পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইনকিলাব ডেস্ক : বন্যায় মানুষের জান-মালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সড়ক যোগাযোগের পথ-ঘাট। বিশেষ করে যান চলাচলের কাঁচা পাকা সড়ক, পায়ে হাঁটা পথের করুণ দশা। রাস্তাঘাট সড়ক ভেঙে-চুরে তছনছ করে দিয়েছে এবারে বানের পানি। জামালপুরের ইসলামপুরে ৬টি ইউনিয়নের সড়কের বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। বন্যায় বিধ্বস্ত সড়ক তৈরিতে বিকল্প ব্যবস্থার দাবি করেছেন স্থানীয় জনতা। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সাঙ্গু নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে বিস্তীর্ণ জনপদ। বন্যার্ত ও ভাঙন কবলিত মানুষের ছন্নছাড়া জীবনের করুণ কথা ও সড়ক যোগাযোগের বেহাল দশা নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
ইসলামপুর (জামালপুর) থেকে ফিরোজ খান লোহানী জানান, বন্যার পানি নেমে গেলেও জামালপুর ইসলামপুরের ৬টি ইউনিয়নের সড়ক যোগাযোগ বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। এবারের বন্যায় উপজেলাা পশ্চিমাঞ্চলের কাচা ও পাকা সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য ভাঙন ও খানা খন্দকের সৃষ্টি হওয়ার ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। নোয়ারপাড়া, চিনাডুলী, বেলগাছা, কুলকান্দি, পাথর্শী ও সদর ইউনিয়নের বন্যাকবলিত গ্রামীণ সড়কে যাতায়াতকারী রিকশা, ভ্যান, ইজিবাইক, পিকআপ, ভটভটি ও নছিমন চালকরা যানচালাতে না পেরে বেকার হয়ে পড়েছেন।
সরজমিনে দেখা গেছে, বন্যায় পাকা সড়ক ভেঙে বলিয়াদহ ব্রিজ হয়ে আমতলি বাজারসহ চিনাডুলি ইউনিয়নের প্রায় সবকটি রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় অচল হয়ে পড়েছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। নোয়ারপাড়া ইউনিয়নের করিরতাইর থেকে উলিয়া থেকে সোনামূখী হয়ে জনতা বাজার পর্যন্ত রাস্তাসহ ২০টি পয়েন্টে পাকা সড়ক ভেঙে লন্ডভন্ড হয়েছে। প্রতিটি ভাঙায় থেকে ৫ থেকে ১০মিটার গর্তের সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেলগাছা ইউনিয়নের গুঠাইল, জারুলতলা হয়ে পশ্চিম বেলগাছা এবং কুলকান্দি সড়কটি অসংখ্য খানাখন্দে যাতায়াতে অচলাবস্থা হয়ে পড়েছে। সদর ইউনিয়নের পচাবহলা, ধর্মকুড়া হয়ে সোনামুখী সড়ক যোগাযোগ মেরামত না করা পর্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা হতে গুঠাইল বাজারের জন গুরুত্বপূর্ন সড়কটি যুদ্ধ ক্ষেত্রে পরিনত হয়েছে।
জানা যায়, এ বছরের পারম্ভেই গুঠাইল বাজার সড়কটি নির্মানের জন্য দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দূর্গা এন্টারপ্রাইজকে দেওয়া হয়েছে। নির্মান কাজ চলমান থাকা অবস্থায় সড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় তীব্র স্রোতে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে জনসাধারনকে প্রতিনিয়ত বর্ননাতীত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আট কিলোমিটার এ সড়কটিতে বানিয়াবাড়ী, কাছিমা, গুঠাইল, দেলীপাড়সহ বিভিন্ন জায়গায় অসংখ্য ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়ন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে সাধারন মানুষ।
অন্যদিকে, বন্যার পানি নেমে গেলেও প্লাবিত এলাকা ও নিম্নাঞ্চলের পানিবন্ধী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। রাস্তা-ঘাট কদমাক্ত হয়ে যাওয়ায় যাতায়াতের চরম দুর্ভোগে পোহাচ্ছে এসব এলাকার মানুষ।
এলাকাবাসীর জানান, যমুনা, ব্রহ্মপ্রত্র নদীর গতিবিধি ঠিক নেই। একেক সময় একেক রুপ ধারন করে। বন্যা কবলিত সড়কগুলো পানি উপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও যাতে করে কোন ক্ষয়ক্ষতি না হয় তার জন্য বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন। তারা আরো জানান, বন্যা কবলিত সড়কগুলো বিটুমিন সড়ক না করে ডালাইয়ের সড়ক তৈরি করলে হয়ত পানি প্রবাহিত হলেও পানি নেমে গেলে কোন ক্ষতি হবেনা।
জনগুরুত্বপূর্ন সড়কগুলোতে মানুষ ও যান চলাচলের অনুপযোগী বর্ধিত ভাড়া ও সময় অপচয়ের কারনে যাত্রীদের বর্ণনাতীত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলী ইউসুফ শাহী জানান, বন্যাকবলিত এলাকাগুলো প্রতিবছর বন্যায় আক্রান্ত হয়। এতে দূর্ভোগ লেগেই থাকে। তবে বিটুমিনের ব্যবহার না করে বিকল্প ব্যবস্থা কররে হয়ত এ সমস্যা সমাধান হতে পারে। ওইসব সড়কগুলোতে কজ্বওয়ে ও ডালাইয়ের রাস্তা প্রয়োজন। তাতে পানি নেমে গেলে জনসাধারনের চলাচলে দুর্ভোগ পোহাতে হবেনা বলে আমরা মনে করি।
উপজেলা প্রকৌশলী আহসান আলী জানান, এবারের বন্যায় ইসলামপুর থেকে গুঠাইল বাজার, আমতলী, বলিয়াদহ, কুলকান্দি, বেলগাছা, উলিয়া থেকে জনতা বাজার পর্যন্ত বেহাল অবস্থায় চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। প্রতিটি জায়গায় বিশাল গর্তের সৃষ্টি হয়ে ভোগান্তি চরম আকার ধারন করেছে। তবে বন্যা কবলিত এলাকা সড়কগুলো বিটুমিনের ব্যবহার না করে বিকল্প ব্যবস্থা করার প্রয়োজন। তাতে সড়কগুলো আক্রান্ত কম হতো। প্রতিটি সড়ক ভেঙে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় যান চলাচলসহ সাধারন মানুষের দুর্ভোগ রেড়েছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নবী নেওয়াজ খান লোহানী জানান, এবারের ভয়াবহ বন্যায় ইসলামপুর উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের ৭টি ইউনিয়নের প্রায় সকল সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ওইসব এলাকার প্রতিটি সড়কের উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় অসংখ্য ছোট বড় খানা খন্দক সৃষ্টি হয়েছে। অনেক পাকা সড়ক ভেঙে খাল বেড়িয়ে গেছে। এতে ইসলামপুরের ৬টি ইউনিয়নের সাথে উপজেলা শহরের সাথে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে ছৈয়দ জুনাইদ মোঃ হাবিব উল্লাহ জানান, পানি নামার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে সাঙ্গু নদীর ভাঙন। ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়ছে নদী তীরবর্তী মানুষ। একাদিক বার বাড়ি সরিয়েও রেহাই পাচ্ছেনা ভাঙন কবলিত মানুষ। যতবারই পেছনে যাচ্ছে তত ধেয়ে আসছে সাঙ্গু নদী। নদী গ্রাস করে নিয়েছে সাজানো গুচ্ছানো ঘরবাড়ি, আবাদি জমি, স্কুল, মাদরাসা, মসজিদ। চরতি ইউপি চেয়ারম্যান ডা. রেজাউল করিম জানান, এইভাবের বন্যায় সাঙ্গু নদীর ভাঙনে বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বড় বড় দালানও বিলীন হয়েছে সাঙ্গু নদীর গর্ভে। চরতিতে অন্তত শতাধিক মানুষ গৃহহীন হয়েছে। তিনি বলেন সল্প পরিসরে ত্রাণ বিতরণের চাইতে নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পুনর্বাসন করা জরুরি। গত ৩০ জুলাই উপজেলা প্রসাশন সূত্রে পাওয়া তথ্যে দেখা যায় বন্যায় কৃষিক্ষেত্রে ও অবকাঠামো খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে এইবারের বন্যায় ১০ হেক্টর জমির ফসল সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩ হেক্টর আউশ, ২ হেক্টর আমন বীজতলা ৫ হেক্টর শাক-সবজির ক্ষেত। অবকাঠামো খাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসা ও বিভিন্ন স্থাপনে। উপজেলা প্রকৌশলী মো: সোলাইমান বলেন এবারের বন্যায় রাস্তা ঘাটা ২৫-৩০% ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। শিক্ষ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে এবারের বন্যায় বন্যা কবলিত প্রাথমিক বিদ্যালয় ৫টি, উচ্চ বিদ্যালয় ২টি, ২টি মাদরাসায় পানি প্রবেশ করে অবকাঠামো বাপক ক্ষতি হয়েছে। এদিকে সাতকানিয়া প্রায় লক্ষাধিক বানভাসী মানুষের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষথেকে ৫ মেটিকট্রন খাদ্যশষ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকতে কামরুল হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।