পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
রাস্তা-ঘাট, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি : ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ
ইনকিলাব ডেস্ক : গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে নতুন করে আরো অনেক এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তবে ধীরে ধীরে পানি কমছে আর বাড়ছে নদীভাঙন। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ। সাতকানিয়ায় বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে, সাঙ্গু ও হাঙ্গর খালের ভাঙনে গ্রামীণ সড়কের বেহাল দশা। চন্দনাইশে টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাতে উপজেলার নিম্মাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। এতে করে জনজীবনে চরম দুর্দশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে। ফেনীতে এখনো পানিবন্দী ৩০ গ্রামের মানুষ, ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। রাজবাড়িতে ভারী বৃষ্টিতে ভেঙে গেছে পাকা সড়ক, শুরু হয়েছে নদীভাঙন। কপোতাক্ষের উপচেপড়া পানিতে তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়ে মাছের ঘেরসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় চিলাখাল চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার ভাঙনের মুখে। কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে ভয়াবহ বন্যায় ৪০ গ্রামের শত-শত পরিবার পানিবন্দি জীবন কাটাচ্ছেন। বন্যা-ভাঙন কবলিত ও পানিবন্দি মানুষ খাদ্য ও আশ্রয় সঙ্কটে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। দেশের বানভাসী মানুষের দুঃখ কষ্টের কথা তুলে ধরে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো তথ্যের আলোকে ডেস্ক রিপোর্ট-
আনোয়ারা (চট্টগ্রাম) থেকে জাহেদুল হক জানান, কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে উপজেলার দেড় সহস্রাধিক পুকুর ও চিংড়ী ঘের প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে প্রায় কোটি টাকার মাছ। সেই সাথে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অসংখ্য বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। গেল বছরের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবারও ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ায় এসব চাষিদের পথে বসার উপক্রম হয়েছে।
জানা যায়, উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের রাঙ্গাদিয়া, বারশত ইউনিয়নের গোবাদিয়া, মাঝের চর, পশ্চিম তুলাতলী, দুধকুমড়া, রায়পুর ইউনিয়নের ফুলতলী, দক্ষিণ গহিরা, চংকারদিয়া ও জুঁইদন্ডী ইউনিয়নের চরজুঁইদন্ডী, পশ্চিম জুঁইদন্ডী এবং পঙ্খীরদিয়ায় অর্ধশতাধিক চিংড়ী ঘের রয়েছে। গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে এসব মৎস্য ঘের তলিয়ে ভেসে গেছে প্রায় ২৬ লাখ টাকার ৮.২৭ মেট্রিক টন চিংড়ী ও সাদা মাছ। তাছাড়া জোয়ারের স্রোতে অধিকাংশ মৎস্য ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় এখনও উঠানামা করছে জোয়ারের পানি। তবে এসব মৎস্য ঘেরে নেট জাল দিয়ে মাছ আটকানোর ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছেন চাষিরা। দুধকুমড়া গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত চিংড়ী ঘেরের মালিক নুর মোহাম্মদ (৫২) জানান, ৭৭ একর জমিতে তার তিনটি চিংড়ী ঘের রয়েছে। তারমধ্যে ৫০ একর আয়তনের চিংড়ী ঘেরের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। অপর দুটিও জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে। এখনও জোয়ারের পানি উঠানামা করছে। এতে ঘেরের প্রায় ১০ লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। এভাবে তার আশপাশের প্রায় ৩৫টি চিংড়ী ঘেরের মালিকরাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে তিনি জানান।
এছাড়া অতি বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১৫৫ হেক্টর মোট আয়তনের প্রায় ৮৭০টি পুকুর। এসব পুকুরের প্রায় ৫০ লাখ টাকা মূল্যের সাড়ে বত্রিশ মেট্রিক টন দেশীয় প্রজাতির মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
সাতকানিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে ছৈয়দ জুনাইদ মোঃ হাবিব উল্লাহ জানান, চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দূর্ভোগ বেড়েছে বানভাসী মানুষের। গত ২৬ জুলাই ভারি বর্ষণ না হওয়ায় গতকাল ভোর থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। তবে এখনো পর্যন্ত উপজেলার কেঁওচিয়া, ঢেমশা, ছদাহা, পশ্চিম ঢেমশা, নলুয়া, আমিলাইষ, চরতী, কালিয়াইশ ইউনিয়নের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্ধী রয়েছে। এসব এলাকার অধিকাংশ গ্রামীন সড়ক পানির নিচে রয়েছে। প্রধান সড়ক থেকে পানি নেমে যাওয়ায় চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়ক ও সাতকানিয়া-বাঁশখালী সড়কে যান চলাচল শুরু হয়েছে। ছদাহা ইউ.পি চেয়ারম্যান মোসাদ হোসেন চৌধুরী জানান হাঙ্গর খালের বাঁধ ভেঙ্গে পানির তিব্র স্রোত লোকালয়ে প্রবেশ করায় অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। সাঙ্গু নদীর ভাঙনে পুরানগড়, বাজালিয়া, ধর্মপুর, কালিয়াইশ, চরতী ইউনিয়নের অধিকাংশ সড়ক নষ্ট হয়ে গেছে। দক্ষিণ চরতী আদর্শ দাখিল মাদরাসা, মসজিদসহ অনেক স্থাপনা ইতিমধ্যে সাঙ্গু নদীতে বিলিন হয়ে গেছে। প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি এখন হুমকির মুখে। এতেকরে বানভাসী মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। বন্যায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হলেও এখনো পর্যন্ত সরকারি তরফ থেকে কোন সহায়তা পৌঁছায়নি। উপজেলার প্রকল্প কর্মকর্তা কামরুল হোসেন জানান, সাতকানিয়ায় অন্তত লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। এদের জন্য ২০ মেট্রিকটন খাদ্য শস্য ও নগদ ১০ লক্ষ টাকা চাওয়া হয়েছে। তবে এখনোপর্যন্ত কোন সহায়তা পাওয়া যায়নি। পানিবন্দি মানুষের মাঝে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেওয়ায় এসব এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ত্রাণ সামগ্রী প্রেরণ করা প্রয়োজন। সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন- বন্যায় ক্ষয়-ক্ষতির বিষয়ে আমরা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে রিপোর্ট দিয়েছি। বন্যার্থ মানুষের জন্য খাদ্য শস্য ও নগদ টাকা চাওয়া হয়েছে। বরাদ্ধ পাওয়া সাপেক্ষে তা বিতরণ করা হবে। সাঙ্গু নদী ও হাঙ্গর খালের পাদদেশে পাথর ঢালাই এবং গ্রামীণ নষ্ট সড়কগুলো দ্রæত মেরামতের দাবি এলাকাবাসীর।
চন্দনাইশ (চট্টগ্রাম) থেকে: এম. এ. মোহসীন জানান, চট্টগ্রামের চন্দনাইশে গত দুই দিনের ভারী বর্ষনে ও পাহাড়ী ঢলে উপজেলার সবক’টি ইউনিয়নে নিম্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে কৃষকদের রোপন করা আউশ ধানের চারা গাছসহ মৌসুমী ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে দফায় দফায় ভারী বর্ষন, পাহাড়ী ঢল ও ঘূর্নি ঝড়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতিতে কৃষকেরা হতাশায় পড়ে ছিল। কিছুদিন পর বন্যার পানি নেমে গেলে কৃষকেরা তাদের হতাশ কেটে আবার ও আউশ ধানের চারা রোপন করেন। কিন্তু গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষনে আউশ ধানের চারাসহ মৌসুমী ফসল পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কৃষক মোস্তফিজ জানান, ডুবে যাওয়া আউশ ধানের চারা গাছ থেকে দ্রুত পানি নেমে না গেলে আউশ ধানের চারা গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। এই ভেবে এখানকার কৃষকেরা আবারও হতাশায় পড়েছেন। কোন কোন কৃষক জমি বর্গা নিয়ে, বীজধান কিনে দৈনিক ৫ শ’ টাকা মজুরি দিয়ে এবং পর্যাপ্ত সার প্রয়োগ করে। কিন্তু গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণ সব শেষ করে দিয়ে গেছে বলে জানান স্থানীয় কৃষকরা। আউশ ছাড়াও যে সব ফসলের ক্ষেতে পানি জমে আছে, সে সব ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হবে। তা ছাড়া মাছ চাষিদের মাছের পুকুর, ডোবা ও ঘের পানিতে ডুবে গেছে। মাছ চাষি আবদুস ছালাম জানান, চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই দফায় দফায় টানা ভারী বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলে পুকুর, ডোবা ও ঘের ডুবে যাওয়ায় মাছ চাষিরাও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছচাষি বদিউল আলম জানান, তার একটি পুকুর ডুবে প্রায় দুই লক্ষ টাকার মাছ পোনাসহ পানিতে তলিয়ে গেছে। গত কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে উপজেলার নিম্মাঞ্চলের রাস্তা-ঘাট ডুবে গেছে। এতে করে জনজীবনে চরম দুর্দশা দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পড়াশুনা ব্যাহত হচ্ছে।
ফেনী থেকে মোঃ ওমর ফারুক জানান, টেকসই ও মানসম্পন্ন বেড়িবাঁধ না থাকায় ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া এবং অভয়া নদীর ৯ স্থানে ভাঙনের ফলে সোনাগাজীতে বেড়িবাঁধের বাইরে ও দাগনভূঁঞাতে ছোট ফেনী নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে প্রবেশ করলে অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়। গত ১ সপ্তাহ ধরে এ সকল উপজেলার মানুষ পানিবন্দী জীবন অতিবাহিত করলেও বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শন ভুক্তভোগী ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণ ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পাহাড়ী ঢলে মুহুরী, কহুয়া, সিলোনীয়া, অভয়া ও ছোট ফেনী নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হলে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার ২০ গ্রাম প্লাবিত হয়। এসময় পানির প্রবল স্র্রোতে মুহুরী বেড়িবাঁধের ফুলগাজী অংশের দেড়পাড়া গ্রামে ২ স্থানে দৌলতপুর গ্রামের ২ স্থানে ও ঘনিয়ামোড়া ও শালধরে একস্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এছাড়া পরশুরামের মুহুরী ও কহুয়া নদীর বেড়াবাড়িয়ায় ১ স্থানে, বক্রমাহমুদে ১ স্থানে এবং সুবার বাজার পাটনিকোনা নামক স্থানে অভয়া নদীর ১ স্থানে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। এদিকে জেলার উপকূলীয় এলাকা সোনাগাজী ও দাগনভূঁঞাতে ছোট ফেনী নদী হয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে ১৮ গ্রাম প্লাবিত হয়। এদিকে টানা বর্ষণ বন্ধ হলেও এখনো পানিবন্দী রয়েছে প্রায় ৩০ গ্রামের মানুষ।
বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে ফোন করা হলে ফেনী পাউবোর সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় বন্যার পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় বর্তমানে পানির প্রবাহ বিপদসীমার নিচে রয়েছে। যে সকল এলাকায় জরুরী ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া দরকার সেখানে পাউবোর পক্ষ থেকে জরিপ চালানো হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেন তিনি।
গোয়ালন্দ (রাজবাড়ি) থেকে নজরুল ইসলাম জানান, রাজবাড়ি জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার নারুয়া ও জঙ্গল ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত গড়াই নদীতে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে ভাঙন। তাছাড়া গত কয়েক দিনের অতিবৃষ্টিতে পাকা সড়ক, কবরস্থান, ঘরবাড়ি, গাছপালা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
মরাবিলা গ্রামের হারুন অর রশিদ বলেন, তার বাড়ির ৩-৪টি গাছ গড়াই নদীর ভাঙনে বিলিন হয়েছে। বাড়ি-ঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। যে ভাবে ভাঙছে তাতে দুই তিন দিনের মধ্যেই ঘর-বাড়ি নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। তার মতো এরকম অনেকের ঘরবাড়ি, গাছপালা নদী গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে।
নারুয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, গত বছর তার ফসলী জমি ও গাছপালা নদীতে বিলীন হয়েছে। এ বছরও পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তার বাড়ির সামনে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। দ্রæত ভাঙন প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহন করা প্রয়োজন।
নারুয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুস সালাম বলেন, প্রতি বছরই গড়াই নদীর ভাঙনে নারুয়া ইউনিয়নের মরাবিলা, কোনাগ্রাম, জামসাপুর, নারুয়া, সোনাকান্দর, বাঙ্গরদাহ এলাকা ভেঙ্গে যাচ্ছে। বিগত বছরে নির্মানকৃত পাকা সড়ক নারুয়া খেয়াঘাট ও মরাবিলা এলাকায় ভেঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ বছরও পাকা সড়ক নদীতে চলে গেছে। নতুন করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে দ্রæত কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহন করা প্রয়োজন হয়ে দাড়িয়েছে। ভাঙন প্রতিরোধ না করলে নতুন রাস্তাও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে। নদী ভাঙনের ফলে অনেকে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভাঙন প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পত্র প্রেরনের মাধ্যমে অবগত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, গড়াই নদীর ভাঙন প্রতিরোধ করতে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পত্র প্রেরন করা হয়েছে। চেয়ারম্যানের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোর তালিকা তৈরী করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা থেকে আব্দুল ওয়াজেদ কচি জানান, টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানিতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দেয়াড়া ও জয়নগর ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়ে ২ হাজার বিঘা মৎস্য ঘেরসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি পানি ঢুকে প্লাবিত হয়েছে ওই এলাকার জনপদ ও বসত বাড়িতে। সরেজমিনে খোজ নিয়ে জানা যায়- টানা বৃষ্টিতে কপোতাক্ষ নদের উপচেপড়া পানিতে কপোতাক্ষ তীরবর্তী মাছের ঘের, বসতিবাড়ি শাক শবজি ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ব্যাংক বীমা, সমিতি থেকে ঋণ নেওয়া মানুষের মৎস্য ঘের ভেসে যাওয়ায় তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জয়নগর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামছুদ্দীন আল মাসুদ জানান, তার ইউনিয়নে কপোতাক্ষ নদের উপচে পড়া পানিতে ক্ষেত্রপাড়া, বসন্তপুর, মানিকনগর, খোরদো-বাটরা, গাজনায় কয়েকটি বসত বাড়ি ও ২ হাজার বিঘা মৎস্য ঘের তলিয়ে গেছে। তবে সরকারী ভাবে এখনও কোন ত্রান সামগ্রী ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে পৌছাইনি। তিনি সর্ব সময় ক্ষতিগ্রস্থদের খোজ খবর নিচ্ছেন। এ সব অসহায় মানুষদের জন্য সরকারী ভাবে ত্রান সামগ্রীর জন্য তিনি জেলা প্রশাসকের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ তোলে বলেন, কপোতাক্ষ নদ খনন ও বেড়িবাধ নির্মাণের কাজে অবহেলা করায় কপোতাক্ষের উপচে পড়া পানি তীরবর্তীসহ পার্শ্ববর্তী জনবসতিতে ঢুকে পড়েছে। অপরদিকে দেয়াড়া ইউপি চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মফে জানান, তার ইউনিয়নে কপোতাক্ষের তীরবর্তী দেয়াড়ার সানাপাড়া, পাকুড়িয়া মাঠপাড়া, পাকুড়িয়ার খাঁপাড়া, ত্রিমোহীনি ঘাট, কাশিয়াডাংগা বাজারস্থ এলাকার বাড়ি ঘরে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে এবং মৎস্য ঘের ডুবে গেছে। তিনি আরো বলেন, অনেকের কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। এ সকল অসহায় মানুষদের সরকারীভাবে সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই তিনিও কপোতাক্ষ তীরবর্তী ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পাশে দাড়ানোর জন্য জেলা প্রশাসকের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
গঙ্গাচড়া (রংপুর) থেকে মোহাঃ ইনামুল হক মাজেদী জানান, রংপুর জেলার গংগাচড়া উপজেলার চিলাখাল চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তার মুখে। বিদ্যালয়টি অন্যত্র স্থানান্তর করা না হলে যেকোন সময় নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে গিয়ে আতংকে থাকেন।
ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান, স¤প্রতি তিস্তার ভাঙনে আধাপাকা ৪টি টিনশেড ক্লাস রুমের মধ্যে ৩টি রুম পিলারের উপর দাঁড়িয়ে আছে। বর্তমানে রুমের নিচ দিয়ে বন্যার পানির স্রোত চলছে। কয়েকবার স্কুলটি অন্যত্র সরানোর জন্য আবেদন করেও ফল হয়নি। গতকাল সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় যেকোন মুহুর্তে বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে ১৯৮৫ সালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপিত হয়। বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫৭ জন। অতিসত্তর স্কুলটি অন্যত্র সরানো না হলে যে কোন সময় নদীগর্ভে বিলীন হবে।
নাঙ্গলকোট (কুমিল্লা) থেকে সায়েম মাহবুব জানান, কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে অবিরাম প্রবল বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে ডাকাতিয়া নদীয় তীরবর্তী ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৪০টি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। বন্যা কবলিত এলাকায় শত-শত পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। স্থানীয় ডাকাতিয়া নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঘর-বাড়ি, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে। অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি অনেকাংশে কমে গেছে। বিভিন্ন স্থানে পুকুর ও মৎস্য খামার পানিতে ডুবে গিয়ে লাখ-লাখ টাকার মাছ ভেসে গেছে। উপজেলার অধিকাংশ স্থানের রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা অচল হয়ে পড়েছে। এতে জনসাধারণকে যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বক্সগঞ্জ-গুণবতি সড়কের সাতবাড়িয়া এলাকা পানির নিচে ডুবে যাওয়ায় উপজেলার দক্ষিণাঞ্চলের হাজার-হাজার মানুষকে যাতায়াতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। বাঙ্গড্ডা ইউনিয়নের পরিকোট-শ্যামপুর সড়ক, গান্দাছি-শ্যামপুর সড়ক পানিতে ডুবে গেছে। বাঙ্গড্ডা-মুন্সিরহাট সড়কের গান্দাছি এবং সেনেরবান এলাকায় সড়ক পানিতে ডুবে যাওয়ায় বাঙ্গড্ডা-মুন্সিরহাট সড়কে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে।
পানিবন্দি এলাকার মানুষজনকে গবাদি পশু পাখি নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। অনেকে তাদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে গবাদি পশু পাখি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। এছাড়া তলিয়ে গেছে মাঠের ধান, আমন বীজ তলা ও শাকসবজির খেত। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শাহআলম বলেন, বন্যায় প্লাবিত এলাকার মানুষের জন্য ২১ মেট্রিকটন চাল বরাদ্ধ দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে বিতরণ করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।