর থেকে ইঞ্চি ইঞ্চি করে উপরের দিকে উঠতে থাকে। ২০১০সালে সাবেক আইনমন্ত্রী বিগত প্রধান বিচারপতির ৮জনই দুর্নীতিপরায়ণ ছিলেন একথা বলে আদালত অবমাননার সম্মুখীন হন। ২০১৫ সালে বিচারপতি মারকান্ডে কাতজু দাবি করেন, উচ্চতর বিচার বিভাগের অর্ধেকই দুর্নীতিপরায়ণ। এখন প্রশ্ন হলো আমাদের অবস্থা কী।
বিচারকরা তাদের পদ থেকে কিভাবে অপসারিত হলেন জনগণ ও মামলাকারীদের কাছে তা প্রাসঙ্গিক নয়। তারা চান তাদের মামলাগুলো দ্রুত, পক্ষপাতহীন, সুষ্ঠু ও বাইরের প্রভাব মুক্তভাবে নিষ্পত্তি হোক। শুধু মাত্র মামলাকারীদের চোখে বিচার বিভাগের ভাবমর্যাদা জোরদার করা নয় বরং বিচারকদের মধ্যে সংহতি, সৎ গুণ ও নীেিবাধের চর্চা টিকিয়ে রাকার জন্য ন্যয়পরায়ণ ও সৎ বিচারকদের প্রয়োজন। বিচার বিভাগীয় বিষয়ে জনগণের ধারণা বিরোধ মীমাংসার ভূমিকার মত। গোটা বিচার বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা আদালতের জনাকয়েক সদস্যের বিচ্ছিন্ন আইনভঙ্গের কারণে ক্ষুন্ন হয়। আর তাই সততা, জবাবদিহিতা ও সু-আচরণের চরম উৎকর্ষতা বজায় রাখা অপরিহার্য। একইভাবে বিচারক ও বিচার বিভাগের ওপর আস্থা সৃষ্টি করা রাষ্ট্র্রের সব অঙ্গের দায়িত্ব। প্রশ্ন হচ্ছে জনগণ ও মামলাকারীদের মধ্যে এরূপ আস্থা সৃষ্টির ফরমুলা কি?



 

Show all comments
  • Md Sakib ৩০ জুলাই, ২০২০, ৩:১৬ পিএম says : 0
    সাবেক বিচারপতি এটিএম আফজাল স্যারের ছবি আছে আপনাদের কাছে?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ষোড়শ সংশোধনী

৫ নভেম্বর, ২০১৭
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ