Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জট হ্রাস ও সমন্বয়ের তোড়জোড়

| প্রকাশের সময় : ৩১ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর সচলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়ন শুরু কাল
অবকাঠামো ও যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে জটের খেসারত বেড়েই চলেছে
শফিউল আলম : বেসামাল বন্দরজট কমানো এবং সেই বহুল প্রত্যাশিত ‘সমন্বয়’ সাধনের জন্য অবশেষে চলছে নজিরবিহীন তোড়জোড় দৌঁড়ঝাপ। যা নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়, বন্দর-শিপিং ও কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিদের কাছে দীর্ঘদিন ধরেই ছিল কার্যত উপেক্ষিত ব্যাপার।
তবে শেষ মুহূর্তের তোড়জোড় তৎপরতা কতদূর সুফল বয়ে আনবে কিংবা কিছুদিন পর তা ফিকে হয়ে যাবে কিনা এ নিয়ে পোর্ট-শিপিং সার্কেলে চলছে ব্যাপক আলোচনা-পর্যালোচনা। গত প্রায় তিন সপ্তাহ যাবত সংশ্লিষ্ট শীর্ষকর্তাদের দফায় দফায় ঢাকা ও চট্টগ্রামে সমন্বয় সভা-মিটিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ার পেছনে মূল কারণটি হলো, সাত দিনে ২৪ ঘণ্টা চট্টগ্রাম বন্দর কর্মকান্ড সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা বাস্তবায়ন শুরু হতে যাচ্ছে আগামীকাল ১ আগস্ট (মঙ্গলবার) থেকে। আমদানি-রফতানি বাণিজ্য একই সাথে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়াকে আরও গতিশীল করে বন্দর-কাস্টমস ভিত্তিক সেবার পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী গত ২ জুলাই সচিবদের সভায় দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম এবং কাস্টম হাউস ২৪ ঘণ্টা সচলের জন্য কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক (২৪/৭) চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টম হাউস চালু রাখার এই সিদ্ধান্তকে দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পোদ্যোক্তা বন্দর ব্যবহারকারী আমদানি-রফতানিকারকমহল একবাক্যে স্বাগত জানিয়ে আসছেন। তারা আশা করেন, এরফলে জাতীয় অর্থনীতি সবল হবে। সেই সঙ্গে তারা দেশের অর্থনীতির হৃদপিন্ড চট্টগ্রাম বন্দরকে কন্টেইনারসহ পণ্যের জট এবং জাহাজের জট থেকে মুক্ত করতে বিদ্যমান সমস্যা-সঙ্কট চিহ্নিত করে অবিলম্বে এর স্থায়ী সমাধানের জন্য জোরালো তাগিদ দিয়েছেন। স্টেকহোল্ডার তথা বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে সেবাদানকারী অর্থাৎ নৌ মন্ত্রণালয়, বন্দর, শিপিং, কাস্টমস ও অপরাপর সরকারি সংস্থা, বিভাগগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতা দীর্ঘদিনের। এর পাশাপাশি সার্বিক অদক্ষতা, বন্দরে জেটি-বার্থ টার্মিনাল ইয়ার্ডের ঘাটতি এবং বিভিন্ন ধরনের অত্যাবশ্যকীয় যান্ত্রিক সরঞ্জামের স্বল্পতা বন্দরকে ক্রমাগত স্থবির করে দিয়েছে। বছর বছর খোলা সাধারণ পণ্য ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং খাতে যথাক্রমে ১৮ শতাংশ এবং ১৪ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি ঘটছে। অথচ সেই তুলনায় বন্দরের অবকাঠামো ও যান্ত্রিক সক্ষমতার ক্ষেত্রে ঘাটতি বাড়তে বাড়তে চরম দৈনদশায় গিয়ে ঠেকেছে। এর অনিবার্য ফলাফলই হচ্ছে বর্তমান জট পরিস্থিতি। এই জট দ্রæত মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর সচল রাখতে শীর্ষ কর্মকর্তারা বন্দর ব্যবহারকারীদের সাথে এখন ঘন ঘন বৈঠকে বসছেন। আজও (সোমবার) হতে যাচ্ছে একটি উচ্চপর্যায়ের সমন্বয় সভা।
প্রসঙ্গত এক এগারো পরবর্তী তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সময়ে চট্টগ্রাম বন্দর কার্যক্রম তিন শিফটে সচলের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বন্দর ও কাস্টমসের সেবাকে আরো গতিশীল করতে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়। টাস্কফোর্সের অন্যতম প্রধান উদ্যোগ ছিল দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর ও বন্দর-ভিত্তিক কাস্টমসকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের আওতায় আনা। এর সঙ্গে চট্টগ্রাম ইপিজেডকেও সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে পরবর্তী সময়ে কতিপয় স্বার্থান্বেষী কর্তাব্যক্তির অনীহার কারণে এসব উদ্যোগ বেশিদূর অগ্রসর হয়নি।
এদিকে অপরিহার্য জেটি-বার্থ টার্মিনাল, ইয়ার্ডসহ অবকাঠামোর সঙ্কট এবং বিভিন্ন ধরনের বিশেষত কন্টেইনার হ্যান্ডলিয়ের উপযোগী যন্ত্রপাতির ঘাটতিতে এখন ধুঁকছে চট্টগ্রাম বন্দর। এর জেরে বছরের উল্লেখযোগ্য সময় ধরেই বিরাজ করছে জাহাজ ও কন্টেইনারের জট। আর জটের পেছনে ডেমারেজ, কনজেশন সারচার্জ, মাসুলসহ বিভিন্ন খেসারত বেড়েই চলেছে। ইতোমধ্যে মেইন লাইন অপারেটর (এমএলও) শিপিং কোম্পানি ও এজেন্টদের মাধ্যমে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে যে, জটের পরিস্থিতিতে জাহাজ ও শিপিং বাণিজ্যের পরিচালন ব্যয় বেড়ে গেছে। এটি পুষিয়ে তুলতে কনজেশন বা জটের সারচার্জ আদায় করা হবে। এরজন্য বিভিন্ন রেইটও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম অভিমুখী কন্টেইনার জাহাজের পরিচালনার বাড়তি খরচের বিপরীতে উপরোক্ত সারচার্জ আদায়যোগ্য হবে। জাহাজ অপারেটর ও এজেন্টরা বলছে, জটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে ভিড়ার জন্য বহির্নোঙরে একেকটি জাহাজকে দিনের পর দিন অলস অপেক্ষায় কাটাতে হচ্ছে। আর এর পেছনে ফিক্সড অপারেটিং কস্ট বাবদ প্রতিটি জাহাজকে দৈনিক ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার ডলার হারে ডেমারেজ বা লোকসান গুণতে হচ্ছে।
অবশ্য চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, এখন বন্দরে জট পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। জাহাজ ও কন্টেইনারের জট সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসবে। এরজন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ ইতোমধ্যে কার্যকর করা হয়েছে। তাছাড়া বন্দরের জেটি-বার্থে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যেই আমদানি কন্টেইনারজাত সব পণ্য খালাস এবং রফতানি পণ্য জাহাজীকরণের জন্য সময়সীমা বা কাট অফ টাইম বেঁধে দেয়া হয়েছে। এতে বন্দরে জাহাজ অলস অপেক্ষার কিংবা জটের সুযোগ নেই। তবে রফতানিমুখী পোশাক শিল্প মালিকরা কাট অফ টাইমে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কথা জানিয়ে বলছেন, অনেক সময়ই জাহাজগুলো রফতানি চালানের কন্টেইনার জাহাজে না তুলেই বন্দর জেটি ছেড়ে যাচ্ছে।
এদিকে সার্বক্ষণিক চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমস কার্যক্রম সচলের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে সঠিক এবং সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হিসেবে স্বাগত জানান চিটাগাং চেম্বারের পরিচালক ও পোর্ট ইউজার্স ফোরামের সদস্য মাহফুজুল হক শাহ। তিনি গতকাল ইনকিলাবকে জানান, এর মধ্যদিয়ে দেশের ব্যবসায়ী-লিল্পোদ্যোক্তাদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হলো। তিনি প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করার জন্য, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামো এবং যান্ত্রিক সরঞ্জামের স্বল্পতা পরিপূরণের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেয়ার তাগিদ দেন। বন্দর-নির্ভর বেসরকারি আইসিডিসমূহের (অফডক) বিদ্যমান সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা নিরসন করে সামগ্রিকভাবে চট্টগ্রাম বন্দরকে সত্যিকার অর্থে একটি জবাবদিহিতামূলক প্রতিষ্ঠানে উন্নীত করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চট্টগ্রাম

৩০ জানুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ