Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সুরমা ও কুশিয়ারা বিপদসীমায়

| প্রকাশের সময় : ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে সপ্তাহজুড়ে অতিবৃষ্টি : বাড়ছে বিভিন্ন নদীর পানি
বিশেষ সংবাদদাতা, চট্টগ্রাম ব্যুরো : উজানের উত্তর-পূর্ব ভারতের বরাক অঞ্চলে নতুন করে ঢলের কারণে সিলেটের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর আবারো বিপদসীমায় উঠে গেছে। গতকাল (শনিবার) সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত অনুযায়ী, সুরমা নদী কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। আর কুশিয়ারা নদী শেওলা পয়েন্টে ঠিক বিপদসীমা বরাবর (১৩ দশমিক ৫০ মিটার) বইছিল। তাছাড়া যশোরের কপোতাক্ষ নদ ঝিকরগাছা পয়েন্টে ২৭ সেমি উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে নেত্রকোনায় কংস নদী বিপদসীমার নিচে নেমেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, দেশের মোট ৯০টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ পয়েন্টের মধ্যে সর্বশেষ ২টিতে বিপদসীমার উপরে, একটিতে বিপদসীমার সমান স্তরে প্রবাহিত হচ্ছিল। আর পানি বৃদ্ধি পায় ৩৫টিতে, হ্রাস পায় ৫৩টিতে এবং অপরিবর্তিত থাকে ২টি পয়েন্টে।
আবহাওয়া ও পানিসম্পদ বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতে অতিবর্ষণ হচ্ছে। এতে করে আবারও পানি বাড়ছে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ গতকাল সর্বশেষ পূর্বাভাসে জানায়, হিমালয়ান পাদদেশীয় অঞ্চল, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম, অরুণাচল, মেঘালয়, ত্রিপুরা, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মনিপুর ও সিকিম অঞ্চলে বর্ষারোহী মৌসুমি বায়ুমালা সক্রিয় রয়েছে। সক্রিয় এমনকি জোরদার মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর উজানের অববাহিকায় ভারতের উল্লেখিত অঞ্চলসমূহে আগামী ৯ আগস্ট (বুধবার) পর্যন্ত ভারী থেকে অধিক ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকতে পারে। সেসব অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীর মূল অববাহিকায় (ক্যাচমেন্ট এরিয়া) পানি বাড়ছে। যা ঢলের আকারে বাংলাদেশের ভাটির দিকে ধাবিত হচ্ছে।
নদ-নদীর পরিস্থিতি ও পূর্বাভাস সম্পর্কে জানা গেছে, গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস পাচ্ছে। অন্যদিকে উত্তর জনপদের প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র-যমুনা এবং বৃহত্তর সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদ-নদীর পানির সমতল হ্রাস এবং স্থিতিশীল থাকতে পারে আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও। তবে সিলেটের সুরমা-কুশিয়ারা নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও অব্যাহত থাকতে পারে।
উজানের ঢলে ডিমলায় বাঁধ বিধ্বস্ত
নীলফামারী জেলা সংবাদদাতা জানান, উজানের ঢলে তিস্তা নদীর পানি শুক্রবার রাত থেকে বিপদসীমার সামন্য নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ার ডিমলা উপজেলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ীতে তিস্তার নদীর ডাঁনতীরে তৈরি করা ২ কিলোমিটার মাটির বাঁধের একটি অংশ বিধ্বস্ত হয়েছে। গত ২ দিন ধরে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ওই বাঁেধর ৯০ ভাগ নদীগর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। বাকি অংশ রক্ষায় ওই এলাকার তিন গ্রামবাসি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
জানা যায়, ২০১৫ সালে ই্উএনডিপির অর্থায়নে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামে ২৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তিস্তার নদীর স্বপন বাঁধ সংলগ্ন ১হাজার ৯৮২ মিটার দীর্ঘ, ৪ মিটার প্রস্থ ও ২ মিটার উচ্চতায় বাঁধটিতে নতুন করে সংস্কার করা হয়। কিন্তু পানির চাপে শুক্রবার বাঁধটি ভেঙ্গে পড়ায় পূর্ব খড়িবাড়ী, দক্ষিন খড়িবাড়ী ও ছোটখাতাসহ তিন গ্রামের মানুষের সহজ পথে চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিনটি গ্রামের মানুষজনের বসতভিটা চরম হুমকির মুখে পড়েছে। গতকাল শনিবার সকালে বাঁধ সংলগ্ন কয়েকটি পরিবারের বসতভিটা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ওই বাঁধটি সম্পূর্ন বিধ্বস্ত হলে গ্রাম তিনটি তিস্তা নদীর পানিতে তলিয়ে যাওয়ার আশংকা করা হচ্ছে। টেপাখড়িবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহীন জানান, বাঁধটি রক্ষা করতে না পারলে তিনটি গ্রামের শত শত একর জমির ফসল বন্যার পানিতে ব্যাপক ক্ষতি হবে। পূর্ব খড়িবাড়ী গ্রামের জিয়াউর রহমান জানায়, বাঁধটি ভেঙ্গে যাওয়ায় ৩টি গ্রাম তিস্তা নদীর পানিতে প্লাবিত হবে। শনিবার সকালে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ পরিদর্শন করেছেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেজাউল করিম। এদিকে টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নের চরখড়িবাড়ী নামকস্থানে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মিত মাটির বাঁধটি যে কোন সময় বিধ্বস্ত হতে পারে। এটি বিধ্বস্ত হলে একতার বাজার, জিঞ্জিরপাড়া, টাবুর চর, সানিয়াজানসহ ৮টি গ্রামের ১০ হাজার পরিবার বন্যা কবলিত হয়ে পড়বে। বাঁধটি রক্ষার জন্য এলাকাবাসী আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে শুক্রবার সকাল ৬ টা হতে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারাজে পয়েন্টে বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং পানির গতি ঘুরপাক খেতে শুরু করার কারনে বিভিন্ন স্থানে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে।



 

Show all comments
  • শাহে আলম ৬ আগস্ট, ২০১৭, ১:৫৪ এএম says : 0
    খরার মৌসুমে আমরা পানি পাই না আর এখন পানি ছেড়ে আমাদেরকে বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছে
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নদীর পানি


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ