পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ছাগলনাইয়া থেকে : ফেনী নদীর তীব্র ভাঙনে ছাগলনাইয়া উপজেলার ৫টি গ্রামের হাজার হাজার পরিবার তাদের আশ্রয়স্থল হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। তাদের ঘর বাড়ী, ফসলী জমি, টিউবওয়ের, পুকুর, মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কবরস্থান, মন্দির, নদী রক্ষা বাঁধ কোন কিছুই ভয়াবহ এই ভাঙনের কবল থেকে রেবাই পায়নি। যে কারণে ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে নদীর পাড়ের জনবসতির মানচিত্র। এদিকে ভাঙন প্রতিরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বরাদ্দ না থাকায় এই মুহুর্তে সব স্থান সংস্কার করতে পারছেনা বলে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অভিযোগ। দ্রæত ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কার না করলে যে কোন সময়ে বেঁড়িবাধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে এলাকা প্লাবিত হলে ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে বলে এলাকাবাসীর আশংকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণেই এই ভাঙন সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে ফেনী নদীর ছাগলনাইয়া অংশে বিশাল এলাকা নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, ছাগলনাইয়া উপজেলার জয়পুর, জগন্নাথ সোনাপুর, উত্তর লাঙ্গলমোড়া, দক্ষিণ লাঙ্গলমোড়া ও মুহুরীগঞ্জ এলাকায় নদীতে প্রায় শতাধিক ট্রলারে কাটা ড্রেজার দিয়ে অবৈধভাবে বালু তোলা হচ্ছে। এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বালু উত্তোলনের সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয়রা কিছু বলার সাহস পায় না। কয়েকটি বৈধ ইজারাদার থাকলেও বেশিরভাগ কাটা ডেজারের মালিক অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তম্মধ্যে নিজকুঞ্জরার বশির আহাম্মদ, ফরহাদ নগরের নিজাম, মীরসরাইয়ের মফিজ, জাফর, হুমায়ুন, আলা উদ্দিন, খোকন, সাইফুল, অলিনগরের মাসুদ, নিজাম, জেরু, কাটা পশ্চিম জোয়ারের মিদুল ও স্বপন অন্যতম। ছাগলনাইয়া ও মীরসরাই অঞ্চলের কয়েকটি সিন্ডিকেট বড় বড় কাটার মেশিন দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার ফুট বালু উত্তোলন করছে । এদিকে গত ৯ আগষ্ট ছাগলনাইয়া শুভপুর বালু মহলে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়। শুভপুর বালু মহলের সরকারী ভাবে ইজারা প্রাপ্ত অনুমোদিত অংশের বাইরে অবৈধ বালু উত্তোলনের সাথে জড়িত পলাশ ও টিপুর ১০-১২ টি ড্রেজার মেশিন ধংস করা হয়। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা পালিয়ে যায়। ফেনী নদীর ল্ঙ্গালমোড়া মৌজা ইজারাদার মেসার্স সিদ্দিকী এন্টারপ্রাইজের মালিক আলহাজ্ব জুলফিকুল সিদ্দিকী জানান, ফেনী নদীর ছাগলনাইয়া অংশে রফিকুল হায়দার চৌধুরী জুয়েলের রৌশন এন্টারপ্রাইজ ও নওরিন এন্টারপ্রাইজসহ ৩টি প্রতিষ্ঠান বৈধ ইজারাদার রয়েছে। এদিকে প্রতি বছর বর্ষাকালে পাহাড়ি ঢলে নদীর তীরবর্তী এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে বন্যা এবং পাহাড়ি ঢলে মারাত্মক ভাঙনের কবলে পড়ে প্রতিনিয়ত গৃহহীন হচ্ছে এলাকাবাসী। ফেনী নদীতে স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের দাবীতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ দফায় দফায় নদীর পাড়ে এসে মানববন্ধন করেও প্রতিকার পাচ্ছেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সরকারী, বেসরকারী, চাকুরীজীবি, কৃষক শ্রমিক দিনমজুর সকলের অভিন্ন দাবী ভাঙনের কবল থেকে তাদের বাপ-দাদার ভিটে বাড়ি রক্ষা করা হোক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এলাকাবাসী ও ক্ষতিগ্রস্থরা জানান, ১৯৭৫ সাল থেকে ফেনী নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের মানুষ নদী ভাঙনের শিকার। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে ভাঙন প্রতিরোধে নদীর লুপ কাটিং করা হলেও দুই তীরের বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করায় পুনরায় ভাঙনের কবলে পড়ে স্থানীয় অধিবাসীরা। গৃহহারা এসব লোকজনের খবর কেউ রাখেনা। বাড়ীঘর জমিজমা নদী গর্ভে সর্বস্ব বিলীন হওয়ায় মানবেতর জীবন যাপন করছে এই এলাকার নারী শিশু ও পুরুষরা। নদী ভাঙনের নির্মম শিকার এলাকার মাষ্টার মোঃ সিরাজুল ইসলাম, শাখাওয়াত হোসেন সাবেক মেম্বার নুর নবী, মহি উদ্দিন বেলায়েত হোসেন, জসিম উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা কবির আহাম্মদ, গৃহহীন ছকিনা বেগম নদী ভাঙনের নিরব স্বাক্ষী হয়ে আছেন। তারা জানান, সরকার যায় সরকার আসে কিন্তু এলাকাবাসীর ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয় না। পরিদর্শনে আরো জানাগেছে, ফেনী নদীর প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভাঙনের শিকার এলাকাবাসী। নদীর ভাঙনে বদলে গেছে গ্রামের মানচিত্র। শত শত একর জমি ভোগ দখল করছে ওই উপজেলার মানুষ। এদিকে ২০১৬ সালের অক্টোবরে ফেনী পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালকের কাছে এলাকার ৬’শ লোক স্বাক্ষরিত একটি স্মারক লিপি প্রেরণ করা হয়। স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয় ফেনী নদীর ভাঙন প্রতিরোধে বেড়িবাঁধ নির্মান করা না হলে অচিরেই হাজার হাজার মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়বে। ফেনী-১ আসনের বর্তমান সাংসদ শিরিন আখতার স¤প্রতি নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তিনি বেড়িবাঁধ নির্মাণে এলাকাবাসীকে সার্বিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এলাকাবাসী জানান, তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে ফেনী পাউবোর কর্মকর্তারা ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় মাপঝোঁক স¤পন্ন করেছেন। এ বিষয়ে জানতে ফেনী পাউবোর এক কর্মকর্তা জানান, ইতিমধ্যে ভাঙন কবলিত এলাকার একটি নকশা এবং চুড়ান্ত হিসাব নিকাশ তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রের অনুমতি পেলে নদীর বাঁধ নির্মাণে কাজ শুরু করা হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন। ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মেজবাউল হায়দার চৌধুরী সোহেল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছে আমরা স্থায়ীভাবে বাঁধ নির্মানের জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আমাদের সে বাঁধগুলো যেন স্থায়ীভাবে করা হয়। অস্থায়ী বাদ দেয়ার কারনে প্রতি বছর এ বাঁধগুলো ভেঙে যায়। গত জুলাই মাসের ফেনী জেলা সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী মাধ্যমে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীকে বাঁধগুলো স্থায়ীকরণের জন্য প্রস্তাব দিয়ে থাকি। নিজাম উদ্দিন হাজারীও আমাদের কথা দিয়েছেন আগামীতে ফেনী নদীর প্রত্যেকটি বাঁধ স্থায়ীকরণ করা হবে। বালু উত্তোলনের বিষয়ে জানতে ফেনী জেলা প্রশাসক মনোজ কুমার রায়ের কাছে ফোন করা হলে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সমস্যা হলে এলাকার মানুষের কল্যাণে বালু উত্তোলন বন্ধ রাখার উদ্যোগ নিবেন তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।