Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

হিলারি, ট্রাম্প না স্যানডার্স কে খেলবেন শেষ খেলা

প্রকাশের সময় : ১১ মার্চ, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : দ্রুত এগিয়ে আসছে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। শুরুতে যে চিত্র দেখা গিয়েছিল সেটা এখন বদলে গেছে। শুরুতে মানুষ চিনতো না ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, কিংবা চিনতো না বার্নি স্যানডার্সকেও। তখন হিলারি ক্লিনটন, টেড ক্রুজ, মার্কো রুবিও এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদরাই ছিলেন কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু সময় যতই ঘনাচ্ছে ততই পরিস্থিতি বদলে যাচ্ছে। এগিয়ে যাচ্ছেন একদা অপরিচিত ট্রাম্প এবং স্যানডার্স। ভোটে এগিয়ে থাকলেও তারা দুজনেই সম্পূর্ণ বিপরীত ভিন্ন ধরনের মানুষ। তাও মানুষ বেছে নিচ্ছেন তাদের। তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে ভোটের ফলাফলে। প্রথমদিকের ভোটে হিলারি-স্যানডার্স হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছে। পরে ১২টি অঙ্গরাজ্যের সুপার টুয়েসডে ভোটে হিলারি জয় লাভ করলেও, স্যানডার্স খুব একটা পিছনে ছিলেন না। এবার মিশিগান অঙ্গরাজ্যে অনুষ্ঠিত প্রাইমারিতে ডেমোক্রেটিক দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্স জয়ী হয়েছেন। মনে করা হচ্ছে, এই জয়ে স্যান্ডার্স নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন।
সেই তুলনায় হিলারী ক্লিনটন মিসিসিপি অঙ্গরাজ্যে একটি সহজ জয় পেয়েছেন। সেখানে কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের ভোট তাকে জয়ী করতে সাহায্য করেছে। মিসিসিপিতে হিলারি ক্লিনটন প্রায় প্রতি দশজন কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারের মধ্যে নয়জনের ভোট পেয়েছেন। তাছাড়া ডেমোক্র্যাটিক দলের মনোনয়ন পেতে হিলারির যে পরিমাণ প্রতিনিধি প্রয়োজন, তার অর্ধেকের বেশি ইতোমধ্যে তার হাতে রয়েছে। আল-জাজিরার প্রতিবেদক কিম্বারলি হকেট ওয়াশিংটন থেকে জানিয়েছেন, স্যান্ডার্স মিশিগানে মূলত তরুণ ভোটারদের দ্বারা তার জয় নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিশিগানে আফ্রিকান-আমেরিকান ভোটারদের একটি বড় অংশ রয়েছে যারা সাধারণত হিলারিকে ভোট দিয়েছে।
কিন্তু একই সঙ্গে আয়বৈষম্য নিয়ে স্যান্ডার্সের বার্তা সেখানকার ভোটারদের অনুরণিত করেছে। বিশেষ করে ভোটারদের মধ্যে যারা মার্কিন অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের প্রভাব লক্ষ্য করেছেন এবং এই প্রভাবের ফলে মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো কিভাবে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। ফলে ভোটারদের একটি বড় অংশ বার্নিকে সমর্থণ দিয়েছে। কারণ তারা মনে করছে স্যান্ডার্সের বার্তা অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয় উৎপাদন শিল্প সত্যিই এখন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো। তিনি মনে করেন, এটি কেবল মনস্তাত্ত্বিক বিজয় নয় বরং একই সাথে একটি বড় রাজনৈতিক বিজয়। মিশিগানের বিজয় সম্পর্কে স্যান্ডার্স জানান, আরও গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী রাজ্য অপেক্ষা করছে এখনো। আমি আশা করছি যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল এবং অন্যান্য অংশেও ভালো করবো। তিনি বলেন, দুর্নীতি, বৈষম্যমূলক অর্থ ব্যবস্থা দেখতে দেখতে আমেরিকার মানুষ এখন ক্লান্ত। তারা এখন এগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। আমরা তাদের সেই সুযোগ করে দেব। অন্যদিকে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প মিসিসিপি এবং মিশিগানে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপশ্চিম এবং দক্ষিণের শিল্প কারখানা সমৃদ্ধ অঞ্চল। নির্বাচনী জরিপে দেখা গেছে, তার সমর্থকদের একটা বড় অংশই ইভাঞ্জেলিক খ্রিস্টান, রিপাবলিকানরা, স্বাধীনচেতারা, যারা ওয়াশিংটনের বাইরের কাউকে ক্ষমতায় দেখতে চাইছে এবং যারা বর্তমান সরকারের উপরে রাগান্বিত তারা। ট্রাম্প হাওয়াইতেও জিতেছে। তবে ইডাহোতে জয় পেয়েছেন টেক্সাস গভর্নর টেড ক্রুজ। যেহেতু ট্রাম্প ওয়াশিংটনের ক্ষমতাসীন হর্তাকর্তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে, সেহেতু রিপাবলিকান দলের ভেতরেই তাকে মনোনয়ন দেয়া নিয়ে বিরোধিতা চলছে। কয়েকদিন আগে মিট রমনি ট্রাম্পের বিরোধিতা করে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন।
ট্রাম্প এতদিন সবাইকে গালমন্দ করেছেন কিন্তু এবার খোদ রিপাবলিকানরাই তার পেছনে আদাজল খেয়ে লাগায় তিনি বোধ হয় খানিকটা সুর বদলেছেন। নির্বাচন পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প বলেন, তিনি নতুন অনেক ভোটার নিয়ে আসছেন রিপাবলিকান দলে। কাজেই যারা হর্তাকর্তা রয়েছেন তারা যেন তার বিরুদ্ধে না লেগে আগামী নভেম্বরে কিভাবে ডেমোক্র্যাটদের পরাজিত করা যায় সেদিকে মনোযোগ দিতে বললেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি রিপাবলিকানরা আমাকে সাদরে গ্রহণ করবে। একত্রে আমরা ভালো কিছু করতে যাচ্ছি। এটা আমাদের দলের ঐক্য যেমন ধরে রাখবে তেমনি নির্বাচনের ফলাফলে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।
কিন্তু শেষ লড়াই করবে কারা? ট্রাম্প আর বার্নি স্যানডার্স, নাকি ট্রাম্প আর হিলারি। এখন পর্যন্ত ভোটের ফলাফলে রিপাবলিকানদের চিত্র অনেক বেশি পরিস্কার ডেমোক্র্যাটদের থেকে। ট্রাম্প একাই এগিয়ে আছেন। কিন্তু ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে যেখানে কেবল হিলারি ক্লিনটনের এগিয়ে থাকার কথা সেখানে উড়ে এসে জুড়ে বসেছেন বার্নি স্যানডার্স। ২০০৮ সালের নিরবাচনে বারাক ওবামার বিপরীতে হিলারির যে অবস্থা হয়েছিল এবারো ঠিক সেই একই চিত্র। তিনি নিজেকে দাবি করেন সমাজতান্ত্রিক রাজনীতিক বলে। নীতিগত দিক দিয়ে তার অবস্থানে অস্বচ্ছতা কিংবা অসামাঞ্জস্যতা নেই। তার ৪০ বছরের রাজনীতির ইতিহাস রয়েছে এর প্রমাণ হিসেবে। মার্কিন সমাজবিদ, বিজ্ঞানী এবং দার্শনিক নোয়াম চমস্কি বলেছেন, অন্য প্রার্থীদের চেয়ে এখনো পর্যন্ত বার্নি স্যানডার্সের নীতিই সবচেয়ে উপযুক্ত বলে মনে করেন তিনি। যে ভাবে তিনি দৌড়ে ধরেছেন হিলারিকে এবং একের পর এক বিজয় ছিনিয়ে নিচ্ছেন তাতে সম্ভাবনা খুবি বেশি যে শেষ খেলা হয়তো হবে- বার্নি বনাম ট্রাম্প। বিবিসি, রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: হিলারি

২৮ জানুয়ারি, ২০২০
১৭ মার্চ, ২০১৯

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ