Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

চলচ্চিত্রে নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ খেলা এবং সমঝোতার আকাঙ্ক্ষা

মন্তব্য প্রতিবেদন

| প্রকাশের সময় : ৫ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ডিলান হাসান: গত মাসে চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ১৭টি সংগঠনের ঐক্যজোট চিত্রনায়ক শাকিবকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে। এর ফলে চলচ্চিত্রে তার কাজ করা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও পরবর্তিতে হাইকোর্টের এক রায়ে তিনি শূটিংয়ে অংশগ্রহণ করেন। তবে তাকে নিয়ে চলচ্চিত্রের অচলায়তন এখনো ভাঙ্গেনি। প্রশ্ন উঠেছে, এভাবেই কি চলচ্চিত্র চলবে? পারস্পরিক অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ এবং নিষিদ্ধ করা কি চলচ্চিত্রের মঙ্গল বয়ে আনবে? এসব প্রশ্নের উত্তর এখন চলচ্চিত্রের লোকজনের মুখে মুখে। অনেকেই বলাবলি করছেন, চলচ্চিত্রে এখন স্মরণকালের যে মন্দাবস্থা চলছে, তাতে সকলের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা প্রয়োজন। তা না করে পরস্পর বিরোধী অবস্থান নিয়ে চলচ্চিত্রকে আরও অচলাবস্থার দিকে ঠেলে দেয়া কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। শোনা যাচ্ছে, শিল্পী সমিতি ও শাকিব উভয় পক্ষই এখন অনেকটা নমনীয়। তারা বিষয়টি মিটমাট করতে চান। শিল্পী সমিতির পক্ষ থেকে শাকিবের সাথে দূতিয়ালী করার জন্য লোকজনও নিয়োগ করা হয়েছে বলে জানা যায়। সমিতির একজন শীর্ষ নেতা বেশ কয়েকজনকে অনুরোধ করেছেন, শাকিবকে বুঝিয়ে দুঃখ প্রকাশ করার জন্য। শাকিব যদি দুঃখ প্রকাশ করে, তবে বিষয়টির সুরাহা হয়ে যায়। দূতিয়ালীর কাজে নিয়োজিতরাও চেষ্টা করছেন শাকিবকে বোঝাতে। এখন পর্যন্ত তারা তাকে কতটুকু বোঝাতে পেরেছেন, তা স্পষ্ট নয়। অন্যদিকে শাকিবের ঘনিষ্ট সূত্র থেকে জানা যায়, শাকিবও চাচ্ছেন বিষয়টি মিটিয়ে ফেলতে। তবে তিনি দুঃখ প্রকাশ করবেন কিনা, এ নিয়ে দ্বিধায় আছেন। শিল্পী সমিতি চাচ্ছে, তার মান বাঁচাতে শাকিবের দুঃখ প্রকাশ। প্রশ্ন হচ্ছে, বিড়ালের গলায় ঘন্টাটা বাঁধবে কে? ঘন্টা বাঁধতে যদি এতই প্রেস্টিজ ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়, তবে ঘটনা ঘটার আগে বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে তাদের কী আরও গভীর চিন্তা-ভাবনা করা উচিত ছিল না? শাকিব কেনই বা বেফাঁস কথা বলবে আর ঘটনা ঘটাবে? চলচ্চিত্র সংগঠনগুলোই বা কেন তড়িৎ সিদ্ধান্ত নিয়ে শাকিবকে নিষিদ্ধ করে দেবে? শাকিবের অযাচিত কথাবার্তা ও চলচ্চিত্রের অগ্রজ এবং গুরুতুল্যদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে কথা বলা নতুন কিছু নয়। এ নিয়ে তাকে বেশ সমালোচনার শিকার হতে হয়েছে। এখনও হতে হচ্ছে। তাতেও তার কোনো হুঁশ হয়নি। নিজেকে সুপারস্টার ভেবে যা খুশি তাই বলা যেন তার বদঅভ্যাসে পরিণত হয়েছে। নিজেকে দায়িত্বশীল হিসেবে গড়ে তুলতে পারেননি। সুপারস্টার হলে যে তার কথা-বার্তা, আচার-আচরণ সভ্য এবং মার্জিত হতে হয়, এ জ্ঞানটুকু তার ভেতর জাগ্রত হয়নি। কেউ জাগিয়েও দেয়নি। ফলে শাকিব নিজেই নিজেকে সুপারস্টার ভেবে দিশেহারা হয়ে ছুটে চলেছেন। এখানেই তার সভ্যতা ও ভব্যতার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং তার খেসারতও তাকে দিতে হচ্ছে। শাকিবের মনে রাখা উচিত, চলচ্চিত্রে এখনও যেসব কিংবদন্তী বেঁচে আছেন, তারাও তাদের সময়ে সুপারস্টার ছিলেন এবং এখন তারা চলচ্চিত্রের একেকজন দিকপাল হয়ে আছেন। তারা অভিভাবকতুল্য। তাদের কাছে গিয়ে সুপারস্টারদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত, তা তার জানা এবং শোনা উচিত। শাকিব এ কাজটি করেননি বা তার জ্ঞানে কুলায়নি। ফলশ্রæতিতে নিজেকেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সুপারস্টার ভেবে অহমিকায় যা খুশি তা বলে ফেলছেন এবং আচরণ করছেন। তিনি উপরে উঠেছেন বটে, তবে কলুষমুক্ত হতে পারেননি। এ অনেকটা পিপিলিকার মতো। পাখা গজিয়ে উড়তে গিয়ে পড়ে যাওয়া। অথচ শাকিব যদি নিজের মেধা ও ধী শক্তি কাজে লাগিয়ে চলতে পারতেন, তবে তিনি অবশ্যই চলচ্চিত্রের বর্তমান দিকপালে পরিণত হতে পারতেন। সকল সমস্যা সমাধানে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে পারতেন। তা না হয়ে ‘নাই মামার চেয়ে কানা মামা’ হয়ে আছেন। নানা বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দিয়ে নিজেকে চলচ্চিত্রের সমস্যায় পরিণত করছেন। এটা কি একজন সুপারস্টারের হওয়া উচিত? এ তাহলে কেমন সুপারস্টার, যিনি সমাধানের পরিবর্তে সমস্যা হয়ে উঠেন? তিনি কি সুপারস্টারের সংজ্ঞাটা জানেন? গায়ে মানে না আপনি মোড়লের বিষয়টি কি তার জানা আছে? জানা থাকলে নিশ্চয়ই তাকে নিয়ে এত বিতর্ক এবং নিষিদ্ধ নিষিদ্ধ খেলা চলত না। যেসব ঘটনায় তাকে নিষিদ্ধের কবলে পড়তে হয়েছে, শাকিব কি একবার চিন্তা করে দেখেছেন, এসব ঘটনায় তার জড়ানো ঠিক হয়নি? আবার শিল্পী সমিতিসহ অন্যান্য সংগঠনের নেতৃস্থানীয়রা কি একটু রয়ে-সয়ে শাকিবকে ডেকে মীমাংসা করতে পারতেন না? শাকিব কেন এসব অপকর্ম বা বিতর্কিত কথা বলেছেন, তা ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে তাকে ডেকে কৈফিয়ত চাইতে পারতেন না? কোনো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে এসব দিক তো ভাবা উচিত ছিল। হুট করে একেবারে এক্সট্রিম পর্যায়ে চলে যাওয়া কি যথাযথ হয়েছে? হয়নি যে তাতো এখন সমঝোতা করার আকাক্সক্ষা থেকেই বোঝা যাচ্ছে। উভয় পক্ষের মধ্যে দূতিয়ালী শুরু হয়েছে। এটা শুভ লক্ষণ। সচেতন চলচ্চিত্রবাসীও চায় উভয়পক্ষের মধ্যে একটি সুন্দর সমঝোতার মাধ্যমে বিষয়টির মিমাংসা হোক। পাশাপাশি তারা এটাও চায়, ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের অকাম্য ও অবাঞ্ছনীয় ঘটনা না ঘটে। চলচ্চিত্রের পরিবেশ সুন্দর রাখা এবং এর সার্বিক উন্নয়নে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করা হয়। বলা বাহুল্য, এক্ষেত্রে শাকিবের সতর্ক হওয়া জরুরী। চলচ্চিত্র পরিবারের সকল সংগঠন তার বিপক্ষে কেন চলে গিয়েছে বা যাবে, তা তাকে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। সংসারের একমাত্র ছেলে যখন উচ্ছন্নে চলে যায়, তখন তার বাবা-মায়ের কী অবস্থা হয়, এ বিষয়টিও শাকিবের চিন্তা-চেতনায় রাখা উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চলচ্চিত্র


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ