Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ০২ জুলাই ২০২৪, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ২৫ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

চট্টগ্রামে জোট-মহাজোটের রাজনীতিতে টানাপড়েন

| প্রকাশের সময় : ১৪ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রফিকুল ইসলাম সেলিম ; চট্টগ্রামে জোট-মহাজোটের রাজনীতিতে চলছে টানাপোড়েন। জোটের প্রধান দলের সাথে শরিকদলের দূরত্ব বেড়েই চলছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সকলে ব্যস্ত নিজ নিজ দল গোছাতে। বড় দলের পাশাপাশি শরিক দলেও শুরু হয়েছে নির্বাচনী তোড়জোড়। নির্বাচন প্রস্তুতির এই চলমান রাজনীতিতেও নেই জোটভিত্তিক কোন তৎপরতা ।
সরকারী দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মহাজোটের শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন না করার অভিযোগ রয়েছে। আবার শরিকদল থেকে যারা মন্ত্রী-এমপি হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধেও পাল্টা অভিযোগ আছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। মূলত ‘ক্ষমতা উপভোগ’ করা নিয়ে বিরোধের জেরে মহাজোটের বন্ধন শিথিল হয়ে পড়েছে।
মাঠের বিরোধী দল বিএনপির বিরুদ্ধেও জোটের শরিকদের দূরে ঢেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলের সর্বশেষ সভা কবে হয়েছে জোটের নেতারাও মনে করতে পারছেন না। তবে নেতারা বলছেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে এক টেবিলে বসা না হলে পারিবারিক ও সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে শরিক দলের নেতাদের মধ্যে দেখা সাক্ষাত হচ্ছে। শরিক দলের সাথে বিএনপির বন্ধন অটুট রয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, রাজনীতির কেন্দ্র রাজধানী ঢাকায় হলেও জোটবদ্ধ রাজনীতির সূচনা চট্টগ্রাম থেকেই। বিভিন্ন ইস্যুতে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া জোটবদ্ধ আন্দোলন ঢাকায় জোট-মহাজোটের রাজনীতিতে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যে মহাজোট তার গোড়াপত্তন হয় চট্টগ্রামে।
বিগত ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসলে বিভিন্ন ইস্যুতে রাজপথে সরব হন চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। তিনি আওয়ামী লীগের সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোকে এককাতারে এনে মাঠে নামান। মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া জোটবদ্ধ আন্দোলন পরবর্তীতে প্রথমে চৌদ্দ দলীয় জোট এবং পরে মহাজোটে রূপ নেয়।
অন্যদিকে বিএনপির নেতৃত্বে যে চারদলীয় জোটের রাজনীতি তার সূচনাও চট্টগ্রামে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে নানা ইস্যুতে চট্টগ্রামে মাঠ গরম করেন তৎকালীন নগর বিএনপির সভাপতি মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে বিশেষ করে পার্বত্য শান্তি চুক্তিকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রামে জাতীয়তাবাদি ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী রাজনৈতিক দলগুলোর যে জোটবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয় তা পরবর্তীতে প্রথমে ৭ দলীয়, পরে ৪ দলীয় এবং সর্বশেষ বিশ দলীয় জোটে রূপ নেয়।
জোটবদ্ধ রাজনীতির সূচনা যে চট্টগ্রামে সেখানেই এখন জোট-মহাজোটের বন্ধন অতীতের যেকোন সময়ের তুলনায় শিথিল। মহাজোটের শরীক জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সম্প্রতি চট্টগ্রাম সফরকালে বলেছেন জাতীয় পার্টি মহাজোটে নেই। ‘নামমাত্র’ হলেও জাতীয় পার্টি বিরোধী দলে। গেল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে চট্টগ্রামের দুটি আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। ওই আসন থেকে নির্বাচিত দুই জনের একজন মন্ত্রীসভার সদস্য হন। জাতীয় পার্টির ওই দুই নেতার বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাদের সম্পৃক্ত না করার অভিযোগ করেন। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতিকে মহাজোটের অন্য শরিক জাসদ নেতা মইনুদ্দিন খান বাদল এমপি হন চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও-বোয়ালখালী আসন থেকে। ফটিকছড়ি থেকে এমপি হন তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর ভান্ডারী। এই দুজনের বিরুদ্ধেও আওয়ামী লীগের নেতাদের অভিযোগের শেষ নেই।
আবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধেও অন্য শরিক দলগুলোর নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়নের অভিযোগ আছে। এনিয়ে মান অভিমানও চলছে নেতাদের মধ্যে। কয়েকজন নেতা সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের বিরুদ্ধেও শরিক দলের নেতাদের সাথে দূরত্ব বজায় রাখার অভিযোগ করেন। মহিউদ্দিন চৌধুরী মেয়র থাকাকালে যেভাবে নগরীর বিভিন্ন কর্মকান্ডে শরীক দলের নেতাদের সম্পৃক্ত করেছেন বর্তমান মেয়র তা থেকে এখনও অনেক দূরে। সম্প্রতি চৌদ্দ দলের একসভায় নগরীতে পানিবদ্ধতা, যানজটসহ নাগরিক জীবনে বিভিন্ন দুর্ভোগ নিয়ে চৌদ্দ দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আর মহিউদ্দিন চৌধুরীও নাগরিক দুর্ভোগ লাঘবে সেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতায় তাদের উপর চাপ সৃষ্টি করতে বলেন।
টানাপোড়েন আর নেতাদের মধ্যে মান-অভিমানের মধ্যেও চৌদ্দ দলের সমন্বয়ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের নেতাদের সাথে বসছেন। নিয়মিত না হলেও তার সাথে নেতাদের বৈঠক হচ্ছে। দলের নেতাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আওয়ামী লীগের মতো জাতীয় পার্টি, জাসদ, তরিকত ফেডারেশন, ওয়ার্কার্স পার্টিসহ অন্য দলগুলোও নিজেদের মতো করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এদিকে মাঠের বিরোধীদল বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিশ দলীয় জোটের বন্ধনও এখন শিথিল। রাজপথে বিএনপির সরকার বিরোধী কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি নেই দীর্ঘদিন থেকে। বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র থেকে কর্মসূচি দেওয়া হলেও তা পালিত হচ্ছে দলীয়ভাবে। আর এই কারণে রাস্তায় বিশ দলের নেতাদের একসাথে দেখাও যায় না। জাতীয় কাউন্সিলের পর চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা হয়। চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপিরও কমিটি গঠনের প্রক্রিয়াও চলছে। ঘরগোছানোর পাশাপাশি বিএনপিতে চলছে নির্বাচনের প্রস্তুতি। ফলে জোটের শরিকদের সাথে বিএনপির কোন কর্মসূচি নেই। দীর্ঘদিন জোটের নেতাদের কোন বৈঠকও হয়নি।
বিশ দলের শরিক জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল হয়েছে হাইকোর্টে। তাদের দলীয় প্রতিকও বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। এরপরও জামায়াত ভেতরে ভেতরে নির্বাচনী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জোটের অন্যতম শরিক কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের নেতৃত্বে এলডিপি এবং মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতিকের নেতৃত্বাধীন কল্যাণ পার্টিও বসে নেই। ইসলামী এক্যজোটের নেতারাও তাদের নিজ নিজ এলাকায় নির্বাচনমুখি তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে এলডিপি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট কফিল উদ্দিন চৌধুরী ইনকিলাবকে বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে জোটগত কোন কর্মসূচি নেই অনেক দিন থেকে। এই জন্য আমরাও দলীয়ভাবে কর্মসূচি পালন করছি। নির্বাচনের প্রস্তুতিও চলছে নিজেদের মতো করে। কেন্দ্র থেকে কোন কর্মসূচি দেওয়া হলে অবশ্যই জোটগতভাবে পালন করা হবে। দীর্ঘদিন বৈঠক না হলেও জোটের শরিকদলের নেতাদের সাথে আমাদের যোগাযোগ রয়েছে।
অপরদিকে জোট-মহাজোটের বাইরে থাকা কয়েকটি ইসলামী দলের তৎপরতা রয়েছে চট্টগ্রামে। তাদের মধ্যে এম এ মতিনের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ফ্রন্ট সম্প্রতি এরশাদের নেতৃত্বাধীন একটি জোটে শরিক হওয়ার তোড়জোড় করলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। নামমাত্র কিছুৃ দল ও ব্যক্তিকে নিয়ে নতুন ওই জোট জন্মের পরই হারিয়ে যায়।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ