পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
চট্টগ্রামে খানাখন্দ গর্তে একাকার সড়ক রাস্তাঘাট : বর্ষণ জোয়ার ঢলে বিপর্যয় আমদানি-রফতানি ব্যাহত : সংস্কার কাজে ৩ হাজার ৩শ’ কোটি টাকার প্রকল্প
শফিউল আলম : “অ-বাজি আর ক্যানে গাড়ি চালাই যাইতাম। ন দেইখতা লাইগ্যনা পুরা রোডত কত্তর ঢঁর ঢঁর গাঁথা!”। (বাবাজি, আর কীভাবে গাড়ি চালিয়ে যাব। দেখছে না আগাগোড়া রোডজুড়ে কত বড় বড় গর্ত)। গতকাল (শনিবার) তখন সকাল ১০টা। একজন বাসযাত্রী বিরক্তির সুরে বলেন, ‘চাচা, বহদ্দারহাট আসতেই এক ঘণ্টা।
এভাবে আগ্রাবাদে কাজে যাব কখন?’ তখন বাসচালক কষ্ট হতাশা সখেদে ওই কথাগুলো বলছিলেন। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের মূল সড়ক চান্দগাঁও কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ছেড়ে আসা সিটি সার্ভিসের বাসভর্তি যাত্রী। সড়কজুড়ে কাদা-পানি আবর্জনায় ভরা খানাখন্দ গর্তগুলো একে একে অতিক্রম করে তাও যানজটের মধ্যেই বাস চলছে শামুকের গতিতে। একই সড়কে আশপাশে সারি সারি যানবাহনও একই দশায় পড়ে ‘হাঁটছে’। ক্ষণে ক্ষণে বাস গর্তে পড়ে উল্টেপাল্টে গিয়ে ধাক্কা খেতে খেতে যাত্রীদের হাড্ডি-মাংস এক হয়ে যাচ্ছে। রাস্তার ময়লা কাদা-পানি ছিঁটকে পড়ছে বাসের ভেতরেও।
মোদ্দা কথায় অসহনীয়-অবর্ণনীয় ভোগান্তি যাত্রীদের। যা গত কয়েক মাস যাবত দেশের বাণিজ্যিক নগরী ও বন্দরনগরী চট্টগ্রামের নিত্যদিনের চিত্র। তবে ইদানীং নগরীর কর্মমুখী লাখো মানুষের কষ্ট-দুর্ভোগের মাত্রা কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। শুধুই তাই নয়; সড়ক রাস্তাঘাটের চরম দুর্দশার কারণে চট্টগ্রাম বন্দরমুখী ও বহির্মুখী পণ্যসামগ্রী, শিল্প-কাঁচামাল পরিবহন ব্যাহত হচ্ছে। ট্রান্সপোর্ট এজেন্সিগুলো পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করেছে ১৫-২০ ভাগ। সামগ্রিক আমদানি ও রফতানি ব্যবসা-বাণিজ্যে পড়েছে বিরূপ প্রভাব।
এদিকে অতিবৃষ্টি জোয়ার ও ঢলে মহানগরীর ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক রাস্তাঘাট সংস্কারের লক্ষ্যে বড় ধরনের প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ গতকাল ইনকিলাবকে বলেছেন, এরজন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের কাছে (এলজিআরডি) ২ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার বরাদ্দ চেয়েছি। তাছাড়া ৮শ’ কোটি টাকার একটি প্রকল্প একনেকে অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। মোট ৩ হাজার ৩শ’ টাকার এই বরাদ্দ পাওয়া গেলে শিগগিরই রাস্তাঘাট সড়ক সংস্কারের ব্যাপক কার্যক্রম শুরু হবে। আমরা আগামী অক্টোবর মাস থেকেই সড়কগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশাবাদী। তিনি জানান, নগরীর ১১শ’ ৭৪ কিমি সড়কের মধ্যে ইতোপূর্বে যে সাড়ে ৩শ’ কিমি সড়কের ক্ষতি হয়েছিল গতকয়েক সপ্তাহের জোয়ার ও বর্ষণে ক্ষয়ক্ষতি আরও বেড়ে গেছে। এ ব্যাপারে হিসাব-নিকাশ হচ্ছে।
১২০ বর্গমাইল আয়তনের চট্টগ্রাম মহানগরীজুড়ে মোট ১১শ’ ৭৪ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। বন্দরনগরীর যোগাযোগ ব্যবস্থার ‘লাইফ লাইন’ হিসেবে বিবেচিত পূর্বে কালুরঘাট মোহরা-চান্দগাঁও-বহদ্দারহাট-মুরাদপুর-২নং গেইট-জিইসি-লালখানবাজার-আগ্রাবাদ-বন্দর কাস্টমস-সল্টগোলা-ইপিজেড থেকে শুরু করে শাহআমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত মূল সড়কটি এখন খানাখন্দে নাজুকদশায় রয়েছে। তাছাড়া পোর্ট কানেকটিং রোড, মুরাদপুর-অক্সিজেন, বায়েজিদ, আগ্রাবাদ এক্সেস রোড, জাকির হোসেন রোড, শাহআমানত সেতুমুখী রোড, বাকলিয়া, পশ্চিমে পতেঙ্গা কাটগড়, হালিশহর, পাহাড়তলী, সাগরিকা, কাট্টলী প্রভৃতি রোডে যানবাহন চলাচল অনেক স্থানেই দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। জটের কবলে পড়ে মানুষের লাখ লাখ কর্মঘণ্টার অপচয় হচ্ছে। নগরীজুড়ে হাতেগোনা রাস্তাঘাট সড়ক এখন খুঁজে পাওয়া যাবে যেটিকে ‘ভালো’ বলা যায়। অধিকাংশই চাঁদের পিঠের মতো ভাঙাচোরা এবড়োথেবড়ো হয়ে গেছে। প্রায় সর্বত্রই খানাখন্দ গর্তে একাকার সড়ক রাস্তাঘাট। অব্যাহত ভারী বর্ষণ, প্রবল সামুদ্রিক জোয়ার ও পাহাড়-টিলা বেয়ে নেমে আসা ঢলের কারণে মহানগরীর সড়ক রাস্তাঘাট বিপর্যস্ত প্রায়। কোথাও কোথাও রাস্তাঘাটের সাথে ভাঙাচোরা ফুটপাত ও নালা-নর্দমা, খাল-ছরা একাকার হয়ে গেছে। পুরো নগরী ও শহরতলী এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বলতে গেলে ভেঙে পড়ার উপক্রম। বাস-মিনিবাস, প্রাইভেট গাড়ি, ট্রাক কাভার্ড ভ্যানসহ বিভিন্ন ধরনের যান চলাচলের ক্ষেত্রে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে অধিকাংশ সড়ক রাস্তাঘাট। কয়েকটি সড়কে গণপরিহন চলাচল গত প্রায় এক মাস ধরে বন্ধ হয়ে গেছে। খানাখন্দ গর্তে ভরা রাস্তাঘাট কোনমতে পাড়ি দিলেও যানবাহনের যন্ত্রাংশ বিনষ্ট হচ্ছে বা ভেঙে যাচ্ছে। আর এই সুবাদে কোন কোন রুটে বাস-মিনিবাস, হিউম্যান হলার, টেম্পুসহ গণপরিবহনে যথেচ্ছ বেশিহারে ভাড়া উসুল করে নেয়া হচ্ছে। এতো ভোগান্তির পরও কর্মমুখী অগণিত মানুষ সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না।
নগর পরিকল্পনা বিশেষজ্ঞদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, এ বছর অব্যাহত বর্ষণ, জোয়ার ও ঢল মিলে নগরীর সড়ক রাস্তাঘাটের সবচেয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি জুলাই মাসের গোড়াতে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন সাংবাদিকদের জানান যে, নগরীতে তখন পর্যন্ত (জুন) সাড়ে ৩শ’ কিমি সড়ক রাস্তাঘাট সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। কিন্তু এ মাসে তা আরও ছাড়িয়ে গেছে। বিগত এপ্রিল মাস থেকে জুনের গোড়ায় পর্যন্ত আগাম বেশ কিছুদিন ভারী বর্ষণ ও জোয়ার (প্রাক-বর্ষা) এবং জুন থেকে চলতি জুলাইয়ে এ যাবত হঠাৎ হঠাৎ মাত্রাতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের প্রবণতা (ইনটেনসিটি) বেশিই পরিলক্ষিত হয়ে আসছে। আর সেই সাথে উপর্যুপরি সামুদ্রিক জোয়ার যোগ হয়ে মহানগরী ঘন ঘন ডুবে গিয়ে রাস্তাঘাট সড়কের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ঘটে গেছে।
এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরীতে ঘন ঘন পানিবদ্ধতার সঙ্কট নিরসনে এবং এর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক রাস্তাঘাট মেরামত, সংস্কার ও অবকাঠামো উন্নয়নে চট্টগ্রাম সিটি পর্পোরেশন বিভিন্ন ধাপে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে মোট ৬ হাজার ৫শ’ ২৪ কোটি টাকার ৩টি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্প বর্তমানে সরকারের চূড়ান্ত অনুমোদনের পর্যায়ে রয়েছে। প্রকল্পের মধ্যে রাস্তাঘাট সড়ক ও অবকাঠামোর উন্নয়নে ৯শ’ ২৪ কোটির দু’টি প্রকল্প আসন্ন একনেক সভায় উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। পানিবদ্ধতার সমস্যা নিরসনে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার অপর একটি প্রকল্প চীনের সঙ্গে জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়নের টার্গেট রেখে সরকারের বহিঃসম্পদ বিভাগে (ইআরডি) অনুমোদনের জন্য প্রেরিত হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।