Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুরনো ঢাকার উন্নয়ন প্রকল্প

| প্রকাশের সময় : ১ আগস্ট, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পুরনো ঢাকার জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে বহুতল আধুনিক ভবন নির্মাণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)। আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে রাজউক কাজ শুরু করেছে। গত রোববার বংশাল এলাকায় জরিপের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। এই এলাকার পুরনো, ঘিঞ্জি ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবন কতগুলো আছে, তার তালিকা করে আগামী ১০ থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে নগরভবনে একটি অবহিতকরণ সভা করবে রাজউক। প্রকল্পের মধ্যে থাকবে ভেঙ্গে ফেলা বাড়িঘরের জায়গায় বহুতল ভবন, প্রশস্ত রাস্তা, পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা, পার্কসহ উন্মুক্ত স্থান তৈরি করা। এই ডেভেলপমেন্ট প্রক্রিয়ায় কোনো জমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন পড়বে না। স্থানীয়দের মধ্যেই স্থাপনার মালিকানা থাকবে। সরকার কেবল তাদের সহযোগিতা করবে। শুরুতেই বংশালে একটি পাইলট প্রকল্পের কাজ করে এলাকাবাসীর মধ্যে সৃষ্ট সন্দেহ ও সংশয় দূর করা হবে। এভাবে যদি পুরনো ঢাকার উন্নয়ন করা যায়, তবে সুদীর্ঘকাল ধরে যে সমস্যা ও সংকট চলে আসছে তা দূর হয়ে পুরনো ঢাকা নতুন রূপ লাভ করবে। বসবাস উপযোগী একটি আধুনিক এলাকায় পরিণত হবে। রাজউকের এই পরিকল্পনা নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। আমরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্বে বসবাসের অনুপযোগী ও অসভ্য নগরীর তালিকায় শীর্ষ স্থান লাভ করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রখ্যাত পত্রিকা ইকোনমিস্টের ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের জরিপে বারবার ঢাকার দুর্দশার চিত্র উঠে এসেছে। বলা বাহুল্য, পুরো ঢাকা যখন বসবাসের অনুপযোগী তখন পুরনো ঢাকার চিত্র কতটা ভয়াবহ তা সকলেরই জানা। এখানে ন্যূনতম নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নেই বললেই চলে। জীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে বসবাসকারীরা প্রতি মুহূর্তে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করছে। যে কোনো সময় ভেঙ্গে পড়তে পারে, এ আশঙ্কা তাদের মধ্যে সবসময় বিরাজমান। এর পাশাপাশি রয়েছে সঙ্কীর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা, অপরিকল্পিত রাস্তা, যানজট, পানিবদ্ধতা, ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, অপর্যাপ্ত ও অস্বাস্থ্যকর পানি সরবরাহ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ আলো-বাতাসহীন নোংরা পরিবেশ। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মাঝারি মানের ভূমিকম্প হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে পুরনো ঢাকা। ভবন ধসে বিপুল মানুষের প্রাণহানি যেমন ঘটবে, তেমনি উদ্ধার কার্যক্রমও ব্যাহত হবে। পুরো এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিণত হবে। এ এলাকা অনেকের কাছেই বিস্ময় হয়ে আছে। কীভাবে এত সমস্যার মধ্যে মানুষ বসবাস করছে, তা অনেকের কাছে অকল্পনীয়। জীর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকার মধ্যেই একদিকে মানুষের বসবাস, অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন কর্মযজ্ঞ চলছে। নগরীর ভেতর এ এক অন্য জগত, যার সাথে অন্য কোনো এলাকার মিল নেই। নগরীর আধুনিক এলাকা থেকে পুরনো ঢাকা পুরোপুরি ভিন্ন একটি এলাকা। বলা বাহুল্য, কেউ একবার পুরনো ঢাকায় প্রবেশ করলে, তার ফিরে আসতে প্রায় পুরো দিন লেগে যাবে। তার শারিরীক ও মানসিক অবস্থাও সুস্থ্য থাকবে না। বলা হয়ে থাকে, পুরনো ঢাকায় যে একবার প্রবেশ করবে, সে এক অভাবনীয় অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে। অবহেলিত ও বঞ্চিত পুরনো ঢাকার উন্নয়ন করা নিয়ে বহু বছর ধরেই নগরবিদরা বিভিন্ন পরামর্শ দিয়েছেন। এসব পরামর্শ রাজউকের আমলে নিতে অনেক বছর লেগে গেছে। তারপরও বলতে হয়, রাজউক যে আরবান রিডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট নিয়েছে তা সাধুবাদযোগ্য। তার ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানের মধ্যে পুরনো ঢাকাকে প্রাধান্য দেয়া এবং কাজ শুরু করার বিষয়টি খুবই ইতিবাচক। আধুনিক বিশ্বের চিন্তা-ভাবনা প্রয়োগের মাধ্যমে পুরনো ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং যথাযথভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিলে ঢাকার চিত্র বদলে যাবে।
পুরনো ঢাকাকে আধুনিক রূপ দিতে রাজউকের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর এগিয়ে আসা উচিত। তাদের জীবনমান উন্নয়ন এবং নাগরিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতকল্পে এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে এ ধরনের পরিকল্পনার মাধ্যমে কার্যকর উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। রাজউকও এ ধরনের পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষের মতামত নিয়েই তার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। যার জমি বা জায়গা তারই থাকবে। স্বল্প জায়গায় বহুতল ভবন নির্মান করলে একদিকে অনেক মানুষের স্থান সংকুলানের পাশাপাশি প্রশস্ত রাস্তা-ঘাট, পার্ক, উন্মুক্ত স্থান যেমন সৃষ্টি হবে, তেমনি সব ধরনের নাগরিক সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে সন্দেহ ও সংশয় থাকা উচিত নয়। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীকে সবর্তোভাবে রাজউককে সহায়তা করা উচিত। আমরা মনে করি, শুধু পুরনো ঢাকাই নয়, এ ধরনের পরিকল্পনা রাজধানীর অন্যান্য সমস্যাসংকুল এলাকায়ও নিতে হবে। পুরনো ঢাকা থেকে শুরু করে কেরাণীগঞ্জ পর্যন্ত এ পরিকল্পনা সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। এভাবে মিরপুর, বাড্ডাসহ যেসব এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ ও নাগরিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত, সেসব এলাকায়ও এ ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। রাজধানী যেভাবে সম্প্রসারিত হচ্ছে, এ সম্প্রসারণ কাজেও রাজউকের পরিকল্পনা থাকতে হবে। এক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের দুই মেয়রকে পরিকল্পনার সাথে যুক্ত হতে হবে। ঢাকাকে বাসযোগ্য করে তুলতে হলে এ ধরনের এলাকাভিত্তিক সুষ্ঠু পরিকল্পনা নেয়ার বিকল্প নেই।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন