Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার, ২৩ মে ২০২৪, ০৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৪ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

পাহাড়িরা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী

পার্বত্য অঞ্চল অশান্তির চক্রান্ত

| প্রকাশের সময় : ৮ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাখাওয়াত হোসেন : পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত পাহাড়ি জনগোষ্ঠি মুলত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠি হলেও একটি বিশেষ মহল তাদের আদিবাসি হিসেবে স্বৃকিতি আদায়ের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠেছে। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৯ আগস্ট আদিবাসি দিবস পালিয়ে হয়ে থাকে। আর আদিবাসি দিবসকে সামনে রেখে বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়িতে উপজাতি-আদিবাসী ইস্যু নিয়ে অপতৎপরতা শুরু করেন তারা। উপজাতি স¤প্রদায়গুলোকে আদিবাসী হিসেবে অভিহিত করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার চেষ্টাও চলে। এ ইস্যুতে ফায়দা লুটতে চায় উপজাতি সশস্ত্র সংগঠনগুলো। একদিকে তারা পাহাড়কে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করছে, অন্যদিকে দিবসটি পালনের জন্য পাহাড়ে নিরীহ উপজাতিদের কাছ থেকে বড় অঙ্কের চাঁদা তুলছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স¤প্রতি দেশের একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে। একই সাথে বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর হওয়ায় পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অধিকতর সতর্কতার সাথে পর্যবেক্ষণ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার ওই প্রতিবেদনে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, ভারতের উত্তর পূর্বাঞ্চল (মিজোরাম, মনিপুর, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, ত্রিপুরা), বাংলাদেশ ও মায়ানমারে পারস্পরিক সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী উপজাতিরা খ্রিস্টান ধর্মে দীক্ষা নেয়ায় ইতিমধ্যে তারা তাদের ধর্ম, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারাতে বসেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও বাংলাদেশের পার্বত্যাঞ্চল এবং মিয়ানমারের একাংশ নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তরাংশ ভারত-বাংলাদেশের এই পার্বত্য অঞ্চলে ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে অত্যন্ত গুরু¡পূর্ণ অঞ্চল। বিদেশি চক্র পার্বত্য অঞ্চলের উপজাতীয়দের আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে এ অঞ্চলকে খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনে তৎপর রয়েছে। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রায় ৪৫টি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উপজাতীয় স¤প্রদায় বসবাস করছে। এরমধ্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ১২টি উপজাতীয় স¤প্রদায় যেমন- চাকমা, মার্মা, ত্রিপুরা, সুরং, পাংখোয়া, চাঁক, খুমী, খিয়াং, লুসাই, তঞ্চংগা, বম এবং রিয়াং। সিলেট অঞ্চলে মনিপুরী, খাসিয়া, ত্রিপুরা, পাত্র, হাজং। ময়মনসিংহ অঞ্চলে গারো, কুকি এবং রাজশাহীর বরেন্দ্র অঞ্চলে সাঁওতালসহ বিভিন্ন স¤প্রদায়ের লোক বসবাস করছে। বাংলাদেশ সংবিধান, পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ আইন, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ আইন এবং ১৯৯৭ সালের শান্তিচুক্তিতে উপজাতীয় স¤প্রদায়গুলোকে উপজাতি হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। তাদেরকে কোথাও আদিবাসী হিসেবে অভিহিত করা হয়নি। উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে কাজ করছে কিছু এনজিওসহ বিদেশি একটি চক্র। এইচএনডিপি, ডানিডা, এডিপিসহ বিভিন্ন সংস্থা এবং বিদেশি চক্রের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে কতিপয় বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, বামপন্থি ও স্থানীয় উপজাতি নেতৃবৃন্দ এবং বিভিন্ন এনজিওর কর্মকর্তাবৃন্দ বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, ওয়ার্কশপ, আদিবাসী সম্মেলন, আদিবাসী মিছিল, আদিবাসী র‌্যালি, আদিবাসী সাংস্কৃতিক উৎসব পালনসহ টিভি, রেডিও ও সংবাদপত্রে নতুন নতুন খবরের সূত্রপাত ঘটাচ্ছে। পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান ও জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ইতিমধ্যে আদিবাসী ফোরাম নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এতে বলা হয়েছে, পাহাড়ে এ নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে পার্বত্য চট্টগ্রামে পৃথক শাসন কাঠামো গঠন, জুম্ম জনগণের স্বতন্ত্র জাতীয় সত্ত¡া, ভাষা ও সংস্কৃতিসহ সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজাতিরা আদিবাসী হিসেবে স্বীকৃতি পেলে দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বাংলাদেশের অধিকাংশ উপজাতীয় স¤প্রদায় এখন নিজ নিজ ধর্ম ও সংস্কৃতিতে অবস্থান না করে তাদের অনেকেই ইতিমধ্যেই খ্রিষ্টান হয়ে গেছে। কতপিয় এনজিওয়ের সহযোগিতায় মোটা অংকের টাকা খরচ করে একটি মহল পার্বত্য চট্টগ্রামে নানা গুত্রের উপজাতিদের খ্রিস্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করছে। পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে কাজ করছে এমন কয়েকটি সংস্থা জানিয়েছে, বাংলাদেশীয় উপজাতিদের আদিবাসী উল্লেখ না করার বিষয়ে ইতিপূর্বে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বর্তমানে সে নির্দেশনার কোনো কার্যকারিতা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। স¤প্রতি উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করা এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে আদিবাসী মন্ত্রণালয় করার ব্যাপারে বিভিন্ন মহল হতে দাবি উত্থাপিত হচ্ছে বলে জানা যায়। এদিকে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কয়েকটি আন্তর্জাতিক সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় কোটি কোটি ডলার ব্যয় করে উপজাতিদের ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তারা উপজাতিদের আদিবাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে। তাছাড়া আমাদের দেশের কতিপয় বুদ্ধিজীবী বিভিন্ন সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও ওয়ার্কশপে এবং সাংবাদিকরা বিভিন্ন লেখায় উপজাতীয়দের আদিবাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে দেখা যাচ্ছে। সূত্র মতে, পৃথিবীর অনেক দেশের সাথে বাংলাদেশে প্রতি বছরের মতো এবারও ৯ই আগস্ট আন্তর্জাতিক আদিবাসী দিবস পালিত হবে। অস্ট্রেলিয়ান এবরিজিন, যুক্তরাষ্ট্রের রেড ইন্ডিয়ান, নিউজিল্যান্ডের মাউরি, দক্ষিণ আমেরিকার ইনকা ও মায়া, জাপানের আইনু, রাশিয়ার মেনেট, ফ্রান্স ও স্পেনে বাসকু প্রভৃতি জনগোষ্ঠী প্রাচীনকাল থেকেই আদিবাসী হিসেবে বিশ্বে পরিচিত। কিন্তু বাংলাদেশে আদিবাসী কারা এ নিয়েও একটি বিতর্ক ইদানীং চালু হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীর যে অংশটি নিজেদের হঠাৎ আদিবাসী বলে দাবি করতে শুরু করছে তারা কিন্তু কয়েক বছর আগেও নিজেদের এ পরিচয়ে পরিচিত করাতে চায়নি। তারা দীর্ঘদিন ধরে উপজাতি, ক্ষুদ্র জাতিসত্ত¡া অথবা নিজস্ব গোত্র পরিচয়েই পরিচিত হওয়ার দাবি করে আসছিল। ২০০৭ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সদর দপ্তরনিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিত ৬১তম অধিবেশনে দ্য ইউনাইটেড নেশনস ডিক্লিয়ারেশন অন দ্য রাইটস অব ইনডিজিনিয়াস পিপলস অর্থাৎ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র জারি হওয়ার পর হঠাৎ করে তারা নিজেদের আদিবাসী বলে দাবি করতে শুরু করেন। এরকম হঠাৎ করে আদিবাসী হতে চাওয়ার নজির বিশ্বে আর কোথাও নেই।



 

Show all comments
  • S. Anwar ৮ আগস্ট, ২০১৭, ৬:৪৬ এএম says : 0
    পাহাড়ি উপজাতিরা বাংলদেশের এক একটি খুদ্র নৃ-গোষ্ঠি, এতে কোন সন্দেহ নেই। এরা মূলত বার্মা এবং আসাম থেকে আগত বিভিন্ন পাহাড়ি সম্প্রদায়। কিছু কিছু গোষ্ঠী কোন এক কালে থাইল্যান্ড থেকে বিতারিত হয়ে এসেছিল বলেও শ্রুতি আছে। এদের যারা আদিবাসি বলে তারা অতিশয় মুর্খ এবং সন্ত্রাসী উপজাতিদের দালাল।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পাহাড়ি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ