পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
নূরুল ইসলাম : রাজধানীজুড়েই এখন খানাখন্দে ভরা রাস্তা। এক পশলা বৃষ্টিতে েেকানো কোনো এলাকার রাস্তা তলিয়ে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কোথাও কোথাও রাস্তা হয়ে গেছে খাল। মতিঝিলের আশেপাশেও হাঁটু সমান পানি জমে। এতে করে রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙ্গে পড়েছে। নগরজীবনে নেমে এসেছে ভয়াবহ দুর্ভোগ। এই দুর্ভোগের শেষ কবে হবে তা কেউ বলতে পারছে না। সিটি কর্পোরেশ ও ওয়াসার পক্ষ থেকে আশ্বা মিললেও তাতে ভরসা কম সাধারণ নাগরিকদের। বিশেষজ্ঞদের মতে, গত এক যুগে কাজের ক্ষেত্রে সমন্বয় আনতে পারেনি সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা, ডেসাসহ সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। বর্ষা মৌসুমে খোঁড়াখুঁড়িও বন্ধ হয়নি। এ কারণে দুর্ভোগ দিন দিন বেড়েই চলেছে।
সরেজমিনে ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাস্তার বেহাল অবস্থা চোখে পড়েছে। বুড়িগঙ্গার তীরঘেঁষে পোস্তগোলা থেকে শুরু করে কমলাপুর, মৌচাক, মালিবাগ, খিলগাঁও, সবুজবাগ, মগবাজার, রামপুরা, বাড্ডা, শাহজাদপুর, নদ্দা, কুড়িল, বনানী, গুলশান, মহাখালী, তেজগাঁও, বাংলামোটর, শাহবাগ, আজিমপুর, লালবাগ, কামরাঙ্গীরচর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, জাফরাবাদ, আদাবর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, গাবতলী, মিরপুর, শাহআলী, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কাফরুল, আগারগাঁও, শেরে বাংলানগর, তেজকুনিপাড়া, কাঠালবাগান, কলাবাগান, উত্তরা, উত্তরখান, দক্ষিণখান এলাকার অধিকাংশ রাস্তা খানাখন্দে ভরা। বর্ষায় কোনো কোনো এলাকার রাস্তা যানবাহর চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এর মধ্যে বর্ষা মৌসুম আসার সাথে সাথে শুরু হয়েছে খোড়াখুঁড়ির কাজ।
বিশ্বের মধ্যে অপরিকল্পিত আর বসবাসের অযোগ্যের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা। এ শহরের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও নাগরিক সুবিধা নিশ্চিতে সাতটি মন্ত্রণালয় ও ৫৪টি প্রতিষ্ঠান কাজ করে। তবে যুগ যুগ ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমন্বয়হীনতা চলে আসছে। এর মধ্যে পরিকল্পিত নগরায়নের জন্য রয়েছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। রয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ নামের দুটি সিটি করপোরেশন। রয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও ওয়াসার ঠেলাঠেলি। নাগরিক সুবিধার জন্য প্রতি বছর প্রতিবছর শত শত কোটি টাকার বরাদ্দ হয়। কিন্তু দুর্ভোগ কমে না। বরং দিন যতো যাচ্ছে দুর্ভোগ ততোই বাড়ছে।
জানা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বাজেট ছিল ২ হাজার ৮৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেট ছিল ১ হাজার ২৩১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে ঢাকা দক্ষিণের বাজেট ছিল ৩ হাজার ১৮৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেট ছিল ১ হাজার ৭৮৮ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রতিবছর উন্নয়ন প্রকল্পে বিরাট বরাদ্দ থাকলেও কাজ হয় খুব সামান্যই। অনেক ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজের কারণে কিছুদিন পরই আগের অবস্থায় ফিরে যায়। দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছিলেন নগরীর ৩০০টি সড়ক নির্মাণ, উন্নয়ন ও সংস্কার করা হয়েছে। ২১৪ দশমিক ৭২ কিলোমিটার রাস্তা, ৪৭ দশমিক ৩৯ কি.মি. ফুটপাত নির্মাণ, পানিবদ্ধতা নিরসনের লক্ষ্যে ২৩৯ দশমিক ১৫ কি.মি. নর্দমা নির্মাণ, ১৩৫ কি.মি. সড়ক নির্মাণ এবং ১৪০ কি.মি. ড্রেন নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে। ৩১০ কি.মি. নর্দমা পরিষ্কার করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর প্রতিফলন খুব একটা চোখে পড়ে না। কিছু কিছু এলাকায় কাজ শুরু হলেও সময়মতো শেষ হয়নি। যাত্রাবাড়ী এলাকায় রাস্তা ও ড্রেনে নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে ৮/৯ মাস আগে। এখনও সেগুলো চলমান। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সমান্তরালে যাত্রাবাড়ী থেকে শনিরআখড়া পর্যন্ত ড্রেন নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে সেই ৮ মাস আগে। এখনও ২০ শতাংশ কাজ হয়নি। বরং এই ড্রেন নির্মাণ কাজের জন্য দনিয়াসহ আশপাশের এলাকার পানি নিষ্কাশনে সমস্যা হচ্ছে। একটুখানি বৃষ্টিতে তলিয়ে যাচ্ছে দনিয়া এলাকা। এমনকি মূল সড়কের সাথে দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্ন দনিয়া এলাকা। তাতে কয়েক লাখ মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে।
সরেজমিনে ঘুরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার রাস্তার বেহাল দশা চোখে পড়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেহাল অবস্থা মালিবাগ-মৌচাক-রামপুরা সড়কটি। তিন বছর ধরে এই এলাকায় ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। তার সাথে যুক্ত হয়েছে খোঁড়াখুঁড়ি। গতকালের বৃষ্টিতেই ডুবে গেছে মালিবাগ এলাকার রাস্তাটি। বাসাবাড়ির সুয়ারেজের লাইন ফেটে মনুষ্য বর্জ্য ভেসে বেড়াচ্ছে সেই পানিতে। সাথে রাস্তার দীর্ঘ যানজটতো আছেই।
মালিবাগ রেলগেট থেকে আবুল হোটেল পর্যন্ত রাস্তাটি অল্প বৃষ্টিতেই ডুবে যায়। পুরো রাস্তায় বড় বড় গর্ত। খানাখন্দ, পানি-কাদায় যানবাহন তো দুরে থাক, মানুষই পায়ে হেঁটে চলতে পারে না। রাস্তা ও ফুটপাথের অনেকটাজুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রী। সরু রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলতে গিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে যানজটের। যা দিনরাত লেগেই থাকে।
মালিবাগ এলাকার বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই এই এলাকার ময়লা পানি যাওয়ায় ড্রেনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। ফ্লাইওভার নির্মাণের বিভিন্ন জিনিসে আটকে গেছে ড্রেনের পানি প্রবাহের রাস্তাগুলো। বহুদিন ধরে ময়লা পানি জমে আছে রাস্তায়। পানি জমে থাকায় রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। ভাঙা রাস্তা এবং যানজটের কারণে এখন বেশিরভাগ গাড়িই মালিবাগের রাস্তাটি উপেক্ষা করে চলে। রামপুরার বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবনের সামনের রাস্তাায় বহুদিন পর মেরামতের কাজ চলেছে। সেই কাজ শেষ হতে না হতেই শুরু হয়েছে খোড়াখুঁড়ির কাজ। প্রকৃতপক্ষে মালিবাগ রেলগেট থেকে রামপুরা হয়ে কুড়িল বিশ্বরোড পর্যন্ত ডিআইটি রোড ও প্রগতি সরণি এখন খানাখন্দে ভরা। খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বেহাল হয়ে আছে সড়ক ও ফুটপাত। এবার বৃষ্টির বেশি থাকায় জনসাধারণের দুর্ভোগ আরো বেড়েছে। অনেক জায়গায় কাদাপানিতে হাঁটার মতো অবস্থাও নেই। অন্যদিকে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের সামনের মহাসড়কটির দুই পাশেই চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। বাসস্ট্যান্ড থেকে তিব্বত পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে চলছে ড্রেন নির্মাণের কাজ। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভাঙা সড়ক। সড়কটিতে বড় বড় গর্ত, মাঝে মাঝে খানাখন্দ। যাতায়াতকারীরা পড়ের ভোগান্তিতে। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, মহাখালী গোল চত্বর থেকে তিব্বত মোড় পর্যন্ত সড়কের দুই পাশে ড্রেন নির্মাণের কাজ করছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। সড়কের দুই পাশে বড় বড় মাটির স্তুূপ ও সাড়ি সাড়ি ইট সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এতে সড়কের অধিকাংশ জায়গা ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া সড়কে পানি জমে থাকার কারণে অসংখ্য ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের সামনে ও একটু দক্ষিণের সড়কে দীর্ঘদিন থেকে বড় বড় গর্ত হয়ে আছে। এই রুট দিয়ে যাতায়াতকারী বাস, লেগুনা, রিকশা ও ভ্যানগাড়ি চালকরা পড়েছেন বেশি বিপাকে। গাবতলীতেও রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। গাবতলী থেকে টেকনিক্যাল পর্যন্ত রাস্তাটি সরু হয়ে যাওয়ায় যানজট লেগে থাকছে দিনরাত। গাবতলী থেকে কল্যাণপুর হয়ে শ্যামলী পর্যন্ত রাস্তাটিও ফেটে চৌচির হয়ে গেছে। যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে পারছে না এই রাস্তায়। শ্যামলী থেকে আগারগাঁওয়ের রাস্তাটিরও বেহাল দশা। আগারগাঁওয়েও রাস্তা কেটে ড্রেন নির্মাণের কাজ চলছে। যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তা থেকে পাইকারী বাজার হয়ে রাস্তাটি নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে গত বছরের শেষের দিকে। কিন্তু এখনও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। গত ঈদুল ফিতরে লাখ লাখ ঘরমুখি যাত্রীর ভোগান্তির কারণ ছিল এই রাস্তাটি। একইভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ধরে এসে ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে ঢাকায় প্রবেশের রাস্তাটিও খানাখন্দে ভরা বহুদিন ধরে। এর পাশেই আবার ড্রেনের কাজ চলছে। এতে করে যানবাহন ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকছে এই রাস্তায়। যানজট দীর্ঘ হচ্ছে শনিরআখড়া পর্যন্ত। পোস্তগোলা থেকে জুরাইন হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত রাস্তাটিও বেহাল দশা। খানাখন্দে ভরা এই রাস্তায় যানবাহন চলার মতো অবস্থা নেই। নগরীর অন্যান্য এলাকার রাস্তার এই দশা। বৃষ্টিতে বেশিরভাগ রাস্তাই চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এমনকি যে সব রাস্তা বর্ষার মধ্যে মেরামত করা হয়েছে সেগুলোও ভেঙ্গে একাকার হয়ে গেছে। সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী বছরের ৩০ এপ্রিল থেকে ৩০ অক্টোবর সড়ক খনন বন্ধ রাখার কথা। এটা নিশ্চিত করার দায়িত্ব ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের। কিন্তু নিজেরাই মানছে না সেই নীতিমালা। বর্ষা মৌসুমেও নগরীর অধিকাংশ এলাকায় চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনেরএকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে বলেন, এটা যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে। এর অর্থ হলো সমন্বয়হীনতা। তিনি এজন্য ঠিকাদারদের দায়ী করে বলেন, তারা নিজেদের স্বার্থে বর্ষা মৌসুমে কাজ করে। তাতে লাভটা একটু বেশি হয়। আর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই লাভের ভাগের আশায় তা অনুমোদন করে থাকেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।