Inqilab Logo

শনিবার ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগিতা হারাচ্ছে

প্রকাশের সময় : ১৮ জুন, ২০১৬, ১২:০০ এএম

এ.টি.এম. রফিক, খুলনা থেকে : দক্ষিণের চারটি নদীর পানির গুণমান ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। অভিন্ন আন্তর্জাতিক নদীসমূহ থেকে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহার করায় জোয়ারের সময় সাগর থেকে নদীতে আসা সব লবণযুক্ত পানি ভাটির সময় অপসারণ হচ্ছে না। এতে নদীর পানির লবণাক্ততা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সঙ্গত কারণে নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগিতা হারাচ্ছে। নেপথ্যে রয়েছে উপরের পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, নদী ভরাট হয়ে পানির ধারণ ক্ষমতালোপ পাওয়া ও বৃষ্টি আনুপাতিক কম হওয়া। নদীর নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করার পর ফল বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনার একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে প্রবাহিত নদী পথ প্রায় ২৪ হাজার ১৪০ কিলোমিটার। তবে ক্রমাগত শিল্পবর্জ্যরে নিক্ষেপণ, মনুষ্য বর্জ্য ফেলা ও বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে জবরদখল হওয়ায় নদীগুলো যৌবন হারাচ্ছে। ক্রমে পরিণত হচ্ছে দুষণযুক্ত একপ্রকার জলাশয়ে। ভৈরব নদীটি ১৯১২ সালে খুবই খরস্রোতা ছিল। কৃর্তিনাশা পদ্মার উত্তরে যে স্থানে মহানন্দা নদী মিশেছে, তার দক্ষিণ থেকে এ নদীটির উৎপত্তি। নদীটির দৈর্ঘ্য ৯৫ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১৫০ গজ। যশোর হয়ে ফুলতলা ভায়া খুলনা সীমানায় নদীটির প্রবেশ করেছে। নদীর নওয়াপাড়া ঘাট ও ফুলতলা উপজেলার চরেরহাট স্থানের পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার পর দেখা গেছে, পানির উঙ (উরংংড়ষাব ড়ীুমবহ), ইঙউ (ইরড় পযবসরপধষ ড়ীুমবহ ফবসধহফ) গ্রহণযোগ্য মাত্রার মধ্যে রয়েছে। তবে এর লবণাক্ততার মান অনেক উপরে। বিশেষ করে শুকনা মৌসুমে এপ্রিল-জুন পর্যন্ত মানমাত্রা ১৪ পিপিটি-তে পর্যন্ত। রূপসা নদীর ১৮৬৮ সালে নাম ছিল রূপসাহ। ব্রিটিশ আমলে লবণ ব্যবসার জন্য কৃত্রিম খাল খনন করা হয়। পশুর ও কাজিবাছা নদীর সাথে যোগাযোগ রক্ষার্থেই এর সৃষ্টি। নদীটির দৈর্ঘ্য ৮ মাইল ও প্রস্থ ৩৫০ গজ। রূপসা নদীর লবণচোরা ঘাট ও রূপসা ঘাট থেকে নমুনা পানি সংগ্রহ ও পরীক্ষার পর দেখা গেছে, ৬ মাস উঙ মান পরিমিত মাত্রার নীচে ছিল। তবে ইঙউ মান মাত্রা ভালো ছিল। কিন্তু ঝধষরহরঃু (লবণাক্ততা) মান মার্চ থেকে বৃদ্ধি পেতে পেতে মে-জুন মাসে ১৮ পিপিটি-তে উন্নীত হয়। অবশ্য, বর্ষা মৌসুমে সহনশীল মাত্রায় নেমে আসে। রূপসা নদী মংলার নিকটে পশুরে পতিত হয়েছে। যা কাজিবাছা থেকে ঢাংমারি ফরেস্ট অফিস হয়ে দুবলার দ্বীপের নিকট যেয়ে মিশেছে। মংলা বন্দর ঘাটে একটি মনিটরিং পয়েন্ট থেকে পানির নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার পর দেখা গেছে, উঙ মান শুষ্ক মৌসুমে সাধারণ মানমাত্রার একটু নীচে অবস্থান করছে। ইঙউ মান সঠিক থাকলেও ঝধষরহরঃু (লবণাক্ততা) মান শুষ্ক মৌসুমে ২২পিপিটির উপরে অবস্থান করে। খুলনা শহরের পশ্চিম পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীটির নাম ময়ূরী। বিলডাকাতিয়া থেকে উৎপত্তি হয়ে চকমথুরাবাদ ও বয়রার মধ্যদিয়ে সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশ থেকে কৃষ্ণনগর, সাচিবুনিয়া, পুঁটিমারি, বটিয়াঘাটা, তেঁতুলতলা হয়ে রূপসা নদীর সাথে মিলিত হয়েছে। প্রায় ১০ দশমিত ৪১ কিলোমিটার দীর্ঘ শত বছরের পুরানো এই নদী দিয়ে এক সময় বিল ভবদহের পানি অপসারিত হতো। কিন্তু এক মাথা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নদীটির পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজগুলোর বিষাক্ত পানি পতিত হয়ে নদীটির সম্পূর্ণ জীব বৈচিত্র নষ্ট হয়ে গেছে। পরিচিতি লাভ করেছে অন্যতম দুষিত নদী হিসেবে। এর উঙ আশঙ্কাজনকভাবে মানমাত্রার নীচে অবস্থান করছে। ইঙউ মানমাত্রা প্রায় ৪০ সম/১, যেখানে স্বাভাবিক মানমাত্রা ৫ সম/১।
পরিবেশ অধিদপ্তর খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের বায়োকেমিস্ট আহমেদ কবির চৌধুরী জানান, ভৈরব, রূপসা, পশুর ও ময়ূরী নদীর পানির গুণমান ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। উপরের পানির প্রবাহ কমে যাওয়া, নদী ভরাটে ধারণ ক্ষমতালোপ ও বৃষ্টি আনুপাতিক কম হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি। ময়ূরী নদীর দুষণ ভয়াবহ আকারে ধারণ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীর পানি ব্যবহারের উপযোগিতা হারাচ্ছে
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ