পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
রাতে আজ আর বাসায় ফেরা হবে না। সন্ধ্যায় গিয়ে ডিনার সেরে আসলাম। আসার সময় ‘অন্তু’ আমার পাঁচ বছরের মেয়ে, বেশ অখুশি ছিল। কেননা রাতে ল্যাবে আসি সেটা সে একবারেই পছন্দ করেনা। সারাদিন ধরে অপেক্ষার প্রহর গুনতে থাকে অন্তত রাতে ঘুমানোর আগে পাপার সাথে খেলবে। এরপর পাপার কাছে গল্প শুনতে শুনতে পাপার গলা জড়িয়ে রাতে ঘুমাবে। প্রায় দিনই তার ইচ্ছা পূরন হলেও ইদানিং ল্যাবে কাজের বেশি চাপ থাকায় তার আবদার রাখাটা একটু দুরহ হয়ে পড়েছে। ক্যাম্পাসের ঠিক উল্টো পাশেই আমাদের বাসা। ল্যাবের স্বচ্ছ কাঁচের ঘেরা দেয়ালের দিকে তাকালেই রাস্তার ল্যাম্প পোস্টের আলোর ছটায় আমাদের বেড রুমের জানালা দৃশ্যমান হয়। তাই ক্ষণে ক্ষণে সেদিকে তাকাই আর অন্তুর কথা ভাবি।
এই সপ্তাহে ঠান্ডাটাও বেশ জেকে বসেছে। সাথে আছে লাগাতার গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি। ঠান্ডার সময়ে গুড়ি গুড়ি এই বৃষ্টিটা ফুজিয়ানের বিশেষ করে ফুজো শহরের চিরাচরিত একটা ব্যাপার। মাঝেমধ্যে যার ব্যাপ্তি থাকে সপ্তাহ খানিকেরও বেশি। এখানে ঠান্ডার সময়ে সূর্যের দেখা মেলা নিজেদের সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে হয়। শুনেছি ফুজিয়ানের তাপমাত্রাও নাকি মাঝেমধ্যে শূন্য ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচে নামে। আমরা আসার পর থেকে অবশ্য তেমনটা কোনদিন দেখিনি। তবে শেষ রাতে অনেক সময় মোবাইলের ওয়েদার ফোরকাস্ট দেখায় আশপাশের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রীর কাছাকাছি। আজ ও ঠিক তেমনটাই দেখাচ্ছে, বাইরের তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস।
ফুজিয়ান প্রদেশের ফুজো শহরের পুরোটায় পাহাড়ে ঘেরা। সুউচ্চ পাহাড় কেটে ফুজো শহরের ব্যাপ্তি বাড়ানো হরহামেশায় আমাদের চোখে পড়ে। সেই হিসেবে সহজেই অনুমেয়, ফুজো শহর আগে সবটায় পাহাড়ের দখলে ছিল। পাহাড়ী প্রকৃতি খুবই ভালো লাগে। সন্ধ্যা নামার আগ মুহূর্তে, ঘুটঘুটে অন্ধকারে, পূর্ণিমার চাঁদের আলোর ঝলকানিতে পাহাড়ের নীরবতা খুবই উপভোগ্য। আবার ঝুম বৃষ্টির মধ্যে, আকাশে বিজলি চমকানোর মুহূর্তে, রোদ ঝলমলে সূর্যের আলোতে পাহাড়গুলো তার নিজস্ব সৌন্দর্য বিছিয়ে দেয়। আমাদের বসবাসের এলাকাটি একেবারেই পাহাড়ে ঘেরা। সেই সাথে ক্যাম্পাসের গাঁ ঘেঁষে শুরু হওয়া বিস্তীর্ণ পাহাড়ী অঞ্চলের অপরূপ সৌন্দর্য মাঝে মধ্যে মনকে কিছুটা হলেও কবিত্বের ছোয়া লাগিয়ে যায়।
সন্ধ্যা পরবর্তী ল্যাবের একপাশ দিয়ে দৃশ্যমান বিস্তীর্ণ সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়ার কাছাকাছি মিটিমিটি করে কুপি বাতির মত জ্বলা বেশ কিছু আলোর উপস্থিতি বহু আগে থেকেই আমাকে ভাবায়। অন্যদিনে আলোগুলো বেশ উজ্জ্বল লাগলেও আজ বৃষ্টির ছটায় একটু ঝাপসা মনে হচ্ছে। প্রায়শই ল্যাবের স্বচ্ছ কাঁচের জানালা দিয়ে সন্ধ্যা হলেই চোখ পড়ে মিটিমিটি আলোগুলো। পাহাড়ের উপরের ওই বাড়িগুলো দেখতে আমাদের অনেকদিন ধরে শখ ছিল। আমাদের বলতে আমি, আমার স্ত্রী ও অন্তু। সেই শখ পূরণ করার জন্য বেশ কয়েকবার কাছাকাছি গিয়ে উপরে ওঠার পথ না পেয়ে পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ফিরে এসেছি। গেল সপ্তাহের ছুটির দিনে আর কোন বাঁধাই আমাদের দমাতে পারিনি। পাহাড়ে ওঠার নির্দিষ্ট পথ খুঁজে বের করে আমরা উপরে উঠে গিয়েছিলাম। রাস্তা খুবই ঢালু হওয়ায় গন্তব্যে যাওয়াটা বেশ দুঃসাধ্য ছিল। তাই একটু কষ্ট নিয়েই ঊর্ধ্বমুখী পায়ে হেঁটে প্রায় এক কি. মি. মত উঠলাম।
পাহাড়ে আরোহন কিছুটা দুঃসাহসিক হওয়ায় আমাদের প্রায় পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে মন চায়। ইতোমধ্যে সুউচ্চ অনেক পাহাড়ে আমাদের আরোহণের সুযোগ হলেও কাছের এই পর্বতমালার উপরে ওটার পরে অনুভূতিটা ছিল অসাধারণ। যোজন যোজন মাইল যতদূর চোখ যায় সুউচ্চ পাহাড় আর পাহাড়। সেদিন আমরা পরিকল্পনা করে গিয়েছিলাম চূড়ায় না উঠতে পারলেও অন্তত পক্ষে পাহাড়ের উপরে বসবাসকারী মানুষগুলোর জীবনযাত্রা স্বচক্ষে দেখব। কষ্ট হলেও আমরা পৌঁছে গিয়েছিলাম তেমনই একটা পরিবারের কাছে।
বেশ কিছু পরিবারের বসবাস খেয়াল করলাম। কিন্তু মানুষের দেখা পাচ্ছিলাম না। এরপর পেলাম কয়েকজনকে। আমাদের দেখে প্রথমে তারা একটু অবাকই হল। অবাক হওয়াটায় স্বাভাবিক। সাধারণ মানুষ সেখানে যায়না আর আমরা ভিনদেশি মানুষ কি জন্য সেখানে গেলাম সেই প্রশ্নটা তাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে নিশ্চয়ই। মোবাইলের ট্রান্সলেটর ব্যবহার করে তাদের বুঝালাম ‘আমাদের বাসা পাশেই, শুধুমাত্র তাদের জীবনযাপন দেখার জন্যই আমাদের এখানে আসা’। আমরা আমাদের পরিচয় দিলাম। এরপর তাদের ভিতর হাসিখুশি ভাব দেখলাম। তারা আমাদের পেয়ে অনেক খুশি। অন্তুকে অনেক আদর করেছে। আমাদেরকে আপ্যায়ন করে বাদাম, গ্রিন টি খেতে দিয়েছে।
আমার অনুরোধে উই-চ্যাট (চীনাদের সর্বাধিক ব্যবহৃত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম) আইডিতে তাদের একজনকে যুক্ত করলাম। এরপরে আমাদের বার্তা আদান প্রদান বেশ সহজ হয়ে গেল। উই-চ্যাটে চাইনিজ এবং ইংলিশ ট্রান্সলেটরের সুবিধা থাকায় আমাদের আলাপচারিতা বেশ জমে উঠেছিল সেদিন। আমরা তাদের অনুরোধ করলাম তাদের বসবাসের জায়গাটা আমাদেরকে একটু ঘুরে দেখানোর জন্য। পাহাড়ের প্রায় শিখরে বসবাসকৃত তাদের জীবনযাত্রা সত্যিই আমাদের সেদিন খুব অবাক করেছিল। তাদের বাসায় দেখলাম টিভি, ফ্রিজ, এসি, রুম হিটার সহ সার্বক্ষণিক বিদ্যুতের ব্যবস্থা আছে। সুউচ্চ পাহাড়ের উপরেও ওই সামান্য কিছু পরিবারের জন্য পাইপলাইনে জলের ব্যবস্থা ও করা আছে। মাথার উপরে বিদ্যুতের খুঁটির সাথে আছে বেশ কয়েকটি সিসি ক্যামেরা। বুঝলাম নিরাপত্তার এখানেও কোন ঘাটতি নেই। তারা আমাদের বাইরে নিয়ে ঘুরে দেখাল তাদের নিজস্ব হাঁস মুরগির খামার। সেখানে দেখেছিলাম প্রায় শ খানিকের উপরে হাঁস মুরগি চরে বেড়াচ্ছে। আশপাশে দেখলাম বেশ মৌমাছির আনাগোনা। এরপর নিয়ে গেল তাদের মৌমাছির ফার্মে। যেখানে সারিবদ্ধভাবে রাখা আছে শত শত মৌমাছির বক্স। এসব দেখে আমাদের মনে হলো, পাহাড়ের চূড়ায় বসবাস করলেও এদের আর্থিক অবস্থাসহ বসবাসের ব্যবস্থা অনেক ভালো। পেশায় তারা দিনমজুরের কাজ করে ঠিকই কিন্তু তাদের ছেলেমেয়েরা সবাই স্কুল কলেজে পড়াশুনা করে। আমি তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, রাতে এখানে থাকতে ভয় করে কিনা? তারা উত্তরে বলেছিল ‘এখানে কোন কিছুর ভয় নেই। তবে বেশিদিন আমাদের এখানে থাকা লাগবেনা। খুব অল্প দিনের ভিতরে সরকার আমাদেরকে অত্যাধুনিক ফ্ল্যাট বাসায় স্থানান্তর করবে’। ‘হ্যাঁ’ এ বিষয়টা আমার আগে থেকেই জানা আছে। এদের প্রশাসন গৃহহীনদের খুবই দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে থাকে। আমাদের বর্তমানে বসবাসকৃত দুই বারন্দা যুক্ত, দুই রুমের ড্রয়িং রুম সাথে ডাইনিং রুম যুক্ত বাসাটা তার বাস্তব উদাহরণ। বাসার মালিক এই বাসাটা বিনামূল্যে সরকার থেকে পেয়েছিল। মালিক এখন সেটা আমাদের ভাড়া দিয়ে নিজের ক্রয়কৃত পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা।
বাইরে শ্রাবনের ধারার মত বিরামহীন ঝরছে বৃষ্টির ফোঁটা। চারিদিকে নিস্তব্দতা, নীরবতা, জনমানবহীন ক্যাম্পাস। একাকী বসে আছি কম্পিউটারের স্ক্রিনের সামনে। বাইরের হাড় কাঁপানো ঠান্ডার ভিতরেও রুমের হিটার গ্রীষ্মের মত উষ্ণতা ছড়িয়ে যাচ্ছে। তবুও কেন জানিনা এমন ঠান্ডা এবং বৃষ্টি ভেজা আবহাওয়া বরাবরই মনের গভীরে গিয়ে আঘাত করে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে দেশের সহায় সম্বলহীন, গৃহহীন পথ শিশু সহ তাদের পরিবারের কথা। রাস্তার পাশে কাপড়ে ঘেরা জরাজীর্ণ বসতের জায়গাটুকুতে কতই না কষ্ট করে তারা দিনাতিপাত করে। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা কোন ঋতুতেই যে তারা নিরাপদ নয়। মনে ভেসে উঠছে সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন একদিন শেষ রাতে মেসের বাজারের জন্য জগন্নাথ হল থেকে বের হয়ে খুবই অল্প সময়ের জন্য স্বচক্ষে অবলোকন করেছিলাম টিএসসি চত্বরের পাশে ঘুমিয়ে থাকা জরাজীর্ণ মানুষগুলোর হালচাল। সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে তারা যখন খোলা আকাশের নিচে ঘুমিয়ে গিয়েছিল, বৃষ্টির ফোঁটা এসে সেই ঘুমে ব্যাঘাত ঘটিয়েছিল। ক্লান্ত শরীরে, অর্ধাহারে এবং অনাহারে দিনাতিপাত করা মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে বালিশ-বিছানা বিহীন এতটায় গভীর ছিল তাদের ঘুম, যেটা রাজপ্রাসাদের সৌখিন ঘুমকেও হার মানায়। তাই শত শত বৃষ্টির ফোঁটার কাছেও সে ঘুম হার মানতে চাইছিল না। কিন্তু যখন দিনের আলোর মত আকাশে বিদ্যুতের ঝলকানি, সাথে বিশাল তর্জন গর্জন এবং আকাশ ভেঙে শুরু হওয়া বৃষ্টির অঝোর ধারার ফোঁটা তাদের ঘুমন্ত শরীরে, চোখে-মুখে গিয়ে পড়ল তখন প্রকৃতির এই বিরূপতা তারা সইতে পারলনা। সবার দৌড়াদৌড়ি শুরু হল শুধু বৃষ্টিবিহীন একটু আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু সেখানেও প্রকৃতি তাদের সাথে বিমাতাসুলভ আচরন করল। অন্তত শেষ রাতের ঘুমটুকু তারা শান্তিতে ঘুমাবে সেরকম জায়গাও প্রকৃতির বুকে অনেকেই খুঁজে পেলনা। সেই আশ্রয়টুকুও তাদের জন্য সেখানে অপ্রতুল ছিল। খেয়াল করেছিলাম, সবার গন্তব্য ছিল টিএসসির গাঁ ঘেঁষে জনতা ব্যাংক এবং টিএসসির প্রবেশ দ্বারের হালকা ছাউনিযুক্ত জায়গাটুকু। কিন্তু খুবই অল্পক্ষণের ভিতর সেটাও পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। অন্য কোন উপায়ন্তু না দেখে অনেকেই সেই তুমুল বৃষ্টির ফোঁটায় নিজের দেহের অর্ধেক খানি ছাউনি বানিয়ে, বুকে পাকা মাটি ঝাপটে ধরে বাকি অর্ধেক দেহকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে কোনরকমে কাত হয়ে শুয়ে পড়ল।
মেসের বাজারের জন্য কারওয়ান বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে ভ্যানের উপর শক্ত হাতে ছাতা ধরে বসে আছি। ওদিকে জোরে বৃষ্টি শুরু হওয়ায় টিএসসির একপাশে ভ্যান রেখে রেইন কোর্ট গায়ে পরে নিয়ে সজোরে ভ্যান চালিয়ে চলেছে তৎকালীন জগন্নাথ হলের ‘তৃপ্তি আমিষ মেস’ এর সবচেয়ে কর্মঠ ‘নির্মল’ নামের ছেলেটি। রাত চারটায় রওনা হয়ে খুবই অল্পসময়ের জন্য দেখেছিলাম ছিন্নমূল মানুষের সেই দুর্বিষহ জীবন।
মানুষের তো খেয়ে পরে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকতে খুব বেশি কিছু লাগেনা। তবে কেন আমাদের ভূখন্ডে ধনী গরীবের এই বিস্তর ফারাক? গরীবের ঘরে যে শিশুটি আজকে জন্মগ্রহন করছে তার ও তো অধিকার ছিল মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠার, সকল সুযোগ সুবিধা পাওয়ার। তা না হলে যে মৌলিক অধিকারের সংজ্ঞা আজ বড্ড বেমানান। আমরা খুব কম লোকই ভাবি সেগুলো নিয়ে। সবার চিন্তা নিজেদের সম্পদ গড়া নিয়ে। সম্পদের পাহাড় গড়ার প্রতিযোগিতার খেলায় সবাই আজ আমরা বিভোর। দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে সুস্থ্যভাবে জীবনযাপনে যে পাহাড়সম সম্পদ লাগেনা সেটাও আমরা অবুঝ ভুলে যাই। সীমাবদ্ধ মানব জীবনের সবকিছু অনিশ্চয়াতার হলেও মৃত্যু সবার জন্য নিশ্চিত। এই চরম সত্যটুকুকে মাঝে মধ্যে আমরা মানতে নারাজ। আর সেজন্যই তৈরি হয় ধনী গরীবের ভিতর পার্থক্য। হয়ত দিনকে দিন এই ফারাক বাড়তেই থাকবে।
লেখক: গবেষক, ফুজিয়ান এগ্রিকালচার এন্ড ফরেস্ট্রি ইউনিভার্সিটি, ফুজো, ফুজিয়ান, চীন।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।