Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি করা যাবে না

| প্রকাশের সময় : ১২ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম


রাজধানীবাসীর দুর্ভোগের সীমা নেই। দুই সিটি করপোরেশনসহ সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অপ্রতুল ও নি¤œমানের সেবা এবং ব্যবস্থাপনার মধ্যে তারা বছরের পর বছর ধরে বসবাস করছে। তাদের জীবনমান উন্নয়নের পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তারা একের পর এক সেবামূল্য বৃদ্ধি করে চলেছে। গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির মূল্য দফায় দফায় বৃদ্ধিতে নগরবাসীর নাভিশ্বাস উঠছে। তারা বর্ধিত মূল্য দিচ্ছে ঠিকই, তবে সে অনুযায়ী কোনোভাবেই সেবা পাচ্ছে না। নগর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেন নগরবাসী জুলুম- শোষন-পীড়নের হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। সেবা দিতে পারুক না পারুক, তাদের পাওনা কড়ায় গন্ডায় আদায় করে নিচ্ছে। গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির পর সম্প্রতি ওয়াসা পানির মূল্য প্রায় দশ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। অথচ ওয়াসা যে পানি সরবরাহ করে তা এতটাই দূষিত যে তা পান করা দূরে থাক, সাধারণ ব্যবহার্যে অনুপযুক্ত। ময়লা, আবর্জনা, দুর্গন্ধসহ পানির যে বিকৃত রং তা ব্যবহারে রুচিতে কুলায় না। তারপরও নিরুপায় হয়ে নাগরিকদের এ পানি ব্যবহার করতে হচ্ছে। এদিকে এসব সেবার মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন করে বাড়ির হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের আর্থিক স্বচ্ছতার উন্নয়ন শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি বলেছেন, স্থানীয় সরকার নিজস্ব অর্থায়নে বাজেট পরিচালনার ক্ষেত্রে এখনো নাবালক। ’৬১-’৬২ সালের কাঠামোতেই সিটি করপোরেশন হোল্ডিং ট্যাক্সের মাধ্যমে কিছু অর্থ আয় করে। তবে গত ৬০ বছরে এ ট্যাক্স রিভিউ করেনি, যা তাদের আয়ের সক্ষমতা বাড়াচ্ছে না। হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে অর্থমন্ত্রীর এই ইঙ্গিত নিশ্চিতভাবেই যারা ভাড়া বাড়িতে থাকেন, তাদের কাছে মরার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে বিবেচিত হবে।
রাজধানী বসবাসের জন্য কতটা উপযোগী তা নতুন করে বলার কিছু নেই। ইতোমধ্যে এ নগর যে বাসের অযোগ্য তা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি পেয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান রাজধানীর উন্নয়ন এবং সেবাদানে নিয়োজিত, এ নিয়ে তাদের কোনো বিকার নেই। বিষয়টি যে চরম অপমানজনক এবং অসম্মানের তা তারা গায়েই মাখছে না। উল্টো তাদের প্রদেয় অতি নি¤œমানের সেবার বিপরীতে মূল্যবৃদ্ধি করে নগরবাসীর উপর চাপিয়ে যাচ্ছে। সিটি করপোরেশনের যে কয়টি সেবা পাওয়ার কথা, তার কোনোটিই যথাযথভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। শহর পরিচ্ছন্ন এবং রাস্তা-ঘাট মসৃন রাখার বিষয়গুলো কাক্সিক্ষত মানের ধারেকাছে নেই। অথচ নগরবাসী ঠিকই ধার্যকৃত মূল্য পরিশোধ করছে। মূল্য দেবে অথচ তার বিপরীতে ন্যূনতম সেবা পাওয়া যাবে না, এমন রাজধানী বিশ্বের আর কোথাও আছে কিনা, জানা নেই। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবো বলে বারবার বলছি, অথচ মধ্যম আয়ের দেশের রাজধানী কেমন হয়, তা আমাদের ধারণায় নেই। রাজধানীর পানিবদ্ধতা, যানজট, অপ্রতুল নাগরিক সুযোগ-সুবিধা এবং ভোগান্তিমূলক জীবনযাপন সঙ্গী করে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার আশা করা কতটা সঙ্গত তা বোধকরি নীতিনির্ধারকরা ভেবে দেখছেন না। সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর আচরণ দেখে যে কারো মনে হতে পারে, তারা যেন রাজধানীবাসীকে এমন দুর্ভোগের মধ্যে রাখতে স্বাচ্ছন্দবোধ করছে। তা নাহলে সমস্যা সমাধানের উদ্যোগের পরিবর্তে রাজধানী দিন দিন বসবাসের অযোগ্য হবে কেন? সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার পরিবর্তে সেবামূল্য বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা দেখে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে, এখানে বসবাস করাই যেন অন্যায়। সাধারণ মানুষের মধ্যে এখন এমন ধারণা বদ্ধমূল যে, সরকার তার আয় বাড়ানোর জন্য বিভিন্নভাবে তাদের পকেট কেটে নিচ্ছে। চলতে-ফিরতে সর্বত্রই তারা ভ্যাট-ট্যাক্সের জাঁতাকলে পড়ছে। সরকার বিনিয়োগ, কলকারখানা স্থাপন এবং কর্মসংস্থানের দিকে নজর না দিয়ে সাধারণ মানুষের পকেটের দিকে নজর দিয়েছে। যত সংস্থার মাধ্যমে যতভাবে পারা যায়, জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় করতেই হবে। তারই নতুন একটি সংযোজন হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির ইঙ্গিত। একবার ভেবে দেখা হচ্ছে না, রাজধানীতে যারা ভাড়া বাসায় থাকে, তাদের উপর কী বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়বে। বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলছে, যারা ভাড়া বাসায় থাকেন, তাদের আয়ের প্রায় ৭০ শতাংশ ভাড়া বাবদ চলে যায়। বাড়ি ভাড়া মিটিয়ে সন্তান লালন-পালন এবং সংসার নির্বাহ করা যে কতটা দুরূহ, তা যারা ভাড়া বাসায় থাকে, তারা ছাড়া কেউ জানে না। বাড়িওয়ালাদের এই লাগামহীন ভাড়া বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ নেই। বছর শেষে তো বটেই, এমনকি ছয় মাস অন্তরও অনেকে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি করে থাকে। প্রতিনিয়ত এমন অনাচার ভোগ করতে হচ্ছে ভাড়াটিয়াদের। এসব দেখার যেন কেউ নেই। সিটি করপোরেশন কি বাড়িওয়ালারা যথাসময়ে যথাযথভাবে নির্ধারিত হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছে কিনা, তা পুরোপুরি খতিয়ে দেখে? যদি দেখত, তবে ট্যাক্স বৃদ্ধির এই প্রসঙ্গ আসত না।
আমরা এ কথা বলছি না যে, সিটি করপোরেশনের আয় করার প্রয়োজন নেই। অবশ্যই আয় তার আয় দরকার আছে। এ আয় করতে গিয়ে যদি সাধারণ মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়ে, তবে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বরং সিটি করপোরেশনের উচিত হবে, বাড়ির মালিকদের কাছ থেকে কীভাবে যথাযথ পন্থায় ট্যাক্স আদায় করা যায়, সেটি নিশ্চিত করা। আদায়কৃত ট্যাক্স কীভাবে এবং কোন সেবামূলক কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে, তাও খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। জনসাধারণ ভ্যাট-ট্যাক্স ষোলআনা দিয়ে যাবে, অথচ এক আনা সেবা পাবে না, তা হতে পারে না। বলার অপেক্ষা রাখে না, অর্থ ব্যয় হলেও, এ অনুযায়ী যদি সেবা পাওয়া যায়, তাতে যেমন নাগরিক সন্তুষ্টি থাকে, তেমনি ধার্যকৃত ট্যাক্স দিতেও তাদের আপত্তি থাকে না। কড়ায় গন্ডায় ট্যাক্স দেবে, সেবার জন্য অতিরিক্ত মূল্য দেবে, সেবা পাবে না, এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আমরা মনে করি, হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধির মাধ্যমে জনসাধারণকে নতুন করে ভোগান্তিতে ফেলা উচিত হবে না। বরং বছরের পর বছর ধরে যারা হোল্ডিং ট্যাক্স দিচ্ছে না এবং তা আদায় করা হচ্ছে না, এদিকে সিটি করপোরেশনের মনোযোগ দেয়া উচিত। তা নাহলে হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি নিয়ে চরম জনঅসন্তুষ্টি সৃষ্টি হতে পারে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্যাক্স


আরও
আরও পড়ুন