পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : এই মামলায় উপস্থিত সব আইনজীবী অর্থাৎ বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল, বিজ্ঞ অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল, বিবাদী পক্ষের বিজ্ঞ কাউন্সেল এবং আদালত বান্ধব সকলেই স্বীকার করেছেন যে, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা হচ্ছে সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। এ সত্যটি ৫ম, ৮ম ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা পাসের ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণেও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটি সৌভাগ্যের বিষয়, স্বাধীন বিচার বিভাগের অস্তিত্ব যে গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয় পূর্বশর্ত এই প্রপোজিশনের ব্যাপারে কোনো পক্ষেরই কোনো মতপার্থক্য ছিল না অথবা আমাদের সংবিধানের অন্যতম মৌলিক বৈশিষ্ট্য যে স্বাধীন বিচার বিভাগ এই প্রপোজিশনের ব্যাপারে কোনো মতপার্থক্য ছিল না। পঞ্চদশ সংশোধনীতে সংবিধানের ৭খ অনুচ্ছেদ প্রবর্তন করে জাতীয় সংসদ আমাদের সংবিধানকে আরো কঠোর করেছে। এতে বলা হয়, ‘সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধনযোগ্য নয় : [৭খ।সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনো পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।]’
সংসদের সংবিধান সংশোধনের ক্ষমতার ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য এবং সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। প্রকৃতপক্ষে বিরোধপূর্ণ সংশোধন এবং প্রস্তাবিত বিলটি বিচার বিভাগে এমন একটি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে যে, বর্ণিত সংশোধনী ও বিলটি আইনে পরিণত হলে বিচারকরা শপথ মাফিক তাদের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল এই আদালতে তার আর্জি পেশকালে বলেন, খসড়া বিলটি আইন নয়। আর্জিতে তিনি বলেন, সংবিধানের ৯৬(৩) ধারা মোতাবেক (আইনসভা বা সংসদ) তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল অনুরূপ প্রধান বিচারপতি ও দুইজন সিনিয়র বিচারককে নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির বিধান প্রদানে আইন তৈরি করতে পারবে। তবে রিট বিবাদিদের পক্ষে পেশ করা Affidavit-in-opposition--এ আমরা তেমন কোনো বিবৃতি দেখতে পাইনি। এ ধরনের আর্জি পেশ করে বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল প্রকারান্তরে প্রস্তাবিত বিলের বিধানাবলিতে বিচার বিভাগের উদ্বেগের কথা অস্বীকার করেননি। রিটের বিবাদীরা তাদের Affidavit-in-opposition-এ এমন কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য দেননি যাতে আশ্বাস পাওয়া যায় তাদের পেশ করা বিল অনুযায়ী আইনটি জারি করা হবে না। তাছাড়া সংবিধানিক নিরাপত্তা প্রত্যাহারকারী এ ধরনের পদ্ধতিগত আইন বিচার বিভাগের স্বাধীনতার সুরক্ষা দেবে কি না সেটি একটি গুরুতর উদ্বেগের বিষয়। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীতে আইনসভা সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের চাকরির বয়সসীমার কঠোর সুরক্ষা প্রদান করে। এতে প্রধান বিচারপতি এবং পরবর্তী দুইজন সিনিয়র বিচারককে নিয়ে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে সাংবিধানিক নিশ্চয়তা বিধান করা হয়। ষোড়শ সংশোধনীতে এই গ্যারান্টি বা নিশ্চয়তা প্রত্যাহার করে নেয়া হয়।
বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল আর্জিতে পেশ করেন, স্বাধীনতার ঘোষণায় বলা হয়েছে : বাংলাদেশের জনগণ তাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী কার্যক্রমের মাধ্যমে বাংলাদেশের ওপর তাদের কার্যকর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। অপরদিকে, সংবিধানের প্রস্তাবনায় ঘোষণা করা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা ঘোষণা করছে এবং এই সংবিধানের রক্ষা, সমর্থন, নিরাপত্তা বিধান ও এর শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখা আমাদের পবিত্র কর্তব্য। তিনি বলেন, সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭-এর দফা (১)-এ বলা হয়েছে : প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ; এবং জনগণের পক্ষে সেই ক্ষমতার প্রয়োগ কেবল এই সংবিধানের অধীন ও কর্তৃত্বে কার্যকর হইবে৷ অনুচ্ছেদ ৭(২)-এ বলা হয়, জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোনো আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসামঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে।
সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হইবে একটি গণতন্ত্র; আর তাই আমাদের বিচার বিভাগকে জনগণের কাছে জবাবদিহি থাকতে হবে। তিনি (বিজ্ঞ অ্যাটর্নি জেনারেল) যুক্তি পেশ করেন যে, বিচারকদের অপসারণ পদ্ধতি জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে সংবিধানের মাধ্যমে করা যেতে পারে। আর তাই বিতর্কিত সংশোধনীটিকে সংবিধান পরিপন্থী বলা যায় না।
৮ম সংশোধনী মামলার পর্যবেক্ষণে বিচারপতি বি এইচ চৌধুরী, বলেন, ‘প্রজাতন্ত্রের সর্বময় ক্ষমতা জণগণের। এটাই জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার ধারণা। এটি স্বাধীনতা ঘোষণার শব্দ ব্যঞ্জনার প্রতিধ্বনি। স্বাধীনতা ঘোষণায় বলা হয়েছে : ‘সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বাংলাদেশের জনগণ নির্বাচিত প্রতিনিধিদের প্রতি যে ম্যান্ডেট দিয়েছেন সে ম্যান্ডেট মোতাবেক....।’ উক্ত পর্যবেক্ষণে আরো বলা হয়, আমাদের সংবিধান শুধুমাত্র একটি নিয়ন্ত্রিত সংবিধান নয় বরং এতে সংসদের আইনগত ক্ষমতা এমনভাবে সীমিত করা হয়েছে যে, এর কোনো একটি পাটাতন সরিয়ে নিলে পুরো কাঠামোই ভেঙে পড়বে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।