Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ১১ জুন ২০২৪, ২৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দীর্ঘস্থায়ী বন্যার অশনি সঙ্কেত

| প্রকাশের সময় : ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ব্রহ্মপুত্র-যমুনা মেঘনা অববাহিকার সাথে পদ্মাও বিপদসীমার উপরে : প্রধান তিনটি অববাহিকায় একযোগে পানিবৃদ্ধি ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালের বন্যাকে ছাড়িয়ে যাওয়ার অশনি সঙ্কেত আগস্ট জুড়ে এমনকি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্যা বিস্তৃত হতে পারে ১৮ নদ-নদীর ২৭টি পয়েন্টে বিপদসীমা অতিক্রম : ২৫ জেলা বন্যা কবলিত : তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট : শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু : বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন
ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েকদিনের টানা বর্ষণে হু হু করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হচ্ছে। ২৫ জেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। বগুড়ায় যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। দিনাজপুরে বিভিন্ন স্থানে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। কুড়িগ্রামের কুলাঘাট পয়েন্টে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধায় তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৭৮ সে.মি. ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৬৪ সে.মি. সুনামগঞ্জের ষোলঘর পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৫ সেন্টিমিটার, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে গত ৬০ বছরের রেকর্ড ভেঙে বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যমুনার পানি চিলমারী পয়েন্টেও পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করতে পারে। বিভিন্ন স্থানে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিছিন্ন রয়েছে। গতকাল পর্যন্ত ৪০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়ে সারিয়াকান্দি ও ধুনট পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তার পানি বিপদসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। ব্যারাজটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৪৪টি গেট খুলে দেয়া হয়েছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার উপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এবার ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা ও তিস্তা অববাহিকায় পানির উচ্চতা ৭৫ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে। ফলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ বছর দেশের সা¤প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ ১৯৮৮ সালের বন্যাকেও ছাপিয়ে যেতে পারে। কুড়িগ্রাম, সুনামগঞ্জ,দিনাজপুরে শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুকনো জায়গার অভাবে মানুষ লাশ দাফন নিয়ে সঙ্কট পড়েছে। হমকির মুখে বিভিন্ন শহর রক্ষা বাঁধ। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আগামী ১৬ ও ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য শুধুমাত্র ২০১৫ সালের ডিগ্রি পাস ও সার্টিফিকেট কোর্স (পুরাতন সিলেবাস) পরীক্ষা দেশের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির কারণে স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সারা দেশে বন্ধ রয়েছে কয়েক হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থীরা। লক্ষাধিক হেক্টর ফসলি জমি পানির নিচে। তীব্র খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সঙ্কট রয়েছে। এসব এলাকার মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছে। বানভাসী মানুষের বিভিন্ন কষ্ট ও নদ-নদীর বর্তমান চিত্র তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতদের পাঠানো তথ্য নিয়ে রিপোর্ট:
শফিউল আলম চট্টগ্রাম থেকে জানান, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও মেঘনা (ধারা সুরমা-কুশিয়ারা) অববাহিকার সাথে পদ্মা নদীও গতকাল (সোমবার) বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। সেই সাথে ঢাকাসহ আশপাশ এলাকার নদ-নদীগুলোতেও বাড়ছে পানি। দেশের চারটি অববাহিকার মধ্যে প্রধান এই তিনটি অববাহিকায় একযোগে পানিবৃদ্ধি পাওয়ার যে মাত্রা বা মতিগতি তাতে নিকট অতীতের ১৯৮৮, ১৯৯৮ ও ২০০৭ সালের বন্যার ভয়াবহতাকেও ছাড়িয়ে যাওয়ার অশনি সঙ্কেত বলে আশঙ্কা করছেন নদী ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞমহল। কেননা হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চল, চীন তিব্বত, নেপাল, ভারতের বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম এবং আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের (দি সেভেন সিস্টার হিসেবে পরিচিত ৭টি পার্বত্য রাজ্য) উজানভাগের অববাহিকা থেকে ভয়ানক আকারে ঢল নেমে আসছে বাংলাদেশের দিকে। যা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা ও গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীসমূহকে অস্বাভাবিক গতিতে ফুলিয়ে তুলছে। বাংলাদেশের চতুর্থ অববাহিকা (দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য) ছাড়া এই তিনটি অববাহিকায় নদ-নদীসমূহের শতকরা ৭০ থেকে ৯৪ ভাগ পর্যন্ত পানি ধেয়ে আসছে হিমালয় চীন তিব্বত ও ভারতের উপরোক্ত মূল উৎস (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) থেকেই। বন্যা পরিস্থিতির ক্রমাবনতির হার অনুসারে চলতি আগস্ট জুড়ে এমনকি আগামী সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত বন্যা ব্যাপক-বিস্তৃত এবং দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে। বন্যার দ্রæত অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তে ১৮টি নদ-নদী ২৭টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। দেশের ৯০টি নদ-নদীর পানির সমতল স্টেশনের মধ্যে পানি বৃদ্ধি পায় ৬০টিতেই। ইতোমধ্যেই দেশের ২৫টি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা সরাসরি বন্যা কবলিত হয়েছে। বিশেষত দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-মধ্য ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা ভয়াল রূপ নিয়েছে। দেশে বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগের ব্যাপারে আগাম প্রস্তুতি-মোকাবিলায় চরম উপেক্ষা ও নির্লিপ্ততার খেসারত দিতে হচ্ছে লাখ লাখ বন্যার্ত ভাগ্যাহত মানুষকে। কেননা এক্ষেত্রে অবহেলার সবচেয়ে লক্ষ্যণীয় দিকটি হচ্ছে, চীন ও ভারতের বিশাল অঞ্চলজুড়ে ভয়াবহ বন্যা, পাহাড়ি ঢল-ধস ও নদ-নদীর উৎসের অববাহিকায় ব্যাপকমাত্রায় পানিবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে টানা প্রায় দুই সপ্তাহ যাবৎ ওইসব অঞ্চলে চূড়ান্ত দুর্যোগ সতর্কতার জন্য ‘রেড অ্যালাার্ট’ এবং ‘অরেঞ্জ অ্যালার্ট’ বলবৎ রাখা হয়। তা সত্তে¡ও দেশে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তা কার্যত আমলে নেয়নি। এতে করে অনেক দেরিতে দুর্যোগ প্রস্তুতির তোড়জোড় চলছে, যখন দেশের বিরাট অংশ বন্যায় প্লাবিত হয়েই গেছে। প্রসঙ্গত দৈনিক ইনকিলাবে অনেক আগে থেকেই সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ সূত্রের সতর্কতার বরাত দিয়ে দেশে এবার বড় ধরনের বন্যার ঝুঁকির বিষয়টি একাধিকবার তুলে ধরেছে। এমনকি ঢল-বানের পানি ধেয়ে আসার আগেই উজানভাগে (বিশেষত সাব-হিমালয়ান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে) অবিরাম অত্যধিক বর্ষণের কারণে ‘রেড অ্যালাার্ট’ জারি থাকার মানচিত্র সমেত প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এদিকে বৈশ্বিক বন্যা পূর্বাভাস প্রদানকারী আন্তর্জাতিক দুইটি সংস্থা জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়ক কার্যালয় (ইউএনআরসিও) এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের যৌথ গবেষণাকেন্দ্র (জেআরসি) গত ১০ আগস্ট সতর্কবার্তা প্রকাশ করে জানায়, বাংলাদেশ, ভারত, চীন, ভূটান ও নেপালে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার উজানে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে গড়াতে থাকবে। যা ২শ’ বছরেরও বেশিকালের বন্যার মাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ইউরোপের পূর্বাভাস সংস্থা ইসিএমডবিøউএফ বলেছে, আগামী ১০ দিনে হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারত ও বাংলাদেশ প্রান্তে পানি বৃদ্ধি পাবে। দেশের পানি বিশেষজ্ঞ সূত্রগুলোও ইনকিলাবকে জানায়, আগামী ১৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনটি অববাহিকায় অধিকাংশ মূল নদী, শাখা ও উপনদীগুলোতে পানি ক্রমাগত বেড়ে যেতে পারে। এর পরবর্তী সময়েও বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। চলমান বন্যা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে গতকাল চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জলবায়ু ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. মোঃ রিয়াজ আখতার মল্লিক ইনকিলাবকে জানিয়েছেন, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা ও মেঘনা এই তিন অববাহিকায় একযোগে পানি বৃদ্ধি উদ্বেগজনক। দেশে সচরাচর ১০ বছর অন্তর বড় ধরনের বন্যা সংঘটিত হয়েছে অতীত থেকে। বর্তমানে দেশের উত্তরাঞ্চল এবং বৃহত্তর সিলেটে বন্যার যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে তা আগামী কিছুদিনের মধ্যে আরও অবনতির দিকেই যেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, বাংলাদেশের উজানভাগের তিনটি অববাহিকাতেই (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা) পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশে গড়ে ৩২ সেন্টিমিটার এবং বাংলাদেশের অংশে ৪৭ সেমি, গঙ্গা-পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশে ১১ সেমি ও বাংলাদেশ অংশে ২২ সেমি এবং মেঘনা অববাহিকায় অবস্থিত সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি ১০ সেমি করে বৃদ্ধি পায়। আগামী ৬ ঘণ্টায় যমুনা নদী বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানির সমতল অতিক্রম করবে এবং চিলমারী পয়েন্টে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করবে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র নদ এবং অপরাপর নদীগুলোতে অব্যাহত পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটতে থাকবে । গঙ্গা-পদ্মা নদীর অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এই অববাহিকায় উজানে নেপালে ও বিহারে বন্যা পরিস্থিতির অবনতির কারণে দেশে অর্থাৎ ভাটির দিকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। আর মেঘনা অববাহিকায় সুরমা- কুশিয়ারার বন্যা পরিস্থিতি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অবনতির দিকে ধাবিত হবে।
বন্যা ও নদ-নদী প্রবাহের পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনার ভারতীয় অংশে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টায় গড়ে ২০-২৫ সেমি পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশ অংশে আগামী ৭২ ঘণ্টায় ৪৫ সেমি পর্যন্ত পানি বাড়তে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। মেঘনা অববাহিকায় সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘন্টায় স্থিতিশীল থেকে পরবর্তীতে হ্রাস পেতে পারে।
এদিকে দেশের প্রধান নদ-নদীর তিনটি মূল অববাহিকা যমুনা-ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা-পদ্মা ও মেঘনায় একযোগে পানি বৃদ্ধির কারণে দেশে ব্যাপক আকারে বন্যার আলামত ফুটে উঠেছে। বন্যা গ্রাস করেছে দেশের উত্তরাঞ্চল, ঢাকার আশপাশসহ মধ্যাঞ্চল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে। সেই সাথে বন্যাজনিত নদীভাঙন ফের বেড়ে গেছে। গতকাল সর্বশেষ নদ-নদী প্রবাহ পরিস্থিতি ও বন্যার পূর্বাভাসে জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে। গঙ্গা-পদ্মায় পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ৭২ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। আর বৃহত্তর সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদীর পানি বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকবে।
গতকাল উল্লেখযোগ্য নদ-নদীসমূহের বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহের সর্বশেষ অবস্থান ছিল- নতুন করে পানি দ্রæতবেগে বৃদ্ধি পাওয়া পদ্মা নদী গোয়ালন্দ পয়েন্টে ২৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তাছাড়া গঙ্গা ও পদ্মা নদীর পানি সবক’টি পয়েন্টেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। ভারতে উজানে গঙ্গায় ফারাক্কার বাঁধ খুলে দেয়ার কারণে ভাটিতে পদ্মা ফুলে-ফুঁসে উঠছে। প্রধান অববাহিকায় ব্রহ্মপুত্র নদ কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী পয়েন্টে পানি আরও ভয়ানক মাত্রায় বেড়ে গিয়ে বিপদসীমার ৮০ সেমি উপরে এবং নুনখাওয়া পয়েন্টে পানির সমতল বিপদসীমার ১০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। যমুনা নদে গতকাল ৫টি পয়েন্টেই পানি ব্যাপক আকারে বেড়ে গেছে। এরমধ্যে বাহাদুরাবাদে বিপদসীমার ১২৮ সেমি উপরে, সারিয়াকান্দিতে ৯৮ সেমি উপরে, কাজীপুরে ১১৩ সেমি, সিরাজগঞ্জে ১০৭ সেমি ও এমনকি ভাটিতে আরিচায় ৮ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। উত্তরের অন্যতম নদী তিস্তা নীলফামারী জেলার ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৪০ সেমি নিচে নেমে গেছে। তবে উত্তর জনপদের ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রামে বিপদসীমার ১২৩ সেমি উপরে, বদরগঞ্জে যমুনেশ্বরী আরেও বেড়ে গিয়ে ১৩০ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। উত্তর জনপদের সাথে দেশের মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃত হওয়ায় ঢাকা বিভাগের টাঙ্গাইলের এলাসিনঘাটে ধলেশ্বরী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার ৪৫ সেমি উপরে, আত্রাই নদী বাঘাবাড়িতে ২৩ সেমি উপরে, লাক্ষ্যা নদী ৬ সেমি উপরে এবং সিংরায় গুর নদী ১২ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।
অন্যদিকে গঙ্গা-পদ্মার অববাহিকায় অব্যাহত পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মা নদী ভাটিতে গোয়ালন্দে বিপদসীমার ২৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তাছাড়া পদ্মা ভাগ্যকুল ও সুরেশ্বর পয়েন্টেও পানি বেড়ে বিপদসীমার কাছাকাছি ধাবিত হচ্ছে। এই অববাহিকায় দিনাজপুরে পুনর্বভা নদী বিপদসীমার ৭৫ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছে। একইভাবে বিপদসীমা অতিক্রম করেছে ইছ-যমুনা, টাঙ্গন, আপার-আত্রাই, টাঙ্গন, ছোট যমুনা ও আত্রাই নদীগুলোও।
দেশের উত্তর-পূর্বে তথা বৃহত্তর সিলেট অঞ্চলের সুরমা ও কুশিয়ারা উভয় নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। গতকাল সুরমা নদী কানাইঘাটে বিপদসীমার ৯৬ সেমি, সিলেটে ৩৯ সেমি এবং সুনামগঞ্জে ৯৪ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। কুশিয়ারা নদীর পানিও আর বৃদ্ধির ফলে অমলশীদে ৮৩ সেমি, শেওলায় ৭১ সেমি এবং শেরপুর-সিলেট পয়েন্টে নতুন করে ৮ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। কংস নদী নেত্রকোণা জেলার জারিয়াজঞ্জাইল পয়েন্টে পানি রেড অ্যালার্টের পর্যায়ে অপরিবর্তিত রয়েছে এবং বিপদসীমার ১৭৯ সেমি উপরে প্রবাহিত হচ্ছিল।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, মেঘনা এবং পদ্মা-গঙ্গা অববাহিকার উজানভাগ থেকে ক্রমাগত অধিক হারে পানি নামছে ভাটিতে বাংলাদেশের দিকে। সাব-হিমালয় অঞ্চল, চীন তিব্বত, নেপাল, ভূটান, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিম এবং আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে দুই সপ্তহা ধরে অব্যাহত অতিবৃষ্টি এখন কিছুটা কমলেও উজান অববাহিকার পানি ধেয়ে আসছে। এতে করে দেশে সার্বিক বন্যার অবনতি এবং বিস্তৃতি ঘটছে।
মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে জানায়, ভারত থেকে প্রবল বেগে ধেয়ে আসা পানির তোড়ে বগুড়ায় বন্যা ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। গতকাল যমুনা নদীর সারিয়াকান্দি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে যা এ যাবৎ কালের সর্বোচ্চ। ভারত গজল ডোবায় তিস্তা ব্যারেজের সবগুলো গেট খুলে দেয়ার পর থেকেই যমুনার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতিরিক্ত পানির চাপে সারিয়াকান্দি উপজেলার চন্দনবাইশায় পুরাতন বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধে ভাঙ্গন ধরেছে। পানিবন্দি এলাকার মানুষ যমুনা নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিচ্ছে। এসব মানুষের জন্য বিশুদ্ধ খাবার পানি, স্বাস্থ্য সম্মত টয়লেট ও ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।
মাহফুজ হক আনার দিনাজপুর থেকে জানান, দিনাজপুরের সাথে ঢাকাসহ সমগ্র দেশের সাথে রেল ও সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। গত দুই দশকে ১৯৮৮ সালের স্মরণাতীতকালের বন্যায় দিনাজপুর শহর প্লাবিত হলেও এবারের বন্যা আরো ভয়াবহ রুপ ধারন করেছে। দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ৯০ শতাংশ এলাকা পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে গত তিন দিন যাবত। রোববার ও গতকাল দুদিন বন্যায় ৪ শিশুসহ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। পূণর্ভবা নদীর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় ২৫ বছরের এক অজ্ঞাতনামা যুবক এবং বাঙ্গীবেচা ঘাটে এক শিশু নদীতে ডুবে মারা যান।
এদিকে দিনাজপুরের কাউগাঁও পয়েন্টে রেল লাইনের মাটি সরে গিয়ে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। আমবাড়ীতে একটি সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় সড়ক পথেও ঢাকার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। রেললাইনের কয়েক’শ গজ দুরেই গাবুড়া নদীর বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় রেল লাইন মেরামত অত্যন্ত কঠিন বলে জানিয়েছেন রেলের এক কর্মকর্তা। পানি না কমা পর্যন্ত রেলযোগাযোগ পুনঃস্থাপন করা অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে।
মোঃ আইয়ুব আলী বসুনীয়া লালমনিরহাট থেকে জানান, লালমনিরহাট জেলার পানির চাপে তিস্তা ব্যারাজের পাশে ভেঙে গেছে ফ্লাড বাইপাস ও রেলপথ। বন্ধ হয়ে গেছে দুই শতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বুড়িমারী স্থল বন্দর। তিস্তা ব্যারাজ এলাকায় রেড এলাট জারি, তীব্র খাবার সংকট। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫ লক্ষাধিক মানুষ। দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারাজ ও বুড়িমারী-ঢাকা মহাসড়ক ও রেলপথ হুমকির মুখে পড়েছে। পানিবন্দি এলাকা গুলোতে বিশুদ্ধ পানি ও খাবার সংকট দেখা দিয়েছে। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পশ্চিম অঞ্চলের রেল যোগাযোগ। বুড়িমারী-ঢাকা রেলপথ ও মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। জেলার কয়েক শতাধিক মৎস্য খামার ভেসে গেছে।
শফিকুল ইসলাম বেবু, কুড়িগ্রাম থেকে জানান, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৩২ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এছাড়া ব্রহ্মপূত্র নদের পানি বিপদসীমার ৬৮সে.মিটার ও নুনখাওয়ায় দুধকুমর নদীর পানি বিপদসীমার ৫ সে.মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভয়াবহ বন্যা দুর্ভোগে পড়েছে প্রায় ৪ লাখ বানভাসী মানুষ। এদিকে কুড়িগ্রাম-তিস্তা রেলপথে টগরাইহাট নামক এলাকার বড়পুল ব্রীজের (১৭ জে/ ৪৫৫-০২) সেতুর গার্ডার ডেবে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সাথে দেশের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম-নাগেশ^রী-ভুরুঙ্গামারী-ফুলবাড়ী মহাসড়কে ধরলা নদীর স্রোতে ৪টি স্থানে সড়ক ছিঁড়ে যাওয়ায় এই তিন উপজেলার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্যায় ৩ শতাধিক শেল্টার ছাড়াও বিভিন্ন রাস্তায় ও খোলা স্থানে আশ্রিত পরিবারগুলো খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও লেট্রিন সমস্যার কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে। কুড়িগ্রামে পানিতে ডুবে আরো ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ নিয়ে চলতি বন্যায় জেলায় মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়াল ১২ জনে।
সুনামগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপরে সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ৫টি উপজেলার দুই লক্ষাধিক মানুষ। ভেসে গেছে ৪ শতাধিক মাছের খামার ও পুকুর। গত বন্যার পানিতে ডুবে জেলার দোয়ারাবাচা উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের আজবপুর গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে মৃদুল মিয়া (৪) নামের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। জেলায় ৪ হাজার ৮৩৫ হেক্টর রোপনকৃত রোপানা আমন ও ৭৯৫ হেক্টর বীজতলা তলিয়ে গেছে।
আতাউর রহমান আজাদ, টাঙ্গাইল থেকে জানান, , টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ এলাকায় যমুনা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে ৪টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে বিস্তির্ণ ফসলি জমি, বাড়ি-ঘর। দুর্গত এলাকার মানুষগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাচ্ছে।
গাইবান্ধা জেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধায় গতকালপর্যন্ত তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৭৮ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। অপরদিকে ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহর পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৪ সে.মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গাইবান্ধায় ২৬টি ইউনিয়নের ৩৪ হাজার ৯৫৬টি পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। এদিকে শহর রক্ষা বাঁধের খোলাহাটি, চকমামরোজপুরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। এছাড়া সুন্দরগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানির স্রোতে সুন্দরগঞ্জ-পঞ্চনন্দ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ওই এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত হওয়ায় ১০৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
মোশাররফ হোসেন বুলু, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা) থেকে জানান, টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার ৭ ইউনিয়নের চরাঞ্চলসহ নতুন করে ১০ ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। তিস্তা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ৩ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায় বন্যায় ১ হাজার ৯’শ হেক্টর আমন ধান, ১৬৭ হেক্টর শাক সবজি, ১৩১ হেক্টর বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
ফুলছড়ি (গাইবান্ধা) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার গতকাল ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ির তিস্তামুখ ঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পাউবো সূত্রে জানা যায়। অবিরাম বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে পানির চাপ বাড়তে থাকায় ব্রহ্মপুত্র নদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বেশ কিছু পয়েন্ট মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুকিপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে সেনাবাহিনীর তদারকিতে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চলছে।
পীরগাছা (রংপুর) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, রংপুরের পীরগাছায় তিস্তার ভাঙনসহ বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আরো নতুন নতুন এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে। ফলে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের ৪০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা দূর্গত এলাকায় এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। উপজেলার একমাত্র শিবদেব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি তিস্তার ভাঙ্গনে বিলীন হওয়ার পথে। বন্যা দূর্গত এলাকার ৬০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যায় এক হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন চারা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। হুমকির মুখে তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধের পীরগাছা পয়েন্টে বাঁধের তিন কিলোমিটার অংশ।
ছাতক (সুনামগঞ্জ) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, ছাতকে দু’লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। গতকাল সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কসহ উপজেলার ১৩ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার সর্বত্র বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সড়ক যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়ে দেখা দিয়েছে। সুরমা নদীসহ সবগুলো নদ-নদীর পানি বিপদ সীমার প্রায় ১০০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছ্।ে এসব পানিবন্দি মানুষের জন্য এখনো সরকারি-বেসরকারী ত্রান সামগ্রী বিতরণ করার খবর পাওয়া যায়নি। খোলা হয়নি কোন আশ্রয় কেন্দ্র। এতে উপজেলা প্রায় ১০হাজার হেক্টর রোপা আমন ভূমির বুনা ফসল ও চারা একেবাইে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
আবুল কালাম আজাদ, বালাগঞ্জ (সিলেট) থেকে জানান, সিলেটের বালাগঞ্জে অতিবৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে কুশিয়ারার ও বড়ভাগা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলোসহ উপজেলার নিন্মাঞ্চলের গ্রাম বন্যায় আবারও প্লাাবিত হয়েছে। নতুন করে রোপন করা হালি তলাও নিয়ে গেছে বন্যার পানি। । কুশিয়ারা ডাইক ও নতুন বীজতলার ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে জানা যায়। কুশিয়ারা ডাইকের (বাঁধ) অবস্থাও করুন বলে জানান উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান।
বিশ্বনাথ (সিলেট) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বিপদসীমা অতিক্রম করেছে সিলেটের সুরমা নদীসহ উপজেলার সবকটি নদীর পানি। অপর দিকে উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নের সুরমা নদীর পানি নদী পাড়ের গ্রাম ও ফসলি জমিতে প্রবেশ করেছে। এভাবে বৃষ্টি ও ঢল অব্যাহত থাকলে পুরো উপজেলায় বন্যা হওয়ার আশংকা করা হচ্ছে।

 



 

Show all comments
  • তারেক মাহমুদ ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ২:০১ এএম says : 0
    আসুন আমরা সবাই বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াই
    Total Reply(0) Reply
  • Md Shahossain ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০৩ পিএম says : 0
    আমি অসনি সংকেত বলতে নারাজ।আমাদের জন্য সতর্ক্য সংকেত আল্লাহর পক্খ্য থেকে।তোমরা তওবা কর আত্ব্যসমর্পন কর আল্লাহর কাছে।আসমানি এবং বালায়ি আজাব গজব থেকে নাজাতের জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • محمد نورالله ১৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:১৬ পিএম says : 0
    আমার দু:খিনি বাংলা এমন একটি দেশ এখনও যেখানে স্বতন্ত্র কোন কালচার, রাজনীতিক শিষ্টাচার কল্যাণকর জাতীয় ঐক্যের পরিবেশ তৈরি হয় নি। বেঁচে থাকার জন্য যতটুকু উপকরণ তা ইসলামেরই দান। ইসলাম না থাকলে সমাজব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে যেতো। বিশৃঙ্খলা রোধ করার কারও ক্ষমতা ছিলো না। আজ বন্যার শিকার কোটি কোটি মানুষ। গরিবের খরের ঘর ভেসে যাচ্ছে দেখে কেউ হয়তো হাসছেন। উপরে বসে এই হাসি ভালো নয়। আমাদের রাজনীতিকগণ যা করছেন তাও সবাই দেকছি। উনারা দেশ বিদেশ ঘুরেন। ভালো তুলনা করতে পারবেন। এই অব্যবস্থাপনা, অনৈক্যের শিকল ছিঁড়ে আমাদের বের হওয়ার সম্ভাবনা কি তৈরি করে দিবেন না হাসবেন???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বন্যা

১৫ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ