পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পঞ্চায়েত হাবিব : টানা বৃষ্টি আর উজানের ঢলে ফুঁসে উঠেছে পদ্মা, যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র। দ্বিতীয়বারের মতো বন্যা দেখা দিয়েছে দেশের উত্তর এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলে। শুধু পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রই নয়, এর শাখা নদ-নদীগুলোর পানিও উপচে পড়েছে আশপাশের এলাকাগুলোতে। ব্রম্মপুত্র নদের পানি বিপদ সীমার ৭৭ সেঃ মিটার উপর এবং ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি সামান্য কমলেও এখনো বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এসব নদী পানি ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পযন্ত বাড়ার পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।
দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গুলো রয়েছে তার বর্তমান অবস্থানের চেয়ে বাঁধ গুলোর উচ্চতা আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এবং বাধ গুলো সঠিকভাবে মোরামত ও সংস্কার সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়ার দাবি দেশের নদী ও পানি বিশেষজ্ঞদের।
এদিকে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে আছে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। ইতিমধ্যে ত্রাণ মন্ত্রণালয় পানি উন্নয়ন বোর্র্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ছুটি বাতিল করা হয়েছে। আজও ছুটির দিনে তাঁরা অফিস করছেন। এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ নীলফামারীর সৈয়দপুরের বন্যা কবলিত এলাকা ও ভেঙ্গে যাওয়া শহররক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেছেন। তার পর অনেক জেলায় পানি উন্নয়ন বোরের্ডর কর্মকতাদের দেথা যায়নি বলে জানাগেছে।
গত সোমবার তাদের তথ্য অনুযায়ী, পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্রসহ দেশের ২০টি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নেত্রকোনায় জারিয়াজঞ্জাইলে কংস নদের পানি বিপৎসীমার সবচেয়ে বেশি ১৮১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। বড় নদ-নদীগুলোর মধ্যে সিরাজগঞ্জে বাহাদুরাবাদে যমুনার পানি ১১৮ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ১০০ সেন্টিমিটার, কুড়িগ্রামে চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র ১১৮ সেন্টিমিটার ওপরে প্রবাহিত হচ্ছে। গোয়ালন্দে পদ্মার পানি বয়ে যাচ্ছে বিপৎসীমার ১৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে। এ ছাড়া কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি ১৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। এছাড়া সিলেটে কানাইঘাটে সুরমা নদীর ছিল বিপৎসীমার ৯৭ সেন্টিমিটার ওপরে। আর অমলশীদে কুশিয়ারার পানি ছিল বিপৎসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপরে। এই দুটি নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগের যত বন্য হয়েছে সেই বন্যায় রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে।এ বছরের বন্যার পানি দেশের অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তিস্তা-ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অতীতের ১৯৮৮ ও ৯৮ সালের রেকর্ডে চেয়েও তিনগুন বেশি। আগামী ৭২ ঘণ্টায় বন্যা কমার সম্ভাবনা নেই। এসব নদী পানি ৪৫ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার পযন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এই অবস্থা দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রক্ষপুত্র-যমুনা অববাহিকায় বন্যা অপরিবর্তিত থাকবে। সোমবার বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে এ তথ্য জানান। দেশে নদ-নদীর পানি বাড়ার প্রবণতা অব্যাহত রয়েছে। এখনো ৬০টি পয়েন্টে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এর মধ্যে ২৭টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে দেশে বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত ইনকিলাবকে বলেন, এবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ইতিমধ্যে ভয়াবহ বন্যা শুরু হয়ে গেছে। বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালের চেয়ে বড় ও ভয়াবহ বন্যা হতে পারে। এ জন্য দেশের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ গুলো রয়েছে তার বর্তমান অবস্থানের চেয়ে আরো দ্বিগুণ বৃদ্ধি করতে হবে। এবং বাধ গুলো সঠিকভাবে মোরামত ও সংস্কার করতে হবে তা না করলে যে কোনো সময় বড় ধরনের বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। সম্ভাব্য বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের এখন সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, আগামী ৭২ ঘণ্টায় বন্যা কমার সম্ভাবনা নেই। এই অবস্থা অপরিবর্তিত থাকবে। গতকাল সোমবার দুপুর থেকে বাহাদুরাবাদ পয়েন্টের পানি বিপদসীমার ১২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এত পানি বাংলাদেশে আর কখনো হয়নি এখানে। সাইফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের উজানের অববাহিকায় (গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র এবং মেঘনা) নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিগত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর ভারতীয় অংশে গড়ে ৩২ সেন্টিমিটার ও বাংলাদেশের অংশে ৪৭ সেন্টিমিটার গঙ্গা-পদ্মা নদীর ভারতীয় অংশে ১১ সেন্টিমিটার ও বাংলাদেশের অংশে ২২ সেন্টিমিটার এবং মেঘনা অববাহিকায় সুরমা-কশিয়ারা নদীর পানি ১০ সেন্টিমিটার করে বাড়ছে। নেপাল এবং বিহারের পানি বাংলাদেশের উপর দিয়েই প্রবাহিত হয়। ব্রহ্মপুত্র-যমুনার বাংলাদেশ অংশে গত ২৪ ঘণ্টায় পানি বৃদ্ধির হার গড়ে ৪৭ সেন্টিমিটার। ফলে নুন খাওয়া, চিলমারী, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি এবং সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে গতকাল সকাল ৯টায় বিপদসীমার যথাক্রমে ৭৩, ১১৮, ৯০ এবং ৯৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় এই নদীর পানি ৪০ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। এর জন্য দেশের উত্তরাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকার বন্যা পরিস্থিতি অবনতিশীল থাকবে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও তা বর্তমানে বিপদসীমার ১.২৫ থেকে ১.৭৫ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই অববাহিকার উজানে নেপালে ও বিহারে বন্যা পরিস্থিতি থাকার ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্তীকরণ পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, গত চার থেকে পাঁচ দিন থেকে ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা অববাহিকায় পানি বৃদ্ধির ফলে উত্তরের এবং উত্তর- পূর্বের নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি অবনতিশীল রয়েছে এবং এই বন্যা পরিস্থিতি মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণ-মধ্যাঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করতে পারে। গঙ্গা অববাহিকার পানি বৃদ্ধি পেলেও তা বিপদসীমার বেশ নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যাঞ্চলের ঢাকার চতুর্দিকের পাঁচটি নদীর পানি বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার থেকে ১৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই নদীগুলোতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে, তবে আগামী ৭২ ঘণ্টায় বিপদসীমা অতিক্রম করার সম্ভাবনা নেই। এই বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ড সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানিয়েছে। গত কয়েক দিন ধরেই দেশের প্রধান প্রধান নদনদী বইছে বিপদসীমার ওপরে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। দিনাজপুরে পানিতে ডুবে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে বেশ কিছু শহরে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, দেশের প্রধান প্রধান নদনদী ২৭টি পয়েন্টে বইছে বিপদসীমার উপরে। আগামী ৭২ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় সুরমা-কুশিয়ারার পানি বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে। জামালপুরের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা বিপদসীমার ১১৮ সেন্টিমিটার, কাজীপুরে ১০০ সেন্টিমিটার, গাইবান্ধার বদরগঞ্জে যমুনাশ্বরী ১২৬ সেন্টেমিটার, সুরমা নদী সুনামগঞ্জে ৯১ সেন্টিমিটার, গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। বিপদসীমা সবচেয়ে বেশি অতিক্রম করেছে কংস। নেত্রকোণার জারিজঞ্জাইল পয়েন্টে এই নদী বইছে বিপদসীমার ১৮১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (বাপাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, তিস্তা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট দিয়ে পানি বিপৎসীমার ১৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এই পয়েন্টে গত একদিনে ১৯ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।