Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কেয়ারটেকার বাতিল হয়েছে কাস্টিং ভোটে আর ষোড়শ সংশোধনী সর্বসম্মতভাবে

মোবায়েদুর রহমান : | প্রকাশের সময় : ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কাঁচের ঘরে বসে অন্যের ঘরে ঢিল ছোঁড়া যায় না। কারণ ঢিলের বদলে যদি পাটকেল ছোঁড়া হয় তাহলে কাঁচের ঘর ভেঙে খান খান হয়ে যায়। অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক কাঁচের ঘরে বসে ঢিল ছুঁড়ছেন। বিরাধী পক্ষ তার ঘরে পাটকেল ছুঁড়ছেন, তবে বড় বড় পাটকেল নয়। মনে হয়, আয়নাতে তিনি সাম্প্রতিক কালে নিজের মুখ দেখেননি। এখন তার মুখের সামনে আয়না ধরার সময় এসেছে। গত ৯ আগস্ট বুধবার আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসাবে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছেন তারপর তাকে আর সময় দেওয়া যায় না। তার মুখোশ ছিড়ে ফেলে তার আসল চেহারা জনগণের কাছে তুলে ধরার সময় এসেছে।
গঠনমূলক সমালোচনা কোথায়?
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের ফলে রাষ্ট্র পরিচালনায় কী সুবিধা হলো অথবা কী অসুবিধা হলো সে সম্পর্কে খায়রুল হক গঠনমূলক আলোচনা এমনকি সমালোচনাও করতে পারতেন। তিনি হাইকোর্টের বিচারক ছিলেন, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ছিলেন আবার প্রধান বিচারপতিও ছিলেন। সুতরাং বিচার কার্যে তার অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি ভালো পরামর্শ দিতে পারতেন। কিন্তু তিনি সাংবাদিক সন্মেলন করতে গেলেন কেন? আইন কমিশনের চেয়ারম্যানের পদটি একটি লাভজনক পদ বা অফিস অব প্রফিট। এই পদে থেকে কেউ সাংবাদিক সন্মেলন করতে পারেন না। কিন্তু তিনি এই কাজ করে অসদাচরণ করেছেন এবং সরকারী কর্মচারীদের আচরণ বিধি লঙ্ঘন করেছেন। এই অভিযোগে তার বিরুদ্ধে শাস্তি মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। সাংবাদিক সন্মেলনে এসে তিনি যা বললেন সেগুলো শুনে মনে হলো তিনি শাসক দলের বুদ্ধিবৃত্তিক লাঠিয়াল হিসাবে খাড়া হয়েছেন। ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে প্রধান বিচারপতি সিনহাসহ ৭ জন বিচারপতি যে রায় দিয়েছেন এবং যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সেটি পড়ে খায়রুল হকের মনে হয়েছে যে বাংলাদেশ আর পিপলস রিপাবলিক বা গণপ্রজাতন্ত্রী নাই। এটি এখন জাজেস রিপাবলিক বা বিচারপতিদের প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
পর্যবেক্ষণ নাকি অপ্রাসঙ্গিক
খায়রুল হকের কেন এমন মনে হল? তার কথায়, সিনহা সাহেবরা অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলেছেন। তিনি মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনী নিয়ে দেওয়া ঐ রায় ছিল পূর্ব ধারণা প্রসূত ও আগে থেকে চিন্তা ভাবনার ফসল। শুরুতেই খায়রুল হক বলেন, ‘এই রায়ে ইস্যু এড়িয়ে এত অত্যধিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে যে আমার মনে হয়েছে মূল ইস্যুটাই হারিয়ে গেছে। প্রথমে যখন পড়তে আরম্ভ করলাম, তখন মনে হলো আমি ভারতের বিচারক এস নরিম্যানের অটো বায়োগ্রাফি টাইপের কিছু পড়ছি কি না। রায়ের সাত নম্বর পাতায় গিয়ে আমি বুঝতে পারলাম, এটা কোনো আপিল। এর আগে বোঝাই যাচ্ছিল না যে, কোন বিষয় নিয়ে জাজমেন্ট দেওয়া হয়েছে। পাতার পর পাতায় বিভিন্ন ধরনের অপ্রাসঙ্গিক মন্তব্য করা হয়েছে। রায়ের কলেবর বৃদ্ধি ছাড়া যার আর কোনো প্রয়োজন ছিল বলে আমার মনে হয় না।
আয়নায় নিজের চেহারা দেখুন
খায়রুল হক সাহেব পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের যে রায় দিয়েছেন সেটির কলেবর ৩৯৩ পৃষ্ঠা। বিচারপতি সিনহার রায়ের ৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়ে খায়রুল হক বুঝতে পেরেছিলেন যে, মূল ইস্যুটি হলো সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী। কিন্তু খায়রুল হক পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে যে রায় দিয়েছিলেন, ৩৯৩ পৃষ্ঠার সেই রায়ে ৩৯০ পর্যন্ত মূল ইস্যু খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এই মামলাটি দায়ের হয়েছিল মুন সিনেমা হল ফেরত পাওয়ার জন্য। মুন সিনেমা এবং সংলগ্ন সম্পত্তি পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে ঘোষিত হয়েছিল। সামরিক বিধি নম্বর ৭ অনুযায়ী এই পরিত্যক্ত সম্পত্তি মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টকে দেয়া হয়েছিল। সেই ৭ নম্বর বিধি আইনসঙ্গত ছিল না বলে আলোচ্য দুই বিচারপতি মনে করেন। সেই যুক্তিতে সম্পত্তি ফেরত দিলে কারো কিছু বলার ছিল না। কিন্তু ৩৯০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তার রায় পড়েও মূল ইস্যুর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ৩৯০ পৃষ্ঠা জুড়ে তিনি রাজনীতি, ইতিহাস এবং আইন শাস্ত্রের ওপরে একটি থিসিস লিখেছেন। এই তিনটি বিষয়ের হেন কোনো চ্যাপ্টার নেই যেখানে তিনি তার পান্ডিত্য ফলান নাই।
শুরু করেছেন পলাশীর যুদ্ধ থেকে
নিজের বিদ্যা জাহির করতে যেয়ে তিনি শুরু করেছেন ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধ থেকে। অর্থাৎ তিনি আড়াই শ’ বছর পেছনে চলে গেছেন। তারপর তিনি পর্যায়ক্রমে যে বিষয়গুলোর ওপর জ্ঞান দান করেছেন সেগুলো হলো (১) ১৮৫৭ সালের সিপাহী বিদ্রোহ, (২) কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের প্রতিষ্ঠা, (৩) ১৯৩০ সালে সূর্য সেনের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন। (৪) ১৯৪০ এর দশকে শেরে বাংলা ফজলুল হক, খাজা নাজিমুদ্দীন এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী হওয়া। (এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে যে, ব্রিটিশ আমলে বাংলা ভারতের একটি প্রদেশ হওয়া সত্তে¡ও বাংলার মন্ত্রিসভা প্রধানকে বলা হতো প্রধানমন্ত্রী।)
খায়রুল হকের রাজনৈতিক ইতিহাস বয়ান
এরপর খায়রুল হক এগিয়ে গেছেন তার রাজনৈতিক ইতিহাস বয়ানে। যুক্ত বাংলা গঠনে সোহরাওয়ার্দী, আবুল হাশিম ও শরৎ বসুর প্রচেষ্টার কথা। এখানে তিনি একটি ভুল তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, জিন্ন্াহ সাহেব যুক্ত বাংলা সমর্থন করেছিলেন শর্ত সাপেক্ষে। অর্থাৎ যুক্ত বাংলা যদি পাকিস্তানে যোগদান করে তাহলে তিনি যুক্ত বাংলাকে সমর্থন করবেন। এটি একটি চরম ভুল তথ্য। জিন্নাহ সাহেব যুক্ত বাংলা গঠনে সোহরাওয়ার্দীকে নিঃশর্ত সমর্থন দিয়েছিলেন। নেহরু বরং শরৎ বসুকে বলেছিলেন যে, যদি অবিভক্ত বাংলা ভারতে যোগদান করে তাহলে তিনি যুক্ত বাংলার দাবিকে সমর্থন করবেন, না হলে নয়।
এরপর খায়রুল হক বয়ান করেছেন, (১) ভারত বিভক্তি, (২) পাকিস্তানে শাসনতন্ত্র প্রণয়ন প্রক্রিয়া, (৩) লিয়াকত হত্যা, (৪) পাকিস্তানের গণপরিষদ বাতিল, (৫) ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র, (৬) জেনারেল আইয়ূব খানের মার্শাল ল’, (৭) শেখ মুজিবের ৬ দফা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা
এরপর খায়রুল হক বলেছেন যে, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ আর্মি ক্র্যাক ডাউনের সময় গভীর রাতে শেখ মুজিব কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ, ইতিহাসবিদ, বৃদ্ধিজীবি এবং জনগণ সুতীব্রভাবে দুই ভাগে বিভক্ত। এরপর তিনি বর্ণনা করেছেন, ১৯৭১ সালের ১০ই এপ্রিল মুজিব নগরে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র। এই ঘোষণা পত্রকে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সংবিধান হিসাবে বর্ণনা করেছেন। খায়রুল হকের ভাষায় এই অস্থায়ী সংবিধানে ২৩টি স্তবক রয়েছে। কোনো স্তবকেই সমাজতন্ত্র এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা নেই। পলাশীর যুদ্ধ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা পত্র পর্যন্ত বয়ান করতে তিনি খরচ করেছেন ৩৬টি পৃষ্ঠা।
সামরিক শাসন
এরপর তিনি অবতারণা করেছেন ’৭৫ সালের ১৫ই আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা। তারপর তিনি ব্যাখ্যা করেছেন সামরিক শাসন বলতে কী বোঝায়। অতঃপর পার্লামেন্টের ঐতিহাসিক বিকাশ, পরিবর্তন এবং সংবিধানের আইনগত ধারণা সম্পর্কে সুদীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছেন। মুজিব হত্যা, পার্লামেন্টের উদ্ভব ও বিকাশ এবং সংবিধানের আইনগত ধারণা বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি আরো খরচ করেছেন ১৮ পৃষ্ঠা। অর্থাৎ ৫৪ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তিনি এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা করেছেন।
বাংলাদেশের সংবিধান
এরপর তিনি ধারাবাহিকভাবে যেসব বিষয় বয়ান করেছেন সেগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) সংবিধানের প্রস্তাবনা, (২) সংবিধানের প্রাধান্য, (৩) প্রতিরক্ষা সার্ভিস, (৪) সামরিক শাসন, (৫) বাংলাদেশের সামরিক শাসন। এই কয়টি বিষয়ের ওপর জ্ঞান দান করতে গিয়ে তিনি খরচ করেছেন আরো ৬৪ পৃষ্ঠা। অর্থাৎ ১২০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তিনি এসব বিষয়ে আলোচনা করেছেন।
১৯৭৫ সালের ২০ আগস্টের ঘোষণা
এই পর্যায়ে এসে তিনি ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্টের ঘোষণা, ১৯৭৫ সালের ৮ নভেম্বরের ঘোষণা এবং ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিলের ঘোষণা আলোচনা করেছেন। এসব আলোচনা এবং তার সাথে আরো অনেক রাজনৈতিক ও সমকালীন বিষয় নিয়ে ব্যয় করেছেন আরো ২৭১ পৃষ্ঠা। এভাবে তিনি ৩৯০ পৃষ্ঠা পর্যন্ত তার জ্ঞানের বহর ছুটিয়েছেন। অবশেষে ৩৯১ পৃষ্ঠায় উপসংহারে তিনটি স্তবকে সিনেমা হল তার মূল মালিককে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
গ্রাম-গঞ্জে একটি কথা আছে। নিজের পশ্চাদ দেশে মল রেখে অন্যের পশ্চাদ দেশ তালাশ করা উচিত নয়। ষোড়শ সংশোধনীর সাথে কিন্তু মূলত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, ক্ষমতার বিভক্তি, জাতীয় সংসদ, সংসদ সদস্য প্রভৃতি বিষয় জড়িত। তাই ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে এসব বিষয়ের আলোচনা আসা অত্যন্ত স্বাভাবিক। কিন্তু সিনেমা হল এবং জমি জিরাতের সাথে খন্দকার মোশতাকের সরকার, প্রধান বিচারপতি সায়েমের সরকার এবং জেনারেল জিয়ার সরকারের সাথে সম্পর্ক কী? অথচ সিনেমা হল ফেরত দিতে গিয়ে খায়রুল হক বিচারপতির ক্ষমতার চরম অপব্যবহার করেছেন এবং মোশতাক, সায়েম ও জিয়ার তিনটি সরকারকেই অবৈধ ঘোষণা করেছেন।
খায়রুল হক ৯ তারিখের সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করেছেন যে, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় ছিল পূর্ব ধারণাপ্রসূত এবং আগে থেকে চিন্তা ভাবনার ফসল। কথায় বলে, যার মনে যা, লাফ দিয়ে ওঠে তা। ছাত্র জীবন থেকে যে রাজনৈতিক ধ্যান ধারণা পোষণ করে এসেছেন খায়রুল হক এবং ছাত্র জীবন থেকে যে আদর্শ এবং দলসমূহকে প্রতিপক্ষ ভেবে এসেছেন তিনি, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল সেই বিদ্বিষ্ট চিন্তা ভাবনার ফসল এবং তার রায় ছিল পূর্ব ধারণাপ্রসূত। তিনি বলেছেন, ষোড়শ সংশোধনী মামলায় সংসদ এবং নির্বাচন কমিশন নাকি কোনো পক্ষ নয়। তাহলে তিনিই বলুন, মুন সিনেমা হলের মামলায় মুসলিম লীগ, জিন্নাহ সাহেব, নাজিমুদ্দীন, সোহরাওয়ার্দী আওয়ামী লীগ- এরা কি কোনো পক্ষ ছিলেন? তাহলে তিনি অযথা তাদেরকে টেনে এনেছিলেন কেন?
খায়রুল হকের চরম ঔদ্ধত্য ও আদালত অবমাননা
সাংবাদিক সম্মেলনে খায়রুল হক বলেছেন, চিফ জাস্টিস যদি বলেন যে, সংসদ সদস্যরা ইমম্যাচিউরড, তাহলে আমাকে বলতে হয়, সুপ্রিম কোর্টের জজ সাহেবরাও তাই। কারণ তারা তাদের রায়ের মধ্যে যেসব কথাবার্তা বলার কোনো প্রয়োজন ছিল না, তা বলেছেন।
খায়রুল হক সাহেব নিজেকে কি মনে করেন? তিনি কি মনে করেন যে, তিনিই বাংলাদেশের সবচেয়ে জ্ঞানী গুণী ব্যক্তি? একজন সাবেক চিফ জাস্টিস হয়ে সিটিং চিফ জাস্টিসকে ইমম্যাচিউরড বলার সাহস তিনি পান কোত্থেকে? তিনি কি ভুলে গেছেন যে, তাকে চিফ জাস্টিস বানানো হয়েছে তার চেয়েও সিনিয়র দুই জন বিচারপতিকে ডিঙিয়ে? এরা হলেন জাস্টিস আব্দুল মতিন এবং জাস্টিস শাহ আবু নঈম। এসকে সিনহাকে চিফ জাস্টিস বানাতে গিয়ে অন্য কোনো সিনিয়রকে ডিঙাতে হয়নি। কারণ বাবু সিনহা ছিলেন সিনিয়র মোস্ট। তিনি নসিহৎ করেছেন একে অপরকে সম্মন করতে। বাবু সিনহাকে ইমম্যাচিউরড বলে তিনি কেমন সম্মান দেখালেন? কথায় বলে, ‘আপনি আচরি ধর্ম অপরে শেখাও।’
এমপি হওয়ার যোগ্যতা
খায়রুল হক বলেছেন, যারা এমপি হয়েছেন, তারা এমপি হওয়ার যোগ্য কিনা সেটি বুঝেছেন তাদের ভোটাররা। কারণ তারাতো তাদের ভোট দিয়ে তাদেরকে এমপি বানিয়েছেন। কারো প্রতি কোনো কটাক্ষ না করেই বলছি, খায়রুল হক সাহেব, ৩০০ জন এমপির মধ্যে মেজরিট এমপি অর্থাৎ ১৫৩ জন এমপিকে কারা ভোট দিয়ে বানিয়েছেন? যাদের এমপি হওয়ার জন্য কোনো ভোটেরই প্রয়োজন হলো না, তাদের যোগ্যতা কীভাবে প্রমাণিত হবে? যারা হাইকোর্টের জাজ, তারা জাজ হওয়ার যোগ্য কিনা, সে কথা আপনি কীভাবে বলেন? একজনকে হাইকোর্টের জাজ নিয়োগ দেওয়ার আগেই আপনার মতো চিফ জাস্টিসরাই তো তার নাম রেকোমেন্ড করে প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠান। তাহলে কি আপনি কোনো অযোগ্য ব্যক্তিকে জাজ হওয়ার জন্য রেকোমেন্ড করেছেন?
সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা
আজ আপনি বলছেন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের সাথে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার নাকি তেমন একটা সম্পর্ক নেই। বিষয়টি যদি এতই আনইম্পর্টেন্ট হয়ে থাকে, তাহলে আপনি যখন পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করলেন তখন সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলকে বাতিল করলেন না কেন? কেন সেটিকে কন্ডোন করলেন? অর্থাৎ মার্জনা করলেন? এই মার্জনা করার অথরিটি আপনাকে কে দিয়েছিল? ইচ্ছে হলো একটিকে কন্ডোন করলেন, ইচ্ছে হলো আর একটিকে বাতিল করলেন। এটাকি স্বেচ্ছাচারিতা নয়?
জুডিশিয়াল ডিজঅনেস্টি
ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের এই একটি রায়েই খায়রুল হক মনে করেছেন যে, জনগণের সার্বভৌমত্ব চলে গেল, আর বিচারপতিদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠিত হলো। কীভাবে তিনি এটা বললেন? তিনিই তো ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করেছেন। অথচ, আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের প্রতিটি রাজনৈতিক দল সর্বসম্মতভাবে ত্রয়োদশ সংশোধনী তথা কেয়ার টেকার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছিল। আর তিনি কলমের এক খোঁচায় সেটি উড়িয়ে দিলেন। তার মানে জনগণের কর্তৃত্ব বাদ দিয়ে তিনি নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই তিনিই তো সংক্ষিপ্ত রায়ে বলেছিলেন যে, পরবর্তী দুইটি সংসদ নির্বাচন কেয়ার টেকারের অধীনে হতে পারে। অথচ ১৬ মাস পরে যখন তিনি যখন পূর্ণাঙ্গ রায় জমা দিলেন তখন সেখান থেকে পরবর্তী দুইটি সংসদ নির্বাচন কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে হতে পারে- এই অংশটি গায়েব করে দেন।
কাস্টিং ভোটে কেয়ার টেকার বাতিল
প্রশ্ন হলো সরকারের একটি চাকরি করে বা লাভজনক একটি পদে অধিষ্ঠিত হয়ে খায়রুল হক প্রেস কনফারেন্স করতে পারেন কিনা? আরও প্রশ্ন আছে। খায়রুল হকের মতো একজন চাকুরিজীবী হয়ে কোনো ব্যক্তি প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রিম কোর্টের ফুল বেঞ্চকে অপমান করতে পারেন কিনা? খায়রুল হক সাহেব ভুলে যাচ্ছেন যে, তিনি ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল অর্থাৎ যে কেয়ার টেকার সরকার বাতিল করার রায় দিয়েছেন সেটি তিনি করতে পেরেছেন তার কাষ্টিং ভোটে। কেয়ার টেকার বাতিলের পক্ষে ছিলেন তিনজন বিচারপতি। এরা হলেন বিচারপতি মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি এসকে সিনহা এবং বিচারপতি মোজাম্মেল হোসেন। আবার কেয়ার টেকার বাতিলের বিপক্ষেও ছিলেন তিনজন বিচারপতি। এরা হলেন, বিচারপতি আব্দুল ওহাব মিয়া, বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা এবং বিচারপতি ঈমান আলী। এমন পরিস্থিতিতে খায়রুল হক প্রথম তিনজনের সাথে মিলে গেলে তারা সামান্য মেজরিটি (¯েøন্ডার মেজরিটি) হন। অথচ, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের যে রায় হয়েছে সেটি সাতজন বিচারপতির ফুল বেঞ্চ সর্বসম্মত রায় দিয়েছেন। কিসের সাথে কিসের তুলনা করছেন খায়রুল হক?



 

Show all comments
  • taher ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ২:৫১ এএম says : 0
    Khob shondor likhlen dhonnobabad amader desher qean papider chorom beadobi shikks hoa uchit
    Total Reply(0) Reply
  • Sumon Kamal ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৩৬ এএম says : 0
    ভালো লাগলো লেখাটা। দল কানাদের পড়ার আমন্ত্রন জানাচ্ছি।
    Total Reply(0) Reply
  • আরমান ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:১৯ পিএম says : 0
    খায়রুল হক সাহেবের উচিত বিবেক দিয়ে বিষয়টি ভাবা
    Total Reply(0) Reply
  • আসাদ ১৭ আগস্ট, ২০১৭, ১২:২৪ পিএম says : 0
    বিচার বিভাগকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া উচিত, না হলে দেশে আইনের শাসন বলে কিছু থাকবে না।
    Total Reply(0) Reply
  • সোহাগ ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ৯:২২ এএম says : 0
    অনেজ ভাল লাগলো পড়ে সুন্দর কথা তুলে দরেছেন
    Total Reply(0) Reply
  • Ahmed ১৮ আগস্ট, ২০১৭, ১১:৩৯ এএম says : 0
    Very nice and impartial analysis. Everyone should go through it. It is very sad that we are polluted by the political blindness. Everyone should follow the just and neutral way for the sake of the people as well as the country.
    Total Reply(0) Reply
  • md.hamid ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ৪:১৩ পিএম says : 0
    কি অসাধারন কথা গুলো তুলে ধরলেন,ভালো লাগলো। আপনাকে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • ১৯ আগস্ট, ২০১৭, ৬:১৯ পিএম says : 0
    Very good
    Total Reply(0) Reply
  • MH Bakul ২০ আগস্ট, ২০১৭, ৩:১০ পিএম says : 0
    আপনার লেখাটা খুবই প্রাসঙ্গিক এবং বাস্তব সম্মত,বিচারপতি খায়রুল হকদের মত ব্যক্তিদের জন্যই আজকে গনতন্ত্র এবং রাষ্ট্র ধ্বংসের পথে।
    Total Reply(0) Reply
  • দিদার সোবহানী ২০ আগস্ট, ২০১৭, ৯:০২ পিএম says : 0
    আপনার লেখাটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক ও যুক্তির কাঠগড়ায় উত্তীর্ণ হবে। তিনি দেশের চরম ক্ষতি করেছেন। তার বিচার হওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • mohammad Rashid ২২ আগস্ট, ২০১৭, ৬:১১ পিএম says : 0
    I have gone though the articles. I should thanks with my respect to the writer which has clearly explained the situation taken place at the moment in Bangladesh.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ষোড়শ সংশোধনী

৫ নভেম্বর, ২০১৭
১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৭

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ